২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

নারী অধিকার

-

সংস্কৃত ‘নৃ’ থেকে ‘নারী’ শব্দটির উৎপত্তি (নৃ+ঈ=নারী)। ‘নারী’ কথাটি প্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রী-লোকের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। প্রসঙ্গত ‘নারী অধিকার’ বলতে সমগ্র ‘স্ত্রী’ জাতির প্রাপ্য ও ন্যায়সঙ্গত অধিকারকে বোঝানো হয়। আর কোনটা প্রাপ্য বা ন্যায়সঙ্গত অধিকার তা নিয়েই বিতর্ক চলছে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে। কিন্তু কোনো উপসংহারে পৌঁছা এখন পর্যন্ত সম্ভব হয়নি।

শুধু আমাদের দেশে নয় বরং গোটা বিশ্বেই নারী অধিকার নিয়ে নানা ধরনের মতবাদ চালু রয়েছে। ধর্ম, বিশ্বাস, ঐতিহ্য, মূল্যবোধ, চিন্তা ও আদর্শগত পার্থক্যের কারণে নারী অধিকার নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান ও মতপার্থক্য লক্ষ করা যায়। একপক্ষের কাছে যা অধিকার, অপরপক্ষের কাছে তা অনধিকার বলে বিবেচিত হয়। কেউ কেউ পুরুষের সমকক্ষতা অর্জনকেই নারীর প্রকৃত অধিকার বলে মনে করেন। এদের পক্ষ থেকেই এসেছে উভলৈঙ্গিক পোশাকের ধারণা। তাদের মতে, পুরুষ-নারী উভয়ই মনুষ্য প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। তাই পুরুষ-নারীর মধ্যে কোনো পোশাকি পার্থক্য থাকা যৌক্তিক নয়। তাদের ভাষায়, যে পোশাক লিঙ্গ নির্দেশ করে তা বৈষম্যমূলক ও মানবতার অপমান। আবার পক্ষবিশেষ নারীর সমঅধিকারের পক্ষপাতি। তারা মনে করেন, পুরুষ-নারীকে কোনোভাবেই সমান্তরাল করা যাবে না। শুধু অধিকারের ক্ষেত্রে সমতা আনাই যুক্তিযুক্ত। কারণ, সৃষ্টিগতভাবে উভয়ের মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা সমান করার ভাবনা বাতুলতা মাত্র।

তারা মনে করেন, পুরুষ যা পারে নারীর পক্ষেও তা করা সম্ভব। তাই সব ক্ষেত্রেই পুরুষের পাশাপাশি নারীর সমান সুযোগ নিশ্চিত হওয়া দরকার। সমাজে পুরুষরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন, নারীদের ক্ষেত্রে তা নিশ্চিত করতে হবে। আবার বিশেষ পক্ষ সমঅধিকার নয় বরং নারীর ন্যায্য অধিকারের পক্ষে। তারা মনে করেন, নারী-পুরুষের মধ্যে সৃষ্টিগত যে পার্থক্য রয়েছে তা কোনোভাবেই সমান করার সুযোগ নেই। খুব সঙ্গত কারণেই পুরুষ ও নারীর মধ্যে দায়িত্ব, কর্ম ও অধিকারগত ভিন্নতা রয়েছে। তাই ন্যায্য অধিকারের ধারণাটাই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। সৃষ্টির আদিকাল থেকে চলে আসা নারী অধিকারবিষয়ক এসব মতপার্থক্যের বিষয়ে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও কোনো একক ও অভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছা যায়নি।

প্রথমেই আলোচনায় আসা যায়, নারীকে পুরুষের সমান মনে করা এবং সমঅধিকার বিষয়ে। মূলত এ দুটো ধারণা ত্রুটিপূর্ণ মনে করার মতো যথেষ্ট উপাদান বিদ্যমান রয়েছে। কারণ, মানুষে মানুষে সমান হওয়ার সুযোগ নেই। কোনো পুরুষ যেমন অপর পুরুষের সমান নন, ঠিক তেমনিভাবে কোনো নারীও অন্য কোনো নারীর সমান হতে পারেন না। আর নারীকে পুরুষের সমতুল্য বা পুরুষকে নারীর সমতুল্য করার চিন্তা এক ধরনের বিকারগ্রস্ততা বলা যায়। কারণ, নারী-পুরুষ যে-ই হোন না কেন, তারা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা সত্তা। প্রত্যেকের অবয়ব, চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, ব্যক্তিত্ব, মেধা, মনন, কর্মতৎপরতা, যোগ্যতা, প্রজ্ঞা, রুচি-অভিরুচি, শক্তি-সামর্থ্য ও কর্মপরিধিও ভিন্নতর। তাই এক মানবসত্তা অপর মানবসত্তার সমান্তরাল হওয়া যুক্তিযুক্ত নয়। আর সমঅধিকারের ধারণা তো আরো বেশি ত্রুটিপূর্ণ।

বিদগ্ধজনরা বলছেন, মানুষের অধিকার কখনো সমান হয় না। চাই সে পুরুষ হোক বা নারী। পৃথিবীতে যত মানুষ অধিকারও তত ধরনের। যে অধিকার পিতার রয়েছে, সে অধিকার সন্তানের নেই; পক্ষান্তরে যে অধিকার সন্তানের রয়েছে সে অধিকার পিতার নেই। একইভাবে মা-মেয়ের অধিকারও সমান নয়। মূলত নারী-পুরুষ সমঅধিকার তো দূরের কথা পুরুষে-পুরুষেও তো অধিকার সমান নয়। সঙ্গত কারণেই কোনো পুরুষ অফিসের ডিসি, অপর পুরুষ চাপরাশি। কেউ প্রধান শিক্ষক, কেউ সহকারী আর কেউ চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। এরা প্রত্যেকেই পুরুষ বা নারী হলেও অভিজ্ঞান ও পদমর্যাদার কারণেই কর্মে, অধিকারে, দায়িত্বে ও মর্যাদায় এক ও অভিন্ন নন। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, সমঅধিকারের ধারণাটা ইতর প্রাণীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হতে পারলেও মানুষের জন্য প্রযোজ্য নয়। কারণ, পশুতে পশুতে কোনো স্তরবিন্যাস না থাকলেও মানুষে মানুষে স্তরবিন্যাস রয়েছে সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই। এটি অনিবার্য বাস্তবতা।

নারী অধিকার নিয়ে এই বিস্তর মতপার্থক্য ও রকমফেরের প্রেক্ষাপটেই ১৯১০ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে নারী দিবস পালিত হয়ে আসছে। গত ৮ মার্চ ছিল আন্তর্জাতিক নারী দিবস। আমাদের দেশেও দিনটি পালিত হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং সামাজিক সংগঠন বাণী দিয়েছে। জাতিসঙ্ঘ এ বছর নারী দিবসের প্রতিপাদ্য করেছে, ‘আনি প্রজন্মের সমতা : নারী অধিকারের প্রতি সচেতনতা’। আর বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়, ‘প্রজন্ম হোক সমতার, সকল নারীর অধিকার’।

আমাদের দেশে নারী অধিকার নিয়ে নানা কথা থাকলেও বর্তমান সরকারের সময়ে এ বিষয়ে বড় বড় অর্জন আছে বলে প্রচার-প্রচারণা রয়েছে। সরকারের পক্ষে দাবি করা হয়েছে, জাতিসঙ্ঘসহ বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থা বাংলাদেশের নারী উন্নয়নের ভূয়সী প্রশংসা করছে। বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের এমডিজি অ্যাওয়ার্ড, সাউথ-সাউথ অ্যাওয়ার্ড, প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন, এজেন্ট অব চেