১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

বিশ্বব্যাপী অস্ত্র ব্যবসার জেরে মিয়ামানমারে জান্তার অগ্রাসন

মিয়ানমারে সশস্ত্র বাহিনী দিবসে কুচকাওয়াজ - ছবি : সংগৃহীত

একজন বিশিষ্ট মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সাথে বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বাণিজ্য বন্ধ করার জন্য সরকারদের প্রতি আহ্বান জানান। তার মতে, ‘এ অস্ত্র বাণিজ্য মিয়ানমার জুড়ে বেসামরিক লোকদের বিরুদ্ধে জান্তার সহিংসতার নৃশংস অভিযানকে টিকিয়ে রাখতে সহায়তা করছে।’

মিয়ানমারের মানবাধিকার পরিস্থিতিবিষয়ক বিশেষ দূত টমাস অ্যান্ড্রুজ বৃহস্পতিবার জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের কাছে এক প্রতিবেদনে অভিযোগ করেন, আন্তর্জাতিক অর্থ-ব্যবস্থা মিয়ানমারকে অস্ত্র সংগ্রহে সহায়তা করছে। যা বেসামরিক জনগণের ওপর আক্রমণ চালাতে তাদের সক্ষম করেছে এবং হাজার হাজার মানুষকে হত্যা, পঙ্গু ও বাস্তুচ্যুত করেছে।

জাতিসঙ্ঘের মানবাধিকার অফিস তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সামরিক জান্তা দেশটির গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে এক হাজার ২২ জন নারী এবং ৬৬৭ জন শিশুসহ কমপক্ষে পাঁচ হাজার ২৮০ জন বেসামরিক নাগরিক সৈন্যদের হাতে নিহত হয়েছে।

সংস্থাটি রিপোর্টে উল্লেখ করে, কমপক্ষে ৩০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এই জনসংখ্যার বিশাল একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ এখনো যথার্থ আশ্রয় ছাড়াই রয়েছে এবং ২০ হাজার জনেরও বেশি রাজনৈতিক বন্দী আটক রয়েছে।

অ্যান্ড্রুজ কাউন্সিলকে বলেন, ২০২৪ সালের মার্চে শেষ হওয়া গত দু’বছরে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আন্তর্জাতিক অর্থ ব্যবস্থার মাধ্যমে ৬৩ কোটি ডলারের অস্ত্র, দ্বৈত-ব্যবহার প্রযুক্তি, উৎপাদন সরঞ্জাম এবং কাঁচামাল কিনেছে।

বিশেষ দূত অ্যান্ড্রুজ ১৬টি বিদেশী ব্যাংক চিহ্নিত করেন যেগুলো দেশটির শাসকগোষ্ঠীর সামরিক ক্রয় সম্পর্কিত লেনদেনগুলো সহজতর করেছে।

তিনি উল্লেখ করেন, দেশটির সামরিক বাহিনী এবং তাদের সহকর্মীরা লেনদেনের আসল প্রকৃতিকে অস্পষ্ট করার জন্য সামরিক ফ্রন্ট কোম্পানি স্থাপন করাসহ বিভিন্ন প্রচেষ্টা চালিয়েছে।

তিনি গত বছর তার জারি করা একটি প্রতিবেদন ‘বিলিয়ন ডলার ডেথ ট্রেড’-এর কথা উল্লেখ করেন। এতে তিনি সিঙ্গাপুরকে দেশটির সামরিক বাহিনীর তৃতীয় বৃহত্তম অস্ত্র এবং সংশ্লিষ্ট উপকরণ সরবরাহকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন।

তিনি কাউন্সিলকে বলেন, ‘সেই প্রতিবেদনের কারণে সরকার অবিলম্বে ব্যবস্থা নিয়েছে এবং আমার অনুসন্ধানের ওপর তদন্ত শুরু করেছে। আমি এই খবর দিতে অত্যন্ত আনন্দিত যে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর থেকে সিঙ্গাপুর থেকে দেশটির জান্তার সামরিক সরবরাহ ক্রয় প্রায় ৯০ শতাংশ কমেছে।’

তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত, থাইল্যান্ডের মাধ্যমে তাদের সামরিক সরবরাহ এর বিপরীত রূপ নিয়েছে। দেশটির জান্তা থাইল্যান্ডে নিবন্ধনকৃত সরবরাহকারীদের কাছ থেকে প্রায় ১৩ কোটি ডলারের অস্ত্র এবং সামরিক সরঞ্জাম আমদানি করেছে, যা গত বছরের তুলনায় মোট দ্বিগুণেরও বেশি।’

কিন্তু তিনি পর্যবেক্ষণ করে বলেন, ‘এটি লক্ষ্য করা গুরুত্বপূর্ণ যে গত বছরে সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রে যেমন প্রমাণ পেয়েছিলাম, থাইল্যান্ডের সরকার এই লেনদেনের সাথে জড়িত বা এমনকি এ ধরনের লেনদেন নিয়ে যে সচেতন ছিল এমন কোনো প্রমাণ আমি পাইনি।’

তিনি আশাবাদী থাইল্যান্ডভিত্তিক সংস্থাগুলোসহ দেশটির ব্যাংকগুলো সামরিক জান্তার কাছে আর অস্ত্র এবং অস্ত্র সামগ্রী স্থানান্তর করতে সহায়তা করবে না।

অ্যান্ড্রুজ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে সামরিক জান্তা নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর সাথে লেনদেন সহজতর করা বন্ধ করার জন্য এবং সরকারদের মিয়ানমারের অর্থনৈতিক ব্যাংকসহ সেই জান্তা-নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার জন্য আহ্বান জানান।

বিশেষ দূত অ্যান্ড্রুজ তার এই আহ্বানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ সদস্য দেশগুলোর সমর্থন অর্জন করেন।

অ্যান্ড্রুজ বলেন, মিয়ানমারের জনগণের কাউন্সিল ও সরকারগুলোর সমর্থন প্রয়োজন এবং এটি তাদের প্রাপ্য। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তাদের আন্তর্জাতিক পদক্ষেপেরও প্রয়োজন।

তার কথায়, ‘শুধুমাত্র মিয়ানমারের জনগণের ওপর সামরিক জান্তার নিরন্তর আক্রমণের কারণে নয়, সাথে এই মুহূর্তে আপনাদের সরকারের কাছে এমন সুযোগ রয়েছে যা এই সঙ্কট কিভাবে এবং কখন শেষ হবে তার ওপর নির্ভর করে তারা বড় রকমের পরিবর্তন আনতে পারে।’

তিনি বলেন, সরকারের সামরিক ঘাঁটির পতন ঘটছে, হাজার হাজার সৈন্য হতাহত, আত্মসমর্পণ বা দলত্যাগের জন্য হারিয়েছে এবং অর্থনীতি সংকুচিত হয়ে পড়ছে।

তিনি বলেন, বিশ্বে এমনটি হতে দেয়া উচিত নয়।
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement