২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডায়াবেটিস রোগীর পায়ের যতœ

-


মানব শরীরের প্রায় সর্বাঙ্গে জটিলতা সৃষ্টিকারী এক রোগের নাম ডায়াবেটিস। তেমনি ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের নাম পা বিশেষত পায়ের পাতা। মূলত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীর রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যথাযথ নিয়ন্ত্রণে রাখা না গেলে পায়ের ধমনির প্রাচীর ক্রমান্বয়ে হতে থাকে পুরু, সঙ্কীর্ণ হতে পারে রক্ত চলাচলের পথ, ব্যাহত হয় আক্রান্ত অঙ্গে যথাযথ রক্ত সরবরাহ। সেই সাথে পায়ের ¯œায়ুকলা আক্রান্ত হয়ে লুপ্ত হয় বোধশক্তি, কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে পায়ের নাড়াচাড়া। তা ছাড়া অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে অকার্যকর হয়ে পড়ে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা। দেখা দেয় আক্রান্ত পায়ে ক্ষতসহ নানা রোগ-জীবাণুর সংক্রমণ। পায়ের অস্থিসন্ধিগুলোর স্বাভাবিক গঠনে দেখা দেয় বিকৃতি। আক্রান্ত পায়ের ঘা সহজে শুকাতে চায় না। ফলে সহজেই আক্রান্ত পা থেকে জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে পায়ের গভীর কোষকলাসহ পুরো শরীরে।
কিভাবে বুঝবেন আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত?
আপনি যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন এবং আপনার পায়ে নি¤œলিখিত এক বা একাধিক সমস্যা দেখা দেয়, যেমনÑ
আক্রান্ত পায়ে দেখা দিতে পারে অস্বাভাবিক অনুভূতি বা ঝিমঝিম ভাব
পায়ে অনুভূতিহীনতা
পায়ের নড়ন ক্ষমতা লুপ্ত হওয়া
পায়ে ব্যথা
হাঁটতে গেলে পায়ে ব্যথা বা অবসাদ
পায়ে ঘা হওয়া
আক্রান্ত পা বা পায়ের অস্থিসন্ধি হঠাৎ লাল হয়ে ফুলে যাওয়া
দীর্ঘ পর্যায়ে দেখা যেতে পারে পায়ের ঘায়ে জীবাণুর সংক্রমণ
আক্রান্ত পায়ে ফোঁড়া ও পায়ের অস্থিতে জীবাণুর সংক্রমণ
পায়ের অস্থিসন্ধির বিকৃতি
পায়ের আঙ্গুল এমনকি পুরো পায়ে ধরতে পারে পচন
রোগের জটিল পর্যায়ে পায়ের ক্ষত থেকে রোগ-জীবাণু পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়া
তখনই বুঝবেন আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত।
কখন আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি?
যখন আপনি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন এবং আপনার দেহ যদি নি¤œলিখিত এক বা একাধিক ঝুঁকিতে থাকে, যেমনÑ
রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা যদি অনিয়ন্ত্রিত থাকে
আপনার পা যদি অনুভূতিহীন থাকে
আপনি যদি ধূমপায়ী হন
আপনার পা যদি বিকৃত থাকে
পায়ে যদি কড়া পড়ে
আপনার পায়ের ধমনি যদি অন্য কোনো প্রকার রোগে আক্রান্ত হয়
আগে আপনার পায়ে যদি ঘায়ের ইতিহাস কিংবা অঙ্গচ্ছেদের ইতিহাস থাকে
ডায়াবেটিসের জটিলতায় যদি আপনার চোখ বা কিডনি আক্রান্ত থাকে
আপনি যদি কিডনি সমস্যার জন্য নিয়মিত ডায়ালাইসিস নেন
উচ্চ রক্তচাপ বা রক্তে চর্বির মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকে
তখনই আপনার পা ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
চিকিৎসা কী?
ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত পায়ের চিকিৎসায় প্রধানত ছয়টি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। যেমনÑ
১. আক্রান্ত পায়ের ওপর দেহের ভার বা চাপ কমানো
২. পায়ের সংক্রমিত, পচা ও অকার্যকর কোষকলা নিয়মিত পরিষ্কারকরণ
৩. আক্রান্ত ক্ষতের নিয়মিত ড্রেসিং
৪. রোগ-জীবাণুর সংক্রমণের ক্ষেত্রে যথাযথ এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার
৫. পায়ের ধমনি আক্রান্ত হলে প্রয়োজনে ভাস্কুলার সার্জারি
৬. ক্ষেত্র বিশেষে সীমিত ক্ষেত্রে আক্রান্ত পা বা পায়ের অংশ কেটে বাদ দেয়া
আর এ ক্ষেত্রে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকই নির্ণয় করবেন আপনার কোন প্রকার চিকিৎসা প্রয়োজন।
কাজেই আপনার পা যদি ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হয় কিংবা আপনার পা যদি ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত হওয়ার এক বা একাধিক ঝুঁকিতে থাকে তাহলে দেরি না করে আজই একজন মেডিসিন কিংবা হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ কিংবা অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। কেননা প্রাথমিক পর্যায়ে ডায়াবেটিসের জটিলতায় আক্রান্ত পা শনাক্তকরণের পাশাপাশি এর যথাযথ চিকিৎসা না নিলে আপনার পায়ে ধরতে পারে পচন। বিকৃত হতে পারে পায়ের স্বাভাবিক গঠন। কেটে বাদ দেয়া লাগতে পারে পুরো পা কিংবা পায়ের অংশবিশেষ। এমনকি রোগের জটিল পর্যায়ে আক্রান্ত পায়ের ঘা থেকে জীবাণুর সংক্রমণ পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও বিরল নয়।
প্রতিরাধে করণীয় : ‘প্রতিরোধই প্রতিকারের চেয়ে উত্তম পন্থা’Ñ এই কথাকে মাথায় রেখে এই সমস্যার প্রতিরোধে নি¤œলিখিত স্বাস্থ্য বিধিগুলো অনুসরণ করা যেতে পারে। যেমনÑ
প্রতিদিন একবার হলেও আপনার পা পর্যবেক্ষণে রাখুন।
সেই সাথে নিশ্চিত করুন পায়ের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা।
পায়ের ত্বককে রাখুন সর্বদা আর্দ্র। এ ক্ষেত্রে পায়ে নিয়মিত গ্লিসারিন বা ভেসলিনের ব্যবহারে ভালো ফল পাওয়া যায়।
পায়ের নখ ছোট রাখুন।
বিরত থাকুন খালি পায়ে হাঁটা থেকে।
প্রতিদিন পায়ের মোজা পরিবর্তন ও পরিষ্কার করে ব্যবহার করুন।
পায়ের জুতা বা পাদুকা নিয়মিত দেখুন।
পায়ের জন্য যথাযথভাবে মানানসই ও ফিট পাদুকা ব্যবহার করুন।
পায়ে কোনো ক্ষত দেখা দিলে তা পরিষ্কার গজ বা স্ট্রিপ দিয়ে ঢেকে রাখুন।
পায়ে কোনো ফোসকা পড়লে তা ফাটানো থেকে বিরত থাকুন।
অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে পায়ের কড়ার চিকিৎসার কোনো ওষুধ ব্যবহার করা কিংবা অযথা কাটাকাটি করা থেকে বিরত থাকুন।
পরিহার করুন অতিরিক্ত গরম কিংবা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা তাপমাত্রার সংস্পর্শ।
রক্তের গ্লুকোজ যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
বছরে নিয়মমাফিক একবার হলেও পুরো শরীরের পাশাপাশি পায়ের চেকআপ প্রক্রিয়া চালু রাখুন।
প্রয়োজনে অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ইতোমধ্যে আক্রান্ত পায়ের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা ফুটওয়্যার ব্যবহার করে পায়ের এই জটিলতার বিস্তার ও প্রকোপ অনেকাংশে প্রতিরোধ করা যেতে পারে।

লেখক : মেডিসিন ও মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ, জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, ঢাকা।
ফোন : ০১৫৫৭৪৪০২৮৭


আরো সংবাদ



premium cement
ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড ‘মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সঙ্কটে’ ‘রাফা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা’ ৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের

সকল