২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
এবার বিশ্বব্যাংক বলল প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৭.৩%

৩ জন বড় ঋণগ্রহীতা খেলাপি হলে ২১ ব্যাংক মূলধন সঙ্কটে পড়বে

বিশ্বব্যাংকের ডেভেলপমেন্ট আউটলুক প্রকাশ
-

চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। তবে বিশ্বে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির পাঁচটি দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে স্থান দিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নিকারি এই সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংকের তালিকার বাকি দেশগুলো হলো-ইথিওপিয়া, ঘানা, ভুটান ও আইভরি কোস্ট।
গতকাল দুপুরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশ কার্যালয়ে ‘বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট আউটলুক-২০১৯’ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এই পূর্বাভাস দেয়া হয়। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর (বাংলাদেশ ও ভুটান অঞ্চল) রবার্ট জে সউম রিপোর্টটি প্রকাশ করেন। এ সময় বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন প্রতিবেদনে বিভিন্ন দিক সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, এর আগে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) গত বুধবার তাদের আউটলুকে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৮ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল। তবে সরকারের অর্থমন্ত্রী অ হ ম মুস্তফা কামাল গত মাসে জানিয়েছিলেন, চলতি অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার তিন রকম হওয়ার কারণ জানতে চাইলে রবার্ট জে সউম বলেন, বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব হিসাব-নিকাশ আছে। বিভিন্ন তথ্য ও পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করে বিশ্বব্যাংক মনে করছে, এ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ০৩ শতাংশ হবে। এটা বিশ্বব্যাংকের নিজস্ব পর্যবেক্ষণ বলে তিনি জানান।
জাহিদ হোসেন বলেন, খেলাপি ঋণ একটি ছোঁয়াচে রোগ। ঋণ পুনঃতফসিল ছোঁয়াচে রোগটা আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। একই ঋণগ্রহীতা বারবার পুনঃতফসিল করছেন, কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে আমি বিপদগ্রস্ত।
আউটলুকের বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংকের লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেন, জিডিপিতে ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। পাশাপাশি আর্থিক খাতের সংস্কার করতে হবে। মোটা দাগে বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়ন ছাড়া ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা কঠিন হবে।
আর্থিক খাতে দুই বাধা
খেলাপি ঋণ ও রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থতাকে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতায় সবচেয়ে বড় বাধা হিসেবে চিহ্নিত করেন জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ব্যক্তি খাতে যেভাবে বিনিয়োগ হওয়ার কথা ছিল, সেভাবে হচ্ছে না। ব্যক্তি খাতে ঋণপ্রবাহ কমে গেছে। শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এর আগে আর্থিক খাতে যেসব দুর্বলতা ছিল, তা আরো বেড়েছে।
রাজস্ব আদায়ের চিত্র তুলে ধরে জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের রাজস্ব খাতে এখনও পরিবর্তন আসছে না। রাজস্ব আদায়ে লক্ষ্যমাত্রা থপূরণ হচ্ছে না। ফলে চলতি অর্থবছরের বাজেট ঘাটতি আরো বাড়বে। ঘাটতির পরিমাণ জিডিপির ৪ শতাংশ ছাড়িয়ে যাবে, তবে তা ৫ শতাংশের নিচে থাকবে। গত অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ৩ দশমিক ৯ শতাংশ।
বড় ৩ ঋণগ্রহীতা যদি খেলাপি হোন
খেলাপি ঋণ এখন ছোঁয়াচে রোগ হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের এই লিড অর্থনীতিবিদ বলেন, দেশের তিনজন বড় ঋণগ্রহীতা যদি ঋণখেলাপিতে পরিণত হন বা তাদের প্রতিষ্ঠান যদি আর্থিক বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে, তাহলে ২১টি ব্যাংক মূলধন সঙ্কটে পড়বে। আবার এমন ঋণগ্রহীতার সাতজন ঋণখেলাপি হলে ৩১টি এবং ১০ জন খেলাপি হলে ৩৫টি ব্যাংক মূলধনের সঙ্কটে পড়বে। তাদের মূলধন মাপকাঠির নিচে নেমে যাবে। আমাদের দুর্বলতার প্রধান জায়গা হলো খেলাপি ঋণ।
জাহিদ হোসেন বলেন, আমরা বড় বড় যেসব ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দিচ্ছি, তাদের ব্যবসায় যদি কোনো দুর্যোগ দেখা দেয়, তাহলে কী হবে? ব্যাংকিং খাতে তার কী প্রভাব কী হতে পারে? বাংলাদেশ ব্যাংকের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, দেশের ৩, ৭ বা ১০টি। বড় ঋণগ্রহীতা প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হয়ে যান, তাহলে ২১, ৩১ ও ৩৫টি ব্যাংক তাদের মূলধনে ঘাটতিতে পড়ে যাবে।
তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো যে ঋণ দেয় তার বিপরীতে কিছু জামানত নেয়া হয়। এই বন্ধকি জামানত যদি বিক্রি করে খেলাপি ঋণ আদায় করা হয়, তাহলে কী হবে? তিনি বলেন, এই জামানতের যদি ১০, ২০ ও ৪০ শতাংশ মূল্য কমে যায় তাহলে ২, ৫ ও ৯টি ব্যাংক মূলধন ঘাটতিতে পড়বে। সব মিলিয়ে যদি ব্যাংকের ঝুঁকি পর্যালোচনা করি, তাহলে চিত্রটি অনেক গভীর বলা যায়। সব মিলিয়ে বলা যায় ব্যাংকিং খাতে কালো ঘন মেঘ ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে। তার মানে হলো আর্থিক খাতে ডিজাস্টার নেমে আসবে।
অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাতকে বাংলাদেশের আর্থিক খাতের সবচেয়ে বড় দুর্বলতার জায়গা বলে অভিহিত করেন জাহিদ হোসেন। তিনি খেলাপি ঋণকে এই খাতের প্রধান সমস্যা বলে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংকিং খাতে বড় বড় ঋণখেলাপি রয়েছে। তাদের ঋণ বারবার পুনঃতফসিল করতে দেয়া হচ্ছে। একেকজনকে তিন-চারবার করে ঋণ পুনঃতফসিল করতে দেয়ার মাধ্যমে আর্থিক খাত, বিশেষ করে ব্যাংক দুর্বল হচ্ছে। এভাবে পুনঃতফসিলের কোনো যৌক্তিকতা নেই।
সম্প্রতি ঋণখেলাপিদের ৯ শতাংশ সরল সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিতে অর্থমন্ত্রীর ঘোষণার সমালোচনা করে জাহিদ হোসেন বলেন, এভাবে ঋণ পরিশোধের সুযোগ করে দেয়া হলে ব্যাংকগুলো দুর্বল হয়ে পড়বে। বারবার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করার পরিবর্তে ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেন তিনি।
৯৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ রয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘এত ঋণের সবই কি অনিচ্ছাকৃত?’ সব খেলাপি ঋণকে অনিচ্ছাকৃত বলা যাবে না। গত ১০-১৫ বছরে দেশে এমন কিছু বড় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বড় ধরনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ঘটেনি যে বারবার ঋণ পুনঃতফসিল করতে হবে। এভাবে পুনঃতফসিল করা হলে ব্যাংকগুলো লোকসানে পড়ে যাবে।
তিনি বলেন, ‘আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোকে ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে দেয়া উচিত। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক যেন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। তাদের কাজে যেন হস্তক্ষেপ না করা হয়।’

 


আরো সংবাদ



premium cement
ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড ‘মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সঙ্কটে’ ‘রাফা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা’ ৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের

সকল