২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

আমের দামে বিস্তর ফারাক

-

ফলন ভালো হওয়ায় চলতি বছর সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে আম। যদিও বাজার ভেদে আমের মূল্যের বিস্তর ব্যবধান। বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের পরিকল্পনাহীনতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত আমচাষি ও বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। এর সুযোগ নিচ্ছে মধ্যস্বত্ব ভোগীরা।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, পাইকারি ও খুচরা বাজারে ফলের দামে বিস্তর ফারাক। পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরা বাজারে আমের দাম দুই থেকে তিনগুণ।
বিভিন্ন পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, নাটোরের বাগাতিপাড়ার পাইকারি বাজারে লক্ষণভোগ আমটি ১৫-১৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকায় এসে সেই আমের দাম হচ্ছে স্থান ভেদে ৪০-৬০ টাকা। আম্রপালি পাইকারি বাজারে ৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও ঢাকায় এসে স্থান ভেদে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ১০০ টাকা। ফলে এর সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
সেখানকার আমচাষিরা জানান, শুক্রবার সকালে স্থানীয় বাজারে আমের পরিমাণ তুলনামূলক অনেক কম। তবে মূল্য কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে পাকা লক্ষণভোগ (নখনা) আম ১৪-১৫ টাকা বিক্রি হলেও আজ হয়েছে প্রতিকেজি ১৯-২০ টাকা কেজি দরে। আম্রপালি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। এবার আমচাষি ও চুক্তিতে আম বাগান ক্রয়কারী ব্যবসায়ীরা চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
কাওরান বাজারে গিয়ে দেখা যায়, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমের আমদানি। বাজারে আমের অভাব নেই। ব্যবসায়ীরা জানান, এবার আমের দাম অনেক কম। বিগত ১০ বছরে আমের দাম এত কমে নামেনি।
ফলের আড়তদারেরা মনে করেন, এবার ফলন ভালো হওয়ায় মওসুমি প্রায় সব ফলের দাম নাগালের মধ্যেই থাকবে। মোকামে আমের আমদানি প্রচুর। এবার গরিব-ধনী সবাই কম দামে আম কিনে খেতে পারছেন।
এরই মধ্যে রাজধানীর আমের বাজার দখল নিয়েছে সাতক্ষীরা ও মেহেরপুরের আম। পাইকারি বাজারে হিমসাগর, গোপালভোগসহ নানা জাতের আম বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
তবে উল্টো চিত্র রাজধানীর খুচরা বাজারে। মতিঝিল শাপলা চত্বর এলাকায় প্রতি কেজি হিমসাগর বিক্রি করছে ৮০-১২০ টাকায়। ফজলি, ল্যাংড়া ও আম্রপালি বিক্রি করছে মান ভেদে ৬০-৮০ টাকায়।
মুগদায় একই মানের হিমসাগর কেজিপ্রতি ৫০-৭০ টাকায় বিক্রি করছে। ল্যাংড়া ও আম্রপালি বিক্রি করছে মান বেধে ৬০-৭০ টাকায়। ফজলি আম বিক্রি করছে ৫০-৬০ টাকায়।
এ দিকে, একই আম কমলাপুর, মুগদা, মানিকনগর এলাকায় রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ ভ্যানগাড়িতে প্রতি কেজি হিমসাগর বিক্রি করছে ৫০ টাকা। ল্যাংড়া ও আম্রপালি বিক্রি করছে মানভেদে ৪০-৬০ টাকায়।
পাইকারি বাজারের তুলনায় খুচরার দাম এতো বেশি কেন জানতে চাইলে মতিঝিলের ফল ব্যবসায়ী আফজাল জানান, পাইকারদের তুলনায় খুচরা বিক্রেতাদের খরচ বেশি। গাড়ি ভাড়া, দোকান ভাড়া, কর্মচারীর বেতন, বিভিন্ন চাঁদাসহ খরচ হিসাব করেই ব্যবসা করতে হয়। আমরা পাইকারি বাজার থেকে বিভিন্ন সাইজের আম কিনি। এরপর বাছাই করে বিক্রি করি। এ ছাড়া, অনেক আম নষ্ট হয়ে যায়, সব মিলিয়ে দাম ঠিক করতে হয়। তাই পাইকারদের তুলনায় দাম বেশি। পাইকারি বাজারে এক কেজি ৩০ টাকা হলে দোকানে আনতে আনতে ৪০ টাকা পড়ে যায়। এরপর বাছাই করে নষ্ট আম বাদ দিয়ে হিসাব করলে ৫০-৫৫ টাকা পড়ে যায়। ওই আম ৬০ থেকে ৬৫ টাকা বিক্রি করি।
আমের দাম কেমন জানতে চাইলে মতিঝিলের ব্যাংক কর্মকর্তা রকিব জানানÑ এখানে একসাথে অনেক দোকান, তাই দেখে দেখে ভালো আম কেনা যায়। এ জন্য এখান থেকে সবসময় আম কিনি। আজকে পাঁচ কেজি ল্যাংড়া আম কিনেছি ৩৫০ টাকায়। পত্রপত্রিকায় দেখি এবার আমের দাম কম। রাজশাহীতে নাকি আমের কেজি ৮-১০ টাকা। কিন্তু আমরা ভোক্তারা তো বেশি দামেই আম কিনছি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশে সব সময় সাধারণ মানুষের মরে। কৃষক উৎপাদন করে মূল্য পায় না। আবার আমরা ভোক্তারা কম দামে জিনিস পাই না। সব ভোগ করে মধ্যস্বত্বভোগীরা।
পুঁজি নিয়ে শঙ্কিত আম চুক্তিভিত্তিক বেপারীরা : রাজশাহীর বানেশ্বরের আম ব্যবসায়ী তরিকুল ইসলাম। অল্প পুঁজি দিয়ে এক হাজার টাকা দরে বিভিন্ন জাতের চারটি বাগান কিনেছিলেন। ফলন ভালো হওয়ায় প্রত্যাশিত লাভের অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু এবার আমের বাজার কম হওয়ায় এখন লোকশান গুণতে হচ্ছে তাকে।
আম পচনশীল হওয়ায় বিক্রি না করে ধরে রাখলে আরো কম দামে বিক্রি করতে হবে তা অনুধাবন করতে পেরে আড়তদারদের মাধ্যমে দ্রুত আম বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
তরিকুল বলেন, এখন আর লাভের আশা করছি না, যে টাকা বিনিয়োগ করেছি তা উঠবে কিনা তা নিয়ে ভীষণ চিন্তায় আছি। গত কয়েকটা মাস যে পরিশ্রম করলাম তা বিফলে গেলো।
আমের দাম কম হওয়ার কারণ কী, জানতে চাইলে তিনি বলেনÑ এবার আমের মওসুমের শুরুতে ব্যবসায়ীদের অনেক আম নষ্ট করে দেয়া হয়, যার খবর বিভিন্ন মিডিয়াতে ফলাও করে প্রকাশ করা হয়। এতে মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভয় ঢুকে যায়। ফলে মওসুমের শুরুতে আমের বিক্রি ছিল খুবই সীমিত। যে কারণে চাষিরাও সে সময় আম ভাঙেনি। কিন্তু এখন সব আম একসাথে পেকে যাচ্ছে। ফলে চাষিরা আম ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে বাজারে অতিরিক্ত আম আসায় দাম পড়ে গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড ‘মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সঙ্কটে’ ‘রাফা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা’ ৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের

সকল