১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


বেসিক ব্যাংকের টাকার হদিস নেই : দুদক সচিব

-

বেসিক ব্যাংক থেকে আত্মসাৎকৃত সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা কোথায় ব্যবহার হয়েছে তা খুঁজে পায়নি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ফলে আলোচিত এই ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় দায়ের হওয়া ৫৬ মামলায় অভিযোগপত্র দিতেও দেরি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দুদক সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত। একই সাথে তদন্ত বিলম্বের দায়ভার দুদক চেয়ারম্যানের নয় বলেও দাবি করেন তিনি। বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে কেন আসামি করা হচ্ছে না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মঙ্গলবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা ফজলে নূর তাপসের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় দুদক সচিব বলেন, আমরা কালকের সংবাদে দেখেছি যে কমিশন শপথ ভঙ্গ করেছে এমন বক্তব্য এসেছে। আমাদের কোনো কমিশনার বা চেয়ারম্যান শপথ গ্রহণ করে দায়িত্ব গ্রহণ করে নাই। এগুলো আমাদের তদন্ত কর্মকর্তারা তদন্ত করছেন। এর দায়-দায়িত্ব কমিশন বা চেয়ারম্যানের ওপর বর্তায় না। সুতরাং এ ক্ষেত্রে পদত্যাগের প্রশ্ন কেন আসছে বুঝতে পারছি না।
বেসিক ব্যাংকের তদন্তে বিলম্ব প্রশ্নে সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত বলেন, অর্থের উৎস, অর্থ কোন জায়গায় ব্যবহার হয়েছে, কোথায় সম্পদ হিসেবে কনভার্ট হয়েছে, সেগুলো নিষ্পত্তি শেষে যাকে আইনের আওতায় আনার তথ্য উপাত্ত পাওয়া যাবে তাকেই চার্জশিটভুক্ত করা হবে। এ টাকাটা যখন চেকে নিয়েছে, উত্তোলন করার পরে টাকা যদি ব্যাংকে রাখা হতো তাহলে উৎস পাওয়া যেত। টাকা নিয়ে একেকজন একেক কাজে ব্যবহার করেছে। সেখানে মানিলন্ডারিং হয়েছে। কাজেই অর্থের উৎস খুঁজতে গিয়ে অনেক সময় বিলম্ব হয়ে থাকে। আপনারা যে মামলার কথা বলেছেন, সেগুলো জটিল প্রকৃতির মামলা। সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার মধ্যে বেশির ভাগ টাকাই নগদে উত্তোলন হয়েছে। এ টাকাগুলো কোথায় ব্যবহার কিংবা জমা হয়েছে আমাদের কর্মকর্তারা বের করতে পারেন নাই। তদন্ত কর্মকর্তারা টাকার লিঙ্ক খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত টাকা কোথায় গিয়েছে, কোন কোন ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়েছে বের করা সম্ভব না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত নিশ্চিতভাবে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না।
এর আগে গত সোমবার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, দুদকের চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে তার পদ থেকে সরে যাওয়া উচিত। আমরা বিভিন্ন সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাতে দেখেছি, তদন্ত করে দেখেছি, বেসিক ব্যাংকের মাধ্যমে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটার মূল ব্যক্তি হলেন তৎকালীন বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চু। যার কারণে সরকার তাকে সেই পদ থেকে অপসারণ করেছে। কিন্তু আজ অবধি বেসিক ব্যাংক সংক্রান্ত যতগুলো দুর্নীতির মামলা হয়েছে, আমরা লক্ষ করেছি, শুধু কর্মকর্তা এবং ব্যবসায়ীদেরকে সেই মামলায় সম্পৃক্ত করা হয়েছে। কিন্তু তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হাই বাচ্চুর বিরুদ্ধে আজ অবধি কোনো দুর্নীতির মামলা হয়নি। কয়েক দফা তাকে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। আজ অবধি কোনো মামলা করা হয়নি।
২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক এমপি আবদুল হাই বাচ্চু। আর তখনই ব্যাংকটির দিলকুশা, গুলশান ও শান্তিনগর শাখা থেকে নিয়ম বহির্ভূতভাবে কয়েক হাজার কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটে।
ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়া জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়াসহ নিয়ম না মেনে ঋণ অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে তখনকার পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ২০১০ সালে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালে রাজধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬টি মামলা করে কমিশন। সেসব মামলার আসামির তালিকায় ২৬ জন ব্যাংক কর্মকর্তা থাকলেও বাচ্চু বা পরিচালনা পর্ষদের কাউকে সেখানে না রাখায় প্রশ্ন ওঠে সে সময়। এরপর বিভিন্ন মহলের সমালোচনা এবং উচ্চ আদালতের পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে পাঁচ দফা বাচ্চুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল