আদালতে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান
ভোক্তা অধিদফতরকে ২৪ ঘণ্টার হটলাইন চালুর নির্দেশ- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ১৭ জুন ২০১৯, ০০:০০
আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাহফুজুল হক। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও মানহীন পণ্য বাজারে থাকার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গতকাল সকালে আদালতে হাজির হয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চান তিনি। ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে আরো সতর্ক থাকবেন বলে আদালতকে জানান তিনি। তার পক্ষে আদালতে জানানো হয় নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে কর্তৃপক্ষ। এরপর আদালত নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে আদালত অবমাননার অভিযোগ থেকে শর্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি দেন। অব্যাহতির শর্তে বলা হয়েছে বিশেষ কোনো উপলক্ষ ও মাস ঘিরে নয়, সারা বছরই ভেজাল ও মানহীন পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চলমান রাখতে হবে, ভবিষ্যতে আদালতের আদেশ ভঙ্গ করবেন না এবং জনবল কম থাকলে তা বৃদ্ধি করে অভিযান চালাতে হবে। গতকাল বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
একই সাথে আদালত পণ্য কিনে প্রতারিত সারা দেশের ভোক্তাদের জরুরি সেবায় দুই মাসের মধ্যে ২৪ ঘণ্টার হটলাইন চালু করতে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে নির্দেশ দিয়েছেন। সাপ্তাহিক বন্ধ ও ছুটির দিনেও এ হটলাইন চালু থাকবে।
আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ভোক্তারা অধিদফতরের ০১৭৭৭৭৫৩৬৬৮ নম্বরে অভিযোগ জানাতে পারবেন। পাশাপাশি ৯৯৯ এবং ৩৩৩ নম্বরে কল করেও অভিযোগ করা যাবে।
শুনানিতে আদালত বলেন, যখন আদেশ বাস্তবায়নের দরকার ছিল তখন তা না করে তলবের পর এখন বাস্তবায়িত হচ্ছে। বাজারে খাঁটি জিনিস একদমই নেই বলেও জানান হাইকোর্ট। যাদের এ নিয়ে কাজ করার কথা তারা কিছু করছে না বলেও ভর্ৎসনা করেন আদালত।
ইউনিয়ন পর্যায়ে ভেজাল ঢুকে গেছে উল্লেখ করে আদালত বলেন, গ্রামে এখন শহর থেকে খাবার যায়, শহর থেকে যাওয়া মানেই ভেজাল। ঈদ চলে গেলে আর ভেজালবিরোধী অভিযান চলে না বলেও জানান আদালত।
এর আগে গত ২৩ মে ভেজাল ও নি¤œমানের পণ্য বাজার থেকে সরানোর আদেশ প্রতিপালন না করায় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হককে তলব করে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আদেশে তাকে ১৬ জুন হাজির হতে বলা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে হাজির হন তিনি।
আদালত বলেছেন, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনকে (বিএসটিআই) সারা বছরই ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে হবে। এ ছাড়া মানহীন ৫২ পণ্যের মধ্যে পুনঃপরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে ব্যর্থ ১৬টি পণ্যের পাশাপাশি বাজারে থাকা সব পণ্য র্যান্ডম টেস্ট ও রিটেস্ট করতে হবে। আগামী ১৯ আগস্ট এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আদালতের আদেশ প্রতিপালনের বিষয়টি অবহিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান। বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম ও বিএসটিআইর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার এম আর হাসান মামুন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।
শুনানিতে বিএসটিআই আইনজীবী এম আর হাসান মামুন বলেন, মানহীন ৫২ পণ্যের মধ্যে ৪২টি পণ্যের মান যাচাইর প্রতিবেদন দিয়েছে বিএসটিআই। এর মধ্যে ২৬টি পণ্য উত্তীর্ণ হলেও ১৬টি ব্যর্থ হয়েছে। আইন অনুযায়ী পুনঃপরীক্ষায় তাদের উত্তীর্ণ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, ৯৬টি পণ্যের মধ্যে ৫৩টি মানসম্মত। ২২টির মান ভালো না হওয়ায় তাদের কারণদর্শাতে বলা হলে দু’টি পণ্যের পক্ষে জবাব দেয়া হয়নি। আটটি পণ্য বিএসটিআইর অনুমোদন নেয়নি। তারা পুনঃপরীক্ষার সুযোগ পাবে না। আজ থেকে আমাদের সার্ভিলেন্স টিম কাজ শুরু করেছে।
আদালত বলেন, আপনাদের কাজ চলমান রাখতে হবে। আমরা বারবার আদেশ দিতে চাই না।
এ পর্যায়ে রিট আবেদনের আইনজীবী শিহাব উদ্দিন খান বলেন, বিএসটিআইর নমুনা পরীক্ষার কোনো সময়সীমা নেই। পরীক্ষার জন্য এক মাস সময় নিলে এ সময়তো পণ্য বিক্রি বন্ধ থাকবে না। এখানে বিএসটিআইর ঘাটতি রয়েছে।
তখন আদালত বলেন, আমরা অভিযোগ পেয়েছি পণ্যের মান পরীক্ষার আগে লেনদেন হয়। এ অভিযোগ যদি সত্য হয় তাহলে দুদকে পাঠাবো না, সোজা কারাগারে পাঠাবো।
আইনজীবী বলেন, নমুনা পরীক্ষায় ন্যূনতম স্বচ্ছতা থাকা দরকার। আদালত বলেন, পণ্যের মান পুনঃপরীক্ষায় দুর্নীতিবাজদের রেট আরো বেড়ে যাচ্ছে।
শুনানি শেষে আইনজীবী ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমাদের আগের প্রতিবেদনে ভুল ছিল। এবার সম্পূরক আবেদন দিয়ে বলেছি সারা দেশে ভেজাল পণ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। আদালত সন্তুষ্ট হয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। আদালত অবমাননার অভিযোগ মার্জনা করেছেন।
তিনি বলেন, সারা দেশে আদালতের নির্দেশ মতো যে ড্রাইভ দিয়েছি তার একটা রিপোর্ট সাবমিট করেছি। আদালত আমাদের রিপোর্টে এবং আবেদনে সন্তুষ্ট হয়ে তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে (মাহফুজুল হক) অব্যাহতি দিয়েছেন। ওনার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার যে রুল হয়েছিল তা থেকেও অব্যাহতি দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, কোর্টের কমন অর্ডার থাকে ভবিষ্যতে আপনি এগুলো করবেন না এবং কোর্টের আদেশ পালন করবেন। আমরাও বলেছি ভবিষ্যতে এ রকম কোনো ভুল হবে না। কোর্টের নির্দেশ সব সময় পালন করব।
ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান বলেন, চেয়ারম্যানকে বেশ কিছু শর্ত দিয়ে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন। উনি ভবিষ্যতে আদালতের কোনো স্পেসিফিক অর্ডার ভায়োলেশন করবেন না, এখন থেকে নিয়মিত ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করবেন। ওনার লোকবল সঙ্কট থাকলে অন্যান্য এজেন্সির সহায়তা নিয়ে অভিযান পরিচালনা করবেন। এ কন্ডিশন দিয়ে ফর দ্য টাইম বিং ওনাকে আদালত অবমাননার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।
সম্প্রতি ৪০৬টি খাদ্য পণ্যের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করেছে বিএসটিআই। এর মধ্যে ৩১৩টি পণ্যের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ৩১৩টির মধ্যে ৫২ পণ্য মানহীন বলে প্রতিবেদন দেয় মান নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থাটি। বাকি ৯৩ পণ্যের পরীক্ষার প্রতিবেদন ১৬ জুনের মধ্যে দিতে বিএসটিআইকে নির্দেশ দেন আদালত। সে অনুসারে বিএসটিআই ৯৩ পণ্যের মান পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করে। এর মধ্যে ২২টি পণ্য নি¤œমানের বলে জানায় তারা।
এর আগে, গত ১২ মে এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট বাজার থেকে আইনানুসারে এসব পণ্য সরিয়ে নিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরকে নির্দেশ দেন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা