২০ মে ২০২৪, ০৬ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১১ জিলকদ ১৪৪৫
`


সাবেক দুই সিইসির অভিমত

জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার সঠিক হবে না

-

ঝট করে জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন সাবেক দুইজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) বিচারপতি আব্দুর রউফ ও ড. এ টি এম শামসুল হুদা। তাদের মতে, সবার আস্থা অর্জন করেই জাতীয় নির্বাচনে এ মেশিন ব্যবহার করা যেতে পারে। দেশের বেশির ভাগ মানুষই ইভিএম সম্পর্কে জানে না। তাদেরকে প্রশিতি করতে হবে। তার আগে কারো ওপর চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না। এ ছাড়া অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টির মূল দায়িত্ব সরকারের বলেও মনে করেন তারা।
গতকাল বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন সাবেক এ দুই সিইসি। এর আগে রাজধানীর হোটেল রেডিসনে দণি এশিয়ার নির্বাচন কমিশনের সংগঠন ‘ফোরাম অব ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বডিস অব সাউথ এশিয়া (ফেমবোসা) এর দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তারা অংশ নেন। সেখান থেকে বেরুনোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন সাবেক এ দুই সিইসি।
বর্তমান প্রোপটে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ড. শামসুল হুদা বলেন, এটা তো (ইভিএম) টেস্টেড হয়নি। লোকাল গভর্নমেন্ট ইলেকশনে ব্যবহার শুরু হয়েছে। সেখানে ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ করে কনটিনিউয়াস টেকনোলজির ইম্প্র“ভমেন্ট করতে হবে, ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম করতে হবে তখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পাইলট আকারে করা যেতে পারে। এ নিয়ে তাড়াহুড়োর কী আছে?
এ বিষয়ে বিচারপতি আব্দুর রউফ বলেন, ইভিএম কী তা সাধারণ ভোটাররা জানে না। তাদেরকে নানানভাবে বোঝানো হয়। আমি বলবো, শতকরা ৯৮ ভাগ লোক ইভিএম কী, টেকনোলজিটা কী, কিভাবে আসে- এসব বিষয় নিয়ে তাদের পরিষ্কার ধারণা নেই। অনেক দেশে ইভিএম ব্যবহার হয়েছে, অনেক দেশে গোলমাল হয়ে তা আবার বন্ধ হয়ে গেছে। তাই ইভিএমকে চিনতে হবে, জানতে হবে, বুঝতে হবে। তিনি বলেন, ইভিএম টেকনোলজির ওপর এমনকি হাফ নলেজ, কোয়ার্টার নলেজ নিয়েও এ মেশিন ব্যবহার করতে গেলে তা খারাপ হবে। ব্যবহার হবে কী হবে না তার জন্য ক্যাপাবিলিটি প্রয়োজন। তিনি আরো বলেন, কিছু কিছু জায়গায় ইভিএম ব্যবহার হচ্ছে। আস্তে আস্তে মানুষ শিখুক। সিকিউরিটি কী আছে তা মানুষ জানুক। তারপর মানুষ এতে অভ্যস্ত হবে।
ধারাবাহিকতা রা করা হলে ইভিএম নিয়ে সমস্যা হতো না মন্তব্য করে ড. শামসুল হুদা বলেন, আমাদের কমিশনের সময় আমরা ইভিএম চালু করেছিলাম। কিন্তু তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়নি। আমাদের পরের কমিশন এটাকে কোল্ডস্টোরেজের মধ্যে ফেলে রাখল। আবার এই কমিশন চালু করেছে। আমরা যেটা শুরু করেছিলাম তার ধারবাহিকতা রাখা হলে এখন কোনো অসুবিধা হতো না। এখন ইভিএম নিয়ে যে বিতর্ক চলছে, এটা দেখে মনে হচ্ছে আমাদের সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিল। আমরা বলেছিলাম, প্রথম লোকাল গভর্নমেন্ট (স্থানীয় সরকার) নির্বাচনে পরীা-নিরীা করবো। আমাদের সময়ে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ কয়েকটি জায়গায় ব্যবহার করেছি। তখন লোকজন পজিটিভলি রেসপন্স করেছিল। তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ব্যবহারের মাধ্যমে ইভিএম মেশিনে ক্রমান্বয়ে উন্নতি করার পর সব রাজনৈতিক দল যখন বলবে এটি ঠিক আছে তখনই এ মেশিন ব্যবহার করা উচিত।
ইভিএমের মধ্যে কিছু সুবিধা অসুবিধা থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, যে মেশিনটা উদ্ভাবন করা হলো তাতে আরো কি কি নিরাপত্তা সংযুক্ত করা যায়, আরো কিভাবে তা উন্নতি করা যায় তা পর্যালোচনা করে এবং সব রাজনৈতিক দল যখন বিশ্বাস আনবে, সবাই যখন বলবে ঠিক আছে তখনই জাতীয় নির্বাচনে এর ব্যবহার করা উচিত।
ইভিএম কারো চাপিয়ে দেয়া ঠিক হবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, এত তাড়াহুড়ার কিছু নেই। এখনো এটি পুরোপুরিভাবে পরীা করা হয়নি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে আরো ব্যবহার করা উচিত। তারপর সেটা মনিটর করে, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে, সুবিধা অসুবিধা যাচাই-বাছাই করে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রযুক্তি ও কারিগরি ব্যবস্থাপনার আরো উন্নয়ন ঘটিয়ে যখন সফলতা আসবে তখনই জাতীয় নির্বাচনে এর ব্যবহার করা যেতে পারে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুরুতেই এটা একবারে একসাথে করা ঠিক নয়। পরীামূলকভাবে করা যেতে পারে।
জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের জন্য হঠাৎ আরপিও সংশোধন প্রশ্নে এই সাবেক সিইসি বলেন, এটা নিয়ে এখন মন্তব্য করে লাভ কি? যেকোনো উদ্যোগ নেয়ার আগে তা যথোপযুক্ত কি না দেখা উচিত। যারা এটা করছেন এবং যারা মতায় আছেন বিষয়টি তাদেরই দেখা উচিত ছিল। নির্বাচন খুবই স্পর্শকাতর বিষয়। এটা প্রতিযোগিতার বিষয়। মতা দখলের জন্য বিভিন্ন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। রুলস অব দ্য গেম, লেভেল প্লেইং ফিল্ড, এগুলো নিশ্চিত না করলে তো খেলা সমান হবে না। এটা নিশ্চিত করতে হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার দায়িত্ব মূলত সরকারের। সরকারই এটা করবে। তারা না করতে পারলে তা অবশ্যই অসুবিধার কথা। কী করলে জনগণের আস্থা অর্জন করতে পারে সরকারকেই সেই পদপে নিতে হবে।
বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আগামী প্রজন্মের মধ্যে আস্থার অভাব আছে বলে মনে করেন সাবেক সিইসি বিচারপতি আব্দুর রউফ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে আস্থার অভাবের একটা বিষয় আছে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। যত কিছু হোক নির্বাচন ছাড়া আমাদের গত্যন্তর নেই। তিনি বলেন, নির্বাচনের আসল প্লেয়ার ভোটার, এসপি, ডিসি নন। নির্বাচনে সবাই ভোটার। এই কালচার যদি ডেভেলপ করতে পারি, তাহলে চিন্তাধারা অনুযায়ী নির্বাচন করা সম্ভব। মানবিকভাবে সবাইকে পজিটিভ লাইনে চিন্তা করতে হবে। দোষাদোষী করে নির্বাচন হবে না, অনাস্থা করেও নির্বাচন হবে না। ভোটারদের প্রাধান্য দিয়ে নির্বাচন করতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফের ইংলিশ লিগ চ্যাম্পিয়ন ম্যানসিটি ম্যানসিটির টানা চতুর্থ শিরোপা কেএনএফের তৎপরতার প্রতিবাদে বান্দবানে মানববন্ধন তাপপ্রবাহের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের জন্য নতুন নির্দেশনা ‘ভুয়া তথ্য’ ছড়িয়ে কিরগিজস্তানে বিদেশী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা রংপুরে হুমকি দাতা ইউপি মেম্বারকে তলব করল রিটার্নিং কর্মকর্তা রোহিঙ্গা গ্রামে আরাকান আর্মির হামলা ও অগ্নিসংযোগ মিরপুরে ব্যাটারি চালিত রিক্সাচালক ও পুলিশ সংঘর্ষ : আহত অর্ধশত লজ্জাহীনতার বার্তা শিশুদের মনে দুর্ঘটনার কবলে ইরানের প্রেসিডেন্টের হেলিকপ্টার গুরুতর আঞ্চলিক সঙ্কটে পরিণত হয়েছে রোহিঙ্গা সমস্যা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

সকল