২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাচার টাকা ফেরতের উদ্যোগ নেই

পাচার টাকা ফেরতের উদ্যোগ নেই
পাচার টাকা ফেরতের উদ্যোগ নেই - ফাইল ছবি

দেশ থেকে প্রতি বছরই টাকা পাচার বাড়ছে। মার্কিন গবেষণা সংস্থাসহ কয়েকটি বিদেশী সংস্থা থেকে প্রতি বছরই এ বিষয়ে তথ্য দেয়া হয়। তথ্য প্রকাশের পর কিছু দিন হইচই করা হয়। এরপর অন্য ঘটনার মতো টাকা পাচারের মতো গর্হিত অপরাধের আলোচনাও থেমে যায়। এবারও ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গ্লোবাল ফিন্যান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (জিএফআই) বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচারের তথ্য প্রকাশ করেছে। গত সোমবার প্রতিষ্ঠানটির এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত দশ বছরে বাংলাদেশ থেকে টাকা পাচার হয়েছে ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শুধু ২০১৫ সালেই পাচার হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা।

প্রতি বছরই টাকা পাচারের তথ্য নিয়ে দেশীয় বিভিন্ন সংস্থা কিছু দিন কথা বার্তা বললেও পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারের তেমন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ে না। কারা টাকা পাচার করছেন, কেন করছেন, পাচার হওয়া টাকা উদ্ধার করার কি পদক্ষেপ নেয়া যায় সে বিষয়ে তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায় না।

তবে টাকা পাচারসহ সন্ত্রাসী কাজে অর্থায়ন প্রতিরোধে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফএফআই) নামক একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি এতদিন বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনস্থ একটি বিভাগ ছিল। সম্প্রতি তা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পৃথক করা হয়েছে। যদিও প্রতিষ্ঠানটির অফিস, লোকবল বাংলাদেশ ব্যাংকেরই রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির কিছু কর্মকর্তা সারা বছরই বিশ্বব্যাপী চষে বেড়ান। এ পর্যন্ত ৬৮টি দেশের সাথে তারা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছেন।

টাকা পাচারের তথ্য আদান প্রদান করার জন্যই মূলত এ চুক্তি করা হয় বলে জানা গেছে। কিন্তু টাকা পাচার থেমে নেই, বরং বেড়েই চলছে। আবার ২০০৬ সালের পর পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। আবার দেশ থেকে টাকা পাচার কিভাবে থামানো যায় তারও কোনো কার্যকর পদক্ষেপ দেখা যায় না।

এদিকে টাকা পাচার বেড়ে যাওয়ায় দেশ বিনিয়োগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। এটা অব্যাহত থাকলে কাক্সিক্ষত হারে জাতীয় প্রবৃদ্ধি হবে না। জনসংখ্যা বৃদ্ধির তুলনায় কাক্সিক্ষত হারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। বাড়বে বেকারত্বের হার। দেশের চাহিদা পূরণে বিদেশের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে যাবে, যা দেশের জন্য মোটেও সুখকর হবে না বলে মনে করছেন তারা।

দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়ে যাওয়ার কারণ সম্পর্কে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, জাতীয় জীবনের নিরাপত্তা যখন অনিশ্চত হয় তখন দেশে বিনিয়োগ করতে ভয় পান বিনিয়োগকারীরা। আস্থার সঙ্কটে ভোগেন তারা। আর এ কারণেই তাদের মূলধন বিদেশে নিয়ে যান অনৈতিক পন্থায়। গত কয়েক বছরে দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়ে যাওয়া এটি একটি অন্যতম কারণ বলে তিনি মনে করেন।

দেশ থেকে টাকা পাচার বেড়ে যাওয়ার প্রভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, দেশ থেকে টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার অর্থই হলো দেশকে বঞ্চিত করা। কেননা, যে টাকা পাচার হচ্ছে তা দেশে বিনিয়োগ করলে কর্মসংস্থান বাড়তো। এসব বিনিয়োগ থেকে উৎপাদিত পণ্য দিয়ে বর্ধিত হারে দেশের চাহিদা মেটানো যেত। কিন্তু টাকা পাচার হয়ে যাওয়ায় এখন ওই হারে বিনিয়োগ হচ্ছে না। সৃষ্টি হচ্ছে না কর্মসংস্থানের।

তিনি বলেন, সপ্তমবার্ষিকী পরিকল্পনা অনুযায়ী জাতীয় প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের ওপরে রাখতে হলে জাতীয় উৎপাদনে বেসরকারি বিনিয়োগ ২৭ থেকে ২৮ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হতে হবে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তা ২১ শতাংশের ওপরে যাচ্ছে না। তিনি মনে করেন, টাকা পাচার থামাতে না পারলে কাক্সিক্ষত হারে জাতীয় প্রবৃদ্ধি অর্জন হবে না। বাড়বে না কর্মসংস্থানও।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহা: রাজী হাসান গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, ওয়াশিংটনভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি অর্থ পাচার সংক্রান্ত যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তা যাচাই করে দেখব। এরপর আনুষ্ঠানিক মতামত জানাব। সাধারণত আমদানি-রফতানির আড়ালে অর্থ পাচার হয়ে থাকে। তবে গোটা পৃথিবীতে বিশ্ববাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। এ বিষয়ে এখন সবাই সতর্ক। আমরাও বিষয়টি দেখব।

তিনি জানান, এ পর্যন্ত ৬৮টি দেশের সাথে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত (এমওইউ) হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সাথে তথ্য আদান প্রদান করা হচ্ছে। এর ভিত্তিতে এ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে প্রায় ৩০টি মামলা হয়েছে। সুতরাং পাচার হওয়া টাকা ফেরত আনার বিষয়ে উদ্যোগ থেমে নেই।

পাচারকৃত টাকা ফেরত আনা জটিল প্রক্রিয়া : বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, পাচারকৃত অর্থ ফেরত আনা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। মূলত দুই প্রক্রিয়ায় পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। প্রথমত, অর্থ পাচারের ব্যাপারে কোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেতে হবে। ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দেশের আদালতে রাষ্ট্রপক্ষকে মামলা করতে হবে। স্থানীয় আদালতে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার পক্ষে রায় দিতে হবে। আদালতের এ রায়ের কপি অ্যাটার্নি জেনারেলের অফিস থেকে যে দেশে অর্থ পাচার করা হয়েছে ওই দেশের অ্যাটার্নি জেনারেলের অফিসকে অবহিত করতে হবে। সংশ্লিষ্ট দেশের অ্যাটার্নি জেনারেল অফিস অর্থ ফেরত দেয়া যায় কি না তা নিয়ে ওই দেশের আদালতে মামলা করবে। সংশ্লিষ্ট দেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত দেয়ার ব্যাপারে আইনি জটিলতা রয়েছে কী না তা যাচাই বাছাই করবে। পাচারকৃত অর্থ ফেরত দেয়ার ব্যাপারে আইনি জটিলতা না থাকলে সংশ্লিষ্ট দেশের আদালত থেকে পাচারকৃত অর্থ ফেরত দেয়ার বিষয়ে রায় প্রদান করবে। এর পরেই কেবল পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সবকিছু অনুকূলে থাকলে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে অর্থ ফেরত আনতে ৫ থেকে ২০ বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। সুতরাং পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে কথাবার্তা বলা রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা ছাড়া অন্য কিছু নয় বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা।

দ্বিতীয়ত, মামলা করা ছাড়াও পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা যায়, যদি সংশ্লিষ্ট দেশের আইনি কোনো জটিলতা না থাকে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশকে আন্তর্জাতিক অপরাধ দমন সংস্থা এগমন্ড গ্রুপের সদস্য হবে হবে। যেমন বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্র এগমন্ড গ্রুপের সদস্য। এক্ষেত্রে এক দেশের অ্যাটার্নি জেনারেলের অফিসকে অন্য দেশের অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পাসপোর্ট নম্বরসহ সুনির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহ করতে হবে। ওই দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তথ্য যাচাই-বাছাই করবে। যাচাই-বাছাইয়ে তথ্যের গড়মিল না পেলেই কেবল পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা সম্ভব। এ প্রক্রিয়াও সম্পন্ন করতেও কয়েক বছর লেগে যাবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব করছে : কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সুলতান মাহমুদকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন হাত কাটা বন্দীর নেতানিয়াহুর সমালোচনা

সকল