১১ মে ২০২৪, ২৮ বৈশাখ ১৪৩১, ০২ জিলকদ ১৪৪৫
`


‘ওরা এত সাহস পায় কিভাবে?’

রাস্তায় গণপরিবহন চলছে না। পরিবহনের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা। (ডানে) - ফাইল ছবি

মতিঝিল থেকে শ্যামলী শিশু হাসপাতালে সিএনজি অটোরিকসা পাঁচশ টাকা ভাড়া চায়, এটা কিভাবে সম্ভব? পরিবহন শ্রমিকরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে অবৈধ দাবি-দাওয়া আদায় করতে চায়। সরকারের কিছু মন্ত্রী ও নেতাদের প্রশ্রয়ে তারা যখন-তখন স্টাইক করবে? কিভাবে সম্ভব ? ওরা এত সাহস পায় কিভাবে?

এভাবেই নিজের ক্ষোভ ও বিরক্তি প্রকাশ করছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী মিলন মাহমুদ। তিনি তার শিশুকে নিয়ে শ্যামলী শিশু হাসপাতালে যাবেন, কিন্তু রাস্তায় বাস চলাচল না করায় বাধ্য হয়ে সিএনজি অটো রিকসায় যেতে হবে। কিন্তু মতিঝিল শাপলা চত্বর যেখানে স্বাভাবিক ভাড়া দুইশ টাকার মতো সেখানে সিএনজি ড্রাইভার ভাড়া চায় পাঁচশ টাকা।

রাস্তায় গণপরিবহন না পেয়ে যে যেভাবে পারছেন গন্তব্যে ছুটে যাচ্ছেন। আর ধর্মঘটের সুযোগে রিকসা, সিএনজির ভাড়া কয়েকগুন বেশি চাইছেন ড্রাইভাররা। বেশি দুর্ভোগে পড়ছেন নারী ও শিশুরা।

শনিবার খুলনা থেকে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা বেলাল আহমেদ ঢাকায় এসেছেন। তিনি এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপে বলছিলেন যে, খুলনাতে আরো একদিন অফিসের কাজ ছিলো, কিন্তু পরিবহন ধর্মঘট ডাকার কারণে একদিন আগেই ঢাকায় চলে আসছেন। বাসের টিকিট না পেয়ে কয়েকজন মিলে একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে ঢাকায় ফিরেন। কুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা ও ধর্মঘট শুরু হওয়ায় বাসের টিকেট সংগ্রহ করতে পারেননি তিনি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী শনিবার রাতে নয়া দিগন্তকে বলেন, কর্মরিবতির মধ্য দিয়ে প্রথমে তারা দাবি আদায়ের চেষ্টা করবেন। যদি তা না হয় পরে আরো কঠোর কর্মসূচি প্রদান করা হবে...। তিনি বলেন, পরিবহন শ্রমিকেরা তাদের দাবি আদায় না করে ঘরে ফিরে যাবে না।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস হওয়ায় রাস্তায় মানুষের ভিড় বেশি লক্ষ্য করা গেছে। কিন্তু বাস না পেয়ে সবাই হেটে কর্মস্থলে যাচ্ছেন।

এভাবে হঠাৎ পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে যাত্রীরা বেশ ভোগান্তিতে পড়েছেন। বিআরটিসির কিছু বাস চললেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।

যে কারণে ধর্মঘট

জাতীয় সংসদে সদ্য পাস হওয়া ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’-এর কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ আট দফা দাবি আদায়ের লক্ষে সারাদেশে ৪৮ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট ডাকে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন। সরকার দলীয় নেতাদের আর্শিবাদপুষ্ট এই সংগঠনটি আরো বেশ কয়েকবার এরকমভাবে পরিবহণ ধর্মঘট ডাকে। নৌ পরিবহন মন্ত্রী শাহাজান খান ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা এই সংগঠনের সাথে জড়িত। তাদের মদদে পরিবহন খাতের শ্রমিক নেতারা যখন-তখন পরিবহন ধর্মঘট ডাকে।

ধর্মঘটের প্রথম দিনে রাস্তায় সাধারণ পরিবহনের কোনো গাড়ির দেখা মেলেনি। ফলে অফিসগামী ও সাধারণ জনগণকে পড়তে হচ্ছে বিপাকে।

এই ৪৮ ঘণ্টায়ও তাদের দাবি বাস্তবায়ন না হলে পরে আরো কঠোর কর্মসূচি প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিক নেতারা।

শনিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে আয়োজিত এক সমাবেশে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের নেতারা এ কথা বলেন। তাদের দাবির মধ্যে রয়েছে : সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ সংশোধন করা; সড়ক দুর্ঘটনায় ৩০২ ধারায় মামলা গ্রহণ না করা; ৫ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল ও জামিনযোগ্য ধারায় মামলা করা; টাঙ্গাইল জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সদস্য হাসমত আলীসহ মালিক ও শ্রমিক মুক্তি, পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা, গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের জন্য নির্দিষ্ট স্থান নির্ধারণ করা, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধাসংবলিত ট্রাক টার্মিনাল বা স্ট্যান্ড নির্মাণ করা, গাড়ির মডেল বাতিল করতে হলে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া, সহজ শর্তে ভারী যানবাহন চালককে ভারী লাইসেন্স দেয়া এবং এর আগ পর্যন্ত হালকা বা মধ্যম লাইসেন্স দিয়ে ভারী যানবাহন চালানোর সুযোগ দেয়া, সারা দেশে গাড়ির ওভারলোডিং বন্ধ করা এবং ফুটপাথ, ওভারব্রিজ, আন্ডারপাস ও জেব্রাক্রসিং ব্যবহার নিশ্চিত করা।

 


আরো সংবাদ



premium cement