১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


ভারতের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে তিস্তা ইস্যু গুরুত্ব পাবে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক

-

ভারতের সাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) আসন্ন বৈঠকে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের ওপর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেবে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, কানেক্টিভিটি, নিরাপত্তা সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এবং দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পৃক্ততা আরো বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা হবে।
আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে দিল্লিতে জেসিসির পঞ্চম বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নতুন দায়িত্ব পাওয়া ড. আব্দুল মোমেন। ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ।
জেসিসির প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিব শহীদুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারে থাকা ইস্যু তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিটি ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির গ্যাঁড়াকলে পড়ে গেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির অনমনীয় মনোভাবের কারণে বছরের পর বছর ধরে অনিষ্পন্ন এই ইস্যুটি ঝুলে রয়েছে। এ কারণে তিস্তার ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের মানুষকে খেসারত দিতে হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে এই দুর্ভোগ লাঘব হবে এমন আশাও কম।
ভারত তার ভূমিবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য বাংলাদেশের কাছ থেকে দীর্ঘ দিন ধরে ট্রানজিট চেয়ে আসছে। তিস্তার পানি বণ্টনে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টির জন্য ট্রানজিটকে ট্রাম্পকার্ড হিসেবে হাতে রেখেছিল বাংলাদেশ। ভারত বারবার বাংলাদেশকে বোঝাতে চেষ্টা করছে দুই দেশের সম্পর্ক কেবলমাত্র একটি ইস্যুতে জিম্মি হয়ে থাকতে পারে না। প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক এখন অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় উচ্চপর্যায়ে রয়েছে বলে দাবি করে ভারত ও বাংলাদেশ। এ জন্য তিস্তা ইস্যুতে নমনীয় হয়ে বাংলাদেশকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অন্যান্য দিক নিয়ে অগ্রসর হতে হচ্ছে। গত অক্টোবরে দিল্লিতে নৌপরিবহনসচিব পর্যায়ে বৈঠকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারে ভারতের সাথে চূড়ান্ত চুক্তি সইয়ের পর এর বিধি-বিধান (এসওপি) প্রণয়নের কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।
২০১৫ সালের জুনে নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকালে ভারতকে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহারের অনুমতিসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারকসহ (এমওইউ) রেকর্ড সংখ্যক চুক্তি সই হয়। মোদির বাংলাদেশ সফরকে অত্যন্ত ফলপ্রসূ হিসেবে আখ্যায়িত করে ভারতীয় মিডিয়া বলেছিল, ভারত যা চেয়েছিল, সবই পেয়েছে। ২০১৭ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি সফরে যান। এ সময় প্রতিরক্ষা সহযোগিতা, ডিফেন্স লাইন অব ক্রেডিট এবং বিভিন্ন প্রতিরক্ষা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মধ্যে এমওইউসহ ২২টি চুক্তি সই হয়। সফরকালে নরেন্দ্র মোদির সাথে আনুষ্ঠানিক আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১১ সালের জানুয়ারিতে দুই দেশের সম্মতি অনুযায়ী তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি করতে নয়াদিল্লির প্রতি অনুরোধ জানান। জবাবে মোদি বলেন, এ ব্যাপারে দ্রুত চুক্তি সম্পাদনে তার সরকার ভারতের সংশ্লিষ্ট সবার সাথে কাজ করছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পর মমতার উপস্থিতিতে মোদি ঘোষণা দেন, দুই দেশের বর্তমান সরকারের ক্ষমতার মেয়াদেই তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি হবে। কিন্তু একাদশ জাতীয় নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। ভারতের জাতীয় নির্বাচনও সামনে। কিন্তু তিস্তা চুক্তি হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল