ধর্ষণের ভিডিওতে দক্ষিণ কোরিয়ায় তোলপাড়
- নয়া দিগন্ত অনলাইন
- ১৫ জুন ২০২৪, ১৬:০৫
দক্ষিণ কোরিয়ায় ২০০৪ সালের আলোচিত এক গণধর্ষণ মামলা নিয়ে সম্প্রতি ইউটিউবে ভিডিও প্রকাশ করেন এক ইউটিউবার। এর সমালোচনা করেছেন ধর্ষণের শিকার নারীর পরিবার।
তাদের আশঙ্কা, এর ফলে ভুক্তভোগীর ট্রমা আরো বাড়তে পারে। অনেক ইউটিউব ব্যবহারকারীও সমালোচনা করেছেন।
সিরিজ আকারে আপলোড করা ভিডিওগুলোতে ধর্ষণের সাথে সংশ্লিষ্টসম্ভাব্য দায়ী ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করে তাদের লজ্জা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানের কাছের শহর মিরিয়াংয়ে ঘটনাটি ঘটেছিল। ১৩ থেকে ১৬ বছর বয়সি তিন মেয়েকে ১১ মাস ধরে যৌন নিপীড়ন করা হয়। এর সাথে ৪৪ জন ছেলে জড়িত ছিল বলে ধারনা করা হয়।
ভিডিও প্রকাশের পর বিতর্ক শুরু হয়েছে। কেউ বলছেন, এর মাধ্যমে এক ব্যক্তি বিচার করার চেষ্টা করছেন, যেটার কোনো আইনি ভিত্তি নেই। আরেক পক্ষ বলছেন, এর মাধ্যমে যথাযথ শাস্তি দেয়া যাচ্ছে। কারণ, সম্ভাব্য দায়ী ৪৪ জনের কাউকেই যৌন নিপীড়নে অভিযুক্ত করা হয়নি।
চুংনাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও নীতিশাস্ত্রের সহযোগী অধ্যাপক হায়োবিন লি বলেন, ‘সাধারণ প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক হয়েছে।’ ডিডাব্লিউকে তিনি বলেন, ‘যদি ২০ বছর আগে বিচারবিভাগ মামলাটি ঠিকভাবে পরিচালনা করত, তাহলে হয়তো এখনকার এই ঘটনা ঘটতো না।’
সৌল উইমেনস ইউনিভার্সিটির সহকারী অধ্যাপক ডেভিড টিজার্ড বলেন, ‘আজ অনেকেই মনে করেন, ন্যায়বিচার করা উচিত। যারা অন্যের প্রতি অন্যায় করে তাদের নিজেদেরও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া উচিত।’
কী ঘটেছিল?
১৬ বছরের এক মেয়ে একজনের সাথে দেখা করতে এক জায়গায় গিয়েছিল। সেখানে তাকে কয়েকজন ছেলে নিপীড়ন করে। ওই ঘটনার ভিডিও করা হয়, যেন পরবর্তীতে ওই মেয়েকে ব্ল্যাকমেল করা যায়। ভিডিওটি অনলাইনে প্রকাশ করা হতে পারে এই ভয়ে ওই মেয়ে আরো ১০ বার সেখানে গিয়েছিল। শুধু নিজে নয়, ওই ছেলেদের পরামর্শে তার ১৩ বছরের ছোট বোন ও ১৬ বছরের কাজিনকেও নিয়ে গিয়েছিল।
এরমধ্যে ১৬ বছর বয়সি দুজন ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ১৩ বছরের মেয়েকেও ধর্ষণ করা হয়েছে কি না তা কখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। ছেলেরা ওই মেয়েদের কাছ থেকে টাকাও নিয়েছিল। এই ঘটনায় অন্তত ৪৪ জন হাইস্কুল শিক্ষার্থীর-সংখ্যাটি ১২০ও হতে পারে নাম জড়িয়েছিল।
অবশেষে যখন ধর্ষণের বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয় তখন পুলিশ প্রথমে তিন ছেলেকে গ্রেফতার করে। পরে ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদ জানালে পুলিশ আরো নয়জনকে গ্রেফতার করে এবং ২৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়।
এই মামলায় অন্যতম আশ্চর্যের বিষয় ছিল, অভিযুক্তদের পরিবার ও স্থানীয় অনেকে এই ঘটনার জন্য ভুক্তভোগীদের দায়ী করেছিল। তাদের অভিযোগ, ওই মেয়েরা ছেলেদের যৌন কার্যকলাপে প্রলুব্ধ করেছিল। আরো আশ্চর্যের বিষয় ছিল, ভুক্তভোগীরা জিজ্ঞাসাবাদের সময় নারী পুলিশ সদস্য চাইলেও সেটা দেয়া হয়নি। তদন্তকারী পুরুষ পুলিশেরাও এমন মনোভাব দেখিয়েছিল যে ওই ভুক্তভোগীরাই ছেলেদের প্রলুব্ধ করেছিল। এছাড়া তদন্তের তথ্য ফাঁস হওয়ার কারণে মেয়েদের পরিচয় প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল।
পুলিশের এমন আচরণের কারণে পুলিশ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হয়েছিল। দুই ভুক্তভোগী মেয়ে ও তাদের পরিবার ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৭০ মিলিয়ন কোরীয় মুদ্রা, যা আজকের হিসেবে ৬৬ হাজার ডলারের সমান, পেয়েছিল।
তবে যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে গিয়েছিল। একজন ভুক্তভোগীকে মানসিক চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছিল। আর প্রথম ভুক্তভোগীর কোনো খোঁজ নেই বলে দক্ষিণ কোরিয়ার গণমাধ্যম জানিয়েছে। সেই ভুক্তভোগীর পরিবার জানিয়েছে, ইউটিউবে ভিডিওগুলো প্রকাশের বিষয়টি তাদের আগে জানানো হয়নি। তারা চান, ইউটিউব থেকে ভিডিওুগুলো মুছে ফেলা হোক।
বিচারে কী হয়েছে?
মাত্র ১০ জনকে গণধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। তাদের জন্য সর্বোচ্চ চার বছরের সাজা (এরমধ্যে তিন বছর স্থগিত কারাদণ্ড) চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু ছেলেদের বয়স ও তাদের অনেকে কলেজ বা কোম্পানিতে সুযোগ পাওয়ার বিবেচনায় বিচারক ওই সাজাও দেননি। শেষ পর্যন্ত পাঁচজনকে যুব আটক কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছিল।
চুংনাম ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির হায়োবিন লি মনে করেন, ‘ভুক্তভোগীরা যদি প্রভাবশালী ও ধনী পরিবারের হতো তাহলে আমার মনে হয় পুলিশ সম্পূর্ণ অন্যরকমভাবে কাজ করতো।’