২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মহাসড়কে টোল : হিতে বিপরীত না হয়

-

সেতুর পাশাপাশি এবার মহাসড়ক ব্যবহার করলে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশ দিয়েছেন সেতুর পাশাপাশি মহাসড়ক থেকে টোল আদায়ের। ১৪তম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় এ নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তার এ নির্দেশ গণমাধ্যমে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ‘ব্রিজে আমরা টোল নিই। সড়ক নয়, জাতীয় মহাসড়কগুলোতে থাকা (যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক) ব্রিজ ছাড়াও রাস্তার ওপর টোল বসানো হবে। সারা বিশ্বে তাই আছে। টোলে কত টাকা নির্ধারণ হবে, তা বসে ঠিক করা হবে। এ টাকা ব্যয় করা হবে রাস্তা মেরামতে। পশ্চিমা দেশে এটা খুবই জনপ্রিয়। এটিকে তারা বলে ‘ইউজার পেইড’ বা ব্যবহার করেন, পেমেন্ট করেন। এ টোলের টাকা আলাদা অ্যাকাউন্টে যাবে। এগুলো রাস্তার মেরামতে ব্যয় করা হবে। কিভাবে টোল আদায় হবে তা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে আমরা যেটা দেখেছি, সেকশন সেকশন হয়। ধরুন, ২০০ মাইল রাস্তা। প্রত্যেক ৫০ মাইল রাস্তায় একটা গেট থাকে। স্থানীয় গাড়িগুলো ১০ মাইল গিয়ে আরেক রাস্তায় গেলে টোল আসবে না। লং ডিসটেন্স ট্রাভেলারদের (দূরবর্তী যানবাহন) জন্য এটি হবে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজ করবেন দেশের প্রকৌশলীরা।’ এখানে অযৌক্তিক কিছু হবে না বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশে উন্নত সড়ক ব্যবস্থাপনায় আধুনিক ও বিশ্বব্যাপী অনেক নিয়মনীতি অন্তর্ভুক্ত করতে কর্মপরিকল্পনা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। গত ১০ বছর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনায় অবকাঠামোর যে সামগ্রিক অবয়ব, সেখানে সড়ক-মহাসড়ক, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের হরেক প্রকল্প দেশের বিভিন্ন জায়গায় বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। বিশেষ করে দূরযাত্রার মহাসড়কের সংযোগস্থলে চার লেনের সড়ক নির্মাণ প্রকল্প দৃশ্যমান হচ্ছে। তবে সড়ক পরিবহন বিধিতে টোল আদায়ের যে নিয়ম বাংলাদেশে, সেটি প্রচলিত আছে শুধু সেতু এবং কালভার্ট পারাপারের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে। অন্যান্য উন্নত দেশের সাথে তাল মিলিয়ে এবার মহাসড়কে চলাচলরত যানবাহন থেকে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের আওতাধীন গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে পণ্য পরিবহনের উৎসস্থলে ‘এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র’ তৈরির নতুন প্রকল্পের ওপর তার অভিমত প্রকাশের সময় মহাসড়কে টোল আদায়ের ব্যাপারটিও উত্থাপন করা হয়। টোলের অর্থে তহবিল গঠন করা হবে সেই অর্থে সড়ক-মহাসড়কের সংস্কারসহ কিছু উন্নয়ন কর্মযোগ সন্নিবেশিত করাও জরুরি।
দেশে সারা বছরই প্রায় সড়ক-মহাসড়কের বেহাল অবস্থায় গণপরিবহনের যে দুর্ভোগ যেখান সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তি চরম অবস্থায় গিয়ে ঠেকে। রাস্তাঘাটের এমন দুরবস্থায় রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত জরুরি।
এমন পরিপ্রেক্ষিতে এবার টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত নিয়েই ক্ষান্ত হয়নি সরকার, সেই অর্থ যাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ খাতটির কল্যাণ সাধন হয়, তারও রূপরেখা দেয়া হয়েছে। বিদেশে সাধারণত মহাসড়কের প্রতি ৫০ মাইল রাস্তায় একটি করে ফটক থাকে। স্থানীয় যানগুলো ১০ মাইল চলার পর অন্য দিকে মোড় নিলে টোলের আওতায় পড়ে না। এ ব্যাপারে আরো স্পষ্ট নীতিমালা আসবে বলে সরকারি তরফ থেকে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে।
টোল আদায় হবে মূলত জাতীয় মহাসড়কগুলোতে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা এবং ঢাকা-রংপুরের মহাসড়কই টোল আদায়ের মধ্যে পড়বে। সরকারের সময়োপযোগী বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যাতে কোনো অনিয়ম কিংবা দুর্নীতির আবর্তে না পড়ে তা বিবেচনায় এনে নতুন এ ব্যবস্থাপনা জোরদার করলে অর্থ সঞ্চয়ন ছাড়াও রাস্তাঘাটের নিরাপদ বলয় নিশ্চিত হবে। সেই সাথে ২১টি মহাসড়কে এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণেরও নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে সরকার বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। এ বিপুল অর্থের জোগান দিচ্ছে রাজস্ব খাত। সড়ক-মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা পণ্য পরিবহন ও যাতায়াতে নিয়মিত টোল দিলে রাজস্ব খাতের ওপর চাপ কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা সম্ভব। তা ছাড়া, অনুমোদনহীন আকৃতি এবং অতিরিক্ত ওজনের যানবাহন সড়ক-মহাসড়কে চলাচলের কারণে রাস্তার বেশি ক্ষতি হয়। অল্পদিনেই রাস্তাগুলো ভেঙে জনভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এসব নিয়ন্ত্রণ এবং জনভোগান্তি কমিয়ে আনতে মহাসড়কে টোল আদায়ের পাশাপাশি এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণ এবং সড়ক সংস্কারের ক্ষেত্রে নতুন এই নির্দেশনা কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তবে টোল আদায় এবং এক্সেল লোড নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র স্থাপনের পাশাপাশি এসব বিষয় ঘিরে যেন পরিবহন ব্যবহারকারীদের বাড়তি হয়রানি ও যানজটের শিকার হতে না হয়, সে দিকে লক্ষ রেখেই কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে।
এ ক্ষেত্রে যেন টেম্পারিং বা দুর্নীতির কোনো সুযোগ না থাকে সে বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে। তবে সর্বাগ্রে মহাসড়কের নিরাপত্তা, শৃঙ্খলা ও গতিশীলতা নিশ্চিত করতে হবে। যেখানে মহাসড়কগুলোতে সারা বছরই যানজটে যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহান, সেখানে নতুন করে টোল আদায়ের সিদ্ধান্ত এবং এক্সেল লোড কন্ট্রোল সেন্টার বসানোর পদক্ষেপ যানজট আরো বাড়িয়ে তুলবে কি না তাও ভাবতে হবে। টোলপ্লাজা যতই ডিজিটাল হোক না কেন, এটি পরিচালনায় যারা নিয়োজিত থাকবেন, তারা সৎ ও দক্ষ না হলে যানজটের বাড়তি বিড়ম্বনার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। টোল আদায়ে অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ ও গাড়ি চলাচল কিছু কমে এলে গণপরিবহন ও পণ্যবাহী যানের জন্য বিষয়টি স্বস্তিদায়ক হতে পারে।
তবে যানজট নিরসন, টোল আদায় এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে যেমনই হোক সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার বিস্তৃতি ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে সড়কের নির্মাণকাজের মান যথাযথ রাখা বাঞ্ছনীয়। তা নাহলে, টোল আদায় বা জনগণের ট্যাক্সের অর্থে সড়কের রক্ষণাবেক্ষণে কেবল অপচয়ই হবে, সড়ক যোগাযোগ মসৃণ হবে না। এ কথাও মনে রাখা প্রয়োজন, টোল আদায়কে টেম্পারিং, অস্বচ্ছতা এবং হয়রানিমূলক যেকোনো কর্মকাণ্ড থেকে মুক্ত রাখার কার্যকর পদক্ষেপ আগে গ্রহণ করতে হবে। মোটকথা এটি স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা না গেলে হিতে বিপরীত হওয়ার শঙ্কা থেকে যায়। হ
ই-মেইল : ষরশযড়হধষরভব@মসধরষ.পড়স


আরো সংবাদ



premium cement
ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড ‘মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সঙ্কটে’ ‘রাফা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা’ ৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের

সকল