১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলকদ ১৪৪৫
`


ভূমি রাজস্ব গায়েব

অবিলম্বে তা বন্ধ করার ব্যবস্থা প্রয়োজন

-

সরকার রাজস্ব আয় করে বিভিন্ন খাত থেকে। তবে হলফ করে বলা যাবে না, এই রাজস্ব আয়ের পুরো অর্থ সরকারের তহবিলে সঠিকভাবে জমা হয়। অনেক খাতের রাজস্ব আয়ের ব্যাপক অংশ চলে যায় একশ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তার পকেটে। কখনো কখনো এ কাজটা করা হয় বড় কর্তাদের যোগসাজশে। ফলে এর সাথে জড়িত কর্মকর্তারা সহজেই ছাড় পেয়ে যান। মনে হয়, ব্যাপারটা যেন দেখার কেউ নেই। বেড়ায় যখন ক্ষেত খায় তখন আসলে ক্ষেতের মালিকের কিছুই করার থাকে না। তেমনি জাতীয় আয় যখন তসরুফ হয়, তখন যেন জাতির কিছুই করার থাকে না। সম্প্রতি ভূমি রাজস্ব আদায়ের বেলায় এমনি একটি পরিস্থিতির কথা গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে। বিষয়টি যে উদ্বেগজনক তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া সূত্র মতে, একটি জাতীয় দৈনিক জানিয়েছেÑ ভূমি খাত থেকে আদায় হওয়া রাজস্বের একটি বড় অংশ সরকারি কোষাগারে জমা হয় না। তাই প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক, তা হলে ভূমির রাজস্ব আয়ের এই অর্থ যায় কোথায়? দৈনিকটি অনুসন্ধানের মাধ্যমে এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়েছে। দৈনিকটি জানিয়েছে, একশ্রেণীর অসাধু ভূমি কর্মকর্তার পকেটেই যাচ্ছে এই অর্থ। মাঠপর্যায়ে ভূমি অফিসে জালিয়াতির কারণে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়েলে ভূমি অফিসের কার্যক্রম তদারকির বিধান থাকলেও তা করা হচ্ছে না। ফলে ভূমি রাজস্ব থেকে আসা আয় আত্মসাতের প্রবণতা দিন দিন বেড়েই চলেছে।
ভূমি মন্ত্রণালয় সূত্রের বরাত দিয়ে দৈনিকটি আরো জানিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ভুয়া চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে ভূমি উন্নয়ন করসহ অন্যান্য খাতের রাজস্ব আয় জমা দেয়ার নামে আত্মসাৎ করা হচ্ছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের হিসাব নিয়ন্ত্রক (রাজস্ব) দফতরের নিরীক্ষায় সরকারের রাজস্ব লুটে খাওয়ার চিত্র বেরিয়ে এসেছে। তথ্যপ্রমাণসহ নিরীক্ষা প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের কাছে জমা দেয়া হচ্ছে। প্রতিবেদনে আত্মসাৎ করা অর্থ আদায় ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে শাস্তির সুপারিশ করা হলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। প্রতিবেদনগুলো ফেলে রাখা হয় বছরের পর বছর। একপর্যায়ে সেগুলো তামাদি হয়ে যায়। এতে অনুমান হয়, এ ধরনের অর্থ আত্মসাতের সাথে উপর থেকে নিচের স্তর পর্যন্ত একশ্রেণীর অসাধু চক্র জড়িত রয়েছে এবং এদের খুঁটির জোর অনেক শক্ত, যাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া ততটা সহজ নয়। শোনা যায়, নতুন ভূমিমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। আমরা আশা করব, সরকার সে নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ভূমি রাজস্ব আয় তসরুফের যাবতীয় পথঘাট বন্ধ করবে। আমরা অতীতে সরকারের কর্মকর্তা ও ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতার মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ঘোষণা শুনলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। বরং সময়ের সাথে এই দুর্নীতি আরো বেড়েছে। তাই আমরা এবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতিবিরোধী জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণায় পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছি না। এর পরও আশা প্রকাশ করছি, এবার অন্তত ভূমি মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতির অবসান ঘটবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement

সকল