২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৪ অগ্রহায়ন ১৪৩০, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৫ হিজরি
`

‘ওয়াশিংটনের ষড়যন্ত্রেই’ সরতে হয়েছিল ইমরানকে!

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। - ছবি : সংগৃহীত

পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের ক্ষমতা হারানোর কারণ লুকোনো রয়েছে এক কূটনৈতিক ‘সাইফারে’। বহু আগেই এ কথা দাবি করেছিলেন ইমরান। এবারে যুক্তরাষ্ট্রের এক সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, গত বছর ওয়াশিংটনের ‘ষড়যন্ত্রেই’ ক্ষমতা হারাতে হয়েছিল ইমরানকে। তার প্রমাণ রয়েছে ওই গোপন বার্তা ‘সাইফারে’।

পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে হারের পরে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হন ইমরান। তিনি ওই সময়ে দাবি করেছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর দফতরে থাকতেই তিনি সাইফারের কথা জানতে পেরেছিলেন। তাকে সরানোর জন্য যুক্তরাষ্ট্রই ষড়যন্ত্র করেছিল। পাক সেনাবাহিনী ও রাজনৈতিক বিরোধী দলগুলোর সাহায্যে তাকে সরিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।

পরে অবশ্য ইমরান বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক ভালো করতে চান তিনি।

তিনি আরো দাবি করেন, তার উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও সেনাবাহিনী চক্রান্ত করে তাকে পদ থেকে সরিয়েছেন।

বর্তমানে তোশাখানা দুর্নীতি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হয়ে জেলবন্দি ইমরান। তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে তার। অন্তত পাঁচ বছর রাজনীতি থেকে দূরে থাকার নির্দেশ দিয়েছে ইসালামাবাদ হাই কোর্ট। ইমরান তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানিয়েছেন, নির্বাচনে তিনি যেন অংশ নিতে না পারেন, তার জন্যই এই ‘ব্যবস্থা’ করা হয়েছে।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের এক সংবাদ সংস্থার রিপোর্টে আবারো বলা হয় ‘ষড়যন্ত্র’ প্রসঙ্গ। ওই রিপোর্টে ‘সাইফার’-এ থাকা ষড়যন্ত্রেই পাকিস্তানের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত আসাদ মাজিদ ও যুক্তরাষ্ট্রের ‘ব্যুরো অব সাউথ অ্যান্ড সেন্ট্রাল এশিয়ান অ্যাফেয়ার্স’-এর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুয়ের কথোকথন প্রকাশ করা হয়েছে।

২৪ ফেব্রুয়ারি ইমরানের মস্কো সফরের দু’সপ্তাহ পরে ওই বৈঠক হয়েছিল।

২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরু করেছিল রাশিয়া। মস্কোর ইউক্রেন-আক্রমণ নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছিলেন ইমরান। জানা যায়, এই দুই ঘটনায় ভয়ানক ক্ষুব্ধ হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের উদ্দেশে গোপনে বার্তা দিয়েছিল, যেকোনোভাবে ইমরানকে ক্ষমতা থেকে সরাতে হবে।

লু ও মাজিদের বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, ‘ইমরানের রাশিয়া সফর ও ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের একরোখা নিরপেক্ষ অবস্থান দেখে আমেরিকা ও ইউরোপ খুবই চিন্তিত।’

আরো জানা গেছে, লুয়ের সাথে হওয়া কথাবার্তা ‘সাইফার’-এ করে ইসলামাবাদে পাঠিয়েছিলেন মাজিদই। সেটি ফাঁস হয়ে যায়। ইমরানের মুখেই প্রথম সাইফারের কথা শোনা যায়।

লু মাজিদকে বলেছিলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর (ইমরান) বিরুদ্ধে যদি একটা অনাস্থা ভোট সফল করা যায়, আমার মনে হয় ওয়াশিংটন সব মাফ করে দেবে। কারণ রাশিয়া সফরের সিদ্ধান্ত তিনিই নিয়েছিলেন। কিন্তু এটা না হলে ভবিষ্যতে এক সাথে হাঁটা কঠিন হবে।’

যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, এর এক মাস পরেই পাক পার্লামেন্টে অনাস্থা ভোট হয়েছিল। যার জেরে ক্ষমতা থেকে সরতে হয়েছিল ইমরান খানকে।

যুক্তরাষ্ট্রের রিপোর্টটির প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে দেশটি পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলার জানান, ওই রিপোর্টে যা বলা হয়েছে, তাতে কিন্তু কোথাও এমন কিছু উল্লেখ নেই যে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, যুক্তরাষ্ট্র তা ঠিক করে দিয়েছে।

তিনি আরো বলেছেন, ইমরানের রাশিয়া সফর নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যেই নিন্দা করেছিল।

মিলার বলেন, ‘মাজিদ যেটা বলেছিলেন, সেটাই বলছি। পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর যে অভিযোগ উঠছে, তা মিথ্যা। আগেও মিথ্যা বলা হয়েছিল, এখনো মিথ্যা বলা হচ্ছে।’

পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রানা সানাউল্লা রিপোর্টটির সত্যতা খারিজ করে দিয়েছেন।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা


আরো সংবাদ



premium cement