১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


এক নজরে দু’টি অমীমাংসিত প্রশ্ন

-

০১. এই ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট সম্পর্কে বিশ্বের ক’জন মুসলিম অবগত বা ধারণা রাখেন : কেন মুসলিমরা শুরু থেকেই প্রচলিত অর্থে শুধু ধর্মের কাজ (নামাজ, রোজা) না করে সেই সাথে বিজ্ঞানচর্চা ও গবেষণা করে আজকের বিজ্ঞান, বিশ্ববাসীকে উপহার দিতে বিজ্ঞানের বিকাশ বা যাত্রা শুরু করেছিল?
‘মুহাম্মাদ দ্য প্রফেট অব ইসলাম’ গ্রন্থে প্রফেসর রাও লিখেছেন, কোরআন পাকে যতগুলো আয়াত মৌলিক ইবাদত সম্পর্কিত, তার চেয়ে অনেক বেশি সে সম্পর্কিত আয়াত যেখানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে প্রকৃতি বা সৃষ্টিরহস্য নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা, পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধানের। আরব মুসলমানেরা এই প্রেরণায় প্রকৃতির রহস্য নিয়ে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ শুরু করে দিয়েছিলেন, যেটা বর্তমান সময়ের বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষা ও গবেষণার মূলনীতির ভিত্তি নির্মাণ করেছে, যা অজ্ঞাত ছিল গ্রিকদের কাছে। ‘যুক্তরাষ্ট্রের একটি সর্বাধিক বিক্রীত বই হচ্ছে, ক্যারেন আর্মস্ট্রংয়ের ‘অ্যা হিস্ট্রি অব গড’। এতে বর্ণিত হয়েছে, ‘কুরআন পাকে সব সময়ই বিশেষভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে আল্লাহ পাকের নিদর্শন বা বাণীর (আয়াত) রহস্য উদঘাটনের বিষয়ে। আর এ কারণে ইসলামের অনুসারীরা যুক্তি ও কারণকে এড়িয়ে না গিয়ে গভীর মনোযোগ এবং বিশেষ কৌতূহলের সাথে পৃথিবীর সব কিছুকে পর্যবেক্ষণ করছে। এই মনোভাব ও দৃষ্টিভঙ্গির ফলে পরে দেখা যায়Ñ প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে (ন্যাচারাল সায়েন্স) মুসলামানদের এক উৎকৃষ্ট ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে, যা কখনো বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের বিরোধ বা সংঘর্ষ ঘটায়নি। অথচ খ্রিষ্টান ধর্মে সেটা দেখা গেছে।
০২. এই ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট সমগ্র বিশ্বের ক’জন অবগত এবং বিশ্বাস করেন?
মুসলিম জাতি আজকের বিজ্ঞানের উদ্ভাবন করেছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় পাঠাগার, লাইব্রেরি অব কংগ্রেসে সংরক্ষিত তথ্য : আজকের বিজ্ঞানের ইনভেনশন বা উদ্ভাবন করেছে ইসলাম।
(বিশ্বে আমি সম্ভবত একমাত্র ব্যক্তি যে এটা ঘটনাক্রমে দেখতে বা জানতে সক্ষম হয়েছে। কারণ আমি পদার্থবিজ্ঞানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ও শিক্ষক এবং ইসলাম নিয়ে চিন্তাভাবনা এবং কিছু গবেষণা করেছি। তা না হলে, এটি আমার দৃষ্টিতেও পড়ত না যেমনটি সেখানে অগণিত দর্শকদের নজরে পড়ে না)
১৮০০ সালে ওয়াশিংটন ডিসিতে লাইব্রেরি অব কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই পাঠাগারে ১৬ বিলিয়ন বই এবং ১২০ মিলিয়ন অন্যান্য তথ্য সংগৃহীত রয়েছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর ব্যাপার এতে ৫৪০ মাইল দীর্ঘ সেলফ রয়েছে যাতে ৯০ মিলিয়ন বই রাখা যায়। ২০০ বছরেরও বেশি পুরনো বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এই পাঠাগারের সব বই তিনটি ভবনে সংরক্ষিত। ১৮৯৭ সালের জেফারসন ম্যাগনিফিসেন্ট ভবনটি শুধু দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের বিশাল সংগ্রহশালার মধ্য থেকে ২০০টি ঐতিহাসিক পুস্তক ভবনটির দ্বিতীয় তলার ট্রেজারি গ্যালারিতে সংরক্ষিত রয়েছে। এই তলার মাঝখানে একটি বড় গম্বুজ। গম্বুজের মধ্যে একেকটি চিত্রের নিচে এককটি দেশের নাম, যেসব দেশ কোনো আবিষ্কার বা ইনভেনশন করেছে। ব্যতিক্রম চোখে পড়ল, এত দেশের মধ্যে এক স্থানে শুধু একটি ধর্মের নাম। কোন কোন দেশ কী কী আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করেছে, সেটি গাইড আমাদের বুঝিয়ে দিলেন। দেশের নামের বদলে যে চিত্রের নিচে কেবল একটি ধর্মের নাম ‘ইসলাম’ লেখা ছিল, সেটি দেখিয়ে গাইড বলেন, এর মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে যে, পদার্থবিজ্ঞানের ইনভেনশন করেছে ইসলাম ধর্ম। ইতিহাস বলছে, শুরুতে কিন্তু বিজ্ঞান বলতে একমাত্র পদার্থবিজ্ঞানকে বোঝানো হতো। বর্তমানেও পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র, তত্ত্ব এবং আবিষ্কৃত কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি ব্যতিরেকে বিজ্ঞানের অপরাপর শাখাগুলো হয় ‘ভোঁতা’, না হয় নি®প্রাণ। বিদ্যুৎ, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার, রোবট, ইন্টারনেট অর্থাৎ দৈনন্দিন জীবনের ব্যবহৃত সব কিছু প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে পদার্থবিজ্ঞানেরই ফসল বা অবদান। প্রাণ-পদার্থবিজ্ঞান, ভূ-পদার্থবিজ্ঞান, মহাকাশ-পদার্থবিজ্ঞান ইত্যাদি নামকরণ থেকে সহজেই ধারণা করা যায়Ñ মূল বিজ্ঞান পরিবারে পদার্থবিজ্ঞানের অবস্থান তার কেন্দ্রবিন্দুতে। ‘মুহাম্মদ দ্য প্রফেট অব ইসলাম’ বইটির লেখকের বর্ণনা মতে, রবার্ট ব্রিফল্ট তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘দ্য মেকিং অব হিউম্যানিটি’তে অনেক উদাহরণ দিয়ে সমাপ্তি টেনেছেন এভাবেÑ ‘আমাদের বিজ্ঞান আরব মুসলমানদের কাছে ঋণী শুধু এটুকুর জন্য নয় যে, বিজ্ঞানকে তারা কেবল চমকপ্রদ আবিষ্কার অথবা বৈপ্লবিক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব উপহার দিয়েছে। বিজ্ঞান আরবীয় সংস্কৃতির কাছে আরো অনেক বেশি ঋণী। বিজ্ঞান তার নিজের অস্তিত্বের জন্য ঋণী।’ একই লেখক কথাটির ব্যাখ্যায় বলেছেন, গ্রিকরা নিয়মাবদ্ধ ও সর্বজনীন করা এবং তত্ত্ব সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেয়ার পথ বাতলে দিয়েছিল, কিন্তু ধৈর্য ধরে গবেষণার পদ্ধতি, সন্দেহাতীত জ্ঞানকে পুঞ্জীভূতকরণ, বিজ্ঞানের প্রতিটি ুদ্র ব্যাপারেও বিশদ পরীক্ষণপদ্ধতি, বিস্তারিত ও দীর্ঘ প্রসারিত নিয়মিত পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষামূলক অনুসন্ধানÑ এসবই গ্রিক মানসিক ধাত বা মেজাজে ছিল ‘বহিরাগত’। আমরা যেটাকে আজ বিজ্ঞান বলি, তার উত্থান ইউরোপে হয়েছিল নতুন পদ্ধতি গবেষণার ফলে এবং পরীক্ষা, পর্যবেক্ষণ, পরিমাপন ও গণিতশাস্ত্রের উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে যে পদ্ধতিগুলো গ্রিকদের কাছে অজানা ছিল..., ইউরোপকে আরবীয় মুসলমানেরা এসব মূলনীতি ও পদ্ধতিগুলোর সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়।
লেখক : সাবেক শিক্ষক
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


আরো সংবাদ



premium cement