২০ মে ২০২৪, ০৬ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
`


বাংলাদেশে হেপাটাইটিস রোগ কতটা ভয়াবহ?

রোগ
বাংলাদেশে হেপাটাইটিসে আক্রান্ত হয়ে বছরে ২২ হাজার ৫০০ মানুষের মৃত্যু ঘটছে - ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশে হেপাটাইটিস সংক্রমণকে এক নীরব ঘাতক হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে দেখা যায়, বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে প্রায় এক কোটি মানুষ আক্রান্ত। বেসরকারি হিসেবে হেপাটাইটিসে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় বাংলাদেশে।

হেপাটাইটিস নিয়ে উদ্বেগের সবচে বড় কারণ হচ্ছে সারা বিশ্বে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে সংক্রমিত দশজনের মধ্যে নয়জনই জানেন না যে শরীরে এই ভাইরাস তারা বহন করছে।

এছাড়া এ রোগে আক্রান্তরা অনেকক্ষেত্রেই সুচিকিৎসা পান না। আর বাংলাদেশে হেপাটাইটিসে আক্রান্তদের একটা বড় অংশ ঝাড়ফুঁক, পানি পড়া, ডাব পড়া নেয়ার মতো কবিরাজি চিকিৎসার দ্বারস্থ হন।

এ হেপাটাইটিস সংক্রমণ বাংলাদেশে জনসাধারণের মধ্যে জন্ডিস রোগ হিসেবে পরিচিত। প্রকৃত অর্থে হেপাটাইটিস হলো ভাইরাসজনিত লিভারের রোগ। চিকিৎসা বিজ্ঞানে ৫ ধরনের হেপাটাইটিস রয়েছে। হেপাটাইটিস এ এবং ই স্বল্পমেয়াদী লিভার রোগ। এটি বিশ্রাম নিলে এক পর্যায়ে সেরে ওঠে। তবে প্রাণঘাতী হচ্ছে হেপাটাইটিস বি এবং সি ভাইরাসের সংক্রমণ।

ঢাকার রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, হেপাটাইটিসের যে ৫ রকম ভাইরাস আছে তার সবগুলোর সংক্রমণই বাংলাদেশে আছে। এ বছরও চট্টগ্রামে হেপাটাইটিস ই ভাইরাসের একটি প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত তিনজন মারা গেছে।

‘হেপাটাইটিসের পাঁচ রকমের ভাইরাসেরই রোগী আমাদের দেশে আছে। ই ভাইরাসেই সবচে বেশি মানুষ ভোগে। আমাদের দেশে যদি কোনো প্রাদুর্ভাব দেখা দেয় সেটা মূলত ই ভাইরাসের আউট ব্রেক হয়। কারণ এটা ছড়ায় বেশি। ই ভাইরাস মূলত পানির মাধ্যমে ছড়ায়। এবং গত দুই-তিন বছরে আমরা প্রতিবছর একটা ই ভাইরাসের আউট ব্রেক দেখতে পাচ্ছি।’

চিকিৎসকরা জানান, হেপাটাইটিস এ এবং ই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে আক্রান্তদের তিন শতাংশ মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। আর হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস ছড়ায় মূলত রক্ত এবং মানবদেহের তরল পদার্থের মাধ্যমে।

ন্যাশনাল লিভার ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘হেপাটাইটিস বাংলাদেশে এটা একটা নীরব ঘাতক। বিশ্বে যত মানুষের লিভার ক্যান্সার হয় তার ৮০ ভাগ ক্ষেত্রেই দায়ী হচ্ছে এই হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস। পৃথিবীতে গড়ে প্রতিদিন ৪ হাজার মানুষ লিভার রোগে মারা যায়।’

‘এটা নীরবে একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন ভাবে যেমন, সেলুনে শেভ করতে গিয়ে ক্ষুর থেকে, সিরিঞ্জের মাধ্যমে ড্রাগস গ্রহণ, ট্যাটু করার মাধ্যমে, নাক-কান ফুটানো, রক্ত পরিসঞ্চালন, তারপর যৌন মিলনের মাধ্যমে সহজে ট্রান্সমিট হচ্ছে। হেপাটাইটিস বি এবং সি অনেকটা এইডসের মতো।’

মি. আলী আরো বলছেন হেপাটাইটিস সংক্রমণের বিষয়ে মানুষকে সচেতনতা করার জরুরী হয়ে পড়েছে।

‘নবজাতক শিশুকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হেপাটাইটিস প্রতিরোধে বার্থ ডোজ দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশে শিশু জন্মের ৬ সপ্তাহ পর্যন্ত লেগে যাচ্ছে এ টিকা দিতে।’

যেহেতু রক্তের মাধ্যমে এটি সবচে বেশি ছড়ায় তাই নিরাপদ রক্ত পরিসঞ্চালন ব্যবস্থা জরুরি। কিন্তু বাংলাদেশে রক্তদানের আগে যে পরীক্ষা করা হয় সেখানে সবসময় হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস ধরা পড়ে না।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের হেমাটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মাসুদা বেগম জানান, বি ও সি ভাইরাস রক্তে সংক্রমণের পর একটা উইন্ডো পিরিয়ড থাকে ২ থেকে ৬ মাস। এ সময়ে সাধারণ রক্ত পরীক্ষায় এ ভাইরাস ধরা পড়ে না। এ সময় কেউ যদি রক্ত আদান-প্রদান করেন তাহলে অগোচরেই ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে পড়ে। এটি নিরূপণে ডিএনএ ভাইরাল মার্কার বা এইচভিসি টোটাল টেস্ট প্রয়োজন হয়। এটা একটা প্রাণঘাতী রোগ যা নির্মূল করতে চাইলে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের কোনো বিকল্প কোনো কিছু নেই।

‘আমাদের দেশে জেলা উপজেলা হাসপাতালগুলোকে আমরা প্রাইমারি সেকেন্ডারি হসপিটাল বলে থাকি। কিন্তু এসব জায়গায় রক্তে হেপাটাইটিস পরীক্ষায় এইচভিসি ভাইরাল মার্কার বা এইচভিসি টোটাল-এই টেস্টগুলো করার ব্যবস্থা নেই। এগুলো ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যায় না যে রক্তে ভাইরাস আছে কি নেই। আমি জেনে বুঝেই বলছি বাংলাদেশের জেলা উপজেলার হাসপাতালগুলোতে এখনো ডিএনএ ভাইরাল মার্কার করার ব্যবস্থা নেই।’

হেপাটাইটিস বি এর উপসর্গ হলো- জ্বর, দুর্বলতা, অবসাদ, বমি ভাব বা বমি হওয়া। বাংলাদেশে অনেকেই দেখা যায় এসব উপসর্গ নিয়ে কবিরাজি চিকিৎসা নিচ্ছেন। কবিরাজি চিকিৎসা বিশ্বাসের একটা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি হলো হেপাটাইটিস এ এবং ই যথাযথ বিশ্রাম নিলে এমনিতেই সেরে যায়। এ ভাইরাসে সংক্রমিতরা ঝাড়-ফুঁক, ডাব পড়া পানি পড়া নিয়ে মনে করেন যে কবিরাজি চিকিৎসায় কাজ হয়েছে। কিন্তু হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস রক্তে সংক্রমিত হলে লিভার সিরোসিস এবং শেষ পর্যন্ত লিভার ক্যান্সার হয়ে মৃত্যু হতে পারে। তাই বাংলাদেশের বিরাট জনগোষ্ঠীকে হেপাটাইটিস থেকে রক্ষা করতে সচেতন করা প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন বিশেষজ্ঞরা।

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার টার্গেট অনুযায়ী লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ কাজ করছে।

‘হেপাটাইটিস রোগ নিয়ে সরকার অত্যন্ত সচেতন। এ রোগের ক্ষেত্রে সরকারের কর্মপরিকল্পনা আছে। ৫ বছর মেয়াদী আমরা শিশুসহ সবাইকে বিনা পয়সায় হেপাটাইটিসের টিকা দেয়ার বিষয়টি আমরা এ কর্মসূচিতে রেখেছি। এটা দেয়া হবে।’

এদিকে ২০৩০ সালের মধ্যে হেপাটাইটিস প্রতিরোধ ও নির্মূলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বেশকিছু লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

হেপাটাইটিস নিয়ে কাজ করছেন এমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ২০৩০ এর লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ অঙ্গীকার করলেও এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ভাইরাল হেপাটাইটিস প্রতিরোধে এখনো কোনো জাতীয় নীতিমালা করা হয়নি।


আরো সংবাদ



premium cement
ঢাকা-তাসখন্দ সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার উপর গুরুত্বারোপ রাষ্ট্রদূত ড. মনিরুলের নারীর জীবনমান উন্নয়নে পাশে থাকার অঙ্গীকার জাতিসঙ্ঘের আবাসিক প্রতিনিধির রাইসির স্মরণে জাতিসঙ্ঘে এক মিনিট নীরবতা পালন ইরানের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলী বাগেরি কানি বড় ভাই বিপিএলে, ছোট ভাই বিসিএলে নকল ডায়াবেটিস স্ট্রিপ ধ্বংস করতে ফার্মা সল্যুশনসকে হাইকোর্টের নির্দেশ চাটমোহর পৌর ছাত্রলীগ সভাপতি পায়েল বহিষ্কার দ্বিতীয় ধাপে ১৫৬ উপজেলায় ভোটগ্রহণ মঙ্গলবার ‘বাবে কাবা’ নামের উপহারের দামি কলমটি তোষাখানায় দিলেন পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি লোকসভা ভোট : রেকর্ড করল কাশ্মীরের বারামুলা বিএসটিআইকে আন্তর্জাতিক মানের করতে সরকার কাজ করছে : শিল্পমন্ত্রী

সকল