১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্ন

এখনো সব সুযোগ শেষ হয়ে যায়নি

-

সংলাপ ব্যর্থ হয়েছে, আপাতত এ মন্তব্য করা সম্ভব। এর বাইরে তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণা করা হলো। এখন পর্যন্ত এ কথা নিশ্চিত করে বলা যায়Ñ সাজানো প্রশাসনে সংসদ নির্বাচনটা সেরে ফেলার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে এক ধরনের তাড়া লক্ষ করা গেছে। তফসিল ঘোষণার ব্যাপারে বিরোধী জোট ও ফ্রন্ট বারবার অনুরোধ করেছে একটা রাজনৈতিক সমঝোতা হোক। ন্যূনতম কিছু ব্যাপারে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে অন্তত নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো একটা মোটামোটি আস্থার জায়গা সৃষ্টি হোক। তারপর তফসিল ঘোষণা করা হলে কিছু অসম প্রতিযোগিতার ভেতরও জাতীয় নির্বাচনের মোটামোটি একটি পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ হতো।
এখন পরিস্থিতি নির্বাচনের নয়, আন্দোলনের। এ কথা সব বিরোধী দলীয় রাজনীতিবিদের মুখ থেকে উচ্চারিত হচ্ছে। এর ভেতরেও একটি জাতীয় নির্বাচনের প্রেক্ষিত সৃষ্টি করার লক্ষ্যে সরকারকে মোটামোটি ছাড় দেয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। অপর দিকে, নির্বাচন কমিশনকে একটি আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করে দেখাতে হবে যে, তারা সরকারের আজ্ঞাবহ নয়। সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা চর্চা করে তাদের নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে একটি নির্বাচনে নিরপেক্ষ পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব হবে।
এখন সমস্যা দাঁড়াচ্ছেÑ তড়িঘড়ি করে তফসিল ঘোষণার পর জনমনে সন্দেহ এখন বিশ্বাসে পরিণত হয়েছে যে, এক তরফা একটি নির্বাচন করে ফেলার জন্যই রাজনৈতিক সমঝোতা সৃষ্টি হওয়ার আগে অনেকটা সরকারের ইচ্ছায় বা সরকারের উৎসাহে তফসিল ঘোষণা করা হলো। তাই নতুন করে দাবি উঠেছে পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হোক। সাধারণ ভোটাররাও বুঝতে পেরেছেÑ বিরোধী দলকে অপ্রস্তুত রেখে নির্বাচন করার জন্য সরকারের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটিয়েছে ইসি। যা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না।
যারা সরকার পরিচালনা করছেন তারা যেমন রাজনীতিবিদ, তেমনি যারা রাজপথে রয়েছেন তারাও রাজনীতিবিদ। অতএব, সরকারের গোপন ইচ্ছার সাথে ইসির যে একটা অতি আগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে, সেটা গোপন করার আর কোনো সুযোগ রইল না।
তার ওপর তফসিল ঘোষণার পর সরকারি দলের এতটা আবেগ-উচ্ছ্বাস প্রকাশিত হয়েছে যে, এটা যেন তাদের প্রত্যাশারই প্রতি ইসির সম্মান প্রদর্শন করে তাদের ভেতর একটি অতি উৎসাহ সৃষ্টির সুযোগ করে দেয়ার জন্য সচেষ্ট ছিল। আমরা জানি, ইসি এমনিতেই আস্থার সঙ্কটে রয়েছে, তার ওপর চট জলদি তফসিল ঘোষণা করে ইসি সেই আস্থার সঙ্কটটি বাড়িয়ে তুলল।
আমরা মনে করি, সংবিধানের ভেতর আরো স্পেস রয়েছে, যা ব্যবহার করে ইসি বিরোধী জোট ও ফ্রন্টের দাবির প্রতি কিছু সম্মান দেখাতে পারে। এখন বিরোধী জোট বা ফ্রন্ট নির্বাচনে না যাওয়ার মতো একটা মোক্ষম সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার ক্ষেত্রে ইসির আর দায় মুক্ত থাকার সুযোগ নেই। সংলাপ আর না চললেও আলোচনার দরজা খোলা ছিল। সরকারি দল ইচ্ছে করলে বিরোধী দলের প্রতি কিছু সম্মান দেখানোর সুযোগ ছিল। তড়িঘড়ি তফসিল ঘোষণার ফলে সে সুযোগ নষ্ট না হলো এবং এখন সেটা কিছুটা হলেও ঝুঁকিতে পড়ল। সরকার তার এ টিম, বি টিম নিয়ে একটি নির্বাচন করে ফেলতে পারে, কিন্তু সেটা কি গ্রহণযোগ্যতা পাবে। অথচ এখন প্রয়োজন একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন। আমাদের ধারণা সে সুযোগ এখনো একেবারে শেষ হয়ে যায়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement