২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রেক্সিট ভোটের প্রতিক্রিয়া

-

প্রত্যাশিত ফলাফলেই শেষ হয়েছে ব্রেক্সিট চুক্তির ওপর ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ভোট। ১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে পার্লামেন্ট ভোটে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে পৌঁছানো প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মের চুক্তিটির ভরাডুবি ঘটেছে। চুক্তিটি অনুমোদন না পাওয়ায় নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে ব্রেক্সিট ঘিরে। এ পরিস্থিতিতে নিজেদের অর্থনীতি ও বাণিজ্য নিয়ে শঙ্কিত এশিয়ার দেশগুলো ব্যবসা সুরক্ষায় পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে। অন্য দিকে, ভোটের পর ডলারের বিপরীতে মান যোগ করেছে পাউন্ড।
বিপুল ব্যবধানে ব্রেক্সিট চুক্তিটির প্রত্যাখ্যানকে ১৯২০ সালের পর কোনো ব্রিটিশ সরকারের সবচেয়ে বড় পরাজয় হিসেবে দেখা হচ্ছে। পাঁচ দিন আলোচনার পর ১৬ জানুয়ারি মঙ্গলবার রাতে থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তিটির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৪৩২ জন পার্লামেন্ট সদস্য (এমপি)। চুক্তির পক্ষে ভোট দিয়েছেন ২০২ জন। ভোটের আগেই চুক্তিটি ব্যর্থ হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছিল ব্রিটিশ গণমাধ্যমগুলো। যার ফলে মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত পাউন্ডের মান স্থিতিশীল থাকতে দেখা যায়। তবে দুপুরের পর পাউন্ডের ওপর চাপ বাড়তে থাকে এবং ভোট চলাকালে ডলারের বিপরীতে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ মান হারায় পাউন্ড। সে সময় এক ডলারের বিপরীতে ১ দশমিক ২৭ পাউন্ড লেনদেন হয়।
তবে ব্রেক্সিট চুক্তিটি প্রত্যাখ্যানের পক্ষে ভোটের এক ঘণ্টার মধ্যে ডলারের বিপরীতে হারানো মান ফিরে পায় পাউন্ড। লেনদেনের বাকি সময় ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের মান সামান্য বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া লেনদেনের একটা সময় ইউরোর বিপরীতেও দশমিক ৬ শতাংশ মান বাড়ে পাউন্ডের।
২৯ মার্চ ইইউ ছাড়ার আগে চুক্তিটির প্রত্যাখ্যান আরো অনিশ্চয়তা তৈরি করবে এবং এর ফলে পাউন্ডের অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন বেশ কিছু বিশ্লেষক। অন্য দিকে, কিছু বিশ্লেষক এ পরাজয়কে পাউন্ডের জন্য ইতিবাচক বলে মনে করছেন। পাউন্ডের ভবিষ্যৎ প্রবণতা প্রসঙ্গে ব্যাংকিং ও আর্থিক সেবা প্রতিষ্ঠান আইএনজি জানিয়েছে, বিলম্বিত ব্রেক্সিট বা দ্বিতীয় গণভোট পাউন্ডের জন্য ইতিবাচক হবে, এর বিপরীতে তাৎক্ষণিক নির্বাচন বা চুক্তিহীন ব্রেক্সিট পাউন্ডের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ত্যাগে ৭২ দিনেরও কম সময় হাতে রয়েছে ব্রিটেনের। কিন্তু কোনো চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিটের সম্ভাবনা বাড়তে থাকায় সব মহলেই ব্যাপক উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ফলে বহু দিন ধরে যেসব ধনী ব্রিটেনে আবাস গড়ে তুলেছেন, তারা এখন ব্রিটেন ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। বিদেশে সম্পদ বা অর্থ স্থানান্তরে বিশেষায়িত কোম্পানি অ্যান্থনি ওয়ার্ড টমাসের প্রতিষ্ঠাতা জানান, ২০১৮ সালে ব্রিটেন থেকে স্থানান্তরের কাজ ৮২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর ২৯৬টি স্থানান্তরের কাজ করেছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্রিটেনত্যাগীদের সবচেয়ে পছন্দের গন্তব্যস্থলের মধ্যে রয়েছে প্যারিস, ব্রাসেলস, জুরিখ ও জেনেভা। এর পাশাপাশি দক্ষিণ ফ্রান্স ও মায়োকার মতো স্প্যানিশ অঞ্চলও তাদের পছন্দের তালিকায় আছে।
ওয়ার্ড টমাস বলেন, এ সময় ব্রিটেন ত্যাগের হার বেড়ে যাওয়ার পেছনে খোদ ব্রেক্সিটের যতটা না প্রভাব রয়েছে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে ব্রেক্সিট আলোচনা নিয়ে বিভক্তি। টমাস জানান, তার পুরনো ক্লায়েন্টদের মধ্যে ব্রিটেনের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রেক্সিটের অন্যতম সমর্থক বরিস জনসন রয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, যারা ব্রিটেন ত্যাগ করছেন, তারা প্রায় সবাই ধনী এবং অধিকাংশই ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিক। তারা সর্বনি¤œ ৬৪ লাখ ডলারের (৫০ লাখ পাউন্ড) মালিক। পরিবারসহ এসব ধনী যুক্তরাজ্য ছাড়ছেন। তবে স্থানান্তরের ক্ষেত্রে উষ্ণ আবহাওয়ার স্থান খোঁজার পাশাপাশি এসব ধনী তুলনামূলক বেশি স্থিতিশীল রাজনৈতিক ব্যবস্থার দিকে জোর দিচ্ছেন। প্রস্থান নিয়ে টমাস বলেন, আমার মতে ব্রেক্সিট একমাত্র কারণ না হলেও আমরা এ মুহূর্তে একটা বিশৃঙ্খল অবস্থার মধ্যে রয়েছি।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে’র ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্ট ভোটে প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর দেশত্যাগ আরো বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আপাতত এ জটিলতা নিরসনের কোনো সম্ভাবনা না থাকায় এ পরিস্থিতিতে যাদের কোনো কিছু করার নেই, তারা হয়তো চলে যাবেন বলে মনে করছেন ওয়ার্ড টমাস।
দেশত্যাগীদের পছন্দের স্থানগুলোর মধ্যে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অধীন চ্যানেল আইল্যান্ডগুলো রয়েছে, যেখানে মুনাফা বা উত্তরাধিকারের ওপর কোনো কর আরোপ করা হয় না। লোকেট গুয়ের্নসের পরিচালক জো স্টোডার্ট জানান, গত বছরের প্রথম ছয় মাসের তুলনায় দ্বিতীয়ার্ধে স্থানান্তর অনুসন্ধানের হার ৫০ শতাংশ বেড়েছে।
লিওনার্দ লাক্সারি রিয়েল এস্টেটের সিনিয়র সহযোগী উপদেষ্টা ফ্রান্সিসকো টেসি জানান, ব্রেক্সিট ও দুই বছর আগে নতুন করব্যবস্থা চালুর কারণে স্থানান্তরিতদের পছন্দের তালিকায় ইতালিও উঠে এসেছে। এর আগে দেশটি ধনীদের দ্বিতীয় পছন্দের গন্তব্য ছিল। টেসি বলেন, বর্তমানে হেজ ফান্ড ম্যানেজার বা উদ্যোক্তারা বাড়ি কিনছেন, পরিবারকে যুক্তরাজ্য থেকে সরিয়ে নিচ্ছেন এবং প্রয়োজনে সপ্তাহের কয়েক দিন লন্ডনে কাজ করছেন। ধনীরা তাদের আবাসস্থল সরিয়ে নিলেও করপোরেট স্থানান্তর এখন পর্যন্ত বেশি বাড়তে দেখা যায়নি বলে জানিয়েছেন ওয়ার্ড টমাস। তবে চুক্তিহীন ব্রেক্সিট যুক্তরাজ্যে তাদের ব্যবসায় কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে মনে করছে বহু কোম্পানি।
এদিকে ব্রিটিশ এমপিরা ব্রেক্সিট চুক্তি অনুমোদন না করায় উদ্বেগ তৈরি হয়েছে এশিয়ার দেশগুলোতে। অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে ব্যবসায় রক্ষায় পদক্ষেপ গ্রহণে উদ্যোগী হয়ে উঠছে দেশগুলো। চুক্তিহীন ব্রেক্সিটের অন্যতম সমালোচক জাপান। দেশটির চিফ কেবিনেট সেক্রেটারি ইয়োশিহিদে সুগা বলেন, ব্রিটিশ সরকারের কাছে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে স্বচ্ছতার দাবি অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে ব্রেক্সিটের নেতিবাচক প্রভাব হ্রাসে কোম্পানিগুলোর প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখা হবে। এর আগে গত সপ্তাহে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে জানান, পুরো বিশ্ব চাচ্ছে ব্রিটেন যাতে একটি চুক্তিহীন ব্রেক্সিট এড়িয়ে যায়।
গত বছর ব্রিটেন ও জাপানের মধ্যে তিন হাজার ৬০০ কোটি ডলারের (২ হাজার ৮০০ পাউন্ড) বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। এ ছাড়া ব্রিটেনে জাপানের কোম্পানিগুলোতে ১ লাখ ৫০ হাজার কর্মী রয়েছে। চুক্তিহীন ব্রেক্সিট এ সব কিছুকেই অনিশ্চিত করে তুলবে। চুক্তিহীন ব্রেক্সিট মানে কোনো বাণিজ্য সমঝোতা ছাড়াই ২৯ মার্চ রাতে ইইউর ২৭টি দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়তে হবে ব্রিটেনকে। ফলে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নিয়মানুযায়ী ইইউর সাথে বাণিজ্য করতে হবে।
পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে গত ১৮ জানুয়ারি একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে বসেছে দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার। বৈঠকে দক্ষিণ কোরিয়া-ইইউ মুক্তবাণিজ্য চুক্তিসহ ব্রিটেনের সাথে স্বাক্ষরিত বিভিন্ন চুক্তি এবং ব্রিটেনের সাথে সমঝোতার বিষয়ে আলোচনা করা হয় বলে মন্ত্রণালয়গুলো জানিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার সংবাদ সংস্থা ইয়োনহাপ জানিয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ব্রিটেনের সাথে একটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি রক্ষার প্রচেষ্টা করছে। ব্রিটেনে দক্ষিণ কোরিয়ার ১০০টির বেশি কোম্পানির কার্যক্রম রয়েছে এবং দুই পক্ষের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ১৪৪০ কোটি ডলার (১১২০ কোটি পাউন্ড)।
অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যমন্ত্রী সাইমন বার্মিংহাম জানিয়েছেন, অনিশ্চিত ব্রেক্সিটের কারণে স্থানীয় ব্যবসাগুলো ‘সতর্কতামূলক পদক্ষেপ’ গ্রহণ করছে। ইইউর সঙ্গে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি সম্পর্কিত চলমান আলোচনার কারণে সরকার ব্রেক্সিট নিয়ে দ্বিগুণ সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
তথ্যসূত্র : বিবিসি, সিনহুয়া ও খবর ব্লুমবার্গ


আরো সংবাদ



premium cement
ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড ‘মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সঙ্কটে’ ‘রাফা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা’ ৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের

সকল