২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ইসলামী ব্যাংকিংয়ের অগ্রণীব্যক্তিত্ব মিসরের আহমেদ আল-নাজ্জার

-

পৃথিবীর অনেক দেশ ভ্রমণের সৌভাগ্য আমার হয়েছে। বিচিত্র সংস্কৃতির সমাজ ও সম্প্রদায়ের মানুষের সাথে মিশেছি। সবখানে একটি অভিন্ন জিনিস দেখেছি। সেটি হলো ভালোবাসা। আমার অনেক ইনটেলেকচুয়াল ফ্রেন্ড ছিল। আমি হয়তো আমার পাশেরই কারো কাছ থেকে ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা পাইনি। কিন্তু আমাকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আমেরিকা বা আফ্রিকা, ইউরোপ বা মধ্যপ্রাচ্য কিংবা দূরপ্রাচ্যের অনেকে। এই বিচিত্র মানুষের মধ্যে একজন বিশাল হৃদয়ের মানুষের সাথে আমার পরিচয় ঘটেছিল। তিনি ড. আহমেদ আল-নাজ্জার। মিসরের এই ইসলামিক অর্থনীতিবিদ ১৯৬৩ সালে মিট গামার ভ্যালিতে বিশ্বের প্রথম আধুনিক ইসলামী ব্যাংক- মিট গামার সেভিংস ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তখন মিসরে জামাল আবদুল নাসেরের শাসন চলছিল। নাসের ছিলেন ইসলামপন্থীদের বিরোধী। ফলে নামের সাথে ইসলাম শব্দটি যুক্ত না করেই লাভ-লোকসান ভাগাভাগির ভিত্তিতে পরীক্ষামূলকভাবে ব্যাংকটি পরিচালনা করা শুরু হয়। এর নাম দেয়া হয় মিট গামার সেভিংস প্রজেক্ট। তখন রাষ্ট্রপরিচালিত ব্যাংকগুলোর ওপর মিসরবাসীর আস্থা উঠে গিয়েছিল। ফলে অল্প দিনেই মিট গামারের এই ব্যাংক ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। একনায়কদের শাসনে যেমন জনপ্রিয় যেকোনো কিছুর স্থায়িত্ব কম হয়, তেমনি মিট গামার সেভিংস প্রজেক্টও কয়েক বছর পর বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১৯৭২ সালে এই প্রকল্প নসর সোস্যাল ব্যাংকের অংশে পরিণত হয়। ব্যাংকটি এখনো মিসরে ব্যবসা করছে।

আল-নাজ্জারের সাথে আমার পরিচয় ষাটের দশকের শুরুর দিকে, লেখার মাধ্যমে। তিনি জার্মানি থেকে পিএইচডি করেছেন। ইসলামিক অর্থনীতির ওপর লেখালেখি করতেন। একই বিষয়ে আমার লেখাও সংবাদপত্রে প্রকাশিত হচ্ছে। আইডিবি প্রতিষ্ঠার পর সেখানে যখন সারা বিশ্ব থেকে জনবল সংগ্রহের চেষ্টা করা হচ্ছে আমিও সাক্ষাৎকারের জন্য ডাক পাই। সেখানে বাছাই কমিটিতে ছিলেন আল-নাজ্জার। আরো ছিলেন তুরস্কের ড. সাবাত্তিন জাইম। তারা ভেবেছিলেন, আমি হয়তো কোনো বয়স্ক অধ্যাপক ধরনের কেউ হব। আমাকে ক্লিনশেভড অল্প বয়স্ক একজন দেখে তারা অবাক হলেন। আসলে আমি খুব অল্প বয়স থেকে লেখালেখি করায় এটা হয়েছিল। আমি যখন ‘ইসলামিক ইকোনমিকস : থিওরি অ্যান্ড প্র্যাকটিস’ বইটি লেখা শুরু করি তখন আমার বয়স মাত্র ২২ বছর। তিন বছরে লেখাটি লিখে শেষ করি। তখন আমি কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি মাত্র। কাজের ফাঁকে ফাঁকে পড়ালেখা করতাম ও লেখার কাজ এগিয়ে নিতাম। বইটি প্রকাশের পর তুর্কি, আরবিসহ বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়। এই বইয়ের সুবাদেই আল-নাজ্জার আমাকে চিনতেন। আইডিবির সাক্ষাৎকার দিতে গিয়ে প্রথম তার সাথে চাক্ষুষ দেখা হয় এবং ব্যক্তিগত সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নাজ্জারকে বলা হয় ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের জনক। আমি কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে যোগ দিলে নাজ্জার সেখানে ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে আসেন। ফলে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকে। তখন বিভিন্ন সেমিনারে আমরা দু’জন একই সাথে অংশ নিয়েছি, প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছি। এর মধ্যে একটি ঘটনা আমার বিশেষভাবে মনে পড়ে।

সেটা ১৯৮২ সালের ঘটনা। তখন আমি কিং আবদুল আজিজ ইউনিভার্সিটিতে অধ্যাপনা করছি। হঠাৎ একদিন এসে আল-নাজ্জার আমাকে বললেন, ‘মান্নান, ইউ হ্যাভ বিন সিলেক্টেড।’ আমি বললাম, কোথায়? তিনি বললেন, তোমাকে জার্মানির বাদেন বাদেন যেতে হবে। প্রিন্স মোহাম্মদ ফয়সাল তোমাকে ইনভাইট করছেন। প্রিন্স আমাকে চিনতেন (এ ব্যাপারে বিস্তারিত আগের লেখায় উল্লেখ করেছি)। সৌদি রাজপুত্রদের ব্যাপারে সাধারণভাবে মনে করা হয় যে, তারা শুধু বিলাসী জীবন যাপন করেন। তা নয়। প্রিন্স ফয়সাল ছিলেন একজন ইসলামী চিন্তাবিদ। ইসলামী অর্থনীতির প্রসারে তার অবদানও কম নয়। মুসলিম উম্মাহকে নিয়ে তিনি ভাবেন।

আমাকে বাদেন যেতে হবে শুনে নাজ্জারকে জিজ্ঞেস করি, কেন? তিনি বললেন, আমরা ১৬ জন ইসলামিক স্কলার, বিশেষ করে ইসলামিক অর্থনীতির ওপর দক্ষ এমন একটি গ্রুপের সাথে পশ্চিমা বিশ্বের সমসংখ্যক স্কলার, অর্থনীতিবিদ ও সমাজ বিজ্ঞানীর একটি সংলাপের আয়োজন করেছি। অর্থকে কিভাবে সুন্দরভাবে ব্যয় করতে হয় সেটি আমি ওই ঘটনায় শিখেছিলাম। আল-নাজ্জারের কথায় আমার আগ্রহ বেড়ে যায়। তিনি বললেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইউকে, ইউএসসহ অন্যান্য দেশ থেকে ১৬ জন স্কলারকে বাছাই করা হয়েছে। তারা সেখানে আসবেন। তাদের সাথে ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং নিয়ে আমাদের সংলাপ হবে। আমি বললাম, তারা তো ইসলামিক দর্শনে বিশ্বাস করে না। হঠাৎ করে গিয়ে তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে তো হাতাহাতি লেগে যাবে। আল-নাজ্জার আমাকে আশ্বস্ত করে বললেন, না তেমন কিছু নয়। চলুন, আপনার জন্য বিস্ময় অপেক্ষা করছে।
আসলেই বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। সেবারই প্রথম আমার ডিসি-১০ বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা হয়। জেদ্দা থেকে প্রিন্স ও আমাদের মতো সাত-আটজন যাত্রী নিয়ে জার্মানির উদ্দেশে বিমানটি রওয়ানা হয়। ডিসি-১০ বিশাল বিমান। ভেতরে ঢুকে মনে হলো কোনো ছোটখাটো