১৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ জমাদিউস সানি ১৪৪৬ হিজরি
`

গরমকালে বাড়ি ঠাণ্ডা রাখার চীনা প্রাচীন কৌশল

আধুুনিক ভবন নির্মাণে প্রাচীন কৌশল - ছবি - বিবিসি

স্থপতিরা পুরানো বাড়ির উঠানগুলোর অনুকরণে আধুনিক ভবনগুলো শীতল করার কৌশল রপ্ত

রু লিং চীনের পুরানো বাড়িগুলোর ভিতরে থাকা ফাঁকা জায়গা বা উঠানে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। তার জন্য, এই জায়গাগুলো গরম এবং আর্দ্র দিনের জন্য উপযুক্ত।

‘এই স্থানগুলোয় প্রচুর বাতাস চলাচল করে, জায়গাটি শীতল এবং ছায়া দেয়,’ বলেছেন ৪০ বছর বয়সী এই ব্যক্তি।

চীনের পূর্বাঞ্চলে আনহুই প্রদেশের গুয়ানলু গ্রামে ২০১৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত টানা সাত বছর রু প্রায় শত বছরের পুরনো একটি প্রাচীন কাঠের বাড়িতে থাকতেন।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ভবনে বহু বছর বসবাস ও কাজ করার পর তিনি তার জীবন পরিবর্তন করতে এই বাড়িতে চলে আসেন।

‘গ্রীষ্মে আমার এই বাড়িতে প্রাকৃতিকভাবে শীতলতার অনুভূতি পাওয়া যায়, যা খুব সতেজ করে দেয়। এই অনুভূতি আধুনিক বিশ্বে খুঁজে পাওয়া কঠিন,’ তিনি বলেন।

‘বাড়িটিতে ধ্যান করার মতো আরামদায়ক পরিবেশও আছে।’

রু বলেছেন, এই বাড়ির ভেতরে যে আঙিনা বা উঠোন রয়েছে সেটা এই শীতল প্রভাব তৈরি করতে সাহায্য করেছে।

গরম আবহাওয়ায় বাড়ির উঠানের সুবিধাগুলো শুধু তিনিই উপভোগ করছেন না।

গবেষণায় দেখা গেছে যে দক্ষিণ চীনের কিছু বাড়ির উঠানের ভিতরের তাপমাত্রা বাইরের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম, চার দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কম।

আজ চীন দ্রুত নগরায়নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এখন যেসব বাড়িগুলোয় ভেতরে এমন ফাঁকা জায়গা বা উঠান রয়েছে সেখানে অনেক কম লোক বাস করে।

এখন বহুতল ভবনে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অ্যাপার্টমেন্ট এবং অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকগুলো আবাসনের প্রধান রূপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

তবে ঐতিহ্যবাহী চীনা স্থাপত্যের প্রতি নতুন করে আগ্রহ জাগার ফলে কিছু ঐতিহাসিক ভবনের ভেতরের আঙিনা আধুনিক সময়ের জন্য সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

সরকার নির্মাণ খাতে কার্বন নিঃসরণ কমানোকে উৎসাহিত করায় এখনকার স্থপতিরা নতুন নির্মিত ভবনগুলো শীতল রাখতে এমন খোলা জায়গা রাখার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী চীনা স্থাপত্যের অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের দিকে নজর দিতে শুরু করেছে।

তাপের জন্য ‘ফায়ারপ্লেস’
বাড়ির ভেতরের আঙিনা, যাকে ম্যান্ডারিন ভাষায় তিয়ান জং বলা হয়, এটি দক্ষিণ এবং পূর্ব চীনের ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলোর একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

তবে তিয়ান জং দেশটির উত্তরের বাড়িগুলোয় থাকা সাধারণ খোলা আঙিনা, বা ইউয়ান জি থেকে আলাদা। কারণ ইউয়ান জি বাড়ির বাইরে আলাদা খোলা পরিবেশে যা আরো বড় এবং আরো বেশি উন্মুক্ত হয়ে থাকে।

মিং (১৩৬৮-১৬৪৪) এবং কিং (১৬৪৪-১৯১১) রাজবংশের আমলে নির্মিত স্থাপনাগুলোয় বাড়ির ভেতরের আঙ্গিনা রাখা একটা সাধারণ বিষয় ছিল।

মূলত পরিবারের কয়েক প্রজন্ম ধরে এই আঙিনা ডিজাইন করা হয়েছে।

২০১০ সালে চীনের নানচাং বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালে প্রকাশিত এক নথি থেকে এসব তথ্য জানা যায়।

বাড়ির ভেতরের এসব উঠানের আকার এবং নকশা একেক অঞ্চল ভেদে পরিবর্তিত হয়। তবে এ খালি জায়গাটি প্রায় সবসময় আয়তকার হয়ে থাকে এবং এর অবস্থান থাকে বাড়ির কেন্দ্রে।

উঠোনের চারদিক বা তিন দিক কক্ষ ও প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত থাকে। কিছু বড় বড় বাড়িতে একাধিক উঠান থাকে।

সিচুয়ান, জিয়াংসু, আনহুই এবং জিয়াংজি প্রদেশের মতো দক্ষিণ ও পূর্ব চীনের বেশিরভাগ অঞ্চলের ঐতিহাসিক বাড়িগুলোয় ভিতরে উঠান থাকা তুলনামূলকভাবে সাধারণ বিষয়।

মধ্য-পূর্ব চীনে গুয়াংদং প্রদেশের ঐতিহাসিক শহর হুইঝোতে কিছু সেরা-সংরক্ষিত উঠান পাওয়া গেছে, যা বর্তমান আনহুই এবং জিয়াংসি প্রদেশের মধ্যে বিস্তৃত হয়েছে।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র আবিষ্কারের অনেক আগে ভবনকে শীতল রাখতে জন্য অভ্যন্তরীণ আঙ্গিনাগুলো ডিজাইন করা হতো।

যখন একটি বাড়ির উঠানের ওপর দিয়ে বাতাস প্রবাহিত হয়, তখন এই খালি জায়গার মাধ্যমে বাতাস সারা বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে পারে।

যেহেতু বাইরের বাতাস সাধারণত ভিতরের বাতাসের চেয়ে ঠাণ্ডা থাকে, তাই বাইরের ঠাণ্ডা বাতাস দেয়ালের মধ্য দিয়ে প্রতিটি তলায় চলে যায়। যার ফলে ভিতরের উষ্ণ বাতাসকে সরিয়ে দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঠাণ্ডা বাতাসের প্রবাহ তৈরি হয়। তখন ভেতরের গরম বাতাস ঘরের ওপরের দিকে উঠে ফাঁকা জায়গা দিয়ে বেরিয়ে যায়।

ইউ ইউহং’র বয়স ৫৫ বছর। ৩০ বছর ধরে তিনি প্রাচীন হুইঝো অঞ্চলের একটি অংশ জিয়াংসি প্রদেশের উয়ুয়ান জেলায় থাকা প্রাচীন উঠানওয়ালা বাড়িগুলো পুনরুদ্ধার করছেন।

যে বাড়িগুলো চীনের সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয় দ্বারা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসাবে স্বীকৃত।

তার চীনা বাড়ির ভেতরের এই খালি জায়গা সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান রয়েছে।

ইউ ব্যাখ্যা করেন যে ভেতরের আঙিনার প্রধান কাজগুলো হলো ঘরের ভেতরে পর্যাপ্ত আলো প্রবেশ করতে দেয়া, বায়ুচলাচল উন্নত করা এবং বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করা।

হুইঝোতে থাকা পুরনো বাড়িগুলোর ভিতরের উঠোন আকারে ছোট এবং উঁচু।

আশেপাশের কক্ষগুলো গরমের দিনে সূর্যালোককে আটকাতে পারে, যার ফলে উঠোনের নিচের অংশটি ঠাণ্ডা থাকে।

ইতোমধ্যে, ঘরের ভেতর থেকে গরম বাতাস ওপর দিকে উঠে ফাঁকা জায়গা দিয়ে বেরিয়ে যেতে পারে যা অনেকটা ‘চিমনির মতো কাজ করে’।

ইউ’র মতে, ‘হুইঝো শহরের পুরানো বাড়িগুলোর নিচতলায় সাধারণত উঁচু সিলিং থাকে এবং ছাদের অংশটুকু ফাঁকা থাকে। এ খোলা অংশটি সরাসরি ভিতরের উঠানের বরাবর হয়, যা বায়ুচলাচলের জন্য উপযোগী।’

তিনি বলেন, ‘কিছু ধনী পরিবারের দু’টি এমনকি তিনটি উঠোন ছিল, যার কারণে সেখানকার বায়ু চলাচল আরো উন্নত ছিল।’

রেনেসাঁ
ভেতরের আঙ্গিনাসহ ভবনগুলো চীনে কয়েক শ’ বছর ধরে টিকে রয়েছে। কিন্তু যারা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পছন্দ করেন, তাদের অনেকেই পুরনো বাড়ির সুবিধার কথা ভুলতে বসেছিল। তবে গত দুই দশক ধরে, চীনের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতিকে ধরে রাখার লক্ষ্যে প্রাচীন স্থাপত্যগুলো সংরক্ষণ শুরু হলে, বাড়ির আঙিনায় এই উঠোন রাখার গুরুত্ব আবার আলোচনায় ফিরে আসে।

ইউ যেখানে থাকেন, সেটি পুনরুদ্ধার করা বাড়িগুলোর মধ্যে একটি। যেটি উয়ুয়ান কাউন্টির ইয়ান গ্রামে অবস্থিত।

বাড়িটি তিন শ’ বছর আগে নির্মিত হয়েছিল এবং ২০১৫ সাল পর্যন্ত পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। পরে একজন প্রাক্তন মার্কেটিং ডিরেক্টর বা বিপণন পরিচালক ব্রিটিশ এডওয়ার্ড গাওন এবং তার চীনা স্ত্রী লিয়াও মিনক্সিন বাড়িটি কিনে নেন।

ইউ-এর সাহায্যে, এই দম্পতি তিনতলা বাড়িটিকে একটি ১৪টি কক্ষের বুটিক হোটেলে রূপান্তরিত করেন।

গাওন এবং লিয়াও সমস্ত অ্যাপার্টমেন্টে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসান। তবে ভেতরের উঠানের চারপাশের কমন স্পেসটি তাদের আসল অবস্থায় রেখেছেন। সেখানে কোনো বেষ্টনী দেননি এবং প্রাকৃতিক বায়ু প্রবাহ ঠিক রেখেন।

গাওন বলেছেন যে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই, ভেতরের এই উঠান গ্রীষ্মে খুব আরামদায়ক থাকে।
‘প্রত্যেকে খেয়াল করেছে যে যখন তারা বাড়িতে প্রবেশ করে, তখন তারা স্বাভাবিকভাবে বেশ সতেজ অনুভব করেন,’ তিনি বলেছেন।

ইউ আশা করেন স্থাপত্যের অংশ হিসেবে বাড়ির ভেতরে এমন উঠান রাখা তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ‘ক্রমেই জনপ্রিয়’ হয়ে উঠবে।

বাড়িতে বায়ু চলাচল এবং পর্যাপ্ত আলো প্রবেশসহ নানা নানা কার্যকারিতার কারণেই এই স্থাপত্য কৌশল জনপ্রিয়তা পেয়েছে।

সেইসাথে নতুন কিছু নির্মাণের ক্ষেত্রে আজকাল ‘টেকসই’ হওয়াটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে এই স্থাপত্য কৌশল বেশ কার্যকর।

এমনকি প্রাকৃতিক বাতাস যদি তেমন নাও থাকে তখনো ‘চিমনি প্রভাব’ এর কারণে বাড়ির ভিতরের আঙিনায় বায়ু সঞ্চালন ঘটে।

এই খালি জায়গার উপরের এবং নিচের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে উঠানের ভিতরের গরম বাতাস উপরে উঠে বেরিয়ে যায়, ঠাণ্ডা বাতাস নিচে নামিয়ে ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দেয়।

চীনের আরো দক্ষিণে অবস্থিত ঐতিহাসিক শহর লিংনান এর ঐতিহ্যবাহী বাড়িগুলোয় উঠানগুলো ছোট এবং গভীর হয়ে থাকে।

চীনের গুয়াংসি, ক্যান্টন এবং হাইনান প্রদেশের পাশাপাশি বর্তমানে উত্তর ও মধ্য ভিয়েতনামেও এমনটা দেখা যায়।

এর কারণ ওইসব এলাকায় গ্রীষ্মকাল বেশ লম্বা সময় ধরে থাকে এবং বেশ গরম পড়ে।

পানির প্রভাব
বাড়ির ভেতরের আর বাইরের পরিবেশের মধ্যে বাতাস স্থানান্তর স্থান হিসাবে কাজ করে এই উঠান।

বাইরের গরম বাতাস থেকে বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্য এই উঠান একটি দক্ষ থারমাল প্রটেক্টর বা তাপ রক্ষাকারী হিসাবে কাজ করে। কিন্তু এই উঠানে শীতল প্রভাবের তখনই ঘটে যখন সেখানে কোনো জলাশয় থাকে।

পানি বাষ্পীভূত হওয়ার সাথে সাথে এটি গরম বাতাসকে শীতল করে। এটি বাষ্পীভূত শীতল প্রক্রিয়া হিসেবে পরিচিত এবং হুইঝো-এর অভ্যন্তরীণ আঙ্গিনায় এই প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।

অতীতে হুইঝো শহরে থাকা পরিবারগুলো তাদের উঠোনে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করত। কারণ তারা বিশ্বাস করত যে এই পানি সংগ্রহের ফলে তাদের সম্পদ রক্ষা পাবে এবং সম্পদ বাড়বে।

এই কারণে, ছাদ থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ভেতরের উঠানগুলোর চারপাশে চ্যানেল রাখা হতো।

ইউ ব্যাখ্যা করে যে কিছু ধনী পরিবার তাদের আঙ্গিনার মাটি খনন করে এমন নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন করেছিল, যাতে বৃষ্টির পানি ভূগর্ভস্থ প্রবেশদ্বারকে ঘিরে ফেলার পরই বেরিয়ে যেতে পারে।

হুইঝো শহরের বাড়িগুলোয় ভেতরের উঠোনের মাঝখানে একটি বড় পাথরের বেসিন রয়েছে, যা প্রতিদিনের ব্যবহারের জন্য পানি সঞ্চয় করে এবং আগুন ধরলে এই পানি দিয়ে যেন নেভানো যায়।

হুইঝু-এর দু’টি ঐতিহ্যবাহী গ্রামে আঙিনা থাকা বাড়িগুলো নিয়ে ২০২১ সালে একটি সমীক্ষা হয়।
সেখান থেকে জানা যায়, বাষ্পীভবন শীতল প্রক্রিয়ার ফলে ঘরের আঙ্গিনার গড় তাপমাত্রা বাইরের গড় তাপমাত্রার চাইতে দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি থেকে চার দশমিক তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত কমে যায়।

সবুজ প্রযুক্তি
বর্তমানে, আধুনিক ভবনগুলোয় খালি জায়গা ফিরে আসার ক্ষেত্রে সরকারী বিধি-বিধানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

২০১৩ সাল থেকে, চীনের কেন্দ্রীয় সরকার সবুজ ভবন নির্মাণে উৎসাহ দিয়ে আসছে। যা সম্পদ সংরক্ষণ করছে এবং মানুষের নিয়মিত জীবনে দূষণের মাত্রা কমে আসছে।

২০১৯ সালের একটি সরকারী নির্দেশনায় ২০২২ সালের মধ্যে ৭০ শতাংশ ভবনে খোলা জায়গা রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন তারা ‘সবুজ’ মান অর্জন করতে পারে।

এই সবুজ মান অর্জনের ক্ষেত্রে কিছু নির্দিষ্ট মানদণ্ড রয়েছে। যেমন তাপ নিয়ন্ত্রণের গুণমান এবং নির্মাণ সামগ্রীর পরিবেশগত মান রক্ষা করা।

স্থপতিরা এখন বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কথা মাথায় রেখে নতুন ভবন ডিজাইন করছে এবং সেখানে খালি জায়গা রাখার সুবিধাগুলো পরীক্ষা করছেন।

পূর্ব চীনের জিনান শহরের ন্যাশনাল হেভি ভেহিকল ইঞ্জিনিয়ারিং টেকনোলজি রিসার্চ সেন্টার এর একটি উদাহরণ।

১৮-তলাসম্পন্ন, কাঁচের দেয়ালে তৈরি এ টাওয়ারটির কাজ ২০২২ সালে শেষ হয়েছিল।

এই ভবনের মাঝখানে একটি বিশাল খালি জায়গা রয়েছে, যা পঞ্চম তলা থেকে একদম মাথা পর্যন্ত বিস্তৃত।

সাংহাই-ভিত্তিক সিসিডিআই গ্রুপের স্থপতিদের মতে, সমস্ত লিফট, টয়লেট এবং মিটিং রুম এই ফাকা জায়গার চারপাশে অবস্থিত, যা ভবনের ভেতরে প্রাকৃতিক আলো এবং বায়ুচলাচল বাড়াতে সাহায্য করেছে। এতে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হচ্ছে।

হুইঝো অঞ্চলের জুয়ানচেং এর জিক্সি জেলার পুরানো টাউন হল ভবনটি ২০১৩ সালে সংস্কার করা হয়েছিল এবং ভবনটিকে একটি জাদুঘরে রূপান্তরিত করা হয়।

হুইঝো স্থাপত্য শৈলীর আদলে এ কমপ্লেক্সটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর ভেতরে বেশ কয়েকটি খালি জায়গা রাখা হয়েছে।

এর পেছনে যারা কাজ করেছেন তাদের মতে, এই ফাঁকা জায়গা রাখার ফলে কমপ্লেক্সের ভিতরে বায়ু সরবরাহ করতে পারছে। এবং এর ফলে সেখানকার বেশ কয়েকটি প্রাচীন গাছ সংরক্ষণ করাও সহজ হচ্ছে।

একইসময় সিচুয়ান প্রদেশের একটি জনপ্রিয় পর্যটন শহর - যে প্রদেশটি গরম, আর্দ্র গ্রীষ্মমণ্ডলীয় আবহাওয়ার জন্য পরিচিত, সেখানে বেশ কয়েকটি বৃত্তাকার ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, যার প্রত্যেকটির মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে।

কিছু আকাশচুম্বী অট্টালিকা তাদের ভবনে বায়ুপ্রবাহ বাড়াতে ভবনের ভেতরে ফাঁকা জায়গা রাখার মাধ্যমে বাতাস চলাচলের নীতি গ্রহণের চেষ্টা করছে।

বাস্তবিক কারণে তারা বাহ্যিক আঙ্গিনা নির্মাণ না করেই ভেতরে এই ফাঁকা জায়গার ওপর বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।

চীনের গুয়াংদং প্রদেশের ডংগুয়ান শহরের টিবিএ টাওয়ার এর একটি উদাহরণ হতে পারে।

ভবনটি বায়ুচলাচল টিউবের মাধ্যমে ৬৮তলা পর্যন্ত প্রাকৃতিক বায়ু প্রবাহ সরবরাহ করে। যা অনেকটা অভ্যন্তরীণ ফাঁকা জায়গার মতোই কাজ করে।

এর উদ্দেশ্য হলো বসন্ত এবং শরৎকালে ভবনের তাপমাত্রা আরামদায়ক মাত্রায় বজায় রাখা এবং সেটা শুধুমাত্র প্রাকৃতিক বায়ুচলাচল ব্যবহার করে।

টাওয়ারের সাধারণ পরিচালক এক স্থানীয় সংবাদপত্রে ব্যাখ্যা করেছেন।

ইন্সটিটিউট অফ এনভায়রনমেন্টাল স্টাডিজের এনভায়রনমেন্টাল হিউম্যানিটিজের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক ওয়াং জেংফেং-এর মতে, প্রাচীনকালের মানুষদের মধ্যে যে ‘সবুজকে রক্ষা করার জ্ঞান’ ছিল তার প্রমাণ ভবনের ভেতরে এমন উঠোন বা ফাকা জায়গা রাখা।

বর্তমান জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে প্রাচীন এই কৌশলগুলো আধুনিক স্থাপত্য নকশাকে অনুপ্রাণিত করে চলেছে। যেখানে পরোক্ষভাবে ভবনকে শীতল রাখার কৌশল রয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের লেইডেন ইউনিভার্সিটি এলাকায় ওয়াং এর আগে একজন স্থপতি হিসেবে কাজ করতেন।

প্যাসিভ কুলিং বা পরোক্ষ শীতলীকরণ এমন এক পদ্ধতি যা বিদ্যুৎ ও জ্বালানি ব্যবহার না করেই একটি ভবনকে ঠাণ্ডা রাখতে পারে।

সেই অনুযায়ী ভবনটি ডিজাইন করা হয়েছে এবং বিভিন্ন প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কিন্তু ওয়াং উল্লেখ করেছেন যে বর্তমান নকশায় ভেতরে খালি জায়গা অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে কিছু অসুবিধা রয়েছে।

এই খালি জায়গা মূলত ভবনে প্রাকৃতিক আলো-বাতাস চলাচলের পাশাপাশি বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করার জন্য সুপরিচিত।

তবে তাদের নীতিগুলি অবশ্যই নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় প্রয়োগ করতে হবে।

ঐতিহ্যবাহী উঠানগুলো বিভিন্ন আকার, আকৃতি এবং বৈশিষ্ট্যের হয়ে থাকে। মূলত প্রাকৃতিক পরিবেশের ওপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন ডিজাইনের উঠান তৈরি করা হতো।

উদাহরণস্বরূপ, একেক অঞ্চলে সূর্যালোক বা বৃষ্টিপাতের মাত্রা একেক রকম – সেই দিকগুলো বিবেচনা করে আধুনিক ভবনগুলোয় এমন উঠান বা ফাঁকা জায়গা যুক্ত করার জন্য ডিজাইনারদের সংবেদনশীল হতে হবে।

তাদের প্রকল্পের পরিস্থিতি এবং প্রেক্ষাপট বিবেচনা করতে হবে। কেননা এই প্রাচীন পদ্ধতি কোনো সার্বজনীন সমাধান নয়।

এই পদ্ধতি সব জায়গায় ঢালাওভাবে প্রয়োগ করা যাবে না বলে ওয়াং জানান।

‘এখন কৃত্রিম উপায়ে একই সময়ে আলো, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ এবং পানি সরবরাহের মতো সেবা ব্যাপকভাবে পাওয়া যাচ্ছে এবং মানুষ এর পরিবেশগত ক্ষতি বিবেচনা না করেই সেগুলো ব্যবহার করছে,’ তিনি বলেন।

‘আমরা যদি আমাদের বর্তমান আচরণ পরিবর্তন না করি, তবে অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে টেকসই হওয়া সহজ হবে না।’

আধুনিক চীনে বাড়ির ভেতরে উঠোন বা ফাঁকা জায়গা কেন আরো মনোযোগ আকর্ষণ করেছে সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, ওয়াং বলেন যে উঠোনগুলো পরিবার বা সম্প্রদায়ের জমায়েতের স্থান হিসেবে ব্যবহারের জন্যও ডিজাইন করা হতো। তাদের একটি আনুষ্ঠানিক অর্থ আছে।

তার মতে, ‘কংক্রিট এবং কাঁচের জঙ্গলে বসবাসকারী মানুষদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তনগুলো সম্ভবত পুরনো স্মৃতিকে জাগিয়ে তুলেছে।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ২ কর্মী গ্রেফতার জামায়াত নেতা ড. তাহের সম্পর্কে সাংবাদিক ইলিয়াসের মন্তব্যের প্রতিবাদ গাজীপুরে নতুন ট্রেন ও অসমাপ্ত বিআরটি লেনে বিআরটি বাস সার্ভিসের উদ্বোধন বেনজীর ও মতিউরের বিরুদ্ধে দুদকের ৬ মামলা ছিনতাই রোধে রাজধানীতে শেষ রাতে পুলিশি টহল বাড়ানোর নির্দেশ পূর্ব তিমুরের প্রেসিডেন্টের সাথে বিএনপি নেতাদের সৌজন্য সাক্ষাৎ জামায়াতের একজন নেতাও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেনি: ড. মাসুদ মালয়েশিয়ায় বেতন না পেয়ে কোম্পানির অফিস ঘেরাও-অবরোধ, যা বলল বাংলাদেশ দূতাবাস সংস্কার বা পরিবর্তন সবকিছু শুরু হয়েছিল বিএনপির হাত ধরেই : মির্জা ফখরুল ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নতুন ভর্তি ৩৭৩ রাষ্ট্র মেরামতের সময় জানতে চাওয়ার অধিকার জনগণের রয়েছে : তারেক রহমান

সকল