২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাংলাদেশের মাছ

-

বাংলাদেশীদের প্রধান খাবার মাছ ও ভাত হওয়ায় প্রবাদের প্রচলন হয়েছে মাছে-ভাতে বাঙালি। বিপুল জনসংখ্যাসম্পন্ন বাংলাদেশ একটি ক্ষুদ্র ও উন্নয়নশীল দেশ। আগে বাংলাদেশের মানুষ স্থলজ আমিষের ওপর বেশি নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু শিল্পায়ন ও নগরায়নের ক্রমাগত প্রক্রিয়া সীমিত স্থল এলাকাই অধিগ্রহণ করে ফেলছে। তাই এখন বিস্তৃত বঙ্গোপসাগরে উৎপাদিত আমিষ ছাড়া চাহিদা পূরণের উপায় নেই। বাংলাদেশীদের খাবারের ৮০ শতাংশের বেশি আমিষ আসে মাছ থেকে।
পৃথিবীতে ৩০-৪০ হাজার মাছের প্রজাতি পাওয়া যায়। বাংলাদেশে ৪৭৫ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ এবং ২৬০ প্রজাতির স্বাদু পানির মাছ পাওয়া যায়। এ ছাড়াও ১২-এর বেশি প্রজাতির বিদেশী মাছ চাষের জলাশয়ে পাওয়া যায়। আইইউসিএনের (২০০৩) তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে স্বাদু পানির ৫৪ প্রজাতির মাছ হুমকির মুখে। এর মধ্যে ১২ প্রজাতির মাছ ভয়ঙ্কর বিপদাপন্ন এবং ২৮ প্রজাতির মাছ বিপদাপন্ন হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশের সীমানার ভেতরে ৪০০ প্রজাতির বেশি মাছ পাওয়া যায়। মাছের দিক দিয়ে বাংলাদেশ সমৃদ্ধ।
মাছ উৎপাদনেও বাংলাদেশ সামনের কাতারে অবস্থান করছে। নদীমাতৃক বাংলাদেশে চার শতাধিক নদী, অসংখ্য খাল-বিল, হাওর-বাঁওড়, ডোবা-নালার বাংলাদেশে পাওয়া যায় নানা রঙ ও স্বাদের মাছ। আকার আকৃতিতেও এরা যেমন বিচিত্র, নামগুলোও তেমনি নান্দনিক। বৌরানী, গুলশা, তপসে, চিতল, কাকিলা, কই, শিং, পাবদা আরো কত কী! বেশির ভাগ বাণিজ্যিক মাৎস্যজীবীই তাদের কাজে অনেক বেশি দক্ষ ও উদ্ভাবনী। তাদের কিছু অংশ আবার ভোঁদড়ের সাহায্য নিয়ে থাকেন, যেগুলো পানির নিচে সাঁতার কেটে, মৎস্যজীবীদের জালের অভিমুখে মাছ তাড়িয়ে নিয়ে এসে অনেকটা রাখালের মতো দায়িত্ব পালন করে থাকে। স্থানীয় চাহিদা পূরণে সাধারণত মিঠাপানির মাছই আমাদের ভরসা ।
মৎস্য অধিদফতরের (২০০৯) তথ্যানুসারে, বাংলাদেশে জনপ্রতি বার্ষিক মাছ গ্রহণের পরিমাণ ১৭.২৩ কেজি। মাছের বার্ষিক চাহিদা ২৫.৯০ লাখ টন। জনপ্রতি মাছের বার্ষিক চাহিদা ১৮ কেজি, প্রাণিজ আমিষ সরবরাহে অবদান ৫৮ শতাংশ। বাংলাদেশে মাছের মোট উৎপাদন ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ২৯৬ টন; যার মধ্যে অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় থেকে আসে ১০ লাখ ৬০ হাজার ১৮১ টন, অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয় থেকে আসে ১০ লাখ পাঁচ হাজার ৫৪২ টন এবং সমুদ্র থেকে আসে চার লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৩ টন। বাংলাদেশের ২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইনের রক্ষিত বন্যপ্রাণীর তালিকার তফসিল-১ অনুযায়ী, ২৫টি প্রজাতি এবং তফসিল-২ অনুযায়ী, ২৭টি প্রজাতির, মোট ৫২ প্রজাতির মাছকে সংরক্ষিত ঘোষণা করা হয়েছে। অর্থাৎ আইন অনুসারে এই ৫২ প্রজাতির মাছ শিকার, বিক্রয় ও বিপণন বাংলাদেশের আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত।
বাংলাদেশে স্বাদু পানির মৎস্য প্রজাতির বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণা শুরু হয় ১৮২২ সালে। ২০০৫ সালে এ কে আতাউর রহমান দেশের স্বাদু পানির মাছকে ৫৫টি পরিবারের অধীনে ১৫৪ গণের ২৬৫টি প্রজাতিকে তালিকাভুক্ত করেছিলেন; যার ভেতরে কয়েক প্রজাতির সামুদ্রিক মাছও ছিল। সর্বশেষ বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি প্রকাশিত বাংলাদেশ উদ্ভিদ ও প্রাণী জ্ঞানকোষের ২৩ নম্বর খণ্ডে ১৭টি বর্গের অধীন ৬১টি পরিবারের ২৫১টি প্রজাতিকে স্বাদু পানির মাছ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বাংলাদেশের স্বাদু পানির মাছ প্রজাতিগুলো হলোÑ দেশী চিতল, ফলি, নানচিল কোরাল, দেশী বড় বাইন, রাটা বরুয়া, দেশী বামোশ, হলুদ কামিলা, দেশী কামিলা, পাতি কামিল, বাংলা খারু, লম্বা পাখনার সাপ বাইন, সুবর্ণা কাচকি, গণি চাপিলা, বড় চোখা, দেশী চৌকা ইলিশ, চন্দনা ইলিশ, সোনালি দাগী ওলুয়া, মেঘা ওলুয়া, দেশী সুইয়া, গাঙ্গেয় ফাসা, তেলি ফাসা, বাঁকা চোয়াল ফাসা, চেনোচ, তিলা শোল, গজার, তেলোটাকি, টাকি, শোল, দেশী মলা, ফ্যাকাসে মলা, মোটামাথা কার্প, ছোট পিয়ালি, মোরারি, সরপুঁটি, বনার কোকসা, বর্ণ কোকসা, হ্যামিল্টনের কোকসা, সাকু কোকসা, তিলা কোকসা, পাহাড়ি কোকসা, বাংলা এলং, কাতল, দেশী উর্তি, রুপালি কাচনি, দেশী লাউবুছা, মৃগেল কার্প, টাটকিনি, পাহাড়ি কালা বাটা, গ্রাস কার্প, পাতি কার্পু, গোঁফালো নিপাতি, জেব্রা আঞ্জু, বড় ছেবলি, বাংলা ছেবলি, দেশী দাড়কিনা, পাথুরে ঘর পোয়া, চোষক ঘর পইয়া, সিলভার কার্প, অ্যাংগ্রা খারিশ, ভাঙন বাটা, ঘনিয়া, কালিবাউশ, কাতল কুশি, গনি, নানদিনা, ঘোড়া মুইখা, রুই, কালো কার্প, কসুয়াতি, লোহাছুরা, থুইতা পুঁটি, চোলা পুঁটি, কাঞ্চন পুঁটি, গিলি পুঁটি, মলা পুঁটি, ফুটানি পুঁটি, সরপুঁটি, জাত পুঁটি, টেরি পুঁটি, তিত পুঁটি, দেশী বোল, পাতি ডারকিনা, গাঙ্গেয় ডারকিনা, রুপালি চেলা, নারকেলি চেলা, ফুল চেলা, ঘোড়া চেলা, সোনালি মহাশোল, লাল-পাখনা মহাশোল, বেলিটোরা, বালিটোরা, নদী পাথুরে তিতারি, বালিচাটা, নদী বালিচাটা, গাং গুতুম, বিভানি বালিচাটা, করিকা বালিচাটা, স্যাভন খোরকা, বিজয়া দারি, বাংলা রানী, ফুটকি রানী, জালি রানী, বর্মি পুঁইয়া, অণ্ডলের পুঁইয়া, মরিচা পুঁইয়া, লোকতাক পুঁইয়া, গোয়ালপাড়া পুঁইয়া, কলি পুঁইয়া, পাহাড়ি পুঁইয়া, লাল পিরানহা, পিরাপিটিংগা, তিস্তা টেঙরা, বামন টেঙরা, গাঙ টেঙরা, কেরালা টেঙরা, গুলসা টেঙরা, কাবাশি টেঙরা, নুনা টেঙরা, বাজুরি টেঙরা, এশীয় ডোরা টেঙরা, গুরা টেঙরা, রিঠা, তল্লা আইড়, গুজি আইড়, বোয়ালি পাবদা, মধু পাবদা, কালা পাবদা, বোয়াল, কাজুলি, কাজলি, গারুয়া বাচা, মুড়ি বাচা, বাচুয়া বাচা, দেশী বাতাসি, ধাইন, থাই পাঙ্গাশ, দেশী পাঙ্গাশ, ছোট শিঙঘি, গাঙ্গেয় বাঘাইর, দানব বাঘাইড়, দেশী জাঙলা, গাঙ্গেয় জাঙলা, ইউসুফের জাঙলা, দেশী তেলচিটটা, সিলেটি তেলচিটটা, কেয়াকাঁটা টেঙরা, কোশি কুতাকানতি, সিলেটি কুতাকানতি, কোশি টেঙরা, চেনুয়া, বট টেঙরা, গাঙ্গেয় কুতাকানতি, বাদামি কানি টেঙরা, কালো কানি টেঙরা, ধূসর-সাদাকানি টেঙরা, শয়ের কানি টেঙরা, মাগুর, আফ্রিকান মাগুর, ঝিল শিঙ, চাকা ভেকা, বট শিঙঘি, গাং ঘাঘড়া, দাড়িহীন কাটাবুখা, সৈনিক আপুইয়া, গাঙ মাগুর, চোষকমুখী, নীল কানপোনা, মোহনার বেচি, কারা কুমিরের খিল, নল কুমিরের খিল, কোনা কুমিরের খিল, কোঠা কুমিরের খিল, কুইচা, বাংলা কুনচি, মুর বাইল্লা, দেশী ভেটকি, নামা চান্দা, কাঁটা চান্দা, লাল চান্দা, রাঙা চান্দা, তুল ডানডি, কমলা পাখনা, টাক চান্দা, পাতি টাক চান্দা, খুতনি চান্দা, ভোতানাক টাক চান্দা, তিনলেজা কই, রুপালি সাগর মেনী, সাদা দাতিনা, হলদে দাতিনা, কইতর পোয়া, কুঁজো পোয়া, কই বোলা, তিলা বিশতারা, গাঙ্গেয় ভেদা, নাপিত কই, তেলাপিয়া, নাইলোটিকা, খল্ল্যা বাটা, চ্যাপ্টামাথা খরোল, খর খুলা, দেশী তপসে, ক্রান্তিষ্য বাইলা, নীল নুনা বাইলা, সবুজ ফুটকি বাইল্যা, চেওয়া বেলে, ডোরাকাটা বেলে, গুয়াম বেলে, বোডার্টের ডাহুক, সোনালি ডোরা নুনা বাইলা, বড়মুখা বেলে, বড়চোখা বেলে, চুনো বেলে, তীরকেশরি নুনা বাইলা, জলি চেওয়া, সাদা ফোঁটা ডাহুক, আটলান্টিক ডাহুক, তীক্ষèলেজা চেওয়া, হাঁটুনি দারাক, ফুটকি চিত্রা বাইলা, লাল চেওয়া, রাজা চেওয়া, দাড়িধারি চেওয়া, হাঁসঠুঁটি বাইলা, কালো ফুটকি বাইলা, বাদামি ভুট বেলে, লুটিয়া গোবি, দেশী কই, কই বান্দি, বড় খলশা, লাল খলশা, নাফতানি, চুনা খলশা, থাই গুরামি, তারা বাইন, তারা বাইম, গুচি বাইম, শাল বাইম, বারা দৈত্য ছেরবাতি, ডানচৌকা সারবটি, পানপাতা সরবতি, কাকিলা, পাতি পটকা ও গাঙ্গেয় পটকা প্রভৃতি।
arafat.bcpr@seu.edu.bd


আরো সংবাদ



premium cement