প্যালেসের ড্রয়িং রুমে এসে পড়েছি। সোফা দিয়ে ভেতরটা সাজানো। মনেই হলো না যে এটা কোন বিমান। সব শেষে প্রিন্স যখন বিমানে প্রবেশ করলেন তখন পুরো বিমানটি অপূর্ব সুগন্ধিতে ভরে গেল। তিনি প্রথমে নিজের রুমে গেলেন। পরে এসে আমাদের সাথে বসলেন। তখন আপ্যায়ন পর্ব সেরে আলোচনা করছি। এ সময় আমার কৌতূহল হলো প্রিন্সের রুমটি দেখার। আমি বিনীতভাবে প্রিন্সকে বললাল, ইওর হাইনেস, কিছু মনে না করলে আপনার রুমটি কি আমি দেখতে পারি? তিনি বললেন, অবশ্যই। যান, গিয়ে দেখে আসুন। দেখে মনে হলো, কোন সেভেন স্টার হোটেলের রুম। শুধু সুইমিং পুল ছাড়া আর সব কিছু আছে। ব্রুনাইয়ে আমি সেভেন স্টার হোটেলে সুইমিংপুলসহ স্যুট দেখেছিলাম। আইডিবির কার্যোপলক্ষে আমি সেখানে গিয়েছি। আমার মধ্যে সব সময় একটি কৌতূহল কাজ করতÑ বিশ্বের ধনী লোকগুলো কেমন জীবন যাপন করে তা জানার। এর পাশাপাশি আমাদের মতো মানুষ কিভাবে জীবন যাপন করছে তা দেখার। এখান থেকে কোন শিক্ষা গ্রহণ করা যায় কি না সেই চেষ্টা থাকত। এসব দেখে জীবন সম্পর্কেও ধারণা নেয়ার চেষ্টা আমি করেছি। তবে শেষ পর্যন্ত মনে হয়েছে যতই বিলাসী জীবন যাপন করি না কেন, জীবনের মূল্য সামান্যই। আজ বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাস আমাদের সেই শিক্ষা দিচ্ছে। আমরা বিশ্বের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা বলে যাকে মনে করি সেই আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত নিজের হাত মুখে লাগাতে ভয় পাচ্ছেন। অতি ক্ষুদ্রাতিক্ষদ্র একটি জীবাণু গোটা মানবসভ্যতাকে হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে।
যা হোক, এভাবে মাত্র কয়েকজনকে নিয়ে ডিসি-১০ বিমানে ভ্রমণ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল। বাদেন বাদেনে পৌঁছার পর প্রিন্সকে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদেরকে আলাদা গাড়িতে করে বিখ্যাত ‘ব্লাকফরেস্ট’ হোটেলে নিয়ে যাওয়া হলো। আমরা রাজকীয় মেহমান, তাই আদর আপ্যায়নও তেমন।

হোটেলের খাবার টেবিলে বসে আমার আরেকটি বড় অভিজ্ঞতা হয়। স্বাভাবিকভাবেই এ ধরনের হোটেলে খাবারের প্রাচুর্য থাকে। ইচ্ছে মতো এবং যত খুশি খাওয়া যায়। সবার রুচি মতো খাবারই সেখানে পাওয়া যায়। খাবার সাধারণত টেবিলে সাজানো থাকে সেখান থেকে অতিথিরা ইচ্ছে মতো নিয়ে নেয়। নাশতার টেবিলে বাস্কেটে একই সাথে অনেক ব্রেড রাখার নিয়ম। খাবার পরিবেশনকারীরা আমাদের সবাইকে এ রকম বনরুটির মতো একটি করে ব্রেড দিয়ে গেল। কিন্তু টেবিলে বাস্কেটটি রাখল না। রুটিটি ছিল খুবই সুস্বাদু। একটি খাওয়ার পর আমি আরেকটি চাইলাম। আমাকে আবার একটি দেয়া হলো। সেটি খাওয়ার পর মজাদার এই রুটি আরেকটি খাওয়ার ইচ্ছা হলো আমার। কিছুটা লজ্জা লাগলেও পরিবেশনকারীকে ডেকে আরেকটি দিতে বললাম। খুশি মনেই সে দিলো। তখন আমার কৌতূহল হলো কেন তারা একটি একটি করে দিচ্ছে, টেবিলে কেন রুটির ঝুড়িটি রাখছে না। ফলে লজ্জা ভেঙেই বললাম, তুমি একটা একটা করে দিচ্ছো, বাস্কেটটি এখানে রাখতে পারছ না? এ ধরনের হোটেলে যারা কাজ করে তারাও উচ্চমানের প্রশিক্ষিত হয়ে থাকে। অতিথিদের পরিচয় জেনে নেয়া মনে হয় তাদের প্রশিক্ষণের অংশ। আমাকে কিছুটা অবাক করে দিয়ে ওই পরিবেশনকারী আমার নাম ধরে বলল, ড. মান্নান, তোমার যত খুশি নাও। কিন্তু তুমি তো জান, আমরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ও এরপর কী অবস্থায় দিন পার করেছি। আমার বাবা-মা না খেয়ে বহু দিন পার করেছে। তখনই আমরা শিখেছি কী করে অপচয় রোধ করতে হয়। অনেক হোটেলে অনেক উচ্ছিষ্ট খাবার ফেলে দেয়া হয়, কিন্তু আমরা সে কাজটি করি না।

হোটেলের পরিবেশনকারীর কথা শুনে আমি থমকে গেলাম। খাবার টেবিলে বসে তার কথাটি নিয়ে অনেকক্ষণ চিন্তা করি। অথচ আমি সৌদি আরবে কী দৃশ্য দেখছি? অর্ধেক খাবারই তারা ফেলে দেয়, অপচয় করে। এই দৃশ্য আমি বাংলাদেশেও দেখছি। কোনো দাওয়াতে গেলে দেখি অনেকে অর্ধেক খাচ্ছেন অর্ধেক ফেলে দিচ্ছেন। দুঃখের বিষয় এই দেশের মানুষও দুর্ভিক্ষ দেখেছে কিন্তু সেখান থেকে কোনো শিক্ষা তারা নেয়নি। এ ব্যাপারে মৌলিক প্রশিক্ষণটি না থাকায় আজ আমাদের সমাজে এই অবক্ষয়। অপচয় যেন ধনী লোকদের জীবনের অংশ হয়ে গেছে।

