০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মিয়ানমারে নৃশংসতা বন্ধে প্রয়োজন অপরাধী বর্মি সেনাদের বিচার

কক্সবাজারের রোহিঙ্গাশিবিরে এক নারী বুলেট ও শার্পনেলের আঘাতে বিক্ষত তার একটি হাত দেখাচ্ছেন : এএফপি -

মিয়ানমারের শান প্রদেশে তিন নারী তাদের ক্ষেতে কাজ করছিলেন। এমন সময় ৮০ জন সেনা এসে তাদের ধরে নিয়ে যায়। চার দিন পর তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তার আগে সেনাদের হাতে অবিরাম নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিল তাদেরকে। মিয়ানমারে সাধারণ হয়ে আসা এমন অপরাধের ঘটনাটি কিন্তু ২০১৭ সালে রাখাইনে ‘কিয়ারেন্স অপারেশন্স’-এর সময়ের নয়। এ ঘটনাটি ঘটেছিল ২০০০ সালের জুলাইয়ে শান প্রদেশে। এ ঘটনাটিকে বলা হচ্ছিল ধর্ষণের এক ধরনের লাইসেন্স। ১৯৯১ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত এ ধরনের আরো ১৭২টি যৌন নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছিল কেবল শান প্রদেশেই।
মিয়ানমারে দীর্ঘ দিন ধরে এ ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়ে এলেও অপরাধীরা এ ক্ষেত্রে তেমন কোনো সাজা পায়নি। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে মিয়ানমারের যে ধরনের জবাবদিহিতা প্রয়োজন ছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তা আদায় করার ক্ষেত্রে কার্যকর কোনো কিছু করতে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, এমনকি জাতিসঙ্ঘের কাছেও মিয়ানমারে কয়েক দশক ধরে অব্যাহতভাবে চলা অপরাধের প্রচুর প্রমাণ রয়েছে। অপরাধীদের বেশির ভাগই দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্য যারা এসব অপরাধের ক্ষেত্রে দায়মুক্তি লাভ করে থাকে।
১৯৪৮ সালে স্বাধীনতা লাভের কিছু দিন পর থেকেই মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এসব সঙ্ঘাতে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ ইত্যাদি অপরাধ সংঘটনের কোনো সীমারেখা ছিল না। এ ক্ষেত্রে সরকারি বাহিনীর পাশাপাশি বিদ্রোহী গ্রুপগুলোও নির্যাতন, শিশু সৈনিক ব্যবহার ও বাধ্যতামূলক শ্রমসহ নানা ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হয়।
মিয়ানমারের যেসব প্রদেশে সংখ্যালঘুরা রয়েছে, সেসব এলাকাতেই এসব অপরাধ সংঘটনের মাত্রা অনেক বেশি। ১৯৯০ সালে দেশটির সেনাবাহিনী পূর্বাঞ্চলীয় কায়িন প্রদেশে এক নৃশংস অভিযান চালায়। এর ফলে লাখ লাখ লোক জীবন বাঁচাতে থাইল্যান্ডে পালিয়ে যায়, যাদের অনেকে এখনো সেখানেই অবস্থান করছে। ১৯৯৬-৯৮ সালে আবার হামলা চালানো হয় উত্তরাঞ্চলীয় শান প্রদেশে। সেনা হামলায় সে সময় তিন লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়। ২০১১ সালে কাচিন ও শান প্রদেশ থেকে লক্ষাধিক লোককে তাদের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করা হয়। অন্য দিকে মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ মুসলিম অধ্যুষিত রাখাইন প্রদেশে ১৯৭০ সাল থেকেই সেনাবাহিনী তাদের নির্মম অত্যাচার চালিয়ে আসছে। অব্যাহত নির্যাতনের শিকার হয়ে রাখাইনরা তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন অনেক দিন ধরেই, যাদের বেশির ভাগেরই গন্তব্য বাংলাদেশ। এক বছরেই বাংলাদেশে এসেছে দশ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা। কথিত ‘কিয়ারেন্স অপারেশন্স’-এর সময় ছয় হাজার ৭০০ লোক নিহত হয়েছে, অসংখ্য নারী ধর্ষিত হয়েছেন এবং শত শত গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এখনো যেসব রোহিঙ্গা রাখাইনে রয়েছে, তারাও সব ধরনের মৌলিক মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত।
মিয়ানমারের এসব নৃশংস আচরণের প্রেক্ষিতে নির্যাতিতদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিশ্বজুড়ে ধর্মযুদ্ধের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। কারণ রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়নের প্রায় দশ মাস পার হতে চললেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করতে এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আর এ ধারাবাহিক ব্যর্থতার কারণে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের এ ধরনের অপরাধ তো কমেইনি, বরং দেশটির নৃগোষ্ঠীর ওপর মানবাধিকার লঙ্ঘন, হামলা ও নির্যাতনের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পেয়েছে। রাখাইন, কাচিন, শান ও কিয়ান প্রদেশে তারা বারবার হামলা চালিয়ে অসংখ্য লোকজনকে হত্যা করেছে এবং বিগত কয়েক মাসে লাখ লাখ লোককে তাদের ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ করেছে। উল্লেখ্য, একই সেনা গ্রুপ যারা রাখাইনে হামলা চালিয়েছিল, তারা কাচিনেও হামলা চালায়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মিয়ানমারের এসব অপরাধের সমাপ্তি টানতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে জাতিসঙ্ঘের অধীনে এমন একটি কাঠামো দাঁড় করাতে হবে যারা মিয়ানমারের বিশেষ করে রাখাইন, কাচিন ও শান প্রদেশে সংঘটিত এসব অপরাধ পর্যবেক্ষণ করবে এবং রিপোর্ট তৈরি করতে পারবে। অন্য যে পক্ষগুলো এসব ব্যাপারে তদন্ত চালাচ্ছে তাদের বিষয়গুলোকেও এই কাঠামোর মাধ্যমে একত্র করে মামলা তৈরি করা হবে, যাতে এগুলো ভবিষ্যতে বিচারিক কাজে ব্যবহার করা যায়। আইন ও বিচারবিষয়ক অভিজ্ঞ, বিশ্লেষকদের নিয়ে এ কাঠামো তৈরি করতে হবে, যাতে তারা এ ব্যাপারে মামলাগুলো তৈরি করতে পারে, অংশগ্রহণকারীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ইত্যাদি করতে পারে। নির্যাতিত ব্যক্তিরা যেখানে আছে তারা সেখানে গিয়ে তাদের সাথে কাজ করতে সক্ষম হবে। এই কাঠামোটি নির্যাতিতদের সহায়তা, পুনর্মিলন ও পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজও করবে।
এ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত দুঃখজনক যে পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে, তার সুযোগটি গ্রহণ করা। বর্তমানে বাংলাদেশের কক্সবাজারে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। তাদের সাথে কথা বলে তাদের বিষয়গুলো শোনা দরকার। নির্যাতন-নিপীড়নের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করে এ বিষয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়া দরকার, যাতে প্রয়োজনের সময় এগুলোর মাধ্যমে কম খরচ ও কষ্টেই একটি কার্যকর ফলাফল লাভ করা যায়। এ ক্ষেত্রে তাদের জন্য প্রয়োজন হচ্ছে, এখনই এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়া, যাতে রোহিঙ্গাদের ন্যায়বিচার আদায় ও দোষীকে শাস্তি দেয়ার লক্ষ্যে কাজ করার ক্ষেত্রে কোনো সুযোগই নষ্ট না হয়।


আরো সংবাদ



premium cement
খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বজ্রপাতে মা-ছেলের মৃত্যু গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ঘূর্ণিঝড় পূর্ব আফ্রিকায় মানবিক সঙ্কটের অবনতির হুমকি স্বরূপ এ জে মোহাম্মদ আলীর সম্মানে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকাজ বন্ধ ঘোষণা অনির্দিষ্টকালের জন্য সারাদেশে কর্মবিরতিতে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভিসা অব্যাহতি ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ নিয়ে বাংলাদেশ-মিসরের আলোচনা দুই অঞ্চলে ঝড়ের আভাস আ’লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভা আজ রাশিয়ার ড্রোন হামলায় ইউক্রেনের খারকিভ-নিপ্রো অঞ্চলে আহত ৬ যুদ্ধবিরতি : নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করল হামাস কাশ্মিরে ভারতীয় বিমানবাহিনীর গাড়িতে হামলা, হতাহত ৫ সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলল

সকল