১৯ মার্চ ২০২৪, ০৫ চৈত্র ১৪২৯, ০৮ রমজান ১৪৪৫
`
নির্জন কারাগারে ৬ মাস বন্দী খালেদা জিয়া

আন্দোলনেই মুক্তি দেখছে বিএনপি

নির্জন কারাগারে ৬ মাস বন্দী খালেদা জিয়া - ছবি : সংগৃহীত

কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে বন্দী জীবনের ছয় মাস পূর্ণ হলো বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার। রাজধানীর পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্দী রয়েছেন তিনি। বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ৩৬টি মামলার মধ্যে মাত্র তিনটির জামিন বাকি থাকলেও কবে নাগাদ তিনি মুক্তি পেতে পারেন তা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারছেন না তার আইনজীবীরা। যদিও বন্দিদশা ঘোঁচাতে আইনজীবীরা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছেন না। কিন্তু কোনো কিনারা খুঁজে পাচ্ছেন না। বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী প্রবীণ আইনবিদ খন্দকার মাহবুব হোসেন তাই বলেছেন, সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া শুধু আইনি লড়াইয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। এ জন্য বিএনপিও আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি আন্দোলনের মাধ্যমেই তার মুক্তির পথ দেখছে। নির্জন কারাগারে শারীরিক সমস্যা নিয়ে ভালো নেই বিএনপির চেয়ারপারসন। দলীয় নেত্রীর মুক্তির দাবিতে দীর্ঘ এই সময়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি।

নির্জন কারাগারে ৭৩ বছর বয়সী খালেদা জিয়া একাধিকবার অসুস্থ হন বলে তার পরিবার ও দল থেকে বলা হয়েছে। এরই মধ্যে বেগম খালেদা জিয়া গত ৫ জুন কারাগারে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন বলে সংবাদমাধ্যমকে জানায় বিএনপি। দলের চেয়ারপারসনের উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে বিশেষায়িত হাসপাতাল বা ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করাতে সরকারের কাছে দাবি জানায় বিএনপি। এ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে একাধিকবার দেখাও করেন দলের সিনিয়র নেতারা। কিন্তু বিএনপির দাবিকে সরকার গুরুত্ব দেয়নি। তবে ৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে খালেদা জিয়ার শারীরিক বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়েছে। সর্বশেষ গত ৩ আগস্ট বিকেলে খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেন তার বড় বোন সেলিমা ইসলাম ও ব্যক্তিগত চিকিৎসক মামুন।

প্রসঙ্গত, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক ড. মো: আখতারুজ্জামান জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন। 
দলের চেয়ারপারসনের মুক্তি দাবিতে বিভিন্ন ধরনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপিসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠন। এসব কর্মসূচির মধ্যে বিক্ষোভ মিছিল, মানববন্ধন, অবস্থান ও অনশন, গণস্বাক্ষর, স্মারকলিপি প্রদান, কালো পতাকা প্রদর্শন, লিফলেট বিতরণ, জনসভা, আলোচনাসভা এবং প্রতিবাদ মিছিল রয়েছে। এর মধ্যে কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি পুলিশ পণ্ড করে দেয়। শুধু তাই নয় ঢাকায় একটি জনসভার জন্য চারবার অনুমতি চেয়েও পাওয়া যায়নি। তবে গত ২০ জুলাই রাজধানীর নয়া পল্টন দলীয় কার্যালয়ের সামনে জনসভা করেছে বিএনপি।

গত ছয় মাসে বিএনপির প থেকে বারবার করে বলা হয়েছে কারাগারে প্রচণ্ড অসুস্থ খালেদা জিয়া। তাকে তার পছন্দ অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার দাবিও জানিয়ে আসছে বিএনপি। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ৫ জুন দাঁড়ানো অবস্থায় হঠাৎ মাথা ঘুরে মাটিতে পড়ে যান খালেদা জিয়া। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থার এখনো তেমন উন্নতি হয়নি। এ জন্য পরিবারের সদস্য, ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও রাজনৈতিক সহকর্মীরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। 

