১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন : প্রয়োজন আন্তর্জাতিক চাপ

-

উন্নয়নের জন্য শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখাটা জরুরি আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ অঞ্চলের নিরাপত্তা এবং উন্নয়নের স্বার্থে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে টেকসই প্রত্যাবাসনে বিশ্ব সম্প্রদায়কে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। গত ১১ নভেম্বর ২০১৯ রাজধানীর একটি হোটেলে ঢাকা গ্লোবাল ডায়ালগ ২০১৯-এর একটি অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও সময়োপযোগী।

দুই বছর আগে যখন মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গারা তাদের সর্বস্ব হারিয়ে শুধু জানটা নিয়ে টেকনাফের নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছিল, তখন নির্যাতিত নিপীড়িত এই মানুষগুলোকে দেখে সবার হৃদয় কেঁদেছিল। কত পাষাণ, কত হিংস্র, জঘন্য ও মানবতাবিরোধী অপরাধে নিমগ্ন ছিল মিয়ানমার সরকার। বিশ্বসম্প্রদায়, বিভিন্ন প্রভাবশালী এনজিও, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো শুধু ভয়াবহতার চিত্র, বীভৎসতা দেখেই গেছে কিন্তু তার প্রতিরোধ আশ্রয় ও প্রত্যাবাসনের কোনো ব্যবস্থা নিলো না। এগিয়ে এসেছিল কেবল বাংলাদেশ, এসেছিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এই নিষ্পেষিত অসহায় মানুষের জন্য আশ্রয়ের স্থান দিয়ে বিশ্ববাসীর অকুণ্ঠ প্রশংসা অর্জন করেছেন। আর এটা করা হয়েছে সম্পূর্ণ একটি মানবিক কারণে। এর পেছনে অন্য কোনো রাজনৈতিক, কূটনৈতিক বা অর্থনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না। সে দিন বাংলাদেশ এভাবে মজলুমের পাশে, মানবতার ডাকে সাড়া না দিলে এই ১১ লাখেরও বেশি সহায় সম্বলহীন রোহিঙ্গা হয়তো নাফ নদীতে ভেসে যেত। কুকুর বেড়ালের মতো মরতো, মরতো মিয়ানামার সেনাদের গুলিতে। বাংলাদেশের নানাবিধ অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও এই উদ্বাস্তু জনগোষ্ঠীর আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে আসছে পরম নিষ্ঠার সাথে।

রোহিঙ্গাদের দুঃখ দেখে অনেক দেশ সমবেদনা জানিয়েছে। অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। বাড়িয়ে দিয়েছে তাদের ভরণ পোষণের জন্য সাহায্য। জাতিসঙ্ঘ ও তার অঙ্গসংগঠনগুলো ত্রাণতৎপরতা ও মানবিক সাহায্য চালিয়ে যাচ্ছে নিরলসভাবে। বাংলাদেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা দিয়ে জাতিসঙ্ঘ ও অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ফোরামে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ইস্যুটিকে তুলে ধরছে।

কক্সবাজার আদিবাসীদের সংখ্যা প্রায় পাঁচ লাখ। এ সংখ্যার সাথে যোগ হয়েছে দ্বিগুণেরও বেশি রোহিঙ্গা। ফলে ওই এলাকাগুলোতে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে নানাভাবে। গাছ-গাছালি কেটে আশ্রয় ক্যাম্প নির্মাণ, পাহাড় কেটে জায়গা বের করা, মলমূত্র ত্যাগের কোনো স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের আশঙ্কা বেড়ে চলেছে। নানা রকম সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদক ব্যবসায় রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ধরাও পড়ছে। পত্রিকার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ৭৬টি মামলায় ১৫৯ রোহিঙ্গার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়। ২০১৮ সালে এ সংখ্যাটি বেড়ে ২০৮ ও ৪১৪ হয়েছে। এ বছরে প্রথম সাত মাসে ১৮৭টি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে ৫১৫ জনকে। অন্য দিকে, একশ্রেণীর অসাধু সরকারি কর্মকর্তা ও দালালের হাত ধরে বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বিদেশেও পাড়ি জমাচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ কিছু আন্তর্জাতিক এবং এনজিওর স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম পরিচালিত হলেও সেখানে ব্যাপকভাবে ডিপথেরিয়াসহ নানা রোগের প্রার্দুভাব এমনকি এইচআইভি পজেটিভ রোগীও শনাক্ত হয়েছে। কক্সবাজার থেকে টেকনাফ পর্যন্ত পুরো এলাকায় স্থানীয়দের তুলনায় রোহিঙ্গাদের প্রভাব এত বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে যে, স্থানীয় বাসিন্দারা সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছে। এই অতিরিক্ত লোকের প্রয়োজনীয় খাদ্য এবং জীবনযাপনের আনুষঙ্গিক জোগান দিতে গিয়ে জীবনযাত্রার ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে। তা ছাড়া প্রতিদিন অসংখ্য রোহিঙ্গা শিশু জন্মগ্রহণসহ তাদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে পরিবেশ বিপর্যয় ঘটতে শুরু করেছে, সামাজিক ভারসাম্য বিনষ্ট হচ্ছে। ভবিষ্যতের জন্য এটি অশনিসঙ্কেত দিতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা, দাতাগোষ্ঠী ও বিভিন্ন সাহায্য সংস্থাকে বলতে চাই, আপনাদের সাহায্য দান খয়রাত দিয়ে আমাদের ঘাড়ের ওপর এই রোহিঙ্গাদের রাখবেন না। যদি সত্যিকার অর্থে আপনারা মানবতাবাদী, মানবপ্রেমিক ও জনকল্যাণ করতে আগ্রহী হন তাহলে এই ব্যাপক জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানের ব্যবস্থা করুন। রোহিঙ্গাদের ব্যথায় ব্যথিত হয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, কানাডাসহ অনেক দেশই মিয়ানমারের সমালোচনা করছে। কিন্তু সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। গত ২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দ্বিতীয় উদ্যোগও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। ৩৪৫০ জনের সবাই তাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যাবাসনে রাজি নয়। রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে কী ভরসায়? তাদের দাবি ছিল গণহত্যার বিচার, মিয়ানমারের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি এবং নিরাপদে নাগরিক অধিকার ও মর্যাদার সঙ্গে প্রত্যাবাসন।

রোহিঙ্গাদের ফেরার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য সবার আগে যা দরকার তা হলো মিয়ানমারের ১৯৮২ সালের নাগরিকতা আইন পরিবর্তন। এই আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে ‘রাষ্ট্রহীন’ করা হয়েছে। এই আইনের পরিবর্তন করা হলে তারা স্বস্তি বোধ করবে। এ কাজ মিয়ানমার সরকারকেই করতে হবে। তারা যদি সত্যিকারভাবে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে আন্তরিক হয় তাহলে মিয়ানমারে বড় পরিবর্তন আসবে। নতুন আইনের মাধ্যমে রোহিঙ্গারা সেখানে নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাবে। শুধু ভয় দেখিয়ে কিংবা জোর করে তাদের পাঠানোর চেষ্টা অর্থহীন। ভারত, চীন ও জাপান আন্তরিক হলে মিয়ানমারের ওপর কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করে তাদের প্রত্যাবাসনের সুষ্ঠু পদক্ষেপ নিতে পারে। চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক ভালো, তার চেয়েও বেশি ভারতের সাথে। কিন্তু চীন বা ভারত কেউ উল্লেখযোগ্য কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। সবাই সমস্যাকে সমাধানের চেয়ে মিয়ানমারের সাথে নিজেদের দ্বিপক্ষীয় ভূরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বড় করে দেখছে। শুধু চীন ও ভারতের মধ্যস্থতার ওপর নির্ভর না করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মাধ্যমে মিয়ানমারকে কূটনৈতিকভাবে চাপ দিতে হবে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন যত দীর্ঘায়িত হবে সঙ্কট তত বাড়বে। ফলে শুধু বাংলাদেশ নয় অত্র অঞ্চলের দেশগুলোর নিরাপত্তা ও উন্নয়ন হুমকির মধ্যে পড়বে। এ বিষয়গুলো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে তুলে ধরতে হবে।

ই-মেইল : main706@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement
বায়ুদূষণে আজ দ্বিতীয় ঢাকা অপরাজেয় থেকেই বুন্দেসলিগার শিরোপা বুঝে নিল লেভারকুসেন যুদ্ধের সময় নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য সম্পর্কে শ্রীলঙ্কাকে স্পষ্ট জানাতে হবে : জাতিসঙ্ঘ অনুমোদন ছাড়া কিভাবে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস বিক্রি করছিল কোম্পানিগুলো সরকারি কেন্দ্রে কৃষকেরা ধান বেচতে পারে না, লাভ খাচ্ছে দালালরা গরুর নাম উড়াল সড়ক, ওজন ৩৫ মণ ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে! বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক, মোট সম্পত্তি ৭.৫ কোটি ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইসরাইল সরকারে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব : নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাফায় ইসরাইলি হামলা, সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ৮ লাখ ফিলিস্তিনি

সকল