২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিকল্পনায় ঘাটতি আছে’

‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিকল্পনায় ঘাটতি আছে' - ছবি : নয়া দিগন্ত

বাংলাদেশে গত জুন মাস থেকে শুরু করে এখনো পর্যন্ত মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে চলেছে। এমনকি আজও (মঙ্গলবার) ১৫৭২ জন মানুষ সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।

যদিও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা ওষুধ ছিটানো এবং সচেতনতা বৃদ্ধির মত নানা পদক্ষেপ নেবার কথা বলছে। কিন্তু সেসবের কার্যকারিতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন রয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে মশা মারার ওষুধ আনা এবং বিতরণ নিয়ে নানা রকম সমালোচনাও রয়েছে। তবে এর মধ্যে ডেঙ্গুর কেন্দ্র ঢাকার ব্যবস্থাপনা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বেশি।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে দুই সিটি কর্পোরেশনের নেয়া উদ্যোগসমূহ কতটা কার্যকর হয়ে উঠতে পারছে?

ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাকার রামপুরার বাসিন্দা সাগরিকা অধিকারী এবং তার চার বছরের সন্তানটি জুলাই মাসের শেষদিকে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন।

কদিন হল হাসপাতাল থেকে ফিরেছেন বাসায়। কিন্তু কিছুটা কমলেও তার বাসার চারপাশে এখনও মশা রয়েছে। ফলে তিনি খুবই উদ্বিগ্ন, যেমনটা বলছেন সাগরিকা অধিকারী, ‘মশা তো আছে, খুব আতংকে থাকি এ নিয়ে, কারণ কোনটা এডিস মশা সেটা তো বোঝা যায় না। সব সময় মশারী টাঙ্গাই, স্প্রে করি সবার গায়ে, বাসায় কোথাও যাতে পানি জমে না থাকে তা নিয়ে সচেতন থাকি। কিন্তু কতটা বাঁচতে পারবো জানি না।’

গত জুন মাস থেকে শুরু করে প্রতিদিনই মানুষ ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হয়ে চলেছে। এমনকি আজও ১৫৭২ জন মানুষ সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। শুরুতে কেবল ঢাকাতেই ডেঙ্গু রোগী থাকলেও, জুলাই মাসের শেষ দিক থেকে ঢাকার বাইরেও ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ার খবর পাওয়া যেতে শুরু করে।

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঢাকার দুইটি সিটি কর্পোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থা নানা রকম তৎপরতা শুরু করে। এর মধ্যে ওষুধ ছিটানো, সরকারী অফিসের কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের ছুটি বাতিল, বিনামূল্যে অ্যারোসল বিতরণ, তারকাদের নিয়ে পরিচ্ছন্নতা অভিযান করে জনসচেতনতা সৃষ্টিসহ নানা ধরণের উদ্যোগ নিয়েছে।

এর মধ্যে আবাসিক ও বাণিজ্যিক স্থাপনা থেকে এডিস মশার লার্ভা নির্মূলের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন আজ থেকেই শুরু করেছে এক চিরুনি অভিযান। কিন্তু এসব উদ্যোগ ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কতটা ভূমিকা রাখতে পারছে?

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণী বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলছেন, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সরকারের পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে।

তিনি বলছেন, ‘সরকারের উদ্যোগে ঘাটতি নাই, কিন্তু পরিকল্পনায় বেশ ঘাটতি আছে। কারণ এডিস মশা তাৎক্ষনিকভাবে নির্মূলের ব্যাপার নয়। সারা বছর ধরে এডিসের বিরুদ্ধে কাজ করতে হয়।’

‘ডেঙ্গু প্রতিরোধে চারটি ব্যাপার নিশ্চিত করা জরুরী। এক পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখা, দুই মশার জৈবিক নিয়ন্ত্রণ, তিন নম্বর কীটনাশক প্রয়োগ এবং ডেঙ্গু ঠেকাতে নাগরিকদের যুক্ত করা।’ অধ্যাপক বাশার বলছেন, যে চারটি নিশ্চিত করতে হবে, তার তিনটি হুট করে করা যায় না। হিসাব করে দেখলে এবার মশার ওষুধ দেয়া ও বদলে দেয়া সবই করা হয়েছে। কিন্তু সেটাও ঠিকভাবে করা হচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।

এদিকে, ঢাকায় এডিস মশাবাহী এ রোগ প্রতিরোধে সরকারের নেয়া কার্যক্রম সম্পর্কে দুই সিটি কর্পোরেশন এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় হাইকোর্টে যে রিপোর্ট জমা দিয়েছিল, তা সন্তোষজনক নয় বলে মন্তব্য করেছে আদালত।

এ প্রেক্ষাপটে নেয়া কার্যকর পদক্ষেপ সম্পর্কে জানাতে ২৬শে অগাস্ট পর্যন্ত সময় দেয়া হয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশনকে। তবে, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, সামনের সপ্তাহে সরকারের কাছে একটি সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা পেশ করবেন তারা। তবে তিনি নানা রকম সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করেন যার কারণে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সময় লাগছে।

তিনি বলছেন, ‘আমরা অ্যানটোমলজিস্টদের নিয়ে কাজ করছি। কিন্তু আমাদের ওষুধ দেবার মেশিনের ঘাটতি ছিল, লোকবলের ঘাটতি ছিল। সেগুলো বাড়ানো হয়েছে। আমরা সব মিলিয়ে সমন্বিতভাবে ডেঙ্গু মোকাবেলার চেষ্টা করছি।’

তবে, ডেঙ্গু বৃদ্ধি পাবার প্রেক্ষাপটে নেয়া পদক্ষেপগুলো ধারাবাহিকভাবে চালিয়ে না গেলে সরকার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। কারণ বাংলাদেশের আবহাওয়া সব সময়ই ডেঙ্গু ভাইরাসের জন্য সহায়ক। ফলে সরকারের যেমন কর্মপরিকল্পনা থাকা দরকার, তেমনি এই সময়ে নেয়া পদক্ষেপগুলোও চালিয়ে যেতে হবে বলে মনে করেন রোগতত্ত্ব, রোগ-নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

তিনি বলছেন, ‘এখন ডেঙ্গু বেড়েছে বলে এক ধরণের কাজ হচ্ছে, সেটা একটু কমলে যদি এসব কার্যক্রম থামিয়ে দেয়া হয়, তাহলে কিন্তু সমস্যা। এটা চালিয়ে যেতে হবে, এটা কিন্তু ওয়ান টাইম ইস্যু নয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্যপ্রমাণ আছে যে মশার উৎস নির্মূলই কিন্তু এখানে প্রধান কাজ, কীটনাশকের ভূমিকা পরে। ফলে এখানে মশার উৎস নির্মূল করার ব্যাপারে জোর দিতে হবে।’ তবে মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেছেন, সরকারের সঙ্গে সঙ্গে নাগরিকদেরও এক্ষেত্রে অনেক বেশি হারে সম্পৃক্ত হবার দায়িত্ব রয়েছে। সূত্র : ‍বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement
জুলাইয়ে ব্রাজিল সফরে যেতে পারেন প্রধানমন্ত্রী জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে বিশ্বকে চমকে দিলো ভানুয়াতু বিতর্কিত ক্যাচের ছবির ক্যাপশনে মুশফিক লিখেছেন ‘মাশা আল্লাহ’ উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় ৭৩ জনকে বহিষ্কার করলো বিএনপি মিরসরাইয়ে অবৈধ সেগুনকাঠসহ কাভার্ডভ্যান জব্দ মানিকগঞ্জে আগুনে পুড়ে যাওয়া মলিরানীর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড ইন্দোনেশিয়ার নারী ক্রিকেটার রোহমালিয়ার ‘এখন আমি কী নিয়ে বাঁচব’ যদি বন্ধু হও, সীমান্তে অহরহ গুলি কেন : ভারতকে ফারুক সাহারা মরুভূমির গরমের মতো অনুভূত হচ্ছে : সরকারকে দায়ী করে রিজভী মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে ২ ভাইকে হত্যার প্রতিবাদে সমাবেশ

সকল