২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিজ্ঞানের জগতে এক অবিস্মরণীয় আবিষ্কার

-

আমাদের বাংলাদেশে ৯.৬ শতাংশ লোক বধির এবং ১.৩ শতাংশ বা ১৬ লাখ মানুষ সম্পূর্ণ বধিরতায় ভোগে, যাদের ক্ষেত্রে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রয়োজন হয়। আমরা জানি, কানে না শুনলে সাধারণত কথা ফবাবষড়ঢ় হয় না। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপনের উপযুক্ত সময় এক থেকে তিন বছর এবং এটিই সঠিক সময়। এ সময়ে তা প্রতিস্থাপন করা গেলে শিশু সঠিক সময়ে ভালোভাবে কানে শুনতে এবং কথা বলতে পারবে। এমনকি স্কুলেও যেতে পারবে। অবশ্য পাঁচ বছর বয়সেও তা প্রতিস্থাপন করা যায়। পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ শিশুদের ক্ষেত্রে ফবষধুবফ ংঢ়ববপয ফবাবষড়ঢ়বসবহঃ হয়ে থাকে। ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের নাক, কান, গলা বিভাগে এর প্রতিস্থাপন শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৩৫০টি ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। জাতীয় নাক কান গলা ইনস্টিটিউট, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট হাসপাতাল, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে। বিএসএমএমইউতে কর্মসূচি পরিচালক হিসেবে রয়েছেন প্রফেসর ডা: আবুল হাসনাত জোয়ারদার, সহযোগী হিসেবে রয়েছেন প্রফেসর ডা: দেলোয়ার হোসেন, প্রফেসর ডা: নাসিমা বেগম।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় এ কর্মসূচির সূচনা করে এবং নামমাত্র মূল্যে গরিব ও নির্বাচিত বধির শিশুদের মধ্যে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ শৈল্য প্রতিস্থাপন হয়ে থাকে। এখানে রয়েছে একটি নির্দিষ্ট নীতিমালা। পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুরা এতে অগ্রাধিকার পাবে। যারা নির্বাচিত হয় না তাদের জন্য নিজ খরচে ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে রয়েছে দু’টি মডেল। একটির মূল্য ১০ লাখ টাকা এবং অপরটির মূল্য ১৮ লাখ টাকা (হাই গ্রেড)। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট আধুনিক শৈল্য চিকিৎসায় একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। এটি এমন একটি ডিভাইস যা মাঝারি থেকে গভীরতর শ্রবণশক্তি লোপ পাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত শিশুর ক্ষেত্রে প্রতিস্থাপন করা হয়ে থাকে। এটির উদ্দেশ্য হলো, সাধারণ শ্রবণ-প্রক্রিয়াকে বৈদ্যুতিক সঙ্কেতে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বাইপাস করে শ্রবণযন্ত্রের ¯œায়ুকে উজ্জীবিত করা। যারা উভয় দিকে তীব্রভাবে কম শোনে বা ¯œায়ুজনিত বধিরতায় ভোগে এবং অধিক শব্দ উত্তেজনার ফলেও যারা কোনো ৎবংঢ়ড়হংব করে না। বৈদ্যুতিক সঙ্কেত এখানে খুব সহজে ব্যবহার করা যায় এ জন্য যে, মূল শ্রবণযন্ত্রটি ঃৎধহংফঁপবৎ হিসেবে কাজ করে, যেটি শব্দকম্পনের শক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে পরিণত করে। এ কম্পনগুলো ¯œায়ুরজ্জু বরাবর প্রবাহিত হয়।
যে সব ক্ষেত্রে অতি গুরুতর অথবা পূর্ণশ্রবণ শক্তি লোপ পায় তা হলোÑ ক. জন্মগত বধিরতা; খ. মাথায় আঘাত; গ.ষধনুৎরহঃযরঃরং; ঘ. ড়ঃড়ঃড়ীরপ ফৎঁমং; ঙ. সবহরবৎব'ং ফরংবধংব; চ. মস্তিষ্কের প্রদাহ; ছ. অজানা কারণ বা রফরড়ঢ়ধঃযরপ।
কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপনের আগে রোগী নির্বাচন অবশ্যই জরুরি। নি¤েœাক্ত পরীক্ষাগুলো এখানে অত্যাবশ্যক, যা দিয়ে বধিরতার বিভিন্ন পর্যায় নির্ণয় করা এবং বেঁচে থাকা ¯œায়ুগুলোর গুণাগুণ বোঝা যায়Ñ ১. ইঙঅ-নবযধারড়ৎধষ ড়নংবৎাধঃরড়হ বঁফরড়সবঃৎু বধির শিশু কানে শুনছে কি না তা দেখার জন্যে; ২. ওসঢ়বফধহপব ধঁফরড়সবঃৎু-মধ্যকর্ণে পানি অথবা অন্যকিছু আছে কি না তা দেখার জন্য; ৩. অঁঃড় ধপড়ঁংঃরপ বসরংংরড়হ-এটার সাহায্যে কক্লিয়াবের অবস্থা বোঝা যায়; ৪. অঝঝজ-সংশ্লিষ্ট বধির শিশুর শোনার লেভেলটা কোন পর্যায়ে তা জানার জন্য; ৫) অঠজ-নিউরোলজিক্যাল পদ্ধতি ঠিক আছে কি না, তা দেখার জন্য। শ্রবণপ্রতিবন্ধীদের প্রতিবন্ধকতার মাত্রা নিরূপণ করার জন্য দু’টি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাÑ ১. সিটি স্ক্যান; ২. এমআরআই। এরপর নির্বাচিত রোগীদের টিকা দিতে হবে। এর পরের পর্যায়ে রয়েছে চংুপযড়ষড়মরপধষ ধংংবংংসবহঃ বা মানসিক প্রস্তুতি পরীক্ষা। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপন কথা বলা বধির শিশুদের ক্ষেত্রে বেশির ভাগ ব্যবহৃত হয়, যেমনÑ ১. উভয় দিকের শ্রবণশক্তি লোপÑ যাদের হিয়ারিং লেভেল ৯৫ ডিবি; ২. শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ শিশু; ৩. হিয়ারিং এইড ব্যবহারের ফলেও যাদের শ্রবণযন্ত্র কাজ করে না। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট একটি বৈদ্যুতিক ডিভাইস, যা মারাত্মক বা সম্পূর্ণ বধিরকে শব্দ শুনতে সহায়তা করেÑ যেটি প্রতিস্থাপিত হয় অন্তঃকর্ণে। এর দু’টি অংশ রয়েছে, তার মধ্যে একটি কানের ভেতরে সংযুক্ত থাকে এবং অন্যটি শরীরের সাথে সংযুক্ত থাকে যাকে বলা হয় ংঢ়ববপয ঢ়ৎড়পবংংড়ৎ। বাইরের অংশে থাকে : মাইক্রোফোন, ংঢ়ববপয ঢ়ৎড়পবংংড়ৎ, ট্রান্সমিটার কয়েল। ভেতরের অংশে থাকে : ৎবপবরাবৎ, বষবপঃৎড়ফব। ইমপ্লান্ট সংশ্লিষ্ট শিশু বাইরের শব্দ শুনতে এবং শোনার ফলে তা বুঝতে ও বলতে সহায়তা পায়। ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপনের ফলে প্রলম্বিত বধির রোগী এবং বাকশক্তির উন্নতি প্রকাশÑ পরবর্তী বধির রোগীরা সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় এবং জন্মগত বধির ও বাকশক্তি পূর্ণতা প্রকাশ অগ্রবর্তী বধির রোগীদের ক্ষেত্রে ইমপ্লান্টের কার্যক্ষমতা কম পরিলক্ষিত হয়। এরপরও বাকশক্তি লোপ পাওয়া শিশুদের মধ্যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইমপ্লান্ট কার্যকর হতে দেখা দেয়। ছয় বছরের কম বয়সী যেসব শিশু বধিরতায় ভোগে, তাদের ক্ষেত্রে ইমপ্লান্টটির কার্যক্ষমতা অনেক বছর ধরে বধিরতায় ভোগা শিশুদের চেয়ে ভালো কাজ করে। অস্ত্রোপচার সাধারণত পূর্ণ ধহধবংঃযবংরধ-এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। এতে দু’ থেকে চার ঘণ্টা সময় লাগে। অস্ত্রোপচারের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে : অজ্ঞান হওয়াজনিত সমস্যা, কানে শোঁ শোঁ আওয়াজ করা (ঃরহহরঃঁং), মাথা ঘোরা, ¯œায়ুবৈকল্য ইত্যাদি।