গত ৭ এপ্রিল কারা কর্তৃপ চিকিৎসার জন্য তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে যায়। এরপর আর তাকে বাইরে আনা হয়নি। এমনকি জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় বকশিবাজার বিশেষ আদালতেও তাকে হাজির করা হয়নি অসুস্থতার কারণে। বিএসএমএমইউতে খালেদা জিয়ার এক্স-রে ও রক্ত পরীা করা হয়। সেদিন পুলিশের একটি গাড়িতে করে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে কারাগার থেকে বের করা হয় বেগম খালেদা জিয়াকে। 

বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দিত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আগামী নির্বাচন একতরফা করতে সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসাবশত সাজানো মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাবন্দী করে রাখা হয়েছে। পরিত্যক্ত নির্জন কারাগারে দুঃসহ অবস্থায় তার অসুস্থতা আগের চেয়ে বেড়েছে। অথচ তাকে সুচিকিৎসা দেয়া হচ্ছে না, যা অমানবিক ও মানবাধিকারের পরিপন্থী। দেশনেত্রীর চিকিৎসক ও স্বজনেরা জানিয়েছেন খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তিনি ঠিকমতো চলাফেরা করতে পারেন না। ঘুমাতেও তাঁর কষ্ট হয়। আমরা বারবার বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালে তাকে চিকিৎসার দাবি জানিয়ে আসছি। নেত্রীর মুক্তির জন্য কর্মসূচি অব্যাহত আছে। শিগগিরই নতুন কর্মসূচি আসবে। এ দিকে একটি মামলায় তার জামিন হলে, অন্য মামলা দিয়ে তার মুক্তির পথে বাধ সাধা হচ্ছে। তাই খালেদা জিয়া শিগগির মুক্তি পাবেন কি না তা-ও অনিশ্চিত।

খালেদা জিয়ার মামলার সর্বশেষ অবস্থা প্রসঙ্গে তার আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া গতকাল বুধবার নয়া দিগন্তকে বলেন, ৩৬টি মামলার মধ্যে ৩৩টি মামলায় জামিনে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন। তিনটি মামলার জামিন বাকি আছে। কবে নাগাদ খালেদা জিয়া মুক্তি পেতে পারেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, সময় লাগবে। কারণ কয়েকটি মামলার কিছু খুঁটিনাটি সমস্যা আছে। আমরা ফাইট করে যাচ্ছি। আদালত তো লম্বা সময় দেন। সরকারও কনসার্ন। নির্ভর করবে আদালতের ওপর। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে আইনজীবীদের সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত আছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ ছয় মাসেও দলের চেয়ারপারসন মুক্তি না পাওয়ায় আইনি প্রক্রিয়ায় মুক্তির আশা অনেকটা ছেড়ে দিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। দলের সিনিয়র নেতা থেকে শুরু করে তৃণমূল নেতারাও এখন বলছেন, এ সরকার যতদিন মতায় আছে, ততদিন আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়া মুক্ত হতে পারবেন না। তাকে মুক্ত করতে রাজপথে নামতে হবে। তাদের ভাষায়, যেহেতু রাজনৈতিক কারণে তিনি জেলে আছেন, তাই তাকে রাজনৈতিকভাবেই মুক্ত করতে হবে। কঠোর আন্দোলন করতে হবে। তা না হলে সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না। আগামী দিনের আন্দোলন কর্মসূচি সামনে রেখে এরই মধ্যে গত ৩ ও ৪ আগস্ট তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মতবিনিময় করেছে বিএনপির হাইকমান্ড। তারও আগে ২২ জুলাই নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকমণ্ডলীর সাথে মতবিনিময় করেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, কারাগারে অধিকাংশ সময় চুপচাপই থাকেন খালেদা জিয়া। ইবাদত বন্দেগির পাশাপাশি বই ও পত্রিকা পড়ে সময় কাটান তিনি। এ ছাড়া গৃহকর্মী ফাতেমাসহ সেখানে দায়িত্বরত কারা মহিলা স্টাফদের সাথেও আলাপচারিতায় সময় কাটে সাবেক তিনবারের এই প্রধানমন্ত্রীর।


আরো সংবাদ



premium cement