১৮ মে ২০২৪, ০৪ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫
`


বহরমপুরের পর ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুৎ আমদানি

মধুখালী-মাগুরায় নির্মিত হচ্ছে ব্রডগেজ রেলপথ
-

বহরমপুরের পর এবার ভারতের ত্রিপুরা থেকে কুমিল্লা দিয়ে বিদ্যুৎ আমদানি করবে সরকার। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ সহায়তায় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এক হাজার ৩৪২ কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কুমিল্লাতে ৫০০ মেগা ওয়াট ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন নির্মাণ করা হবে বলে জানান পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ ছাড়া এক হাজার ২০২ কোটি টাকা ব্যয়ে মধুখালী-মাগুরায় ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গতকাল শেরেবাংলা নগরস্থ এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় ত্রিপুরা থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি প্রকল্পসহ মোট ১৩টি প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। সভাশেষে ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী মুস্তফা কামাল প্রকল্পগুলোর ব্যাপারে সাংবাদিকদের জানান। মন্ত্রী জানান, ১৩ প্রকল্পে ব্যয় হবে ৯ হাজার ৫১৮ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৬ হাজার ৮৫৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা দেয়া হবে জিওবি খাত থেকে। আর প্রকল্পসাহায্য ২ হাজার ৫৯২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা।
একনেক সূত্র জানায়, ‘সূর্যমণিনগর (ত্রিপুরা, ভারত) থেকে কুমিল্লা উত্তরে (বাংলাদেশ) বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য কুমিল্লা উত্তরে ৫০০ মেগাওয়াট এইচভিডিসি ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটি সভায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে দেশের পূর্বাঞ্চলের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহদিা পূরণে ত্রিপুরা ও আসাম থেকে ৫০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ আমদানরি লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নিশ্চিতকরণ।
বিদ্যুৎ খাতে ভারত-বাংলাদেশ আঞ্চলিক সহযোগিতার যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের ১২তম বৈঠক ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে সূর্যমণিনগর থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কুমিল্লার উত্তর (বাংলাদেশ) দিয়ে সরবরাহের বিষয়ে আলোচনা হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত ১২তম যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, যৌথ কারিগরি টিম সম্ভাব্যতা জরিপ করে একটি বিস্তারিত প্রকল্প প্রস্তাবনা যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে উপস্থাপন করবে। সে পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত ১৩তম বৈঠকে জেটিটি একটি প্রকল্প প্রতিবেদন দাখিল করে। বর্তমানে ৪০০ কেভি ডাবল সার্কিট সঞ্চালন লাইনের (বর্তমান প্রাথমিকভাবে ১৩২ কেভিতে চার্জ করা) মাধ্যমে ত্রিপুরার সূর্যমণিনগর থেকে কুমিল্লা (দক্ষিণ) উপকেন্দ্রের মাধ্যমে রিডিয়াল মোডে বাংলাদেশে ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হচ্ছে। এই লাইনের মাধ্যমেই সূর্যমণিনগর থেকে আলোচ্য প্রকল্পের নির্মিতব্য (উত্তর) ব্যাক টু ব্যাক স্টেশন দিয়ে ৫০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হবে।
জানা গেছে, প্রায় অর্ধশতাব্দী পর ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে ২৩ দশমিক ৯০ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ। মাগুরাকে বাস্তবায়নাধীন পদ্মা সেতুর মাধ্যমে ঢাকা ও দেশের অন্যান্য স্থানের সঙ্গে রেল সংযোগ স্থাপন করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এতে ওই অঞ্চলে বাণিজ্য প্রসার ও অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ উন্নয়ন হবে। ২০১৮ সালের মে থেকে ২০২২ সালের এপ্রিলের মধ্যে এ রেলপথ বসানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রায় ৪৬ বছর আগে ফরিদপুর মধুখালী থেকে কামারখালী পর্যন্ত রেলপথ ছিল। কিন্তু এটা এখন আর ব্যবহার হয় না। তবে কামারখালী থেকে মাগুরা পর্যন্ত কোনো রেলপথ নেই। মধুখালী থেকে কামারখালী পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথটি সংস্কার করে ব্রডগেজ এবং কামারখালী থেকে মাগুরা পর্যন্ত নতুন রেললাইন নির্মিত হবে। এ লক্ষ্যে ‘মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২০২ কোটি টাকা।
পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ভারত থেকে আমদানিকৃত বিদ্যুৎ কুমিল্লা হয়ে জাতীয় গ্রিডের মাধ্যমে সারা দেশে বিতরণ করা হবে। তিনি জানান, একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা হলোÑ দুই বা তিন ফসলের জমিতে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যাবে না। এক ফসলি জমি হলে সেখানে বিদ্যুৎকেন্দ্র করা যেতে পারে। মন্ত্রী বলেন, দেশের সব নদীবন্দরগুলোকে আবার চালু করা হবে। এতে সড়কের ওপর চাপ কমবে।
অনুমোদিত অন্য প্রকল্পগুলো হলো, ৩৭৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা ব্যয়ে উন্নত প্রযুক্তিনির্ভর পাট ও পাটবীজ উৎপাদন এবং সম্প্রসারণ প্রকল্প, ৫৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ধানুয়া কামালপুর স্থলবন্দর উন্নয়ন’ প্রকল্প, ৪০৭ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্পের মাধ্যমে কৃষিসেচ প্রকল্প, ৭৬৬ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা মহাসড়কগুলো যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (রাজশাহী জোন) প্রকল্প, ৭৫৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা মহাসড়কগুলো যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (খুলনা জোন) প্রকল্প, ৬৫৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা মহাসড়কগুলো যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (রংপুর জোন) প্রকল্প, ৬৫২ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা মহাসড়কগুলো যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (চট্টগ্রাম জোন) প্রকল্প, ৫৩৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে জেলা মহাসড়কগুলো যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ (সিলেট জোন) প্রকল্প, ৫১৩ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরবাড়ীতে আনুষঙ্গকি সুবিধাসহ নদীবন্দর নির্মাণ প্রকল্প, ৩৬৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে মেইল প্রসেসিং ও লজিস্টিক সার্ভিস নির্মাণ প্রকল্প এবং এক হাজার ৮৮৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্প আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহেন্সিং একসেস টু সার্ভিসেস (আইডিইএ) সংশোধন প্রকল্প।


আরো সংবাদ



premium cement