সেদিন সকালে কী যেন একটা কাজে মফিজ ভাইয়ের বাড়ির দিকে যাচ্ছি। মফিজ ভাইয়ের বাড়ির উঠোনে তাকিয়ে দেখি উঠোনভর্তি মানুষ। বিষয়টা কী! জানার জন্য মনের ভেতর উথালপাথাল ঢেউ উঠল। এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে মফিজ ভাইয়ের উঠোনবাড়িতে গেলাম। আরে এ কী? মফিজ ভাইকে খুঁটির সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে কেন? বিষয়টা কী! জানার চেষ্টা করলাম। মফিজ ভাইয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও দেখি উপস্থিত। মফিজ ভাইয়ের শালার কাছে জানতে চাইলাম কাহিনী কী? চোরের মতো করে এমন বেঁধে রাখার কারণ!
আমার প্রশ্ন শুনে মফিজ ভাইয়ের শালা বলতে শুরু করলÑ
আসলে হয়েছে কি ভাইজান। মফিজ নাকি গাঁয়ের বাড়ি বাড়ি শাড়ি কাপড় বিক্রি করার ব্যবসা করবে। সেদিন রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে আমার বোনের সাথে, এই নিয়ে পরিকল্পনা করছে। মফিজ ভাইয়ের কথা শুনে আমার বোন নাকি বলছে, তুমি কাপড়ের ব্যবসা করবা এইটা তো ভালো কথা! তুমি এই ব্যবসা করলে আমার জন্য ভালো হবে। মাঝে মাঝে আমিও দু-এক খান, শাড়ি পছন্দ করুম। নতুন নতুন শাড়ি পরে বাবার বাড়ি ঘুরতে যামু। তবে এখনো আমার মফিজ দুলাভাই ব্যবসা শুরু করেনি।
অথচ কাল রাতে আমার বোনকে পিটাইয়া শরীর ব্যথা করে ফেলছে। এমনকি আমাদের গোষ্ঠী উদ্ধার করে বোনরে গালিও দিছে। শুধু তাই নয়, আমার বোনে নাকি ওর ব্যবসায় লালবাতি জ্বালাই দিছে। এ কারণে আমার বোনকে ও অনেক পিটুনি দিছে।
আমার বোনের দোষ একটাইÑ ও নতুন একটা শাড়ি পরছে। অথচ এই শাড়ি আমার বড় ভাই কাল আমার বোনকে কিনে দিছে।
মফিজ ভাইয়ের শালার কথা শুনে আমি বেশ বড় রকমের ধাক্কা খেলাম। বলে কী রে বাবা! এ যেন গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল দেয়ার মতো অবস্থা। যা হোক, মফিজ ভাইকে এমন করে বেঁধে রাখার কারণ কী, জানতে চাইলাম। এবার মফিজ ভাইয়ের শালা বলল, আর কইয়েন না ভাই। এই মফিজ ভাইয়ের কারণে গ্রামে আমাদের আর মানসম্মান কিছুই রইল না।
আমি বললাম, কেন? মফিজ ভাই আবার কী করল!
এবার মফিজ ভাইয়ের শালা বলল, শহর থেকে দুই নাম্বার শাড়ি কিনে এনে মফিজ ভাই আমাদের গ্রামে গিয়ে বাড়ি বাড়ি বিক্রি করে। এখন আপনি বলেন, গ্রামে আমরা মুখ দেখাই কী করে! আর এই দুই নাম্বার শাড়ি বিক্রি করে আমাদের ইজ্জত লিক কইরা দিছে। তাই এমন করে বেঁধে রাখা হইছে।
মফিজ ভাইয়ের শালার এমন কথা শুনে আমি পড়লাম মহাবিপদে। ঠিক বুঝতে পারলাম না এ মুহূর্তে আমার কী করা উচিত? তবে আমি যে এই মুহূর্তে পাগলদের মাঝে উপস্থিত আছি, এটা না বললেও আপনারা বুঝতে পারছেন। তাই আমিও দিগি¦দিক না তাকিয়ে পা থেকে জুতা খুলে হাতে নিয়ে দিলাম ভোঁ-দৌড়।
আর ওই দৌড়ের কারণে সেদিনের ওই কাজের কথা ভুলে গেছি।
তয় আবার সামনে একখান গল্প লইয়া আহুম তহন আপনাদের ওই কাজের কথা বলুমনে।
সেই পর্যন্ত সবাই কুল কুল ঠাণ্ডা পানি খাইয়া অপেক্ষায় থাকুন।
আমি চললাম, বাইরে যে ঠাডা পড়া গরম পড়ছে আজ।