১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


গ্রামীণ অর্থনীতিতে দুঃসময় কমেছে ঋণ ও আদায়

সঙ্কোচিত হয়ে আসছে কর্মসংস্থান
-

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের উদ্যোক্তারা সময়মতো প্রায়োজনীয় ঋণ পাচ্ছেন না। কমে গেছে কৃষিঋণও। এদিকে অর্থের সরবরাহ কমে যাওয়ায় গ্রামীণ উদ্যোক্তারা ব্যাংকের ঋণও পরিশোধ করতে পারছেন না। এতে ব্যাংকের ঋণ আদায় কমে গেছে। সব মিলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে অনেকটা দুঃসময় চলছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় পর্যায়েই শুধু বিনিয়োগ কমছে না, পল্লী এলকার ক্ষুদ্র শিল্পেও বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। বেশির ভাগ ব্যাংকের ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। গ্রামীণ অর্থনীতিতে ঋণ বিতরণ করতে পারছে না। এর সাথে বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ অবকাঠামো সুবিধার অভাব ও চলমান পরিস্থিতির প্রভাব পল্লী এলাকায় পড়েছে। বিনিয়োগ কমায় সঙ্কোচিত হয়ে আসছে কর্মসংস্থান।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, শহরের চেয়ে গ্রামে অবকাঠামোর সুবিধা কম। শহরে যে হারে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয়, গ্রামে ওই হারে বিদ্যুৎ বিতরণ করা হয় না। এমনও এলাকা আছে যেসব এলাকায় দিনে রাতে ৬ থেকে ৮ ঘণ্টার বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয় না। এর বাইরে বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগবিমুখীতো রয়েছেই। সব মিলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে।
বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচক দিয়ে তৈরি বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) গ্রামীণ এলাকায় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প (নন-ফার্ম রুরাল ক্রেডিট) এবং কৃষিখাতে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ঋণাত্মক সাড়ে ১৭ শতাংশ। অর্থাৎ আগের বছরের চেয়ে প্রায় সাড়ে সাত শ’ কোটি টাকার ঋণ কমে গেছে। গত অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে যেখানে এ খাতে ঋণ বিতরণ করা হয়েছিল চার হাজার ২৩৫ কোটি টাকা, চলতি বছরের একই সময়ে তা কমে নেমেছে তিন হাজার ৪৯৩ কোটি টাকা। একইভাবে কমে গেছে ঋণ আদায়ও।
পল্লী এলাকার ঋণ বিতরণ ও আদায়ে ব্যাপক প্রভাব সম্পর্কে দেশের দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, পল্লী এলাকায় ক্ষুদ্র শিল্পে বিনিয়োগের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার অন্যতম কারণ হলো অবকাঠামো সুবিধা ও উদ্যোক্তার অভাব। অনেকেই নানা পরিস্থিতির কারণে এলাকা ছাড়া হয়ে পড়েছেন। অনেকেই ব্যবসায়-বাণিজ্য গুটিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন। এসব কারণে অনেকেই ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে পারেনি, কেউ বা ঋণখেলাপি হয়ে পড়েছেন।
প্রথম প্রজন্মের অন্য এক ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, পল্লী এলাকায় ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যাংকারদের এমনিতেই একটি অনীহা থাকে, এর ওপর খেলাপিঋণের কারণে কোনো কোনো ব্যাংকের পুরোপুরিই ঋণ বিতরণ বন্ধ রাখে। ফলে যে হারে বিনিয়োগ হচ্ছিল, মাঝখানে তার ভাটা পড়ে। আবার পল্লী এলাকায় সবচেয়ে বড় সমস্যা ভালো উদ্যোক্তার অভাব। যাকে ঋণ দেয়া হবে, তার কাছ থেকে ঋণ ফেরত পাওয়ার নিশ্চয়তা না থাকলে পুরো ঋণই ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে। এসব বিবেচনায় পল্লী এলাকায় ঋণ বিতরণে ঋণাত্মক প্রভাব পড়ছে।
তবে, রাজবাড়ীর একজন ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ব্যাংক থেকে আর আগের মতো বিনিয়োগ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। আগে যেখানে ব্যাংকে গেলেই একটি ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যেত, এখন বিনিয়োগ না দিতে নানা অজুহাত দেখানো হয়। অর্থাৎ ব্যাংক থেকে আর আগের মতো সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। এ বিষয়ে দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের তহবিল ব্যবস্থাপক জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ব্যাংকের ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়ছে। অর্থাৎ গ্রামীণ এলাকার চেয়ে জাতীয় পর্যায়ে ঋণ বিতরণের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ হলো- তহবিল সঙ্কট। আমানতের সুদহার কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আমানত প্রবাহ কমে গেছে। কিন্তু বিনিয়োগ থেকে আদায় কমে যাওয়ায় ব্যাংকের বিনিয়োগ সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। সব মিলে গ্রামীণ বিনিয়োগের ওপর ভাটা পড়েছে।
পল্লী এলাকায় ঋণ বিতরণ কমে যাওয়ায় কর্মসংস্থানেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে মনে করেন উদ্যোক্তারা। পল্লী এলাকায় কর্মসংস্থান সঙ্কোচিত হওয়ায় মানুষ কর্মের সংস্থানে শহরমুখী হচ্ছে। এতে শহরের চাপ বেড়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি উন্নতি করতে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। ঋণ বিতরণ বাড়ানোর দিকে ব্যাংকগুলোর বেশি মনোযোগী হওয়া দরকার। এতে গ্রামীণ অর্থনীতি আরো চাঙ্গা হবে বলে তারা মনে করেন। এতে বেকারত্বের হারও কমে যাবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল