২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
আদালতে খালেদা জিয়া

মামলা দিয়ে আমাদের আটকে রাখা হচ্ছে

বলে দেয়া হোক আমাদের নির্বাচনে যাওয়ার দরকার নেই
-

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নাইকো মামলার শুনানিতে আদালতে বলেছেন, মামলা দিয়ে কোর্টের মাধ্যমে আমাদের আটকে রাখা হচ্ছে। তাহলে আমাদের বলে দেয়া হোক যে, আমাদের নির্বাচনে যাওয়ার দরকার নেই। তিনি বলেন, এক দিকে মামলা চলবে, অন্য দিকে তারা নির্বাচন করবে এটা তো হতে পারে না। তিনি বলেন, আমাকে জেলে রেখে এবং আমার নেতাকর্মীদের আদালতে ব্যস্ত রেখে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না।
গতকাল বেগম খালেদা জিয়াকে নাইকো মামলায় রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় করাগারে স্থাপিত বিশেষ জজ আদালত-৯-এ হাজির করা হলে শুনানির সময় তিনি এসব কথা বলেন। নাইকো মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য গতকাল বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে কারাগারে অবস্থিত বিশেষ জজ আদালতে খালেদা জিয়াকে হাজির করা হয়। হুইল চেয়ারে বসে তিনি আদালতে আসেন। খালেদা জিয়া আদালতে প্রবেশ করার পর পুলিশ সদস্যরা তাকে ঘিরে রাখেন। আইনজীবীরাও তার কাছে যেতে পারছিলেন না। গণমাধ্যম কর্মীরাও তাকে দেখতে পাচ্ছিলেন না। তখন খালেদা জিয়া বলেন, পুলিশ আদালতে সিকিউরিটি দেবে ঠিক আছে? কিন্তু আদালতের ভেতরে এত সিকিউরিটি দেয়ার কী আছে? আমি তো ল’ইয়ারকে দেখছি না। পুলিশ সিকিউরিটির অর্থ কি আমাকে ঘিরে রাখবে। এভাবে থাকলে আমি আইনজীবীদের দেখতে পারি না। আইনজীবীদের সাথে কথা বলতে পারি না। তারা (পুলিশ) তো আদালতের বাইরে থাকবে। আমার কাছে কেন থাকবে? আর এই ছোট্ট পরিসরের আদালতে কিভাবে আপনি (বিচারক) এ মামলার বিচার করবেন। আগের আদালতে বিচার করুন। মুক্ত পরিবেশে বিচার করুন।
এরপর আদালতের নির্দেশে পুলিশ সদস্যরা খালেদা জিয়ার কাছ থেকে একটু সরে দাঁড়ান।
এরপর বিচারক বলেন, তাৎণিকভাবে এ বিষয়ে আমি কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারব না। তবে প্রসিকিউটরকে বলছি এ বিষয়ে পদপে নেয়ার জন্য। পিপি সাহেবকে বলব পরবর্তী তারিখে জানাবেন কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
আমার মামলাগুলোর বিচার কেন এত দ্রুত করা হচ্ছে?
আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা নির্বাচনের পর মামলার শুনানির তারিখ দেয়ার আবেদন করেন। এর বিরোধিতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শুনানি শুরু করতে বললে খালেদা জিয়া বলেন, আমার মামলাগুলোর বিচার কেন এত দ্রুত করা হচ্ছে? কয়টা মামলা দ্রুত বিচারে নিষ্পত্তি করা হয়েছে? সেভেন মার্ডার (নারায়ণগঞ্জের সাত খুন) কি দ্রুত বিচার আইনে হয়েছে? তিনি বলেন, বর্তমান রাজনীতির সাথে সবকিছু চলছে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচনে আমার আইনজীবী ও নেতাকর্মীরা ব্যস্ত থাকবেন। শুনানির তারিখ দিলে কেউ আসতে পারবেন না। এ কারণে নির্বাচনের পর শুনানির দিন ধার্য করা হোক।
খালেদা জিয়া বলেন, আমাকে জেলে এবং আমাদের নেতাকর্মীদের আদালতে ব্যস্ত রেখে, প্রতিদিন আদালতে দৌড়ঝাঁপ করিয়ে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হবে না। এক দল বছর ভরে মতায় থেকে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছে। আর আমাদের আদালতে ব্যস্ত রাখবেন। এখানে আমাদের আইনজীবীরা নির্বাচনের প্রার্থী। অনেকেই প্রার্থী না হলেও নির্বাচনের জন্য তারা কাজ করবেন। মামলা চললে কেউ এখানে আসতে পারবেন না। বিষয়টি বিবেচনায় নিবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কাজল আ’লীগের নমিনেশন নিয়েছেন, মন্ত্রী হবেন
শুনানিতে খালেদা জিয়া নিজে, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এবং আসামি পক্ষের অন্য আইনজীবীরা নির্বাচনের পর শুনানির তারিখ দেয়ার জন্য বারবার আদালতে আবেদন করলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল শুনানি শুরু করতে বলেন। তখন খালেদা জিয়ার আইনজীবী মাসুদ আহমদ তালুকদার বলেন, বেগম খালেদা জিয়াকে জিয়া অরফানেজ ও চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সপ্তাহে চার বা পাঁচ দিন করে হাজির করা হয়েছে। তখন রাষ্ট্রপক্ষ এই মামলায় সময় নিয়েছে। এখন এসে দুদকের পিপি মোশাররফ হোসেন কাজল বলছেনÑ এই মামলায় আসামি পক্ষে দুই বছর সময় নিয়েছে। পিপি কাজল সাহেব তো আওয়ামী লীগের নমিনেশন নিয়েছেন। উনি নির্বাচন করবেন। আমরা দোয়া করি উনি তাড়াতাড়ি নমিনেশন পেয়ে প্রতিমন্ত্রী হোন। কারণ এর আগে পিপি ছিলেন আনিসুল হক তিনি আইনমন্ত্রী হয়েছেন। ভবিষ্যতে তিনি অন্তত আইন প্রতিমন্ত্রী হতে পারেন।
তখন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, প্রতিমন্ত্রী কেন মন্ত্রী হয়ে যাবেন। জবাবে দুদকের আইনজীবী কাজল বলেন, ম্যাডাম আপনি দোয়া করবেন।
শুনানিকালে খালেদা জিয়ার আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার, আমিনুল ইসলাম একাধিকবার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজলের সাথে বিতর্কে জড়ান।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত আগামী ৩ জানুয়ারি মামলার অভিযোগ গঠনের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেন। ওই তারিখে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে শুনানি শেষ করতে নির্দেশ দেন।
আদালতে খালেদা জিয়ার পে শুনানি করেন আইনজীবীর জয়নুল আবেদীন, মাহবুবউদ্দিন খোকন, সানাউল্লাহ মিয়া ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার। আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন, আমিনুল ইসলাম, আহমেদ আযম খান, খোরশেদ মিয়া আলম, মো: আখতারুজ্জামান, জয়নুল আবেদীন মেজবাহ, জাকির হোসেন ভূঁইয়া প্রমুখ।
আমাদের যা খুশি দিয়ে দেন ফাঁসি দেন!
শুনানির শুরুতে মওদুদ আহমদ বলেন, এখানে বিচারের কোনো পরিবেশ নেই। কেউ বলতে পারবে না, কোনো বিবেকবান মানুষ বলতে পারবে না এখানে বিচারের পরিবেশ আছে। এখানে পুলিশ সদস্যরা ঘিরে আছেন। আমরা আসামিরা, আইনজীবীরা বসার জায়গা পাচ্ছি না, গাঁদাগাদি করে দাঁড়িয়ে আছি। বিচারককে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি কি কখনো এমন পরিবেশে বিচার করেছেন? আমাদের যা খুশি দিয়ে দেন, ফাঁসি দেন। কিন্তু বিচারের একটা নর্মস আছে। আইন অনুযায়ী বিচার করতে হবে। যা খুশি তাই করা, এটা মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। পাবলিক ট্রায়াল কী? এটা পাবলিক ট্রায়াল নয়। এ মামলায় আমার সর্বোচ্চ সাজা ১০ বছর। আপনি কর্তৃপক্ষের কাছে দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আজ মামলার কার্যক্রম মুলতবি করে দিন। আমাদের দলের নোমিনেশন বিক্রি চলছে। আমি একজন প্রার্থী। তা ছাড়া আজ আমাকে ড. কামাল হোসেনের সাথে নির্বাচন কমিশনে যেতে হবে। বিষয়টি নির্বাচনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সাথে দেখা করেছি, উনি বলেছেন, নির্বাচন করতে। নির্বাচন না হলে, আবার ২০১৪ সালের মতো অবস্থা হবে। তাই নির্বাচনের পর একটি তারিখ দিন। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন হবে তারপর যেকোনো একটি তারিখে শুনানির দিন দিতে পারেন।
এরপর আদালত পিপি মোশাররফ হোসেন কাজলের বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচনের সাথে এই মামলার কোনো সম্পর্ক নেই। এই মামলা শেষ করতে পারছি না। মওদুদ আহমদের পক্ষে বারবার সময় নেয়া হচ্ছে।
এরপর আদালত ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি শুনানি শুরু করুন। মুলতবির আবেদন বিবেচনা করা হবে। এরপর মওদুদ আহমদ মামলার চার্জশিট থেকে পড়ে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে এই চুক্তি হয়। এই চার্জশিটের বক্তব্য অনুযায়ী আমাদের বিরুদ্ধে আর অভিযোগ থাকে না। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক চুক্তি হয় দেশের সাথে। নির্বাচন কমিশনের চার হাজার কোটি টাকার ইভিএম কেনা প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ইভিএম কেনার জন্য কোনো টেন্ডার হয়নি। যেখানে ভারতে একটি ইভিএমের ক্রয়মূল্য ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা সেখানে এর মূল্য দুই লাখ টাকার ওপরে ধরা হয়েছে। বেলা ১২টা ৫৫ মিনিট পর্যন্ত শুনানি করে মওদুদ আহমদ শুনানি মুলতবি করার আবেদন করেন। তখন দুদকের পিপি এর বিরোধিতা করে শুনানি শেষ করতে বলেন।
এরপর সুপ্রিম কোর্ট বারের সভাপতি জয়নুল আবেদীন ও সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুবউদ্দিন খোকন বলেন, নির্বাচনের কারণে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগ অনেক মামলার শুনানি পিছিয়ে দিয়েছেন। সরকার পক্ষেও কিছু মামলার শুনানি পেছানোর আবেদন করা হয়েছে। দেশে শান্তিশৃঙ্খলা দরকার। সার্বিক বিবেচনা করে নির্বাচনের পর শুনানির একটি তারিখ দিন।
উভয় পক্ষের শুনানি শেষে আদালত ৩ জানুয়ারি নাইকো মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ধার্য করেন। শুনানিকালে জামিনে থাকা আসামি মওদুদ আহমদ ছাড়াও তারেক রহমানের বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ হোসেন ও সাবেক সিনিয়র সহকারী সচিব সি এম ইউছুফ হোসাইন উপস্থিত ছিলেন।
বেলা সোয়া ১টার দিকে বিচারক আদালত থেকে নেমে যাওয়ার পর খালেদা জিয়াকে আদালত ক থেকে পাশে একটি কে নেয়া হয়। সেখানে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জয়নুল আবেদীন, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও আহমেদ আজম খান ১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সাথে কথা বলেন।
এ দিকে খালেদা জিয়াকে নাইকো মামলায় আদালতে হাজির করা হবে সেজন্য পুরনো কারাগারের আশপাশে ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়। কারাগারের পথে পথে সশস্ত্র র‌্যাব সদস্যরা টহল দেন। কারাগারের ফটকের বেশ আগেই সাধারণ মানুষের চলাচল আটকে দেন নিরাপত্তারীরা।
উল্লেখ্য, হাইকোর্টের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ অক্টোবর থেকে পাঁচ সদস্যের মেডিক্যাল বোর্ডের মাধ্যমে বিএসএমএমইউ হাসপাতালের কেবিন ব্লকের একটি ভিআইপি কেবিনে খালেদা জিয়ার চিকিৎসা চলছিল। ৩৩ দিন চিকিৎসা শেষে গত ৮ নভেম্বর আবার তাকে প্রথমে পরিত্যক্ত ওই কারাগারের বিশেষ আদালতে এবং আদালতের কার্যক্রম শেষে আবার তাকে কারাগারে নেয়া হয়।
এর মধ্যেই গত ৩০ অক্টোবর জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা বাড়িয়ে ১০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। নি¤œ আদালত এই মামলায় তাকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দিয়েছিলেন। এর একদিন আগে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেন রাজধানীর নাজিমুদ্দিন রোডে পুরনো ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী বিশেষ জজ আদালত ৫-এর বিচারক মো: আখতারুজ্জামান।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ে খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়। এরপর পরিত্যক্ত এই কারাগারের একটি ভবনে তাকে রাখা হয়। গত ৪ সেপ্টেম্বর এই কারাগারের ভেতরে অস্থায়ী বিশেষ এই এজলাশ স্থাপিত হওয়ার পরদিন (৫ সেপ্টেম্বর) জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার শুনানিতে খালেদা জিয়াকে ওই আদালতে হাজির করা হয়েছিল।


আরো সংবাদ



premium cement
ঈশ্বরদীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪২.৪ ডিগ্রি তাপমাত্রার রেকর্ড ‘মুক্ত সাংবাদিকতা চরম সঙ্কটে’ ‘রাফা হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরাইলি সেনারা’ ৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের

সকল