২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাটশিল্পে সফল নারী

-

নানান প্রতিকূলতা পেরিয়ে পাটশিল্পে সফলতা পেয়েছেন রাহেলা জুট ক্রাফটের স্বত্বাধিকারী শামীম আরা দীপা। হাতে তৈরী ব্লক-বাটিকের তৈরী পোশাক দিয়ে ব্যবসায় শুরু করলেও ব্যতিক্রমী পণ্য তৈরির নেশায় সফলতার দেখা মিলেছে পাটপণ্যে। রফতানি বাজারই ছিল আগে পাটজাত পণ্যের মূল বাজার। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের ভেতরে এসব পণ্যের চাহিদা বাড়ছে। চাহিদা বাড়ার পাশাপাশি পণ্যের উৎপাদনেও এসেছে বৈচিত্র্য। এখন দেশের বাজারের ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে তৈরি করছেন পাটের তৈরি নানা ধরনের ব্যাগ, পার্টস, জুতা, পুতুল, ম্যাট, শতরঞ্জি, শিকা, পাপোশ, সুতা, ঝুড়ি, ল্যাম্পশেড, কাপড়, টুপি, চাবির রিং, মানিব্যাগ, ক্যালেন্ডার, কম্বল, পাট ও প্লাস্টিকের সমন্বয়ে তৈরি ফাইবার গ্লাসসহ বিভিন্ন গৃহস্থালি পণ্য। উৎপাদিত পণ্য দেশের বাজারের পাশাপাশি সৌদি আরব, সুদান, থাইল্যান্ড, হংকং, ভারত, নেপাল ও অস্ট্রেলিয়ায় রফতানি করছেন। পাটের তৈরি বিভিন্ন ধরনের ব্যাগের প্রতিই ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি। তাই বিদেশী ক্রয়াদেশের অর্ডারের ভিত্তিতেই নানা ধরনের পণ্য তৈরি করছেন দীপা। এ নিয়ে নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেছেন শামীম আরা দীপা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন নয়া দিগন্তের স্টাফ রিপোর্টার শামছুল ইসলাম।
নয়া দিগন্ত : কিভাবে ব্যবসায় শুরু করেছিলেন?
দীপা : বিয়ের পর স্বামী-সন্তান আর সংসার সামলাতেই দিন কাটত। ছোট থেকেই বিভিন্ন রকমের হাতের কাজ জানতাম। নিজেই অনেক কিছুতে নকশা করতাম। সেসব দেখে পরিবারের অনেকে বাহবাও দিত। বিয়ের পর সংসার সামলানোর পাশাপাশি নিজেই কিছু একটা করার কথা ভাবতাম। যেহেতু আমি ভালো হাতের কাজ জানি, তাকে পুঁজি করেই কিছু একটা করার ইচ্ছা জাগত। কিন্তু আমার স্বামী এসব পছন্দ করতেন না। অনেক কষ্টে তাকে বুঝিয়ে রাজি করালাম। ২০০৯ সালে ব্লক ও বাটিকের অল্প কয়েকটি থ্রি-পিসের কাজ দিয়ে শুরু করি। পরিচিতজনদের কাছে সেগুলো বিক্রিও হয়ে যায়।
নয়া দিগন্ত : পাটপণ্যের দিকে কিভাবে ঝুঁকলেন?
দীপা : আমি একটা বিষয় লক্ষ করলাম, বেশির ভাগ ক্রেতাই নতুন কিছুর খোঁজ করে। নতুন ডিজাইন, নতুন মাধ্যমের নানা পণ্য। ভাবলাম নতুন কী করা যায়। তখনকার সময়ে দেখতাম এক-দু’জন পাট ফ্যাব্রিকস দিয়ে বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছে। মনটা সেদিকেই ঝুকল। অন্যদেরটা দেখলাম, কথা বললাম, কিভাবে কী করতে হবে সেটাও জানলাম। এরপর ২০১১ সালে গাউসিয়া থেকে কিনে আনলাম পাটের ফ্যাব্রিকস। সেটা দিয়ে প্রথমে বানানো হলো ব্যাগ। এর ক’দিন পরই শুরু হলো জেডিপিসির আয়োজনে মেলা। সেই মেলায় সামান্য কিছু ব্যাগ নিয়ে স্টল নিলাম শুধু পরিচিতির জন্য। মেলায় অংশ নিয়ে নিরাশ হলাম না। প্রচুর অর্ডার পেলাম নানা ধরনের পণ্য সরবরাহের। এর পর আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
নয়া দিগন্ত : কোনো প্রতিবন্ধকতা ছিল কি না?
দীপা : পণ্য তৈরির জন্য ফ্যাব্রিকস থেকে শুরু করে অন্যান্য উপকরণ কিনতে নরসিংদী, গাউসিয়া, বংশাল, আরমানিটোলা, সদরঘাটসহ নানা স্থানে যেতে হতো। অনেক পরিশ্রম করতে হতো। পুরুষতান্ত্রিক সমাজে মেয়েদের সক্ষমতায় দাঁড়াতে গেলে সামাজিকভাবে নানাবিধ বাধা আসে। অনেক চড়াই-উতরাইয়ের মধ্য দিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। যেখানেই যেতাম অনেকে বিষয়টি একটু বাঁকা চোখেই দেখতেন। তবু আমি দমে যাইনি। আমার লক্ষ্যে স্থির ছিলাম।
নয়া দিগন্ত : দেশের বাইরে কিভাবে পরিচিতি লাভ করেছেন?
দীপা : উৎপাদিত পণ্যের বাজারজাত ও পরিচিতি লাভ করতে বিভিন্ন স্থানে আয়োজিত পাট ও বস্ত্রপণ্যের সব মেলার পাশাপাশি বিদেশে মেলায়ও অংশগ্রহণ করেছি। ২০১২ সালে কলকাতায় আয়োজিত মেগা ট্রেড ফেয়ারে দীপা অংশ নেন প্রথম কোনো বিদেশী মেলায়। সেখানেও তার কাটতি ছিল নজরকাড়া। ২০১৩ সালে একই দেশের আসাম রাজ্যের গৌহাটির মেলায়ও অংশগ্রহণ করেন তিনি। প্রতিবছর দেশের বাণিজ্যমেলা, পাটমেলা, জেডিপিসির মেলা, বস্ত্রমেলা, এসএমই মেলা, বিসিক মেলাসহ নানা ধরনের মেলায় অংশ নেন। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগ ও জেলায় আয়োজিত মেলায়ও থাকে তার পণ্যের স্টল।
নয়া দিগন্ত : সচরাচর তার উৎপাদিত পণ্য কোথায় মেলে?
দীপা : মেলার পাশাপাশি নিজস্ব শোরুম ‘রাহেলা জুট ক্র্যাফট’ রয়েছে তেজকুনী পাড়ায় ১১৫/বি তে। আর তিনজন শেয়ারে আরেকটি শোরুম ‘পাট রং’ রয়েছে বিজয় সরণির লিংক রোডের ১১৫/২ তে। পাটপণ্য বিক্রির প্রধান জায়গা হলো নানা ধরনের মেলা। মেলা থেকেই যথেষ্ট আয় হয়। তা ছাড়া মেলার মাধ্যমে খুচরা বিক্রির পাশাপাশি বড় অর্ডারও পাওয়া যায়। তাই দেশের বড় পরিসরের প্রত্যেকটি মেলায়ই অংশগ্রহণ করেন তিনি। ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায়ও স্টল রয়েছে তার। জেপিডিসির আরপি-৭-এর ১০ নম্বর স্টলে পাওয়া যাবে তার তৈরি পাটপণ্য। মেলা ছাড়াও তার পণ্য পাওয়া যায় জেডিপিসির শোরুম, পর্যটন করপোরেশন, জাগরণী চক্র ফাউন্ডেশন এবং বিশ্ব রঙের শোরুমে।
নয়া দিগন্ত : কাজের স্বীকৃতি হিসেবে কোনো পুরস্কার পেয়েছেন কি না?
দীপা : পরিবেশবান্ধব পাটপণ্য বানিয়ে প্রশংসা যেমন পেয়েছি, তেমনি পেয়েছি সম্মাননাও। জেডিপিসি থেকে সেরা উদ্যোক্তা হিসেবে ২০১৬ ও ২০১৭ সালের পাট মেলায় পেয়েছি সম্মাননা ও ক্রেস্ট। মাগুরা থেকেও পেয়েছি সেরা উদ্যোক্তার সম্মাননা। যুক্ত আছি মহিলা উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য হিসেবে। এ ছাড়া জেডিপিসি ফাউন্ডেশন, এসএমই ফাউন্ডেশনসহ বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত আছি।
নয়া দিগন্ত : নতুন উদ্যোক্তাদের বিষয়ে যদি কিছু বলেন?
দীপা : আসলে আমি চাই সমাজের অসহায় মেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে। তারা যেন সমাজে অবহেলার পাত্র হয়ে না থাকেন। আমার দায়িত্ববোধ থেকেই এটা করি। কঠোর পরিশ্রম, মেধা আর একাগ্রতার মধ্য দিয়ে নিজের ব্যবসায় এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন দীপা। তাই তো মাত্র ১৫ হাজার টাকার মূলধন বেড়ে আজ প্রায় ৪০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
নতুন উদ্যোক্তাদের পরামর্শ দিয়ে দীপা বলেন, প্রথমে কী করতে চাই সেটা ঠিক করতে হবে। কাজের বিষয়ে ধারণা নিতে হবে। ভালো করে শিখতে হবে। বুঝতে হবে। প্রথমে ছোট পরিসরেই শুরু হোক তাতে কি। পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। পণ্য উৎপাদনের সাথে বাজারজাত করার বিষয়টি ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সেই বিষয়গুলোও ভাবতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো সাহস নিয়ে শুরু করতে হবে। সততার সাথে কাজ করলে একদিন অবশ্যই সফল হওয়া যায়।


আরো সংবাদ



premium cement
৪৬তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষা শুরু দোয়ারাবাজারে পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা : স্বামীর আমৃত্যু কারাদণ্ড গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর লাশ উদ্ধার ভারতে দ্বিতীয় পর্বে ৮৮ আসনে ভোট খালেদা জিয়ার সাথে মির্জা ফখরুলের ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক গাজায় ইসরাইলের যুদ্ধের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত পাবনায় ১০ কোটি টাকার অনিয়মে ৩ ব্যাংক কর্মকর্তা আটক জীবন্ত মানুষকে গণকবর আগ্রাসন ও যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান মার্কিন মানবাধিকার প্রতিবেদনে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন : পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৃষ্টির জন্য সারা দেশে ইসতিস্কার নামাজ আদায়

সকল