এরপর পশ্চিমা স্কলারদের সাথে সংলাপে বসে আমি আরো অবাক হই। একে সংলাপ না বলে বন্ধুসুলভ আলোচনা বলাই ভালো। ওদের কাছ থেকেই বরং আমি ইসলামিক ইকোনমিক শিখলাম। শুনলে অবিশ্বাস্য মনে হবে যে, ইসলামিক ইকোনমির বাস্তব প্রয়োগের বিষয়টি আমি বাদেন বাদেন থেকেই শিখেছি। তারা বলল, আমরা লাভ ভাগাভাগি (প্রফিট শেয়ারিং) করি। তারা বিষয়টি যেভাবে ব্যাখ্যা করল তা হুবহু ‘মুদারাবা’ ব্যবস্থা। তারা ইক্যুইটি ফাইন্যান্সিংয়ের যে ধরন আমাদেরকে দেখাল সেটি একবারে ‘মুশারাকা’র অনুরূপ। কোনো পার্থক্য নেই। ইসলামে আমরা ‘ডিমিনিশিং পার্টিসিপেশন’ ও ‘ইনক্রিজিং পার্টিসিপেশনের’ যে কথা বলি সেটিও তারা একইভাবে অনুসরণ করে। বায়-সালাম, লিজিং, ইজারা এসব ব্যবস্থা অনেক আগ থেকেই তারা অনুশীলন করে আসছে। জন লুইস শ্রমিকদের অংশগ্রহণের যে ধারণা দিয়েছেন তা ইসলামী অর্থনীতির অনুরূপ। তিনি অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতির কথা বলেছেন, এর বাস্তব প্রয়োগ দেখিয়েছেন। ফ্রান্সে অংশগ্রহণমূলক অর্থনীতির কাঠামোটি কেমন ছিল সেটি আমি বাদেন বাদেন গিয়ে জেনেছি। আমি এতদিন ইসলামিক অর্থনীতির তত্ত্ব ও দর্শন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি। কিন্তু এই প্রথম প্রয়োগের কৌশলগুলো শিখলাম। দর্শন এক কথা, আর সেই দর্শনকে বাস্তবজীবনে প্রয়োগের জন্য একটি প্রতিষ্ঠান দাঁড় করানো সম্পূর্ণ ভিন্ন কথা। আমার অনেক আইডিয়া থাকতে পারে। কিন্তু সেই আইডিয়ার বাস্তব প্রয়োগের জন্য প্রতিষ্ঠান না থাকলে সেগুলোর অপমৃত্যু ঘটবে। ধারণার প্রতিষ্ঠানিক রূপ দিতে গেলেই বোঝা যাবে ওই ধারণার কতটুকু কাজ করবে আর কতটুকু করবে না। আমাদের দেশের ইসলামী ব্যাংকিংয়ের কথাই ধরা যাক। আমি বলব জোড়াতালি দিয়ে এই ব্যবস্থা চালু রয়েছে এখানে। কারণ এ দেশে ইসলামিক ব্যাংকিং চালু হওয়ার পর সাড়ে তিন দশক পার হয়ে গেলেও এখনো কোনো ইসলামিক ব্যাংকিং আইন হয়নি।

ইসলামিক অর্থনীতির চুক্তিগুলো বাস্তবায়নের দিকটি আমি বাদেন বাদেন থেকে শিখেছিলাম। এতে আমার অনেক উপকার হয়। তখন থেকে আমি নিজের দেশে কিছু করার কথা ভাবতে শুরু করি। পাশাপাশি ব্রাক, আশা, গ্রামীণ ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম এবং তাদের সুদভিত্তিক ক্ষুদ্রঋণ বিতরণের তৎপরতার যেসব খবর আমি পেতাম তা আমাকে ইসলামী অর্থনীতির ভিত্তিতে কিছু করতে আরো উদ্বুদ্ধ করে। আমি ইসলামিক অর্থনীতির ‘থ্রি সেক্টর মডেল’ উপস্থাপন করি। বাংলাদেশে এমন একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে আল-নাজ্জার আমাকে নানাভাবে যে সমর্থন দিয়েছেন তা অকল্পনীয়। সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল) প্রতিষ্ঠার সময় তিনি চিঠি লিখে বলেছেন যে, কোনো সত্যিকারের ইসলামী ব্যাংক থাকলে সেটি হলো এটি। বাংলাদেশে ইসলামিক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য আল-নাজ্জার প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে পর্যন্ত কথা বলেছেন। তিনি এসআইবিএলের পক্ষে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে জনমত গঠন করেন। সেখানকার একজন ডিন এই ব্যাংকের উপদেষ্টা ছিলেন। ৯ জন আন্তর্জাতিক ইসলামী অর্থনীতিবিদ এই ব্যাংকের উপদেষ্টা হয়েছিলেন। ব্যাংকটির পক্ষে সমর্থন আদায়ের কাজটি আল-নাজ্জার করেছিলেন। তিনি ছিলেন আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব। আমার সেই পরিচিতি ছিল না। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো যে দিন সোশ্যাল ইসলামিক ব্যাংকের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় তার আগের দিন ইন্তেকাল করেন তিনি।

লেখক : ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ।


আরো সংবাদ



premium cement