১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


তেহরান কি সিরিয়ায় বিজয়ী হয়েছে?

-

চলতি সপ্তাহে ইরানের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত একটি ফারসি পত্রিকায় সিরিয়ার সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাহিনী প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, দীর্ঘ আট বছরের রক্তাক্ত সঙ্ঘাত ও গৃহযুদ্ধের পর ইরান এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সিরিয়ার যুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছেন এবং সেখানে তেহরান বিশেষ অর্থপূর্ণ পুঁজি বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে।

ফারসি ভাষায় প্রকাশিত পত্রিকাটির শিরোনাম ছিল- ‘সিরিয়ার জনগণ ও সরকারের বিজয়’ এবং ‘সিরিয়ায় ফিরে আসতে আরব দেশগুলোর সারি’। এ ছাড়াও তেহরান সিরিয়া থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে এটা তাদের এবং আসাদের পক্ষে ক্ষমতার ভারসাম্য বলে আভাস দিয়েছে। তেহরান সিরিয়ার যুদ্ধে স¤পৃক্ত থেকে তাদের নাগরিকেরা যে জীবন দিয়েছেন এবং এতে তাদের যে অর্থনৈতিক শক্তি ব্যয় হয়েছে তা অর্থহীন নয় বলে জনগণকে একটি বার্তা দেয়ার চেষ্টা করেছে। রাজনৈতিক দলনির্বিশেষে ইরানি নেতাদের মধ্যে এই বার্তা সঙ্গতিপূর্ণ ও সর্বসম্মত। কারণ, সব দল সিরিয়ার ব্যাপারে একই নীতিকে সমর্থন করছে।

ইরানের বহু নাগরিক যখন নিজেদের নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী সংগ্রহ করার মাধ্যমে প্রাত্যহিক জীবনযাপনের জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা ও সংগ্রাম করে চলেছে, তখন তারা দেখলেন তাদের সরকার সিরিয়ায় ক্রমান্বয়ে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক হস্তক্ষেপ বৃদ্ধি করছে। নাগরিকদের দুঃখ-দুর্দশার ব্যাপারে কোনো গুরুত্ব না দিয়েই সরকার সেখানে আর্থিক সংশ্লিষ্টতা ক্রমেই বাড়াচ্ছে। প্রথম দিকে তেহরান বলেছিল, তারা বাশার আল আসাদের প্রতি কেবল কূটনৈতিক, পরামর্শমূলক ও নৈতিক সমর্থন দিচ্ছে; কিন্তু তেহরান তারপর সিরিয়াতে ইরানি রিপাবলিকান গার্ড (আইআরজিসি) মোতায়েন করেছে এবং সামরিক গোয়েন্দা ও অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে সিরিয়া সরকারকে সাহায্য করে। পরবর্তীকালে আইআরজিসি সিরিয়ায় নি¤œ পদমর্যাদার সৈনিক থেকে শুরু করে সামরিক বাহিনীর সিনিয়র জেনারেলদের পর্যন্ত পাঠায়। ইরান সরকার লেবাননের হিজবুল্লাহসহ তাদের মিলিশিয়াদের যুদ্ধে ব্যবহার করেছে এবং আসাদের সেনাবাহিনীর সহযোগী হিসেবে যুদ্ধ করার জন্য আফগানিস্তানের মতো দেশ থেকেও যোদ্ধা সংগ্রহ করেছে।

ইরান তার নাগরিকদের সহায়তা করার চেয়ে বরং আল আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখার জন্য ইরানের সম্পদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ ব্যয় করতে শুরু করে। তেহরান আসাদ সরকারকে সহায়তা করার জন্য একটি হিসাব খোলে এবং কয়েক শ’ কোটি ডলারে না পৌঁছা পর্যন্ত সেখানে নিয়মিত অর্থ জমা করতে থাকে। আসাদের সমর্থনে তেহরান প্রতি বছর প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার ব্যয় করতে শুরু করেছে।

সিরিয়ার যুদ্ধে তেহরান বিজয় লাভ করেছে, এটা দেখিয়ে ইরানি নেতারা তাদের প্রতি মিলিশিয়া এবং প্রক্সিদের আনুগত্য জোরদার করার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে নিজেকে একটি অপরিহার্য আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করে ইরান আধিপত্যবাদী লক্ষ্য অর্জনের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই শক্তি অর্জনের মাধ্যমে, সব ধরনের প্রতিবন্ধকতা ও বিরোধিতা সত্ত্বেও ইরান আসাদকে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত রাখতে সক্ষম হয়েছে ইরান ‘সিরিয়ার জয়লাভ করেছে’- এই ধারণা ছাড়িয়ে দিয়ে।

সিরিয়া ইরানের পররাষ্ট্রনীতির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ : ‘ওই অঞ্চলে মার্কিন নীতি ব্যর্থ’- এই বক্তব্যকে তুলে ধরছে। কৌশলগত ও ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আসাদকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখে, তাদের প্রক্সিগুলোকে ক্ষমতাবান করে তাদের প্রতিবেশী ও পশ্চিমা শক্তিকে বিচ্ছিন্ন করে একটি আঞ্চলিক জোটকে শক্তিশালী করে এবং মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য ইরানের দিকে নিয়ে আসার কারণে সিরিয়ায় ইরানকে ‘সফল’ বলে বিবেচনা করা যায়; কিন্তু কেউ বৃহত্তর পরিসর থেকে তাকালে দেখতে পাবেন, সিরিয়া-যুদ্ধ থেকে ইরান যতটুকু লাভবান হয়েছে- ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার চেয়েও বেশি। যুদ্ধে শত শত কোটি ডলার ব্যয় করার কারণে ইরানে একটি অর্থনৈতিক সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতে দেশব্যাপী প্রতিবাদ-বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে শেষ পর্যন্ত দেশের ক্ষমতার ভিতকে বিপন্ন করে তুলতে পারে।
লেখক : হার্ভার্ডে শিক্ষা লাভকারী আমেরিকান রাজনৈতিক বিজ্ঞানী। ইরান ও মার্কিন পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ, ব্যবসায়ী এবং ইন্টারন্যাশনাল আমেরিকান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট।
আরব নিউজ থেকে অনুবাদ মুহাম্মদ খায়রুল বাশার


আরো সংবাদ



premium cement

সকল