২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

তুরস্কের জনগণ চায় পুনরায় বিজয়ী হবেন এরদোগান

তুরস্কের জনগণ চায় পুনরায় বিজয়ী হবেন এরদোগান - সংগৃহীত

আজ তুরস্কে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সংসদ ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিশাসিত ব্যবস্থায় প্রবেশের পর এটাই তুরস্কের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও সংসদ নির্বাচন। গত ১৬ বছরে শাসনামলে এবারই প্রথম এরদোগানের মোকাবেলায় শক্তিশালী বিরোধী জোট গঠিত হয়েছে। বিরোধীদলের সব পরিকল্পনা এরদোগানের ক্যারিশমেটিক নেতৃত্বের কাছে পরাজিত হবার সম্ভাবনাই বেশি। যেসব কারণে এরদোগান পুনরায় বিজয়ী হবার সম্ভাবনা রয়েছে:

এরদোগানের উন্নয়ন পলিসি

আদর্শিক কারণে যারা এরদোগানকে অপছন্দ করে তারাও এরদোগানের নেতৃত্বে ইউরোপের মতো তুরস্কের উন্নয়ন পলিসিকে পছন্দ করে। শিক্ষা, চিকিৎসাসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে এরদোগান জনগণের হৃদয়ে যে অবস্থান করে নিয়েছে তা এত দ্রুত ভেঙে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

সফল পররাষ্ট্রনীতি

ইউরোপ এবং আমেরিকার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক না থাকলেও সম্প্রতি বছরগুলোতে ইরান, রাশিয়া এবং চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্কের অনেক উন্নয়ন ঘটেছে। গত তিন মাস আগে সিরিয়ার আফরিনে সফল অভিযান সাধারণ তার্কিশদের মনে এরদোগানের অবস্থান আরও শক্তিশালী হয়েছে।

পিকেকে বিরোধী অভিযান

গত কয়েক বছরে পিকেকের আত্মঘাতী হামলায় তুরস্কের কয়েক শতাধিক জনগণ নিহত হয়েছে। গত বছরে সরকার বেশ কয়েকটি অভিযানে পিকেকের শক্তিশালী কিছু ঘাঁটি ধ্বংসের পাশাপাশি বড়সংখ্যক সন্ত্রাসীদের সীমান্তের ওপারে পাঠিয়ে দিয়েছে। পিকেকের উপস্থিতিতে পূর্ব তুরস্কে কখনোই শান্তিপূর্ণভাবে জনগণ ভোট দিতে পারত না। অধিকাংশ সন্ত্রাসীদের অনুপস্থিতিতে কুর্দিশ-অধ্যুষিত পূর্ব তুরস্কের ধার্মিক কুর্দিশদের ভোট অতীতের মতো এরদোগান পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর যদি কুর্দিশ দল এইচডিপি জাতীয়ভাবে ১০ শতাংশের কম ভোট পায় তাহলে তারা আর কোনো আসন পাবে না। সেক্ষেত্রে এই অঞ্চলের ৯০ শতাংশ আসন ২০০২, ২০০৭ ও ২০১১ এর মতো এরদোগানের একে পার্টির ঘরে চলে আসবে। সেক্ষেত্রে এরদোগানের আসন সংখ্যা ৩৫০ পেরিয়ে যেতে পারে।

বিদেশি ভোটে পুনর্জাগরণ

ইউরোপের দেশগুলো এরদোগানের সব প্রকার প্রচারণায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একই সঙ্গে পুলিশের সহযোগিতায় বিরোধী দল প্রচারণা চালাচ্ছে। তার্কিশদের সঙ্গে বিমাতাসুলভ আচরণকারী ইউরোপিয়ান শক্তিদের এমন ব্যবহারে সামগ্রিকভাবে এরদোগান ও একে পার্টির জনপ্রিয়তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে।

