২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জয়-পরাজয়ের প্রধান নিয়ামক হবে প্রার্থী বাছাই

মানিকগঞ্জ-১ আসন
-

আশা-নিরাশার মাঝে অবশেষে দারুণভাবে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে মানিকগঞ্জ-১ আসনে। জেলার ঘিওর-দৌলতপুর-শিবালয় উপজেলা নিয়ে এ আসন গঠিত। জাতীয় সংসদের ১৬৮ নম্বর এ আসনে এবার ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ ৮৬ হাজার ৭০৪ জন।
সম্ভাব্য প্রার্থী-সমর্থকদের পদচারণায় মুখরিত এ জনপদ। বিশেষ করে বড় দুই জোটের মনোনয়ন কার ভাগ্যে জোটে এ আলোচনাই এখন সবার মুখে মুখে।
আওয়ামী লীগ থেকে এ আসন থেকে মনোনয়নপত্র ক্রয় করেছেন বর্তমান এমপি, জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এ এম নাঈমুর রহমান দূর্জয়, সাবেক এমপি এ বি এম আনোয়ারুল হক, যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম জাহিদ, জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক, মানিকগঞ্জ জজ কোর্টের পিপি অ্যাডভোকেট আ: সালাম, জেলা আ’লীগের সদস্য ও মানিকগঞ্জ পৌর কাউন্সিলর সুভাষ সরকার, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ-সম্পাদক আফতাব খন্দকার রনি, বঙ্গবন্ধু কল্যাণ পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক মো: শফিকুল ইসলাম ও বঙ্গবন্ধু আইনজীবী পরিষদ ও বাংলাদেশ যুব আইনজীবী পরিষদের সাবেক সভাপতি মোস্তাািফজুর রহমান কাদরি ও ড. আশিকুর রহমান।
বিএনপির মনোনয়ন ক্রয় করেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক তোজা, মরহুম মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের দুই ছেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি অ্যাডভোকেট খোন্দকার আব্দুল হামিদ ডাবলু, জেলা বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ড. খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু, অ্যাডভোকেট আজিজুল ইসলাম বাচ্চু, সাবেক ছাত্রনেতা মো: শফিকুল ইসলাম, জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহবুব হোসেন মহব্বতের স্ত্রী খোন্দকার আতিকা রহমান।
মহাজোটের প্রার্থী হতে জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জাসদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক, জেলা জাসদের সাধারণ সম্পাদক, ঘিওর উপজেলার দুইবারের উপজেলা চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন খান জকি।
মানিকগঞ্জের অন্য দুইটি আসনের মতো এ আসনটি অতীতে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও গত ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে চলে যায়। আর ১০ম জাতীয় সংসদে নামমাত্র নির্বাচনে থাকে আ’লীগের দখলেই। সর্বশেষ ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে পরাজয় বরণ করেছিলেন দলটির মরহুম মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসন। বিএনপির এ আসনে বর্তমানে দলীয় নির্বাচন করা পুরনো কোনো প্রার্থী নেই। দলীয় প্রার্থী হিসেবে যেই মনোনয়ন পাবেন তিনি নতুন মুখ হিসেবেই ভোটারদের কাছে যাবেন।
অপর দিকে আ’লীগের দূর্জয়, আনোয়ারুল হক দুইজনই এমপি ছিলেন আর আ: সালামও আগে দলীয় প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন। এস এম জাহিদসহ অন্যরা নতুন মুখ। জাসদের আফজাল হোসেন খান জকি দূর্জয়ের সাথে গত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন।
পশ্চিম মানিকগঞ্জ হিসেবে খ্যাত এ আসনটিতে এবার ভোটের হিসাব খুবই জটিল বলে মনে করেন অনেকে। অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ আসনটি ছিল শুধু ঘিওর আর দৌলতপুর উপজেলা নিয়ে আর ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানিকগঞ্জের চারটি আসন ভেঙে তিনটি করা হয়। তখন শিবালয় উপজেলাকে এ আসনে যোগ করা হয়। এ আসনে কয়েকটি ইউনিয়ন রয়েছে চরাঞ্চল নিয়ে। দলের বাইরেও চরাঞ্চলের মানুষ কিছুটা আঞ্চলিকতায় ভোট দেন। আবার শিবালয় উপজেলার মানুষ কখনো ঘিওর-দৌলতপুরের সাথে না থাকায় এ উপজেলার ভোটের হিসাবটা একটু আলাদা হবে।
শিবালয় উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: আব্দুল কুদ্দুস বলেন, বর্তমান এমপি নাঈমুর রহমান দূর্জয় একজন ভদ্র মানুষ, জনগণ তাকে পছন্দ করে আর বিগত সময়ে তার উন্নয়নমূলক কাজই তাকে বিজয়ী করবে। আমরা মনে করি তিনিই দলের মনোনয়ন পাবেন।
এস এম জাহিদ বলেন, এই অবহেলিত জনপদের মানুষ এখনো অবহেলিত, তাদের ভাগ্যের উন্নয়নে আমি কাজ করতে চাই। মনোনয়নের ব্যাপারে আমি আশাবাদী এবং মনোনয়ন পেলে অবশ্যই জনগণ আমাকে বিজয়ী করবে।
বিএনপির জেলা সভাপতি আফরোজা খান রিতা বলেন, তৃণমূলের চাহিদার কারণেই আমি প্রার্থী হয়েছি। এ হারানো আসন উদ্ধার করার জন্য দলের নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে আমাকে প্রার্থী করার ব্যাপক দাবি রয়েছে। বিজয়ের ব্যাপারে আমি আশাবাদী ইনশা আল্লাহ। তা ছাড়া জেলার দায়িত্বশীল হিসেবে আমি গত উপজেলা নির্বাচনে সাতটি উপজেলাতেই চষে বেড়িয়েছি। জনগণ বিএনপিকে ভালোবাসে এবং তারা ধানের শীষে ভোট দেয়ার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছে। সাতটি উপজেলাতেই জনগণ খালেদা জিয়ার প্রার্থীদের বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছিল।
জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এস এ জিন্নাহ কবীর বলেন, শত বাধা-বিপত্তির মাঝেও আমি তৃণমূলে দীর্ঘ দিন যাবৎ কাজ করে যাচ্ছি। হামলা-মামলা করে আমাকে নেতাকর্মীদের থেকে আলাদা করা যায় নাই। দলের হাই কমান্ডের গ্রিন সিগন্যালেই আমি কাজ করে যাচ্ছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে আমি বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। তিনি আরো বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই জাগো দলের সর্ব কনিষ্ঠ সদস্য ছিলাম আমি।
জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও দৌলতপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক তোজা ঢাকায় বিএনপির সমাবেশে থেকে গ্রেফতার হয়ে বর্তমানে কারাগারে আছেন। গ্রেফতারের আগে তিনি সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, জেলার সভাপতি হিসেবে আফরোজা খান রিতাকে মনোনয়ন দিলে সবাই তার হয়ে কাজ করব। তা ছাড়া আমাকে ছাড়া এ আসন উদ্ধার হওয়া অনেকটাই অসম্ভব। আমিই একমাত্র এ এলাকার মাটি ও মানুষের সাথে সব সময় মিশে আছি। আমি কোনো মৌসুমী পাখি না। অতীতে দলের নেতাকর্মীসহ সাধারণ মানুষ যাদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে, অপমানিত হয়েছে, তাদের দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ আর ভোট দিবে না। জনগণকে নির্যাতন করে, পারিবারিক ওয়ারিশ নিয়ে জনগণের কাছে এলে তাদের জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে।
জাসদ নেতা আফজাল হোসেন খান জকি বলেন, মহাজোট আমাকে মনোনয়ন দিলে বিজয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। সারা দেশে উন্নয়ন হলেও এ অঞ্চলে সে রকম উন্নয়ন হয়নি।
৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে শিবালয় ও হরিরামপুর উপজেলা নিয়ে যে আসনটি র্ছিল সেই আসনে বেশ কয়েকবার এমপি ছিলেন সাবেক মন্ত্রী, আফরোজা খান রিতার বাবা হারুনার রশিদ খান মুন্নু।
বিএনপির অনেক নেতাকর্মী বলেছেন, অতীতে নিজ দলের নেতাদের পরিবারের সদস্যদের দ্বারা আমরা নির্যাতিত হয়েছি। যে কারণে দল যে কাউকে চাপিয়ে দিলেই কিংবা ওয়ারিশান সার্টিফিকেট নিয়ে হাজির হলেই আমরা কাজ করব এটা ভাবা বোকামি।
ঠিক একইভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীও বলেছেন, যারা খারাপ কাজে লিপ্ত, দলের নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করে না, সাধারণ জনগণ যাদের খারাপ মানুষ হিসেবে চিনে সে রকম কাউকে মনোনয়ন দিলেই আমরা জান বাজি রেখে কাজ করব এটা ভাবা ঠিক না।
সব মিলিয়ে আ’লীগ যেমন চায় আসনটি ধরে রাখতে, আবার বিএনপিও চায় উদ্ধার করতে। এ এলাকার সাধারণ মানুষের মতামত অনেকটা এ রকম যে, দলের বাইরেও তারা ভালো মানুষকেই ভোট দিবে। যাদের অতীত রেকর্ড খারাপ তারা যত ভালো কথাই বলুক না কেন তাদের সাধারণ মানুষ ভোট দিবে না বলেই আলাপ করে জানা যায়। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ-মাস্তানদের এবার সাধারণ জনগণ প্রত্যাখ্যান করবে। মূলত উভয় দলেই প্রার্থী নির্বাচনের ওপরই এ আসনে জয়-পরাজন নির্ভর করছে।
১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য হন বর্তমান সংসদ সদস্য নাঈমুর রহমান দূর্জয়ের পিতা অধ্যক্ষ এ এম সায়েদুর রহমান। ১৯৭৯ সালে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন (মরহুম) বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। ১৯৮৬ সালে তৃতীয় সংসদ ও ১৯৮৮ সালে চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন জাতীয় পার্টির নেতা মরহুম মোহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান। ১৯৯১ সালে পঞ্চম, ১৯৯৬ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে ষষ্ঠ ও ১৯৯৬ সালের সপ্তম ও ২০০১ সালে অনুষ্ঠিত অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হন বিএনপির মরহুম মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন। অর্থাৎ এই আসনে তিনি মোট পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এই কারণে মানিকগঞ্জের অন্য আসনের মতো এই আসনকেও বলা হতো বিএনপির ঘাঁটি।
২০০৮ সালে ৯ম সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনকে হারিয়ে নির্বাচনে জয়লাভ করেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ বি এম আনোয়ারুল হক।
২০১৪ সালের ১০ম সংসদ নির্বাচনে এ বি এম আনোয়ারুল হককে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেয়া হয় জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের পরিচালক এ এম নাঈমুর রহমান দূর্জয়কে। তিনি জাসদ প্রার্থী আফজাল হোসেন খান জকিকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।


আরো সংবাদ



premium cement
৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের

সকল