শেষের পাতা

মনোনয়ন দৌড়ে নতুন মুখসহ এক ডজনের বেশি প্রার্থী

শরীয়তপুর-১ (পালং-জাজিরা) আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। মনোনয়নপ্রত্যাশীরা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। বিশেষ করে ক্ষমতাশীন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক অনুষ্ঠান ও সভা-সমাবেশে প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন ভোটারদের কাছে। বিএনপির একাধিক নতুন মুখসহ সম্ভাব্য প্রার্থীরা এখনো প্রকাশ্যে মাঠে না নামলেও তারা দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগসহ আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ আসনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এককভাবে কোনো প্রার্থী দেবে না। তবে তারা ২০ দলীয় জোটের সাথে সমন্বয় করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এখানে জাতীয় পার্টি থেকে দুইজন সম্ভাব্য প্রার্থী মনোনয়ন দাবি করছেন বলে দলটির একটি সূত্র জানিয়েছে। এ ছাড়াও ইসলামী আন্দোলনের একজন প্রার্থী রয়েছেন।
এ আসনটি শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা উপজেলা নিয়ে গঠিত। এখানে দুই লাখ ৯৪ হাজার ৪৪২ জন ভোটার রয়েছে। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৩ হাজার ৮০৫ জন। মহিলা ভোটার এক লাখ ৪০ হাজার ৬৩৭ জন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নির্বাচিত হন। ওই সময় আওয়ামী লীগের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাসদের অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাক মিয়া। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালু আওয়ামী লীগের প্রার্থী আমিনুল ইসলাম দানেশকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করায় জাতীয় পার্টি থেকে সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালু জাসদের প্রার্থী মাস্টার মজিবুর রহমানকে পরাজিত করে দ্বিতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অবস্থান ছিল তৃতীয়। ১৯৮৮ সালে চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালু নির্বাচিত হন। সেবার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নির্বাচন বর্জন করে। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী সাবেক যুবলীগ নেতা কে এম হেমায়েত উল্লাহ আওরোঙ্গ বিএনপির প্রার্থী সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালুকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে ভোটের ফলাফল স্থগিত রাখা হয়। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মরহুম আবদুর রাজ্জাক বিএনপি প্রার্থী সাইফুল ইসলাম খানকে পরাজিত করে নির্বাচিত হন। পরবর্তীতে আসনটি আবদুর রাজ্জাক ছেড়ে দেয়ার পর উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মাস্টার মজিবুর রহমান নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে কে এম হেমায়েত উল্লাহ আওরোঙ্গ যুবলীগ থেকে বহিষ্কারের পর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোবারক আলী সিকদারকে পরাজিত করে বিজয়ী হন। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বি এম মোজাম্মেল হক স্বতন্ত্র প্রার্থী মোবারক আলী সিকদারকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বি এম মোজাম্মেল হক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।
আওয়ামী লীগ : নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছেন বর্তমানে এ আসনে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। বর্তমান এমপি বি এম মোজাম্মেল হক ও ইকবাল হোসেন অপু এই দুই গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তারা দু’জনই মনোনয়ন লাভের ব্যাপারে উদগ্রীব। গত উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী নির্বাচন নিয়ে উভয় পক্ষের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়। তবে বর্তমান এমপি বি এম মোজাম্মেল হক দাবি করেছেন এখানে কোনো বিরোধ নেই, বড় দল হিসেবে যেকোনো নেতাই মনোনয়ন চাইতে পারেন। ইকবাল হোসেন অপুর একই দাবি। তিনি বলেন, কোন্দল নয় প্রতিযোগিতা রয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে বর্তমান সংসদ সদস্য বি এম মোজাম্মেল হককে ২০০৮ সালে দল থেকে শরীয়তপুর-১ আসনে মনোনয়ন দেয়া হলে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এ আসনে তিনি এবারো আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাবেন বলে দলটির বড় একটি অংশ দাবি করছে।
এ ছাড়া ইকবাল হোসেন অপুও মনোনয়ন পেতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন। তিনি এলাকায় দলীয় কার্যক্রম ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে নৌকা প্রতীকে ভোট চাচ্ছেন। তার পক্ষের নেতাকর্মীরা দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ তার মনোনয়নে সহযোগিতা করবে এবং তিনিই মনোনয়ন পাবেন।
এদিকে জাজিরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোবারক আলী সিকদার নৌকার মনোনয়ন পেতে তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। অপর দিকে শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মাস্টার মজিবুর রহমান এবং শরীয়তপুর পৌরমেয়র মো: রফিকুল ইসলাম কোতোয়াল, শরীয়তপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম তপাদার এ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ ছাড়াও ইডেন মহিলা কলেজের সাবেক সভানেত্রী নুরজাহান আক্তার মনোনয়ন চাইবেন বলে জানা গেছে।
বিএনপি : এ আসনে বিএনপির একাধিক মনোনয়নপ্রত্যাশী রয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালু, জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি আলতাফ মাহমুদ সিকদার, বর্তমান জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব আলম তালুকদার, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও শরীয়তপুর সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান খান দিপু, জেলা বিএনপির সদস্য বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম মিন্টু সওদাগর, জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ও বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য বাবু গয়েশ্বরচন্দ্র রায়ের ব্যক্তিগত সহকারী আমিনুল ইসলাম বাদল, ইডেন কলেজের সাবেক সভানেত্রী ও বর্তমান ইতালি বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ফাহিমা আক্তার মুকুল। এ ছাড়াও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সহসভাপতি মো: নুরুজ্জামান শিপন মনোনয়নপ্রত্যাশী। এদের মধ্যে সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালুকে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে একাধিক সভা-সমাবেশে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন জেলা ইসলামী আন্দোলনের সহসভাপতি মুফতি তোফায়েল আহমেদ কাসেমী। জাসদের (ইনু) শরীয়তপুর জেলা কমিটির সভাপতি স ম আবদুল মালেক।
জাপা : শরীয়তপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট মাসুদুর রহমান মাসুদ ও সাবেক সভাপতি জাফর খান কালাম মনোনয়নপ্রত্যাশী।
আওয়ামী লীগ নেতা মোবারক আলী সিকদার বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বড় দল। আর বড় দলে নেতাকর্মী বেশি থাকে। এ কারণে কিছু কোন্দলতো থাকতেই পারে। বর্তমান এমপি দলের জন্য কিছুই করেননি। তিনি গত ৯ বছরে নিজের আখের গুছিয়েছেন। দলের ত্যাগী নেতাদের বিতাড়িত করে অন্যান্য দলের লোকজন স্থান দিয়েছেন। তিনি জয়নগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে এমন একজন লোককে নৌকার মনোনয়ন দিয়েছেন যিনি মাত্র ৮৪টি ভোট পেয়েছেন। বি এম মোজাম্মেল তার একক সিদ্ধান্তে কাজ করেন। কোনো নেতাকর্মীকে মূল্যায়ন করেন না। শরীয়তপুরে আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে আমিই একমাত্র রাজনীতি ধরে রেখেছি। যারা ভোট দিয়ে সরকারকে ক্ষমতায় নেয়। তাদের ইচ্ছার মূল্যায়ন ও জনগণের পছন্দের লোককে মনোনয়ন দিলে সে ক্ষেত্রে আমি মনোনয়ন প্রত্যাশা করি।
আওয়ামী লীগ নেতা ইকবাল হোসেন অপু বলেন, আমাদের মাঝে অনুপ্রবেশকারীর কারণে কিছু সমস্যা থাকলেও কোনো কোন্দল নেই, আছে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা। এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন প্রদান করবেন তার পক্ষেই নির্বাচন করব।
এদিকে সব অভিযোগ অস্বীকার করে এমপি বি এম মোজাম্মেল হক বলেন, দল থেকে অনেকেই মনোনয়ন চাইতে পারে। প্রধানমন্ত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন আমি তার পক্ষেই কাজ করব। শরীয়তপুর এখন আর অবহেলিত নয়। এখানে আমার নেতৃত্বে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে।
জেলা বিএনপির সাবেক এমপি সরদার এ কে এম নাসির উদ্দিন কালু বলেন, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। এই সরকারের আমলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে বলে মনে হয় না। যদি দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে বিএনপির পক্ষে আমি একজন প্রার্থী।

 

আরো সংবাদ