১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পেছনে ছাত্রলীগের মিছিল ঢাবিতে উত্তেজনা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কারকামী বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিক্ষোভ :নয়া দিগন্ত -

কেন্দ্রীয় কমিটির পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্লাটফর্ম বাংলাদেশে সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। আন্দোলনকারীদের মিছিলের সময় পাল্টা মিছিল বের করে ছাত্রলীগ। বিশ^বিদ্যালয়ের বিভিন্ন স্থানে একসাথে পাশাপাশি দুু’টি মিছিল দেখা যায়। যেখানে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের স্লোগান সেখানেই ছাত্রলীগের পাল্টা স্লোগান। আন্দোলনকারীদের সাথে তালমিলিয়ে থামে এবং হাটেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। যেখানে আন্দোলনকারীরা, সেখানেই পেছন পেছন যায় ছাত্রলীগের মিছিলটি। এ সময় ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পূর্ব ঘোষণা না দিয়ে আন্দোলনকারীদের সাথে পাল্টা মিছিল শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ পণ্ডের চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টায় কোটা আন্দোলনকারীরা পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিক্ষোভ মিছিল বের করলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সরকারের সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে পাল্টা মিছিল বের করেন। সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান গ্রন্থাগার থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন আন্দোলনকারীরা। বেলা ১১টায় বিজ্ঞান গ্রন্থাগারের সামনে তারা জড়ো হন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে অবস্থান নেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা মিছিল নিয়ে শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরির সামনে গেলে ছাত্রলীগের মিছিলও ওদিকে যায়। পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এসে স্লোগান দিতে থাকলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও তাদের পাশে এসে স্লোগান দেন। এতে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আতঙ্ক বিরাজ করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে। এ অবস্থায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা রাজু ভাস্কর্যের দিকে চলে আসেন। সেখানে তাদের পিছু নেয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মিছিল। একপর্যায়ে আন্দোলনকারীদের মিছিলের সামনে রিকশা জড়ো করে মিছিল আটকে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। এতে দুই পক্ষের মধ্যে ফের উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লে আন্দোলনকারীরা রিকশা সরিয়ে দিয়ে ভিসি চত্বরের দিকে চলে যান। তাদের অনুসরণ করে ভিসি চত্বরের দিকে এগোতে থাকে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মিছিলটি। বিশ^বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে করা ছাত্রলীগের মিছিলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বিভিন্ন হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দেখা যায়। ছাত্রলীগের মিছিলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, স্যার এ এফ রহমান হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলসহ বিভিন্ন ইনস্টিটিউটের পদধারী নেতাকর্মীদের দেখা যায়। পরে দুই পক্ষই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়কে মিছিল করে ও স্লোগান দিতে থাকে।
দুপুর সোয়া ১২টায় ঢাবির কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে দু’টি মিছিলকে পাশাপাশি স্লোগান দিতে দেখা গেছে। বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বলেন, পাঁচ দফার আলোকে কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি, নেতাকর্মীদের ওপর হামলার বিচার ও তাদের বিরুদ্ধে যেসব মিথ্যা মামলা আছে, তা প্রত্যাহার করার তিন দফা দাবি নিয়ে পূর্ব ঘোষণানুযায়ী তারা বিক্ষোভে নেমেছেন। অন্য দিকে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী) সরকারি চাকরিতে কোটা না রাখার সুপারিশকে স্বাগত জানিয়ে তাদের এ মিছিল। তবে তা পূর্ব ঘোষিত নয় বলে জানান তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সুইমিং পুলের সামনে থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। তারা বলেন, পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সারা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে গতকাল মঙ্গলবার ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন সাংবাদিকদের বলেন, পাঁচ দফার ভিত্তিতে আমরা ১৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করে আসছি। কিন্তু আমাদের ওপর বড় বড় ন্যক্কারজনক হামলা হয়েছে। আমরা এখন তিন দফার ভিত্তিতে কর্মসূচি পালন করছি। সরকার দাবি মেনে না নেয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এ দিকে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির একপর্যায়ে ছাত্রলীগের মিছিলটি কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির দিকে চলে গেলে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে অবস্থান নিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন, যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নূর, বিন ইয়ামিন মোল্লা, মশিউর রহমান প্রমুখ।
সমাবেশ কোটা সংস্কারের দ্রুত প্রজ্ঞাপনের দাবি জানান বক্তারা। একই সাথে ৪০তম বিসিএসের সার্কুলার বাতিল, সোনালী ব্যাংকের বিশেষ নিয়োগ বাতিলসহ নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবি জানান। একই সাথে তিন দফা দাবি মেনে নিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। আন্দোলন করতে গিয়ে তারা ছাত্রলীগের কর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন সময় নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তার বিচার হয়নি। তার বিচার দাবি করেন তারা।
সমাবেশে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন বলেন, কোটার যৌক্তিক সংস্কার চাই। কোটা সংস্কারের সুপারিশে যেমন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীর চাকরিতে কোটা তুলে দেয়ার পক্ষে মত দেয়া হয়েছে, তেমনি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিতেও কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। এ ছাড়া ৪০তম বিসিএসের প্রজ্ঞাপন বাতিল করতে হবে। তাদের পরবর্তী কমসূচি সম্পর্কে জানতে চাইলে হাসান আল মামুন জানান, পরে জানাবেন।
চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১১ এপ্রিল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোটা বাতিল হবে বলে জানান। এরপর কোটা সংস্কার, বাতিল বা পর্যালোচনার জন্য কমিটি গঠন করা হয়।
নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী) সরকারি চাকরিতে কোনো কোটা না রাখার সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত কমিটি। এ সংক্রান্ত কমিটির প্রতিবেদন সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছে কমিটি। নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের সব পদে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করেছে কমিটি।
শিক্ষার্থীদের এ কোটা সংস্কারের দাবিতে করা আন্দোলন ঘিরে ঢাকার শাহবাগ থানায় চারটি ও রমনা থানায় একটি মামলা হয়। এতে বেশ কয়েকজন যুগ্ম আহ্বায়ককে রিমান্ডে নেয়া হয়। বর্তমানে তাদের অনেকেই মুক্তি পেয়েছেন।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল