১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


সিঙ্গাপুরে অভিবাসন ব্যয় সবচেয়ে বেশি

হাইকমিশনের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ ; ৫ মাসে পৌনে ৪ লাখ শ্রমিক বিদেশে গেছেন
-

বাংলাদেশ থেকে যতগুলো শ্রমবান্ধব দেশে কাজের উদ্দেশে শ্রমিকেরা পাড়ি জমাচ্ছে তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি অভিবাসন ব্যয় করতে হচ্ছে দ্বীপ রাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের জন্য। এ মুহূর্তে নতুন একজন (আইপিএ) শ্রমিকের জন্য দেশে ট্রেনিং করা থেকে শুরু করে সিঙ্গাপুরের নিয়োগকারী কোম্পানি, এজেন্টসহ অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মোট ১৬ হাজার সিঙ্গাপুরী ডলার খরচ হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে, যা বাংলাদেশী টাকায় প্রায় সাড়ে আট লাখ টাকা থেকে ১০ লাখ টাকা। এরপরই অভিবাসন ব্যয় বেশি হওয়া দেশের তালিকায় রয়েছে সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও মালয়েশিয়া।
সিঙ্গাপুরে দীর্ঘ দিন অভিবাসন নিয়ে কাজ করা বিশেষজ্ঞ এ কে এম মহসীন গতকাল ইন্দোনেশিয়া থেকে নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে এই মুহূর্তে একজন নতুন শ্রমিক সিঙ্গাপুরে যেতে ৯-১০ লাখ টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ এত টাকা খরচ করার পর একজন শ্রমিক প্রতিদিন পারিশ্রমিক পাচ্ছে মাত্র ২৫-২৮ সিং ডলার। যেখানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে সিঙ্গাপুরে এখন এক প্যাকেট সিগারেট কিনতেই লাগছে ১৩ সিং ডলার। তাই বিপুল টাকা খরচ করে সিঙ্গাপুরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে যাওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিসংখ্যান মোতাবেক চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে মাস পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে তিন লাখ ৪৭ হাজার ২৭ জন শ্রমিক মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, জর্ডান, মরিশাস, কুয়েত, কাতার, ফিজিসহ বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে। তার মধ্যে সৌদি আরবে অনেক শ্রমিক সমস্যার মধ্যে রয়েছে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরে গেছে ১৬ হাজার ৫৩৫ জন। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গড়ে প্রতি মাসে তিন থেকে চার হাজার শ্রমিক বহির্গমন ছাড়পত্র নিয়ে সিঙ্গাপুরে যাচ্ছে। এসব শ্রমিক পাঠাতে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় তালিকাভুক্ত ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে অনুমতি দিয়েছে। এর বাইরে আর কেউ শ্রমিক পাঠাতে পারছে না।
সিঙ্গাপুরগামী ভুক্তভোগী শ্রমিকদের উদ্ধৃতি দিয়ে মহসীন জানান, একজন শ্রমিককে সিঙ্গাপুরে আসতে হলে তাকে ঢাকায় ট্রেনিং করানো বাবদ মোট অভিবাসন ব্যয়ের ১৬ হাজার সিং ডলারের অর্ধেক খরচ রেখে দিচ্ছে। বাকি টাকা সিঙ্গাপুরের এমপ্লয়মেন্ট, এজেন্ট ও তাদের মনোনীত দালালদের পেছনে খরচ হচ্ছে। কী কারণে সিঙ্গাপুরের অভিবাসন ব্যয় এত বেশি? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, মূলত রিক্রুটিং এজেন্সি, সিঙ্গাপুরের নিয়োগকর্তা ও এজেন্টগুলোর ওপর বাংলাদেশ সরকারের কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অন্যান্য দেশের তুলনায় সেখানকার অভিবাসন ব্যয় অনেক বেশি। এ ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুরে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনের লেবার উইংয়ের দায়িত্ব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি আপেক্ষ করে বলেন, ‘তাদের আমরা দেখছি শ্রমবাজার নিয়ে খুব একটা মাথাব্যথা নেই। তারা সেবামূলক কাজের প্রতি খুব একটা মনোযোগী না। তাই তারা আইওয়াশ হিসেবে দুই-তিন মাস পরপর এক-দুইটা ডরমেটরি ভিজিট করেই দায়িত্ব শেষ করছে। নিজের দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, এই মুহূর্তে সিঙ্গাপুরের অভিবাসন ব্যয় তিন লাখ টাকার বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। কারণ সিঙ্গাপুর সরকারের নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগকারী কোম্পানি নতুন একজন শ্রমিক নেয়ার জন্য এজেন্ট ফি দুই মাসের জন্য ১৪ শ’ সিং ডলার নির্ধারণ করে দিয়েছে। নিয়োগকারী কোম্পানির মালিক, এজেন্ট ও ঢাকার ট্রেনিং সেন্টারের খরচ মিলিয়ে সর্বোচ্চ আড়াই থেকে তিন লাখ টাকা লাগার কথা। কিন্তু কর্মীদের কাছ থেকে ঢাকার ১০টি রিক্রুটিং এজেন্সি নানাভাবে ৯-১০ লাখ টাকা আদায় করছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। তার মতে, দালালদের প্রলোভনে পড়েই গ্রামের অসহায় মানুষগুলো লাখ লাখ টাকা খরচ করে সিঙ্গাপুরে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছে। অভিবাসন ব্যয় কমাতে আপনার পরামর্শ কী এমন প্রশ্নের জবাবে মহসীন বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেই এর সমাধান বের করতে হবে। কিন্তু এই আলোচনার উদ্যোগ যাদের নেয়ার কথা সেই সিঙ্গাপুর হাইকমিশন অনেকটাই নিষ্ক্রিয় বলে তিনি অভিযোগ করেন। সিঙ্গাপুরের শ্রমবাজারে অভিবাসন ব্যয় নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে যে অরাজকতা চলছে সেটি দ্রুত তদন্ত করে দূর করার জন্য প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ও সচিবসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা।

 


আরো সংবাদ



premium cement