২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

৩৭ বছর বয়সে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন সেই মা

দুই বছর আগে ২০১৭ সালে নিজের ছেলের সাথে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফলাফল করে আলোচনায় আসা সেই মা মলি রাণী কুণ্ডু এবার অংশ নিয়েছেন এইচএসসি পরীক্ষায় - নয়া দিগন্ত

বয়সের বাধাকে উপেক্ষা করে নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ছেলের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ন হওয়া আলোচিত সেই মা মলি রাণী ৩৭ বছর বয়সে এবার এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাগাতিপাড়া টেকনিক্যাল এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউট কেন্দ্র্রে পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। আলোচিত মলি রাণী কুণ্ডু ওই কলেজের উদ্দ্যোক্তা উন্নয়ন ট্রেডের ছাত্রী।

এদিকে ছেলে মৃন্ময় কুমার কুণ্ডু মায়ের সঙ্গে এসএসসি পাশের পর নাটোর শহরের টিএমএসএস পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা করছেন। তিনি বর্তমানে চতুর্থ সেমিষ্টার ফাইনাল পরীক্ষার্থী।

এর আগে ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ছেলের চেয়ে ভাল ফলাফল করেন মা মলি রাণী। ওই বছর এসএসসি পরীক্ষায় মা মলি রাণী পেয়েছিলেন জিপিএ ৪.৫৩ এবং ছেলে মৃন্ময় কুমার কুণ্ডু পায় জিপিএ ৪.৪৩। কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে মলি বাগাতিপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ড্রেস মেকিং এন্ড টেইলারিং ট্রেডের এবং ছেলে মৃন্ময় বাগাতিপাড়া মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিল্ডিং মেইনটেনেন্স ট্রেডের শিক্ষার্থী ছিলেন।

বয়সকে হার মানিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ভালো ফলাফল করার পর উদ্যোমী ওই নারী মলি রাণী কুণ্ডুকে নিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। এরপরই আলোচনায় আসেন তিনি।

সে সময় মলি রাণীর সাফল্যে তৎকালীন এমপি এ্যাডভোকেট আবুল কালাম, ডিসি শাহিনা খাতুন, সদ্য প্রয়াত বইপ্রেমী পলান সরকার তার বাড়িতে ছুটে যান। আর তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক মা ও ছেলেকে ডিসি অফিসে আনুষ্ঠানিকভাবে ল্যাপটপ উপহার দেন। উপজেলা প্রশাসন মা দিবসে সংবর্ধনা দেয় মা মলিকে। এরপর তিনি ভর্তি হন কলেজে। কলেজের অধ্যক্ষ শরীফ উদ্দিন আহম্মেদ বিনা খরচায় তার পড়ালেখার দায়িত্ব নেন।

মলি রাণী জানান, যখন তিনি নবম শ্রেণীর ছাত্রী, তখন তার বাবা বাগাতিপাড়া উপজেলার গালিমপুরের মিষ্টি ব্যবসায়ী দেবব্রত কুমার মিন্টুর সাথে বিয়ে দেন। তার বাবার বাড়ি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামে। বাবার নাম অসিত কুণ্ডু। এরপর আর পড়ালেখা করার সুযোগ হয়নি। সংসারের চাপে গৃহিনীই রয়ে যান। এরই মধ্যে দুটি সন্তানের মা হন তিনি।

তিনি আরো বলেন, বড় ছেলের নাম মৃন্ময় কুমার কুণ্ডু এবং ছোট ছেলের নাম পাপন কুণ্ডু। ছেলেদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে তিনি অনুভব করেন তার নিজেরও পড়ালেখা জানা দরকার। সেই ভাবনা থেকেই স্কুলে ভর্তি হন তিনি।

আরো পড়ুন : একইসাথে এইচএসসি পাস করলেন মা ছেলে ও খালা

মোঃ শহীদুল হক সরকার, নাটোর, (২৪ জুলাই ২০১৭)

গত এসএসসি পরীক্ষায় নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজলার গালিমপুরের মা মলী রাণী কুন্ডু এবং ছেলে মৃন্ময় কুমার কুন্ডু একসাথে অংশ নিয়ে ভালোভাবে পাস করে নাটোরসহ দেশে আলোচনায় ওঠে এসেছিলেন। আর এবারে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় একইসাথে মা, ছেলে এবং ছেলের খালা পাশ করে আলোচনার ঝড় তুলেছেন।

ছেলের সাথে অংশ নিয়ে ছেলেকেই টপকে ভালো ফলাফল করেছেন মা। আর ছেলের মাকে টপকে আরো ভালো ফলাফল করেছে ছেলের খালা। এমন ফলাফলে এখন আনন্দের জোয়ার বইছে নাটোর শহরের মল্লিকহাটি এলাকার রুহুল আমিনের বাড়িতে।

চলতি বছর কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেড থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেয় রুহুল আমিনের ছলে রাকিব আমিন। সে পেয়েছে জিপিএ ৩.৬৭।

গত ১৯৯৫ সালে এসএসসি পাশ করেন রুহুল আমিনের স্ত্রী শাহানাজ বেগম। তারপর আর পড়া হয়নি তার। এক ছেলে ও এক মেয়ের মা শাহানাজ বেগম তার সন্তানদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে নিজে আবারও পড়াশোনার প্রতি টান অনুভব করেন। তাই ২২ বছর পর আবানো নাটোর মহিলা কলেজ এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেনে তিনি। অর্জন করেন জিপিএ-৪.৮৩।

শাহনাজ বেগমের বড় এক ফুপাতো বোন মমতা হেনা যখন দেখলেন তার মামাতো বোন এতদিন পর আবারও পড়াশোনা শুরু করেছে, তখন তিনিও শুরু করেন পড়াশোনা। গত ১৯৯৩ সালে এসএসসি পাশ করার ২৪ বছর পর আবারো হাতে তুলে নেন বই-খাতা। দুই বোন একই কলেজে কম্পিউটার অপারেশন ট্রেডে ভর্তি হয়ে চলতি বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। মমতা হেনা অর্জন করেন জিপিএ-৪.৮৮।

একই পরিবারের এই তিনজনকে একসাথে পাশ করার খবর জেনে তাদের একনজর দেখতে অনেকেই ভীড় জমাচ্ছেন শহরের মল্লিককহাটির বাড়ীতে। ছেলের সাথে ২২ বছর পর পরীক্ষা দিয়ে এমন ফলাফল অর্জনের বিষয়টি এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না রাকিব আমিনের মা শাহনাজ বেগম।

তিনি জানান, এই ফলাফলের নেপথ্যে যা কাজ করেছে তা হলো তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি। অনেক কষ্ট করে ছেলে মেয়েকে বড় করার পর নিজেরও মনে হয়েছে একটু পড়াশোনা করতে পারলে ভালো হতো। কিন্ত দুই সন্তানের পর নিজের পড়ালেখার খরচ চালানোর সামর্থ্য তার ছিলো না। আবার পড়াশোনা শুরু করার ইচ্ছার কথা শুনে এগিয়ে আসেন বাবা হাজী শাহজাহান আলী ও ভাই কাউসার আলী। পড়াশোনার জন্য বই-খাতা কিনে দেন ভাই, পড়তে সহযোগিতা করে ছেলেমেয়ে আর ফর্ম পূরণের টাকা দেন বাবা। স্বামী দিয়েছেন অনুপ্রেরণা। এভাবেই তার অর্জন এই ফলাফল। এখন তার উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের আকাঙ্ক্ষা আরো বেড়ে গেল। সুযোগ পেলে তিনি আরও পড়াশোনা করতে চান।

পাসের খবরে মমতা হেনা খুশিতে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলেন, ‘নতুন করে পড়াশোনা করতে গিয়ে উৎসাহ পেয়েছি আমার ভাই ও মেয়ের কাছে। আর বাকিরা করেছে উপহাস-বিদ্রুপ। পড়তে গিয়ে আর্থিক টানাপোড়েনও পোহাতে হয়েছে অনেক। অন্যদের মতো প্রাইভেট পড়তে পারিনি, ভাই ও মেয়ে তখন সাহায্য করেছে। নতুন বই কিনতে পারিনি, পুরনো বই কিনেছি। দুই বোন মিলে একসেট বই কিনে পড়েছি। বড় মেয়ের টাকায় ফর্ম পূরণ করেছি। এভাবেই প্রতিকূলতাকে জয় করে আজ পাস করলাম, এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে? ’

মায়ের ভালো ফলাফলে খুব খুশি ছেলে রাকিবও। রাকিব জানায়, অর্থিক সমস্যার কারণে তার তিনটি বই কেনা হয়নি। ধার করতে হয়েছে অন্যদের থেকে। তার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করলেও কোনো কষ্ট নেই বরং আনন্দ এজন্য যে, তার মা ও খালা এতকিছুর পরও প্রমাণ করতে পেরেছেন, ইচ্ছা থাকলেই সব কিছু করা যায়।


এদিকে মেয়ে ও নাতির ভালো ফলাফলের খবরে খুশি শাহানাজ বেগমের বাবা হাজী শাহজাহান আলী। তিনি বলেন, জীবন সায়াহ্নে এসে এমন ঘটনা তাকে গর্বিত করেছে। তিনি বলেন, মেয়ে ও নাতির জন্য তিনি সাধ্যমত সবকিছুই করবেন। রাকিব আমিনের বাবা রহুল আমিনও খুশি স্ত্রী-সন্তানের ফলাফলে। তিনি বলেন, একজন স্বামী ও বাবা হিসেবে আমি গর্বিত। ছেলের সাথে মায়ের পড়ার সময় অবাক হয়েছিলাম আমি। ভাবনা ছিল পারবে কি না। অথচ সব শঙ্কা দূর করে আর দশজনের মতো রাকিবের মাও পাস করল ভালো ফলাফল করে।

মমতা হেনার কন্য সুরাইয়া সূচী বলেন, গত বছর আমি এইচএসসি পাস করার পর আমার মাকে আবারও পড়তে বলি। কেননা আমি যখন মায়ের গর্ভে তখন আমার জন্য তিনি পড়ালেখা ছেড়েছিলেন। আমার কথায় মা আজ পরীক্ষা দিয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করেছেন এর জন্য আমার আনন্দের সীমা নেই। আজকে আমার মায়ের জন্য আমরাও গর্বিত।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন হাত কাটা বন্দীর নেতানিয়াহুর সমালোচনা ইসরাইলের আলটিমেটাম, যা বলল হামাস রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থনের বিরুদ্ধে ব্লিংকেনের হুঁশিয়ারি

সকল