২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মোদি না রাহুল : কেমন হবে ভারতের নির্বাচন

রাহুল গান্ধী ও নরেন্দ্র মোদি - ছবি : সংগৃহীত

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে গণতন্ত্রের সবচেয়ে বড় চর্চা হতে যাচ্ছে সদ্য শুরু হওয়া এ বছরে। কেরালা রাজ্যের সমুদ্রতীরবর্তী শহর, হিমালয়ের পাহাড়ি গ্রাম বা গাঙ্গেয় সমভূমির ধুলোয় ঢাকা শহরগুলোর প্রায় ৮৫ কোটি মানুষ আগামী মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে ভোট দেবে ভারতের জাতীয় নির্বাচনে। এত দিন এটি একতরফা হবে মনে হলেও হঠাৎ করেই তা প্রতিযোগিতাময় হয়ে উঠেছে। 

গত কয়েক মাসেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে মনে হচ্ছিল অজেয়। ২০১৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক আকারে জয় পাওয়ার পর বিভিন্ন রাজ্যের নির্বাচনেও জয় পাচ্ছিল মোদির দল বিজেপি। অন্যদিকে যাদের নেতৃত্বে ৭০ বছর আগে ভারত স্বাধীনতা লাভ করেছিল, সেই কংগ্রেস ধীরে ধীরে পেছনে পড়ে যাচ্ছিল। বিজেপির নেতৃবৃন্দ বলতে শুরু করেন, দেশ শিগগিরই ‘কংগ্রেসমুক্ত’ হবে।

কিন্তু ভারতের রাজনীতিতে কয়েক মাসও একটি লম্বা সময়। ২০১৮ জুড়ে মোদির চারপাশে যে আবহ ছিল ২০১৯-এ প্রবেশ করার সময় মোদির পাশে সে আবহ অনুপস্থিত। ডিসেম্বরেই কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে কংগ্রেস যেন তার জীবন ফিরে পেয়েছে, যে নির্বাচনগুলোকে ২০১৯-এর নির্বাচনের আগে সেমিফাইনাল বলে ধরা হচ্ছিল। নির্বাচনপূর্ব জরিপে দেখা গিয়েছিল, ভারতীয় ভোটাররা মোদির পাশেই আছে। কিন্তু নির্বাচনের ফলে দেখা গেছে, ভোটাররা তার বিরুদ্ধে ভোট দিতেও আগ্রহী। 

হরিয়ানার অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গিলিস ভারনিয়ার বলেন, বিজেপি ভারতের মাটিতে অনেক জায়গা হারিয়েছে। তাদের ভোট উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে। আর এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে শহর ও গ্রাম উভয় ক্ষেত্রেই তাদের এই নি¤œগামিতা প্রায় একই রকম। 
রাজনীতির ক্ষেত্রে ভারতের পরিস্থিতি একটু জটিল। দলগুলো একেক জায়গায় একেকভাবে প্রচারণা চালায়। কিন্তু মোদির ক্ষেত্রে বড় আকারে যে বিষয়টি কাজ করছে তা হচ্ছে কর্মসংস্থান। যদিও অন্যান্য বড় দেশের তুলনায় ভারতের অর্থনীতি দ্রুত বাড়ছে কিন্তু দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার সাথে তাল মিলিয়ে তা কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে না। আগামী কয়েক বছরের হিসাবে ভারতে প্রতি মাসে ১০ লাখ তরুণের বয়স ১৮ তে পৌঁছাবে। ফলে বেকারত্বের হারও ঊর্ধ্বমুখী। গত মার্চে ভারতের রেলওয়ে মন্ত্রণালয় জানায়, তাদের এক লাখ পদের জন্য দুই কোটি আবেদন জমা পড়েছিল। 

মোদি অবশ্য এ ধরনের পরিসংখ্যানগুলোকে অবিশ্বস্ত বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন, যারা অনানুষ্ঠানিকভাবে নগদ টাকার বিনিময়ে কাজ করে তাদের এসব পরিসংখ্যানে যুক্ত করা হয়নি। পিউ রিসার্চ সেন্টার বলেছে, অর্থনীতিতে ভারতীয়দের আস্থা গত বছরের তুলনায় ২৭ শতাংশ কমে গিয়েছে। যেকোনো দেশের ক্ষেত্রে হারটি সর্ববৃহৎ। এ ছাড়া ভিন্ন ক্ষেত্র হলেও ভোটের মাঠে গুরুত্বপূর্ণ অংশ ভারতের কৃষক সমাজ গভীর হতাশায় পতিত হয়েছে। ছোলা, পেঁয়াজ ও তেলবীজের মতো বিভিন্ন শস্যের দাম ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ায় তাদের মধ্যে এ হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।

ভারতে ৭০ শতাংশ লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষি থেকে জীবিকা অর্জন করে। বিভিন্ন ধরনের ক্ষোভ থেকে গত ১২ মাসে তারা পাঁচবার দিল্লি অভিমুখে র্যালি করেছে। কয়েকজন অর্থনীতিবিদ ধারণা করছেন, কালো টাকা থেকে রক্ষা পেতে ২০১৬ সালে মোদি হঠাৎ করে ৫০০ ও ১০০০ রুপি মূল্যমানের নোট সরিয়ে ফেলার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তা এখনো ভারতের গ্রামাঞ্চলের লোকজনকে প্রভাবিত করছে। মোদির ওই পদক্ষেপে দেশজুড়ে কয়েক মাস নগদ অর্থের ঘাটতি ছিল এবং জিডিপি দুই শতাংশ কমে যায়। 

২০১৪ সালে মোদি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তিনি এক কোটি লোকের কর্মসংস্থান করবেন এবং প্রত্যেক নাগরিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১৫ লাখ রুপি থাকবে এমন ব্যবস্থা করবেন। বাস্তবতা হলো, চার বছর পর ভারতবাসীর জীবনে সামান্যই পরিবর্তন এসেছে এবং জনগণকে সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তনও আসেনি। 

বরং এ সময় বিজেপি যে বিষয়গুলোতে বেশি ব্যস্ত ছিল, সেগুলো হচ্ছে, (মুসলিমদের কাছ থেকে) গরু রক্ষা করা, (মুসলমান হওয়া থেকে) হিন্দু মেয়েদের রক্ষা করা এবং অযোধ্যায় (বাবরী মসজিদের স্থলে) একটি মন্দির নির্মাণ করা। তবে এখন পর্যন্ত মোদি তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী কংগ্রেসের সভাপতি রাহুল গান্ধির চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। এতে ধারণা করা হচ্ছে, মোদি আগামীতেও প্রধানমন্ত্রী থাকছেন। কিন্তু বিষয়টি আগের মতো অতটা জোরালো নয় বরং এ ক্ষেত্রে তাকে জোটের ওপর আরো বেশি নির্ভরশীল হতে হবে। সব মিলিয়ে নির্বাচনের প্রাক্কালে এসে ভারতের দলগুলোর হিসাব-নিকাশ আগের মতো সরল থাকছে না। 
সূত্র : গার্ডিয়ান


আরো সংবাদ



premium cement

সকল