১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


৪৫০ দিন পর টাইগারদের টেস্ট জয়

জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে টেস্ট জয়ের পর ট্রফি হাতে বাংলাদেশ দলের উল্লাস : নয়া দিগন্ত -

টেস্ট ক্রিকেটে একটি জয়ের জন্য হাহাকার করছিল বাংলাদেশ। দিনের পর দিন কেটে যাচ্ছিল; কিন্তু সেই জয়ের দেখা পাচ্ছিল না টাইগাররা। একের পর এক হারে হতাশায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়ছিল। সব হতাশা ঝেড়ে ফেলে উদ্দীপ্ত হওয়ার জন্য অবশেষে কাক্সিক্ষত সেই জয়ের দেখা পেল বাংলাদেশ। এই জয় যেনতেন ছিল না, এক ইনিংস ও ১০৬ রানের বিশাল ব্যবধানের জয়। সফরকারী জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে দীর্ঘ ৪৫০ দিন পর জয়োল্লাসে মাতল বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা। তাদের সাথে হাসল বাংলাদেশ।
গতকাল মঙ্গলবার মিরপুরে জিম্বাবুয়ে তাদের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৮৯ রানে অল আউট হয়ে যায়। প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়ে ও বাংলাদেশের স্কোর ছিল যথাক্রমে ১৬৫ ও ৬ উইকেটে ৫৬০ রান।
ঢাকা টেস্টে গতকাল চতুর্থ দিনে ইনিংস ব্যবধানে জয়ের আবহেই দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। তা অব্যাহত ছিল শেষ পর্যন্ত। তবে একটা লক্ষ্যে সফল হতে পেরেছে জিম্বাবুয়ানরা। মুমিনুল বাহিনীর মনে-প্রাণে ইচ্ছে ছিল দ্বিতীয় সেশনের আগেই অল আউট করে জয় নিশ্চিত করা। সেটি হতে দেয়নি সফরকারীরা।
মধ্যাহ্নবিরতির এক ঘণ্টা আগে থেকেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। এরই মধ্যে সিরিজের একমাত্র টেস্টে জয়ের পথ পরিষ্কার করছিল বাংলাদেশ। আগের দিন ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকা জিম্বাবুয়ে আরো তিন উইকেট হারায়। পাঁচ উইকেটে ১১৪ রান নিয়ে মধ্যাহ্নবিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় সেশনে পুরো ব্যাট করতে পারেনি তারা। এ সেশনে বাকি পাঁচ উইকেট হারিয়ে ১৮৯ রানে দ্বিতীয় ইনিংসে অল আউট হয় জিম্বাবুয়ে। তাতেই ইনিংস ও ১০৬ রানে জিতে দীর্ঘ ১৫ মাস পর টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে ২ ডিসেম্বর মিরপুরেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ছয় টেস্টে পরাজয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি দ্বিতীয় ইনিংস ব্যবধানে জয়।
২৯৫ রানে পিছিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ে তৃতীয় দিন শেষ করেছে ২ উইকেটে ৯ রান তুলে। নাঈম দুই উইকেট নিয়ে কাজটা এগিয়ে রেখেছেন অনেকটাই। গতকাল চতুর্থ দিনে জিম্বাবুয়ের সাবধানী ব্যাটিংয়ে যাত্রাটা শুরু হলেও বোলিংয়ে শুরুটাও ভালো করেছে মুমিনুল হকের দল। খোলস থেকে বের হতে চাননি ব্রেন্ডন টেলর ও কাসুজা। অধিনায়ক মুমিনুল তার বুদ্ধিদীপ্ত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এক প্রান্ত থেকে পেসার আবু জায়েদ ও অন্য প্রান্ত থেকে তাইজুলকে দিয়ে বোলিং শুরু করান। তাদের বিপক্ষে দিনের ২৮তম ডেলিভারিতে গিয়ে প্রথম রানের দেখা পায় জিম্বাবুয়ে। তবে তাইজুলের সামনে টেলর-কাসুজার খোলসবন্দী ব্যাটিং টেকেনি। দিনের ষষ্ঠ ওভারে ওপেনার কেভিন কাসুজাকে তুলে নিয়েছেন তাইজুল। খেলতে গিয়ে ফুটওয়ার্কে গড়বড় করে ফেলেন কাসুজা। লেগ স্টাম্পের বাইরে ফেলা বল বাঁক নিয়ে তার ব্যাট ছুঁয়ে জমা পড়েছে দ্বিতীয় স্লিপে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে।
একটু পর টেলরকে (১৭) ফিরিয়ে দিয়েছেন নাঈম । সিকান্দার রাজা ও ক্রেগ আরভিন মিলে ৬০ রানের জুটি গড়ে বিপর্যয় সামাল দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন; কিন্তু দলীয় ১০৪ রানে মুমিনুলের সরাসরি থ্রোতে রান আউট হন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক আরভিন (৪৩)। উইকেটে সিকান্দার রাজার সাথে ছিলেন মারুমা। ব্যাট হাতে ডাবল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে আলোচনায় মুশফিকুর রহীম। শুধু ব্যাটিং দিয়েই যেন নন্দিত হতে চাইলেন না। এবার আউটফিল্ডেও দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে নিজের ফিল্ডিং সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছেন। তাইজুলকে মারতে গিয়ে বাতাসে ভেসে আসা বলটি মুশফিক কিছুটা লাফিয়ে লুফে নিয়ে সাজঘরে পাঠালেন বাংলাদেশকে হুমকি দেয়া সিকান্দার রাজাকে (৩৭)। এরপর স্বীকৃত ব্যাটসম্যান না থাকায় ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব হয়নি জিম্বাবুয়ের। ৬৮ রান তুলতে বাকি চার উইকেট হারায় তারা।
জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের পেসাররা কোনো উইকেট পাননি। একটি রান আউট বাদে বাকি ৯ উইকেট ভাগ করে নিয়েছেন দুই স্পিনার নাঈম হাসান (৫/৮২) ও তাইজুল (৪/৭৮)। অফ স্পিনার নাঈম অবশ্য নিজেকে ভাগ্যবিড়ম্বিত ভাবতেই পারেন। ম্যাচে ১০ উইকেট নেয়া হলো না তার। প্রথম ইনিংসে ৭০ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। টেস্টে এক ম্যাচে এটাই তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং (৯/১৫২)।
হারের বৃত্ত থেকে বের হওয়া : এই ম্যাচের আগে সর্বশেষ ২০১৮ সালে ২ ডিসেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর ছয়টি টেস্টে হেরেছে তারা।
গত বছর মার্চে নিউজিল্যান্ড সফরে দুই ম্যাচের সিরিজে হোয়াইট ওয়াশ হয় বাংলাদেশ। এরপর চট্টগ্রামে সফরকারী টেস্ট পরিবারে নবাগত আফগানিস্তানের কাছে বড় ধরনের পরাজয়ের লজ্জায় ডোবে। ২২৪ রানের বিশাল ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ।
নভেম্বরে ভারত সফরে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজেও হোয়াট ওয়াশ হয়ে ফিরে টাইগাররা। এরপর পাকিস্তান সফরে গিয়ে সিরিজের প্রথম টেস্ট ম্যাচেও হারে।
মুমিনুলের নেতৃত্বে এই হারের বৃত্ত থেকে অবশেষে বের হয়েছে বাংলাদেশ। পেয়েছে জয়। এই জয়ে আত্মবিশ্বাস বেড়েছে টাইগারদের। এমনটাই জানিয়েছেন অধিনায়ক মুমিনুল।
ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আমাদের ভালো খেলা খুব প্রয়োজন। কারণ এই ধরনের জয়ে আত্মবিশ্বাস বাড়ে।’
ম্যাচ জয়ের নায়ক তরুণ নাঈম হাসানের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘ সে দারুণ খেলেছে।’
পরে দলের অন্যদেরও প্রশংসা করেন মুমিনুল। বলেন, ‘শান্ত, তামিম, লিটনও ভালো খেলেছে। আসলে সবাই-ই ভালো খেলেছে। এই জয়ে আমি খুব খুশি।’
এই জয়ের খুব প্রয়োজন ছিল : ‘এই জয়ের খুব প্রয়োজন ছিল’Ñ এটিই ছিল মুশফিকুর রহীমের কথা। তার কণ্ঠ থেকে আসলে পুরো বাংলাদেশের চাওয়াই বের হয়ে এসেছে। বাংলাদেশ দলকে জয়ের ধারায় ফিরিয়ে নেয়ার জন্য একটা জয়ের দরকার ছিল খুবই বেশি। দলকে উজ্জীবিত করতে এর বিকল্প নেই। সেই জয়টাই আজ পেয়েছে বাংলাদেশ।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন মুশকিুর রহীম। উচ্ছ্বসিত হয়ে মুশফিক ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আমাদের এ জয়টি খুব প্রয়োজন ছিল। উইকেটটি আসলেই খুব ফ্ল্যাট ছিল। তবে আমাদের বোলাররা দারুণ বোলিং করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের কারো বড় একটি স্কোর করার প্রয়োজন ছিল। আর নিজেকে ভাগ্যবান ভাবছি কারণ আমি ডাবল সেঞ্চুরি করতে পেরেছি। তবে শুরুটা চমৎকার করেছে তামিম ও শান্ত। এরপর লিটন কার্যকর কিছু রান করে গেছে।’
সংক্ষিপ্ত স্কোর :
জিম্বাবুয়ে ইনিংস : ২৬৫ ও ১৮৯
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ৫৬০/৬ ডি.
ফল : বাংলাদেশ ইনিংস ও ১০৬ রানে জয়ী

 


আরো সংবাদ



premium cement