মাদকবিরোধী অভিযান নিয়ে যে পরিমাণ ঢাকঢোল পেটানো হচ্ছে, ততটা সর্বাত্মক প্রতিরোধ অভিযান শুরু করা সম্ভব হয়নি কিংবা বিষয়টি গভীরভাবে দেখাও হয়নি। যেমনÑ মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেই রেলপথে সক্রিয় রয়েছে চোরাকারবারি চক্র। পর্যাপ্ত নজরদারি না থাকায় চক্রের নারী ও পুরুষ সদস্যরা ট্রেনে যাত্রী সেজে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক পাচার করছে। তারা শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে ইয়াবা-হেরোইন রেখে পাচার করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের বক্তব্য, চোরাকারবারিরা বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়ে রেলপথে মাদক বহন করে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দিচ্ছে। লোকবলের অভাবে ট্রেনে নারী পুলিশ দেয়া যাচ্ছে না। পাশাপাশি কোনো ট্রেনেই প্রয়োজনীয় পুলিশ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। কোনো স্টেশনেই স্ক্যানার মেশিন নেই। ফলে চেষ্টা করেও রেলপথে চোরাচালান পুরোপুরি বন্ধ করা যাচ্ছে না।
কৌশল পাল্টেছে মাদক চোরাকারবারিরা। তারা ট্রেনযাত্রী সেজে মাদক বহন করছে। অনেক ক্ষেত্রে তারা কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীদেরও ব্যবহার করছে। একইভাবে যাত্রীবেশে তরুণীসহ নানা বয়সী মহিলারা শরীরের স্পর্শকাতর অঙ্গে ইয়াবা-হেরোইন লুকিয়ে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে পৌঁছে দিচ্ছে। যেমনÑ বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন হয়ে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার যাত্রী রাজধানীতে প্রবেশ করেন, যার প্রায় ৯৮ শতাংশই বিনা তল্লাশিতে স্টেশন ত্যাগ করেন।
চলতি বছরের ১ জুলাই পর্যন্ত ঢাকা রেলওয়ে থানায় ১৫০ মাদক কারবারিকে আটক করা হয়। আটক করা হয় পৌনে দুই লাখ পিস ইয়াবা। এদের বেশির ভাগই তরুণ-তরুণী এবং দেশের নামীদামি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এ ছাড়া স্বামীপরিত্যক্ত অনেক মহিলাকেও ইয়াবাসহ আটক করা হয়েছে।
রেলপথে শুধু ইয়াবা, হেরোইন কিংবা বিভিন্ন ধরনের মাদক বহনকারীই আটক হচ্ছে না, অত্যাধুনিক অস্ত্রসহ গোলাবারুদ, গুলি, বোমা তৈরির সরঞ্জামসহও অনেকে আটক হচ্ছে। ট্রেনের কিছু গার্ড, চালক, স্টেশন মাস্টার, জিআরপি পুলিশ, টিটিই, টিসি, আরএনবির সদস্য ও কন্ট্রোল রুমের দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশে চোরাকারবারিরা তাদের অবৈধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
টেকনাফ থেকে আসা ইয়াবা চালানের একটি বড় অংশই রেলপথে রাজধানীতে আসে। মাদকবিরোধী অভিযান চলায় অনেক মাদক কারবারি গা-ঢাকা দিয়েছে। এরপরও অভিনব কায়দায় রেলপথে চোরাচালান অব্যাহত রয়েছে।
আখাউড়া রেলওয়ে থানার ওসি জানান, তার স্টেশনে বেশ কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনের বিরতি নেই। যেসব ট্রেনের বিরতি রয়েছে সেসব ট্রেনে অভিযান চালান তারা। কিন্তু বিভিন্ন কৌশলে পাচার করা মাদক নির্ধারিত বিরতির সময় (মাত্র ২-৩ মিনিট) উদ্ধার করা সম্ভব হয় না।
পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে যে ক’জন আসামি এবং মাদক আটক হচ্ছে; তা চোরাচালানের মাত্র ৫ থেকে ১০ শতাংশ। বাকি ৯০ শতাংশই পার পেয়ে যাচ্ছে। পুলিশের দাবি, রেলপথে মাদক চোরাচালান বন্ধে তারা অভিনব কৌশল প্রয়োগ করে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, মাদকবিরোধী অভিযানে জনগণকে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন। সেই সাথে এটাকে সামাজিক আন্দোলনে রূপ দেয়া হলে অনেক বেশি সুফল মিলবে।
আশা করি, সেøাগানে নয়, সব পথে সর্বাত্মক অভিযান চালানোর উদ্যোগ নেয়া হবে; তবেই মাদকবিরোধী অভিযান সফল হওয়া সম্ভব। তবে এ মুহূর্তে রেলপথকে বেশি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা