২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বাজেটের কাঠামোগত সংস্কার দরকার : সুজন

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সুজন ‘বাজেট ২০১৯-২০ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে - নয়া দিগন্ত

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, বাজেট একটা ছকবাঁধা বাজেটে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর বাজেটের পরিমাণ বাড়ে। সেই হিসাবে বাজেটের যে খাতগুলো আছে, এগুলোতে আমরা কিছু যোগ-বিয়োগ করি, আর দু-একটা বড় বড় প্রকল্প যোগ-বিয়োগ করি। আমাদের কাঠামোগত সংস্কার দরকার। নতুন করে রিডিজাইন করা দরকার।

শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সুজন ‘বাজেট ২০১৯-২০ ও নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে। সেখানে বাজেট ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহির বিভিন্ন দিক আলোচনায় উঠে আসে।

সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে এতে বক্তব্য রাখেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান, সুজনের নির্বাহী কমিটির সদস্য জাকির হোসেন, সাবেক সচিব ও গবেষক আব্দুল লতিফ মন্ডল, বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো নাজনীন আহমেদ, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, শিক্ষাবিদ প্রফেসর ড. আনু আহমেদসহ প্রমুখ।

বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে উন্নয়ন মানে হচ্ছে তাদের অবস্থা ও অবস্থানের পরিবর্তন। বৈষম্য যখন বাড়ছে, তাদের অবস্থানের পরিবর্তন হচ্ছে না। যেসব প্রকল্পের মাধ্যমে জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) বাড়ছে তাতে এক শ্রেণির মানুষ আঙুল ফুলে কলাগাছে হচ্ছে। পুষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মানের দিক থেকে ভালো করছে না, যা মানুষের জীবনকে সরাসরি প্রভাবিত করে।

রামপাল এবং রূপপুর প্রকল্পকে দেশের জন্য সবথেকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প হিসেবে আখ্যায়িত তিনি বলেন, এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে রামপাল রূপপুরের মতো প্রকল্পগুলোতে। অথচ এগুলো দেশের জন্য সব থেকে ঝুঁকিপূর্ণ প্রকল্প। দেশের সব নাগরিকের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এসব থেকে যে বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে তা মোকাবেলায় কি করা হবে সে বিষয়ে কোনো উল্লেখ নেই।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, সংসদে বাজেট পেশ হয় এবং তা দ্রুতই বাস্তবায়নের জন্য তাড়াহুড়া হয়। বাজেট নিয়ে সংসদে কোনো জ্ঞানগর্ভ আলোচনা হয় না। দেশের শীর্ষ ধনীদের একজন যদি অর্থমন্ত্রী হন, তাহলে উনি তো আমাদের দুঃখ বুঝবেন না। এ ছাড়া তিনি নিজে অনেকগুলো বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন জানিয়ে বলেন, সরকার কখনো সাধারণ মানুষের কথা বা সমাজের বিশিষ্ট নাগরিকদের কথা কানে নেয় না।

অধ্যাপক ড. আনু আহমেদ বলেন, আমরা অনেক দিন থেকে সরকারকে বলছি অর্থবছরের সময়সীমা জুলাই-জুনের পরিবর্তে জানুয়ারি-ডিসেম্বর অথবা বাংলা ক্যালেন্ডারের সঙ্গে মিলিয়ে এপ্রিল-মার্চ করার জন্য। কিন্তু সরকার তা করছে না। পাকিস্তান এবং কয়েকটি দেশ ছাড়া কোনো দেশে অর্থবছরের জুলাই-জুনে নেই। জুন মাসে আবহাওয়ার যে বিরূপ থাকে তার উসিলায় অনেক অর্থ এদিক-সেদিক করার সুযোগ থাকে; দুর্নীতি বৃদ্ধি পায়। যে কারণে এ সরকার অর্থবছর পরিবর্তন করছে না।

সরকারের ব্যয়ের ধরনের সমালোচনা করে এ শিক্ষাবিদ বলেন, বড় অঙ্কের প্রকল্পের সরকারের অনেক আগ্রহ কিন্তু অপেক্ষাকৃত কম অংকের প্রকল্পের সরকারের আগ্রহ নেই। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে সরকার ব্যয়বহুল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ব্যয়বহুল সেতু ভবন সড়ক নির্মাণের বাংলাদেশ ইতিমধ্যে বিশ্বের রেকর্ড করেছে। অথচ এ টাকাগুলো জনগণ নিজেদের পকেট থেকে দেয়। তার বিনিময় সরকার এবং সরকারি আমলারা কতটুকু সেবা দিচ্ছে সেই সার্ভিস রেশিও নিয়েও জনগণের প্রশ্ন তোলা উচিত।

আনু মুহাম্মদ বলেন, দেশের সব পরিসংখ্যানের ওপর নির্ভর করতে হয় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ওপর। নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান হওয়ার জন্য যে দক্ষতা দরকার, সেখানে বড় ধরনের ঘাটতি আছে। তবে এটি একটি স্বাধীন প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত। বিশেষজ্ঞনির্ভর প্রতিষ্ঠান হওয়া উচিত। বিবিএস সরকারের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে বা সরকারের ওপর নির্ধারিত ডেটা প্রভাবিত করার যে অভিযোগ আছে, সেটা থেকে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত এই নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া সম্ভব না। এ ছাড়া তিনি বলেন, বিবিএসর প্রাথমিক তথ্য জনগণ পায় না।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, এটা বিশেষ বিশেষ গোষ্ঠীকে তুষ্ট করার বাজেট। লুটপাটের ধারাবাহিকতা বাজেটের মধ্যে অব্যাহত আছে। কীভাবে বেশিসংখ্যক মানুষের কাছ থেকে কর আদায় করা যাবে, সেই ধরনের কোনো উদ্যোগ না নিয়ে পরিচিত খাত থেকে কর আদায় হচ্ছে।

বাজেট নিয়ে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর। তিনি বলেন, সরকারি হিসাবে জিডিপি প্রবৃদ্ধি অনেক বাড়ছে। অন্যদিকে বৈষম্যও আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। প্রবৃদ্ধির ধারা কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারছে না। রাজস্ব আয়ব্যয়ে ভারসাম্যহীনতা আছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশে আয়কর প্রধান আয়। কিন্তু বাংলাদেশকে মূল্য সংযোজন করের ওপর নির্ভর করতে হয়। বাজেট প্রক্রিয়ায় জবাবদিহিতে গণতান্ত্রিক চর্চার ঘাটতি রয়েছে। বাজেট ব্যবস্থাপনার সংস্কার প্রয়োজন বলে তিনি প্রবন্ধে উল্লেখ করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন হাত কাটা বন্দীর নেতানিয়াহুর সমালোচনা ইসরাইলের আলটিমেটাম, যা বলল হামাস রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থনের বিরুদ্ধে ব্লিংকেনের হুঁশিয়ারি ইতিহাস গড়া জয় পেল পাঞ্জাব

সকল