২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অস্ত্র বিক্রির ভয়ঙ্কর মার্কিন কৌশল

মার্কিন অস্ত্র - ছবি : সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স সিকিউরিটি কো-অপারেশন এজেন্সি (ডিএসসিএ) জানিয়েছে, ২০১৮ অর্থবছরে প্রায় পাঁচ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম রফতানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। রাশিয়া এবং পশ্চিমা বিশ্বের মধ্যে টানাপড়েন তৈরি হওয়ায় পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে অস্ত্র বিক্রি বেশি বেড়েছে। মার্কিন সরকারি কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়েছেন।

এক বিবৃতিতে ডিএসসিএ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র রফতানি ২০১৮ সালে বেড়েছে শতকরা ৩৩ ভাগ। গত বছরের মধ্যে চলতি বছর অস্ত্র রফতানি সর্বোচ্চপর্যায়ে উন্নীত হয়। ২০১৮ সালে দেশটি রফতানি করে পাঁচ হাজার ৫৬০ কোটি ডলারের অস্ত্র। এর আগের চার বছরে মার্কিন অস্ত্র রফতানির পরিমাণ ছিল, ২০১৭ সালে চার হাজার ১৩০ কোটি ডলার, ২০১৬ সালে তিন হাজার ৩৬০ কোটি ডলার, ২০১৫ সালে চার হাজার ৭০০ কোটি ডলার এবং ২০১৪ সালে তিন হাজার ৪২০ কোটি ডলার।

এফএমএস-এর এক বিবৃতিতে বলা হয়, ফরেন মিলিটারি সেলস-এফএমএস প্রোগ্রামের আওতায় এসব অস্ত্রশস্ত্র বিক্রয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৫২ কোটি ডলার অর্থ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিদেশী সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি কর্মসূচি, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃপক্ষের তহবিল থেকে দেয়া হয়েছে ৪৪২ কোটি ডলার এবং অংশিদার দেশগুলো দিয়েছে বাকি চার হাজার ৭৭১ কোটি ডলার। কোন দেশগুলো অর্থায়ন থেকে উপকৃত হয় সেই তালিকা প্রকাশ করে না মার্কিন কর্তৃপক্ষ এবং অস্ত্র বিক্রির চূড়ান্ত রিপোর্ট এক বছর পরপর প্রকাশ করে। তবে ডিএসসিএ কর্তৃক কংগ্রেসে প্রেরিত প্রজ্ঞাপনের ভিত্তিতে আনাদোলু এজেন্সি কর্তৃক প্রকাশিত তথ্য হচ্ছে, বেশির ভাগ অস্ত্র বিক্রি হয়েছে পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ন্যাটো মিত্রদের ওপর অস্ত্র কেনার বিষয়ে এবং প্রতিরক্ষা ব্যয় কমপক্ষে জিডিপির শতকরা ২ ভাগ বৃদ্ধির ব্যাপারে চাপ দিয়ে আসছেন। নিরাপত্তা দেওয়ার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রকে অর্থ পরিশোধ করার ওপর জোর দিয়েছেন। কেউ রাশিয়া থেকে অস্ত্র কেনার চুক্তি করতে গেলেই সে দেশের বিরুদ্ধে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিষেধাজ্ঞার হুমকি দিচ্ছেন। ট্রাম্পের এ কৌশল, অস্ত্র রফতানি বাড়ানোর বিষয়ে গত এপ্রিল থেকে নেয়া বিশেষ পরিকল্পনা ইউরোপীয় দেশগুলোতে অস্ত্র রফতানি বাড়াতে সাহায্য করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। 

২০১৮ অর্থবছরে পশ্চিম ও পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে তিন হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাব কংগ্রেসের অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে বিমান ও হেলিকপ্টার। জানুয়ারিতে পাঠানো একটি মেমোতে [জি ১] উল্লেখ করা হয়েছে যে, ৬৫৩ কোটি ডলারের ৩৪টি এফ-৩৫ বিমান কিনেছে বেলজিয়াম। তিনটি সি-১৩০ এবং তিনটি কেসি-১৩০জে সামরিক কারগো বিমান ১৪০ কোটি ডলারে বিক্রি করা হয়। ফেব্রুয়াারিতে নেদারল্যান্ডস ২৮টি এএইচ-৬৪ডি অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টার কিনেছিল ১২০ কোটি ডলারে, এপ্রিল মাসে স্পেন ১৩০ কোটি ডলারে ১৭টি সিএইচ-৪৭ এফ চিনুক কিনেছিল। গ্রিসের সাথে ‘৭০-৭২ ব্লক’ আধুনিকীকরণ ও ভি সিরিজের এফ-১৬ বিক্রির ২৪০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি হয়। এ ছাড়া যুক্তরাজ্যের কাছে ১৩০ কোটি ডলারের বিভিন্ন সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি করা হয়েছিল। সামগ্রিকভাবে পশ্চিম ইউরোপীয় দেশগুলোতে বিক্রি হয়েছিল এক হাজার ৪০০ কোটি ডলারের বেশি অস্ত্র।

উত্তর ও পূর্ব ইউরোপে রাশিয়ার সীমান্তের দেশ সুইডেন, ফিনল্যান্ড, স্লোভাকিয়া, লাটভিয়া এবং পোল্যান্ডে মোট এক হাজার ৮৪০ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম বিক্রি হয়েছে যা মোট বিক্রির তিন ভাগের এক ভাগ। পোল্যান্ডই এক হাজার ১৩০ কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্র কিনেছে।

ডিএসসিএ সূত্র অনুযায়ী, এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম প্যাট্রিয়েট কেনার জন্যই সবচেয়ে বড় চুক্তি করেছে পোল্যান্ড। প্যাট্রিয়েট ও এর সাথে সংশ্লিষ্ট উপকরণেই এক হাজার ৫০ কোটি ডলার ব্যয় করেছে দেশটি। ২৫ কোটি ডলারের হিমার্স রকেট সিস্টেম এবং ২৫ কোটি ডলারের মাঝারি স্কেলের এয়ার-টু-এয়ার এআইএম ১২০সি ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে পোল্যান্ড। এসবের সাথে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র কেনার চুক্তিও ছিল।

স্লোভাকিয়া ২৯০ কোটি ডলারের ১৪টি এফ-১৬ভি যুদ্ধবিমান কিনেছে। এয়ার মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম প্যাট্রিয়েট ও অন্যান্য উপকরণ কেনার জন্য সুইডেনকে দিতে হয়েছে ৩২০ কোটি ডলার। ফিনল্যান্ড বিভিন্ন অস্ত্র ক্রয় ও সামরিক ব্যবস্থার উন্নতির জন্য ৮০ কোটি ৪০ লাখ ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।

এশিয়াতে চীন ও উত্তর কোরিয়ার সাথে উত্তেজনা তুঙ্গে। ভারত, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও অস্ট্রেলিয়ায় ৮৫০ কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। জাপান ৯টি ই-২ডি নজরদারি এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে সতর্কবার্তা দিতে পারার বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন বিমান কিনতে ব্যয় করেছে ৩৪০ কোটি ডলার। দক্ষিণ কোরিয়া ৬টি পিএ-৮ টিপি নজরদারি বিমান এবং ৬৪টি প্যাট্রিয়েট-৩ মিসাইলের জন্য ২৬০ কোটি ডলার দিতে রাজি হয়েছিল। এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনতে রাশিয়ার সাথে ৫০০ কোটি ডলারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের ওপর নাখোশ হয়েছে। অথচ ভারত ছয়টি এএইচ ৬৪ অ্যাপাচি অ্যাটাক হেলিকপ্টারের জন্য ৯৩ হাজার কোটি ডলারের চুক্তি করেছে। ১১০ কোটি ডলারের সামরিক সরঞ্জাম কিনেছে অস্ট্রেলিয়া।

ট্রাম্প প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর উপসাগরীয় এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি বেড়ে গিয়েছিল। তবে চলতি বছর তা কমে এসেছে। সৌদি আরব ২২০ কোটি ডলারের অস্ত্র চুক্তির মাধ্যমে উপসাগরীয় অঞ্চলে অস্ত্র ক্রয়ে শীর্ষে অবস্থান করছে। দেশটির অস্ত্র আমদানি বেড়েছে ২২৫ ভাগ। কাতার ১৫৭ কোটি ডলার এবং বাহরাইন ১৩০ কোটি ডলারেরও বেশি মার্কিন সামরিক সরঞ্জামাদি কিনেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
দোয়ারাবাজারে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা : স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট খালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায় আরো ৩ দিনের হিট অ্যালার্ট তাপপ্রবাহ মে পর্যন্ত গড়াবে

সকল