১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলকদ ১৪৪৫
`


পোস্ট অফিসের ‘ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার’ ব্যবসায় ধস

টিকে থাকতে ফি কমানোর প্রস্তাব
-

পোস্ট অফিসের ‘ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিস (ইএমটিএস) ব্যবসায় ধস নেমেছে। পাঁচ বছরের ব্যবধানে এই মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ৯৫ শতাংশ। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ইএমটিএসের মাধ্যমে যেখানে বিভিন্ন গ্রাহক এক জায়গায় থেকে অন্য জায়গায় অর্থ পাঠিয়েছিলেন দুই হাজার ১৬১ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, সেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই মাধ্যমে টাকা পাঠানো হয়েছে মাত্র ১১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ চার বছরের ব্যবধানে ইএমটিএসের মাধ্যমে টাকা পাঠানোর পরিমাণ কমেছে দুই হাজার ৪৩ কোটি ২৭ লাখ টাকা। টাকা পাঠানোর অতিরিক্ত ফি এবং বেসরকারি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের আগ্রাসী ব্যবসার কারণে পোস্ট অফিসের এই সার্ভিসে ধস নেমেছে বলে জানা গেছে। এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায় টিকে থাকার জন্য ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের ফি কমানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। অর্থ বিভাগের পক্ষ থেকে ইএমটিএস ফি কমানোর বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় কর্তৃক অর্থ বিভাগে পাঠানো এক প্রস্তাবে ইলেকট্রনিক মানি ট্রান্সফার সার্ভিসের ফির একটি বিবরণী পাঠিয়ে তা হ্রাস করার কথা বলা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বর্তমানে ইএমটিএসের মাধ্যমে এক হাজার টাকা পাঠাতে গেলে একজন গ্রাহককে ফি হিসেবে দিতে হয় ১৮ টাকা ৫০ পয়সা। অন্য দিকে, ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে ফি দিতে হয় ৯২৫ টাকা। যেখানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা পাঠাতে এর অর্ধেকেরও কম অর্থ খরচ করতে হয়। যেমনÑ মোবাইল ব্যাংিকংয়ের মাধ্যমে এক হাজার টাকা পাঠাতে খরচ পড়ে মাত্র পাঁচ টাকা। আর ৫০ হাজার টাকা পাঠাতে খরচ পড়ে এক শ’ টাকারও কম।
এই পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে ডাক অধিদফতর প্রস্তাব করেছে ইএমটিএসের ফি কমানোর। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, ইএমটিএসের মাধ্যমে বর্তমানে যেখানে এক হাজার টাকা পাঠাতে সাড়ে ১৮ টাকা প্রেরককে দিতে হয়, সেখানে এই ফি কমিয়ে ১০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একইভাবে ৪ হাজার টাকা পাঠানোর ফি বিদ্যমান ৭৪ টাকা থেকে কমিয়ে ২০ টাকা। ৫ হাজার টাকা পাঠানোর ফি সাড়ে ৯২ টাকার পরিবর্তে ২৫ টাকা। ১০ হাজার টাকা পাঠানোর ফি ১৮৫ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা। ২০ হাজার টাকার পাঠানোর ফি ৩৭০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা। ৩০ হাজার টাকা পাঠানোর ফি ৫৫৫ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা। এবং ৫০ হাজার টাকা পাঠানোর ফি বিদ্যমান ৯২৫ টাকার পরিবর্তে ২৫০ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডাক অধিদফতরের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০১০ সালের ২৬ মার্চ এই সেবা চালু করা হয়। প্রথম দিকে মানুষজন এই সেবার মাধ্যমে বিপুল অর্থ তাদের নিকটজনের কাছে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু বিভিন্ন ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর আমরা এক অসম প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হচ্ছি। এর কারণ, এই সেবার ফি বর্তমান বাজার অনুযায়ী অত্যধিক। এখন আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী ইএমটিএসের ফি কমানো না হলে এক সময় ডাক বিভাগের এই ব্যবসায় বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আমরা দুই হাজার ৭৫০টি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে এই সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। এতে করে সরকারের রাজস্ব আদায় হচ্ছে। কিন্তু অত্যধিক ফির কারণে এখন এই সেবা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।
ডাক বিভাগের সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রতি বছরই ধারবাহিকভাবে ইএমটিএসের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের পরিমাণ ব্যাপক হারে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৩-১৪ সালে এই মাধ্যমে প্রেরকেরা টাকা পাঠিয়েছিলেন এক হাজার ৬১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ সালে তা প্রায় অর্ধেক কমে দাঁড়ায় ৫৪৩ কোটি ৫৭ লাখ টাকায়। ২০১৫-১৬ সালে তা আরো কমে দাঁড়ায় ২৬১ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় এবং সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা অর্ধেকেরও বেশি কমে হয়েছে ১১৮ কোটি ২২ লাখ টাকা।

 


আরো সংবাদ



premium cement