২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

মিউচুয়াল ফান্ড নতুন করে ভাবতে হবে

-

কুইনাইনে জ্বর সারে তো কুইনাইন সারাবে কে? আমাদের দেশে এটি একটি পুরনো প্রবাদ। কিন্তু এটি এখন আমাদের পুঁজিবাজারের একটি প্রধান খাত মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রেই বেশি প্রযোজ্য। পুঁজিবাজারে গভীরতা বৃদ্ধির পাশাপািশ মন্দা রোধ ও ঝুঁকি কমাতে সারা বিশ্বের পুঁজিবাজারগুলোতে মিউচুয়াল ফান্ডকে একটি প্রধান ইনস্ট্রুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা হলেও আমাদের পুঁজিবাজারে প্রকৃত অর্থে এ ধরনের কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না মিউচুয়াল ফান্ড; বরং আমাদের পুঁজিবাজারে প্রকৃত অর্থে এ খাতে বিনিয়োগকারীরাই এখন প্রচণ্ড ঝুঁকির মধ্যে। তাই পুঁজিবাজারকে সত্যিকার অর্থে স্থিতিশীল করতে চাইলে এ খাতটি নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে নতুন করে ভাবতে হবে।
বর্তমানে দুই পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৭টি ফান্ডের ৩৩টিই অভিহিত মূল্যের নিচে। এ ছাড়া অর্ধেকের বেশি ফান্ড ইউনিট বেচাকেনা হচ্ছে ৫ টাকা বা তারও কম দামে। অথচ ক’দিন আগেই এ ফান্ডগুলোর প্রতিটি ইউনিট আইপিওর মাধ্যমে ১০ টাকায় কিনেছেন বিনিয়োগকারীরা। মিউচুয়াল ফান্ডের অপর্যাপ্ততা এবং তালিকাভুক্ত ফান্ডগুলো এদের ট্রাস্টিদের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থার অভাবই এ অবস্থার জন্য অনেকটা দায়ী। এ ছাড়া, বিগত কয়েক বছরে ফান্ডগুলোতে বিনিয়োগ করে প্রত্যাশিত রিটার্ন না পাওয়াও কিছুটা দায়ী। আর এ কারণে বাজারে যে হারে কোম্পানি তালিকাভুক্ত হচ্ছে, তার ১০ শতাংশও আসছে না মিউচুয়াল ফান্ড। উদ্যোক্তারা এখন আর ফান্ড আনার ঝুঁকি নিতে চান না। যেখানে এক সময় বাজারে ৩০০ থেকে ৫০০ কোটি টাকার ফান্ডও এসেছে সেখানে এখন কোনো উদ্যোক্তা ১০ কোটি টাকাও ফান্ডে বিনিয়োগ করতে ভয় পাচ্ছেন। কারণ, দু-চার দিন পরই এ ফান্ডের বাজারদর নেমে আসবে অভিহিত মূল্যের নিচে।
কোনো কারণে বাজারে মন্দা তৈরি হলে ফান্ডগুলোই বাজারে অর্থ জোগান দিয়ে তা রোধ করে। আবার কোনো কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠা বাজারকে ঝুঁকিমুক্ত রাখতে বাজারের শেয়ারের প্রবাহ বাড়ায় এ খাতটি। কিন্তু আমাদের পুঁজিবাজারে ফান্ডগুলোর অবস্থা যেন ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি অবস্থা। নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে ফান্ড গঠনের পর তালিকাভুক্তির পর থেকেই এসব ফান্ড সত্যিকার অর্থে কোনো সাড়া পায় না বিনিয়োগকারীদের। এতে দিনের পর দিন ফান্ডগুলো শিকার হচ্ছে দরপতনের। এক সময় বলা হতো মিউচুয়াল ফান্ডের আকার ছোট হওয়ায় এগুলো যথার্থ কার্যকর করা যাচ্ছে না। কিন্তু এখন বাজারে সবচেয়ে বড় ফান্ডটির দরই সবচেয়ে কম।
বিশ্বের পুঁজিবাজারের দিকে তাকালে দেখা যায়, বেশির ভাগ বাজারের বাজার মূলধনের ৪০ শতাংশের বেশি দখলে রাখে মিউচুয়াল ফান্ড। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ক্ষেত্রেও এ কথা প্রযোজ্য। কিন্তু আমাদের দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধনের ১ থেকে ২ শতাংশ রয়েছে মিউচুয়াল ফান্ড। ২০১০ সালের আগস্টে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন ছিল ২ দশমিক ০৩ শতাংশ। ২০১১ সালের এপ্রিল মাসে এ মূলধন দাঁড়ায় ৩ দশমিক ৩৬ শতাংশে। এর পর ক্রমে কমতে থাকে খাতটির মূলধন।
২০১২ সালের মে মাসে তা নেমে আসে ১ দশমিক ৮৭ শতাংশে। ২০১৪ সালের জুন মাসে তা আবার নেমে আসে ১ দশমিক ৪৪ শতাংশে। এভাবে প্রতিনিয়ত কমবেশি মিউচুয়াল ফান্ডে তালিকাভুক্তি ঘটতে থাকলেও খাতটির অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ডিসেম্বরের তথ্য অনুযায়ী ডিএসইর বাজার মূলধনে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ১ দশমিক ১৫ শতাংশ। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, এ অবস্থা চলতে থাকলে এক সময় আমাদের পুঁজিবাজার থেকে এ খাতটি হারিয়ে যেতে পারে।
তাদের মতে, একমাত্র এ খাত নিয়ে একটি ক্রাশ প্রোগ্রাম করেই এ খাতকে বাঁচিয়ে তুলতে হবে, যাতে নেতৃত্ব দেবে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সাথে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ প্রয়োজনে এ খাত নিয়ে রোডশোর উদ্যোগ নিতে পারে। বিশেষ করে অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোকে এ বিষয়ে সর্বপ্রথম মাঠে নামানো দরকার। নিজেদের স্বার্থেই কোম্পানিগুলোর তা করা উচিত। কারণ, মিউচুয়াল ফান্ড শিল্পটি বেঁচে না থাকলে এ খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়া কয়েক হাজার মানুষ তাদের চাকরি হারাবে।
তা ছাড়া, পুঁজিবাজারের নিয়মিত বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষের কাছে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের যথার্থতা তুলে ধরতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষও এ খাতে বিনিয়োগে এগিয়ে আসেন। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশে সবগুলো টিভি চ্যানেলেই মিউচুয়াল ফান্ডের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হচ্ছে যা এ ফান্ডগুলোকে সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তুলছে। এতে এক দিকে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় নিরাপদ থাকছে, অন্য দিকে তা পুঁজিবাজারের গভীরতাও বাড়াচ্ছে। এ ধরনের কোনো উদ্যোগ নেয়া যায় কি না তাও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাবতে পারে।
পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের চলমান পরিস্থিতির কারণে এ মুহূর্তে এক দিকে যেমন বিনিয়োগকারীরা এ খাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহী হচ্ছেন না, তেমনি ফান্ড গঠনে উৎসাহ হারাচ্ছেন উদ্যোক্তারাও। গত পাঁচ বছরে পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ড তালিকাভুক্ত হয়েছে ১০টি। অথচ একই সময়ে অবসায়নের মাধ্যমে তালিকাচ্যুত হয়েছে ১১টি ফান্ড। আর বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহের কারণে এ সময় তালিকাভুক্ত ফান্ডগুলোও তালিকাভুক্তির পর অভিহিত মূল্য ধরে রাখতে পারছে না। যদিও কোনো কোনো সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি কোনো একটি স্পন্সর জোগাড় করে একটি ফান্ড বাজারে আনে, তালিকাভুক্তির পরই অভিহিত মূল্য ধরে রাখতে পারছে না।
প্রচণ্ড ঝুঁকিপূর্ণ পুঁজিবাজার আমাদের দেশে এ পর্যন্ত দু’টি বড় ধরনের ধস দেখেছে। দুই বারই পুঁজিবাজারের হাজার হাজার বিনিয়োগকারী তাদের সর্বস্ব হারিয়ে রাস্তায় নেমেছেন। দিনের পর দিন তাদের আহাজারি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত নাড়া দিয়েছে। কিন্তু এত কিছুর পরও বাজারকে ঝুঁকিমুক্ত করার সহজতর এ খাতটি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বা পুঁজিবাজার কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় আনুকূল্য পায়নি। যার ফলে সামনের দিনগুলোতে পুঁজিবাজারের মন্দা রোধ ও ঝুঁকি হ্রাসে দর্শনীয় কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। হ


আরো সংবাদ



premium cement
দেশের জন্য কাজ করতে আ’লীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর শনিবার যেসব এলাকায় ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকবে গ্যাস সরবরাহ ওলামা দলের আংশিক কমিটি ঘোষণা নোয়াখালীতে ইয়াবাসহ গৃহবধূ গ্রেফতার জুলাইয়ে ব্রাজিল সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিলো ভানুয়াতু বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার

সকল