১৯৫৭ সালে আন্ড্রে জর্জোনা এবং চার্লস আইরিস নামক দু’জন বৈজ্ঞানিক কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট আবিষ্কার করেন। কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট পেরিফেরিয়াল অডিটরি সিস্টেমের মাধ্যমে মাইক্রোফোনের সাহায্যে শব্দটি গ্রহণ করে এবং শব্দ সঙ্কেতটি ংঢ়ববপয ঢ়ৎড়পবংংড়ৎ বরাবর পৌঁছে দেয়া হয়। এতে পটাশিয়াম আয়ন উন্মুক্ত হয়ে যায় এবং কোষগুলোকে নিউরোট্রান্সমিটারে পরিণত করে, যা ¯œায়ুমস্তিষ্কে সঙ্কেত পাঠায়Ñ এর ফলে তৈরি হয় শব্দ। এতে ডিভাইসটি শব্দটি গ্রহণ করে। পরে এটি বৈদ্যুতিক সঙ্কেত রূপান্তরিত হয়। ইলেকট্রোডগুলো বৈদ্যুতিকভাবে কক্লিয়ার নার্ভকে উজ্জীবিত করার ফলে মস্তিষ্কে সঙ্কেত পাঠায়। ইমপ্লান্টের বাইরের অংশটিতে যে মাইক্রোফোন রয়েছে তা পরিবেশ থেকে শব্দ গ্রহণ করে। ংঢ়ববপয ঢ়ৎড়পবংংড়ৎ শব্দটিকে ফিল্টার করে। শব্দসঙ্কেতগুলো রেডিওফ্রিকোয়েন্সির সাহায্যে অভ্যন্তরীণ ডিভাইসে পাঠায়। অভ্যন্তরীণ যে রিসিভার বা উত্তেজক রয়েছে, যা ংঢ়ববপয ঢ়ৎড়পবংংড়ৎ-এর কাছ থেকে সঙ্কেত গ্রহণ করে এবং এটিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে। যে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপন হয়, তাকে বলা হয় ভধপরধষ ৎবপবংং ধঢ়ঢ়ৎড়ধপয সধংঃড়রফবপঃড়সু. এ পদ্ধতিটিতে কিছু ঝুঁকি রয়েছে তার মধ্যে হলো : সধংঃড়রফরঃরং, ড়ঃরঃরং সবফরধ, মুখের ¯œায়ুবৈকল্য, ঈযড়ৎফধ ঃুসঢ়ধহর-এর ইনজুরি, ক্ষত প্রদাহ ইত্যাদি। ১২ শতাংশ ক্ষেত্রে ছোটখাটো জটিলতা হয়ে থাকে এবং ৩ শতাংশ ক্ষেত্রে বড় জটিলতা হয়ে থাকে, যেমনÑ মুখের পক্ষাঘাত এবং ডিভাইসের ব্যর্থতা। এক শতাংশ ক্ষেত্রে ক্ষণস্থায়ী ভধপরধষ হবৎাব ঢ়ধষংু হয়ে থাকে। জন্মগতভাবে বধির শিশুদের জন্য কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট সবচেয়ে কার্যকর। বধির শিশুরাÑ যারা ভালোভাবে স্বাক্ষর করতে পারে। তারা শিক্ষাগতভাবে আরো ভালো করে। সে জন্য বধির শিশুদের ক্ষেত্রে জন্মের সময় থেকেই সঙ্কেত ভাষা শেখা উচিত।
শুধু কক্লিয়ার ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপন করলে কাজ শেষ হয়ে যাবে না, এর পরবর্র্তী থেরাপিগুলো অবশ্যই প্রয়োগ করা উচিত। ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপন করার দু’সপ্তাহ পরপর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে ফলোআপ করতে যাওয়া জরুরি। এ পর্যায়টিকে বলা হয় সুইচ অন। এখানে ইমপ্লান্ট ব্যবহার পদ্ধতি শিখিয়ে দেয়া হয়। এতে পরীক্ষা করা হয় যে, শিশুটি নি¤œ শব্দ এবং উচ্চ শব্দ কতটুকু শুনতে পারে। এর পরের পর্যায়টিকে বলা হয় সধঢ়ঢ়রহম। পর্যায়ক্রমে একটি নির্দিষ্ট সময়সীমা পর্যন্ত অডিটরি ভারবাল সেন্টারে যেতে হবে। ইমপ্লান্ট প্রতিস্থাপনের এক বছরের মধ্যেই শিশু কথা বলতে পারবে। প্রতিদিন ছয় থেকে সাত ঘণ্টা তাকে ভাষা শেখাতে হবে, এ ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ভূমিকা ও নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন খুব জরুরি। এভাবেই একটি বধির ও বাকপ্রতিবন্ধী শিশু খুঁজে পাবে একটি শব্দময় পৃথিবী, শুনবে সৃষ্টির গুণগান, শুনবে মহাগ্রন্থ আল কুরআনের অমিয় বাণীও। হ
লেখক : সিনিয়র কনসালট্যান্ট (ইএনটি)
Email:dromarfarook@gmail.com

 


আরো সংবাদ



premium cement
আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ শ্রীলঙ্কাভিত্তিক এয়ারলাইন্স ফিটসএয়ারের ঢাকা-কলম্বো সরাসরি ফ্লাইট চালু রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসাথে কাজ করবে ঢাকা-ব্যাংকক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরাইলি হামলায় আহত শিশুর মুখে ২০০ সেলাই বিষখালীতে মৎস্য বিভাগের অভিযান : জেলে নিখোঁজ, আহত ২ দক্ষিণ এশিয়ার যে শহরগুলোর তাপমাত্রা এখন সর্বোচ্চ গাজীপুরে দাঁড়িয়ে থাকা কাভার্ডভ্যানে অটোরিকশার ধাক্কায় হতাহত ৫

সকল