০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আগুন কেড়ে নিলো জমজ সন্তানের বাবা ঢাবি ছাত্রের প্রাণ

জমজ সন্তান নিয়ে কাওসার আহমেদের স্ত্রীর আহাজারি (ইনসেটে কাওসার) - সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০১৪-১৫ সেশনের ছাত্র ছিলেন কাওসার আহমেদ। প্রথম বর্ষে স্বপ্ন দেখতেন আকাশ ছোঁয়ার। পারিপার্শ্বিক বাস্তবতায় প্রত্যাশার সাথে মিল ঘটেনি। পরিবারের হাল ধরতে গিয়ে অধ্যায়নে কিছুটা ঘাটতি হলেও চেষ্টা করছিলেন সব কিছু কাটিয়ে ওঠে ব্যাংকার হতে।

কিন্তু বুধবার চকবাজারের ভয়াবহ আগুন কেড়ে নিয়েছে তার সব স্বপ্ন। কাওসার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্য সেন হলের ছাত্র ছিলেন। সদা চঞ্চল এ শিক্ষার্থী প্রথম বর্ষে হলের গণরুম (এক কক্ষে ২৫ জন থাকত, ১৮১) মাতিয়ে রাখতেন। যেমনটি বলছিলেন তার বন্ধু দর্শন বিভাগের ছাত্র সৈয়দ শরিফুল আলম শপু। পরবর্তীতে পরিবারের দায়িত্ব নিতে গিয়ে চকবাজার শাহী জামে মসজিদ এলাকায় দেন আল-মদিনা ফার্মেসি।

সবকিছু সামলে উঠতে গিয়ে এক বছর বিরতি দিয়ে ২২তম ব্যাচের এ সেকশনে ক্লাস করতেন তিনি। তার স্মৃতি নিয়ে বিভাগের বন্ধু আসলাম হোসেন বলেন, কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছে। কিছুতেই চোখের পানি ফেরাতে পারলাম না। খুব সুন্দর সাবলীল মনের মানুষ ছিল বন্ধু কাওসার। কালও (বুধবার) একসাথে মিডটার্ম পরীক্ষা দিয়েছি আমরা। ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড এভাবে কেড়ে নেবে আমার বন্ধুটাকে তা কল্পনারও বাইরে ছিল।

কুমিল্লার হোমনা উপজেলার এ শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষে থাকাকালীন বিয়ে করেন। ছিল ১১ মাস বয়সী যমজ বাচ্চাও। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে লাশ শনাক্তের জন্য এলে কাওসারের ভাই হাফিজ আহমেদ, স্ত্রী ও মায়ের আহাজারিতে সৃষ্টি হয় হৃদয়বিদারক পরিস্থিতি।

দুপুর আড়াইটায় তার লাশ বিজনেস অনুষদে নিয়ে এলে তার সহপাঠীরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কাওসারের বন্ধু সালেহীন সাহাদাত ফাহিম বলেন, সে খুব ভালো বন্ধু ছিল। দ্বিতীয় বর্ষ থেকে সেভাবে হলে থাকত না। ব্যাংকার বা ভালো জব করার স্বপ্ন দেখত।

বিকেলে বিজনেস অনুষদে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তার সহপাঠীরা।

যেভাবে লাশ পাবেন স্বজনরা?
বিবিসির ফারহানা পারভীন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডা: সোহেল মাহমুদের ব্রিফিংয়ে ছিলেন।

মিস্টার মাহমুদ বলছেন, যেসব লাশ তাদের স্বজনরা সহজেই সনাক্ত করতে পারছেন সেগুলো আজই যথাযথ প্রক্রিয়া শেষে হস্তান্তর করা হবে।

কিন্তু যাদের সনাক্ত করা যাচ্ছে না তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নিয়ে সনাক্ত করার চেষ্টা করা হবে। যদি সেটিতে সনাক্ত হয়ে যায় তাহলে সেগুলোও স্বজনরা গ্রহণ করতে পারবেন।

কিন্তু যেসব লাশ একেবারেই সনাক্ত করা যাচ্ছে না সেগুলো ডিএনএ পরীক্ষার পর দেয়া হবে এবং এজন্য কিছুটা সময় লাগবে।

গত রাত সাড়ে ১০টার পরে পুরনো ঢাকার চকবাজারে শাহী মসজিদের কাছে ‘ওয়াহিদ ম্যানসন’ নামের একটি ভবনে আগুন লাগার পর তা আশেপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

পরে ফায়ার সার্ভিসের ৩৭টি ইউনিট একযোগে কাজ শুরু করে। তবে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত কিছু বলেনি কর্তৃপক্ষ।

অনুমতি নেই রাসায়নিক রাখার
২০১০ সালের জুনে পুরানো ঢাকার নিমতলীতে রাসায়নিকের কারখানায় আগুন ধরে ১২৪ জন নিহত হয়েছিলেন।

এরপর পুরানো ঢাকার আবাসিক এলাকায় রাসায়নিকের কারখানা বা সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।

তাহলে কিভাবে চকবাজারে রাসায়নিকের গুদাম থাকতে পারে?

বিবিসির এমন প্রশ্নের জবাবে মি. খান বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার পরেও অনেকে হয়তো চোরাইভাবে রেখে ব্যবসাবাণিজ্য করে। কর্তৃপক্ষের অগোচরে কাজ করে তারা। কিন্তু এর পরিণতি হচ্ছে এ ধরণের ঘটনা।’

সরু রাস্তা ও পানির সংকট
চকবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দীর্ঘ সময় ব্যয় হয়েছে, এর কারণ হিসেবে মি. খান সরু রাস্তা ও পানির সংকটকে প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত করেছেন।

‘অনেক দূর ঘুরিয়ে গাড়ি ভেতরে আনতে হয়েছে। সেই সাথে এটা একটা জনবহুল এলাকা, তাই আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে বেশি।’

এছাড়া এখানে পানির অভাবও রয়েছে। এখন পুকুর থেকে পানি এনে কাজ চালানো হচ্ছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

তবে তিনি জানিয়েছেন আগুন এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে।

ফায়ার সার্ভিসের এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১২ সালের পর থেকে বাংলাদেশে ৮৮ হাজার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।

এতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ২৯ হাজার কোটি টাকারও বেশি।

প্রাণহানি হয়েছে ১৪০০ জন, আহত হয়েছে অন্তত ৫০০০ মানুষ।


আরো সংবাদ



premium cement