২১ মে ২০২৪, ০৭ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১২ জিলকদ ১৪৪৫
`


ঢাকা যে স্থানে থাকার কথা ছিল সেখানে নিয়ে যাবো : তাবিথ আউয়াল

তাবিথ আউয়া - ছবি : সংগৃহীত

আগামী ৩০ জানুয়ারি ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে বিএনপি থেকে মেয়র প্রার্থী হয়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল। গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও তিনি বিএনপির প্রার্থী ছিলেন। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে গত মঙ্গলবার নয়া দিগন্তের সাথে কথা বলেন তিনি।

নয়া দিগন্ত : আপনার ব্যক্তি জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
তাবিথ আউয়াল : আপাতত রাজনীতিবিদ বলতে পারেন। তবে আমি শুরু করেছিলাম স্কুল লেভেল থেকে। আমি ঢাকাতে আমেরিকান চার্টার্ড স্কুলে পড়তাম। স্কুল ও ইউনিভার্সিটির দুই জায়গাতেই ফুটবল টিমে খেলতাম। ফুটবল দিয়েই বড় হয়েছি। ঢাকাতেও ফার্স্ট ডিভিশনে খেলতাম, প্রিমিয়ার লিগে খেলতাম। সেই ক্ষেত্রে ফুটবল প্লেয়ার বলতে পারেন অর্থাৎ ক্রীড়াবিদ। মাঝখানে ব্যবসা শুরু করেছিলাম। যখন আমি ২০০৩ সালে দেশে ফিরে আসি তখন ব্যক্তিগত ব্যবসা করি আবার পারিবারিক ব্যবসায় জয়েন করি। ২০১৫ পর্যন্ত পুরোপুরি ব্যবসায়ী ছিলাম। ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত আশায় আছি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র হওয়ার। হয়তো ইনশা আল্লাহ এই নির্বাচনে হতে পারব।

নয়া দিগন্ত : রাজনীতিতে আসার কারণ কি?
তাবিথ আউয়াল: রাজনীতি যদি অফিসিয়ালি বলেন পাবলিক অফিস দেখেছি অন্যরা করছে কিন্তু অনেক জায়গায় ব্যর্থ হচ্ছে, অনেক জায়গায় আমাদের আশার জায়গা ছিল সেখানে আসতে পারছে না। তবে নরমাল রাজনীতি যেটা সেখানে ছোটবেলা থেকেই ছিলাম। আমাদের মতো দেশে কেউ যদি কোনো পরিবর্তন আনতে চান তবে তার রাজনৈতিক কিছু দায়িত্ব কেনো-না-কোনোভাবে পালন করতে হয়। কোনো প্রভাব বিস্তার করতে হয়। আপনি দেখেন আমাদের দেশে ইদানীং যত ধরনের মুভমেন্ট এসেছে সব কিন্তু রাজনীতি থেকেই এসেছে।

নয়া দিগন্ত : তার মানে যারা এখন রাজনীতিতে আছেন তাদের প্রতি আপনার আস্থা নেই বিধায় আপনি রাজনীতিতে এসেছেন?
তাবিথ আউয়াল : স্পেশালি আমি বলব যারা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দায়িত্ব পালন করার জন্য রাজনীতি করছেন এবং বিগত সময় যারা এখানকার মেয়র ছিলেন আমার অবশ্যই তাদের ওপর আস্থা নাই। আমি মনে করি ঢাকার যে পরিস্থিতিতে যে জায়গায় থাকার কথা ছিল তার থেকে আমরা অনেক দূরে আছি। অর্থাৎ সবক্ষেত্রে জীবনযাপনের মানের স্তরে আমরা নিম্নপর্যায়ে আছি। আপনি যদি আমাদের যানবাহনের দিকে দেখেন, দূষণের দিকে দেখেন, আমাদের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার দিকে দেখেন প্রতিটি জায়গায় ঢাকা নিম্ন স্থানে আছে। তাই অবশ্যই মনে করি এখন রাজনীতিবিদ হয়ে আগামী নির্বাচনে পার্টিসিপেট করে যদি মেয়র হতে পারি তবে ঢাকাকে ঢাকার যে জায়গায় থাকা উচিত সেই স্থানে নিয়ে যেতে পারব।

নয়া দিগন্তকে : মেয়র হলে কি রকম সিটি গড়ার স্বপ্ন দেখেন?
তাবিথ আউয়াল : স্বপ্ন তো অনেকই দেখেছেন, আমি মনে করি স্বপ্ন বাস্তবায়নের সময় অনেক আগেই এসেছিল। আমি বাস্তবায়ন করব যে স্বপ্নটা সবাই দেখেন। যেমন দূষণমুক্ত পরিবেশ ঢাকা শহর থাকবে, খোলা আকাশের নিচে অনেক ওপেন জায়গা অর্থাৎ পাবলিক পার্ক থাকবে, ট্রাফিক জ্যাম কমবে। পাবলিক ট্রান্সপোর্টের উন্নয়ন করব। সে ক্ষেত্রে মেট্রোরেল, বাস, নৌপথ, হাঁটাচলার জায়গা সবকিছুকে নিয়ে আমাদের একটা পর্যায়ে আনতে হবে। দেখবেন ঢাকাতে পর্যটক কেউ আসে না। অনেক আসে কর্মসংস্থানের জন্য, অনেক আসে শিক্ষার জন্য, অনেক আসে চিকিৎসার জন্য। কারণ পুরো বাংলাদেশে এই মানটা শুধু ঢাকাতেই আছে। তাই তারা বাধ্য হয়ে আছেন কিন্তু সদিচ্ছায় যারা আসতে চান যেমন পর্যটকরা তারা কিন্তু আসেন না। ঢাকার যে অবস্থা তাতে আজকাল বিনিয়োগকারীরাও আসতে চাচ্ছেন না। সেই জায়গা থেকে আমি চাচ্ছি ঢাকাতে একটি উন্নতমানের শহর হিসেবে গড়ে তুলতে।

নয়া দিগন্ত : ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্যতম সমস্যা হচ্ছে যানজট। সেই যানজট নিরসনে আপনি কী পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন?
তাবিথ আউয়াল : যানজট নিরসনের অনেকগুলো পদ্ধতি আছে এবং সে বিষয়ে চাইলেই পদক্ষেপ নেয়া যায়। আমি কারণগুলো দিয়ে শুরু করছি। রাস্তার বর্জ্য থাকে যে কারণে আমাদের গাড়ি এবং রাস্তার মানুষ হাঁটতে পারে না। বর্জ্য পরিষ্কার করার সাথে যানজট নিরসনের একটি ডাইরেক্ট কানেকশন আছে। জলাবদ্ধতা অনেক জায়গায় হয়ে যায় যে কারণে গাড়ি মুভ করতে পারে না, গাড়ি ডুবে যায়, বাস ডুবে যায়। সেখানেও আমাদের একটা ব্যবস্থা নিতে হবে। সবচেয়ে পুরনো বাস রুট এবং বাস এই দুইটা জায়গায় আমাদের আধুনিকতা আনতে হবে। আমাদের বাসের মান যে রকম ইমপ্রোভ করতে হবে বাস যেই পথে চলে বাজে জায়গাগুলোতে থামে প্রত্যেকটা রুট এবং বাস স্টপেজকে আমাদের আধুনিক করতে হবে। যানজট নিরসনে আরেকটি উপায় হলো ইন্টিগ্রেশন যে বাসের সাথে যেখানে থামবে সেখানে ট্যাক্সি পাওয়া যাবে কি না? ট্যাক্সি যেখানে থাকবে সেখানে বর্তমানের যে রাইড শেয়ারিং অ্যাপ অথবা সিএনজি বা রিকশা পাওয়া যাবে কি না? ওইখান থেকে হেঁটে একটা জায়গায় যাওয়া যাবে কি না? এই ইন্টিগ্রেশনটা আমরা যখন ভালো করতে পারব দেখব অনেক সমস্যা সমাধানের দিকে চলে গেছে।

নয়া দিগন্ত : নির্বাচনে জয় লাভের জন্য আপনি ভোটারদের কিভাবে আকৃষ্ট করতে চাচ্ছেন?
তাবিথ আউয়াল : নির্বাচন তো আগে হতে হবে। ভোটারদেরকে আকৃষ্ট করছি উনারা যতই ভয় ভীতিতে থাকুক, বিগত নির্বাচনগুলোতে তাদের যতই তিক্ত অভিজ্ঞতা থাকুক তারপরও সকল সমস্যা ওভারকাম করে তারা যেন ভোট দিতে চেষ্টা করে। যদিও সরকারি দল চেষ্টা করছে ভোটারদের নির্বাচনের বাইরে রাখতে। আমরা যাব ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে। ভোটারদের কেন্দ্রে আনতে পারলে আমি বিশ্বাস করি আমরা যে উন্নয়ন নিয়ে কথা বলছি, যে রাজনৈতিক মুক্তি এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলছি তাতে ভোটাররা আমাকে এবং ধানের শীষে ভোট দেবে।

নয়া দিগন্ত : বর্তমান নির্বাচন কমিশনের উপর আপনার কতটুকু আস্থা আছে?
তাবিথ আউয়াল : নির্বাচন কমিশন আগামী দিনগুলোতে কী ধরনের নির্বাচন দেবেন? এ প্রশ্নটা আপনার আমার একার না এটা সবার। অতীতে আমরা যা দেখেছি সেই অভিজ্ঞতা আমাদের বলে কোনো আস্থার জায়গা নির্বাচন কমিশন করে দেয়নি। উপরন্তু নির্বাচন কমিশনাররা এক এক সময়ে এমন বিভ্রান্তমূলক কথাবার্তা বলছেন। চিফ ইলেকশন কমিশনার বলতে বাধ্য হয়েছেন ভোটাররা ভোট দিতে এলে ইসি নিরাপত্তা দেবেন। এই যে ভোটারদেরকে নিরাপত্তার বিষয় নিশ্চিত করতে হচ্ছে এটাই প্রমাণ করে বিগত নির্বাচনগুলোতে ভোটাররা ভোট দেয়ার সময় নিরাপত্তাবোধ করেনি। বিগত সময়গুলোতে আমরা শুনেছি ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে, বক্তব্য দেয়ার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন অনেক আর্থিক লাভও করেছে। যেটা কোনোভাবে করার ওনাদের উচিত ছিল না এবং দরকারও ছিল না। এই সব নৈতিকতার জায়গা থেকে যখন ইলেকশন কমিশনার শহরে আসেন তখন মনটা কি নৈতিকতার জায়গা থেকে এ রকম বড় একটা নির্বাচনে কি আস্থার জায়গা ওনারা তৈরি করেছেন? একটাও করে নাই। কেন আমি বলছি কারণ অতীতে যে অসুবিধা ও অভিযোগগুলো তুলে ধরেছিলাম একটা আমলেও নেয়নি, কোনো তদন্তও হয়নি। আইন পরিষ্কার বলেছে সব অভিযোগগুলো এটলিস্ট আমলে নিয়ে তদন্ত করতে হবে। আমরা শুনেছি এই নির্বাচনে তারা জোর করে ইলেকট্রিক ভোটিং মেশিন ব্যবহার করবে। যেই ইভিএম-এর ব্যাপারে অলরেডি অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা রয়েছে। ইভিএম-এর ব্যাপারে তারা কোনো জনমতও পাচ্ছে না। তাই ইভিএম ব্যবহার করে বিতর্ক না বাড়িয়ে আমি এখনো দাবি করি ইভিএমটা এই নির্বাচনের জন্য বন্ধ থাকুক। আমরা অতীতে যে সমস্যাগুলো দেখেছিলাম সেগুলো সংলাপের মাধ্যমে সমাধান করা হোক।

নয়া দিগন্ত : এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের ওপর আপনার প্রত্যাশা কী?
তাবিথ আউয়াল : এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের উপর আমার প্রথম প্রত্যাশা হলো তারা ইভিএম ব্যবহার করবে না। দ্বিতীয় হলো ওনারা ভোটিং সেন্টারে পুলিং সেন্টারে গণমাধ্যমের প্রবেশ উন্মুক্ত করে দেবে। তৃতীয় হলো ওনারা পুলিশ প্রশাসন এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে যেন পুলিশ প্রশাসন কোনো ব্যক্তি, সরকার বা কোনো একক প্রার্থীর জন্য কাজ না করে। করলেও এর বিরুদ্ধে যেন দ্রুত ব্যবস্থা নেয়।

নয়া দিগন্ত : দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আপনি কি রকম রাজনীতি চান?
তাবিথ আউয়াল : দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমি একটি স্বাভাবিক রাজনীতি চাই। আমরা স্বাভাবিক রাজনীতিতে ফিরে এসে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া তা সবার উপরে রাখতে চাই। আমরা মানবাধিকার বলেন বা বাকস্বাধীনতা বলেন অর্থাৎ সংবিধানে আমাদের যে সকল অধিকার দেয়া হয়েছে সেগুলো আগে রক্ষা হোক। স্বাভাবিক পরিস্থিতি তখন চলে আসবে যখন রাজনীতিটাকে স্বাভাবিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।

নয়া দিগন্ত : সাধারণ ভোটারদের প্রতি আপনার কী আহ্বান থাকবে?
তাবিথ আউয়াল : সাধারণ ভোটারদের প্রতি এখনো আহ্বান হলো উনারা যেন ভয়-ভীতি না পেয়ে, আশা না হারিয়ে তারা ভোট দিতে কেন্দ্রে যান এবং তাদের ভোট দেন।


আরো সংবাদ



premium cement