জাতীয়তাবাদী দলগুলোর ভোট

তুরস্কের তৃতীয় বৃহত্তম দল ডানপন্থী জাতীয়তাবাদী (এমএইচপি) এবং ইসলামপন্থী জাতীয়তাবাদী দল বুয়ুক বির্লিক পার্টি এই নির্বাচনে এরদোগানের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছে। গত নির্বাচনে এমএইচপি ১১.৯০ শতাংশ ভোট এবং ৪০টি আসন পেয়েছিল। এই নির্বাচনের আগে তাদের সাবেক নেত্রী মেরাল আকসেনার দলীয়প্রধান না হতে পেরে ৫ জন এমপিসহ দল থেকে পদত্যাগ করে ইয়ি বা গুড পার্টি গঠন করে। সাধারণ তার্কিশদের মতে ইয়ি পার্টি এমএইচপির ৪-৫ শতাংশ ভোট কাটতে পারে। তারপরেও বাকি ৭-৮ শতাংশ ভোট এমএইচপি পাবে। জোটবদ্ধ হওয়ায় তাদের ৭-৮ শতাংশ ভোটে এরদোগান তথা একে পার্টি যথেষ্ট লাভবান হবার সম্ভাবনা বেশি। অপরদিকে বুয়ুক বির্লিক পার্টি গত নির্বাচনে তাদের অর্জিত ১ শতাংশ ভোট এবার একে পার্টির ঘরে আসবে বলেই ধরা হচ্ছে।

তুরস্কের ধার্মিক এবং নারী ভোট

এমন একসময় ছিল যখন তুরস্কে আজান চালুর কারণে প্রধানমন্ত্রী আদনান মেন্দেরেসকে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছিল, ইফতার প্রোগ্রামের কারণে নাজিমুদ্দিন আরবাকানকে পদচ্যুত করা হয়েছিল, দীর্ঘ কয়েক দশক সাধারণ নারীরা বোরকা পরার অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিল। লিবারাল মুখোশে এরদোগান ধারাবাহিকভাবে তুরস্কের সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অধিকার ফিরে দেয়ার পাশাপাশি তাদের গৌরবের ওসমানী খিলাফতের অনেক কিছুই ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তুরস্কের এই ধার্মিক শ্রেণির মানুষের ভোট অতীতের মতো এবারো এরদোগান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়াও এরদোগান তুরস্কের নারীদের মধ্যে অসম্ভব রকম জনপ্রিয়। নারীদের এই ভোটগুলো সহজে হাতছাড়া হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।


গ্রামীণ ভোট

তুরস্কের শহরের ভোটে এরদোগান এবং অন্যান্য দলগুলোর মধ্যে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা আবার কখনো এরদোগান কম ভোট পেলেও সমগ্র তুরস্কের গ্রামীণ ভোটগুলো একচেটিয়া একে পার্টি তথা এরদোগানের ঘরে যায়। এবারো এর ব্যতিক্রম হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। এটা সত্য যে তুরস্কের এলিট শ্রেণির ভোটগুলো সিএইচপির তথা আতার্তুকের দলে গেলেও সবচেয়ে বেশি মধ্যবিত্ত এবং ধার্মিক শ্রেণির মানুষের ভোটগুলো আবারো এরদোগান পাবে বলেই আশা করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ নির্বাচন ১৯২৩ সাল থেকে থেকে যে পদ্ধতিতে তুরস্ক পরিচালিত হচ্ছিল, সে পদ্ধতির পরিবর্তন ঘটবে। এতদিন ধরে চলে আসা বহু পদ বিলুপ্ত হবে। সংসদীয় ব্যবস্থায় সাবেক নির্বাহী প্রধান প্রধানমন্ত্রী পদ আর থাকবে না। এখন নির্বাহী প্রধান হবেন প্রেসিডেন্ট।  তুরস্ক নির্বাহী প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির দিকেই যাক বা পার্লামেন্টারি ব্যবস্থার দিকেই ফিরে আসুক, ক্ষমতার পৃথকীকরণকে সম্মান করা উচিত। বিচার বিভাগ স্বাধীন থাকতে হবে। জাতিগোষ্ঠিগত প্রেক্ষাপট, ধর্মীয় বিশ্বাস ও অথবা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্বিশেষে তুরস্কের সকল নাগরিকের সমান অধিকার থাকতে হবে। এটাই তা যা তুরস্ক চায়, এটাই তুরস্কের প্রাপ্য।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল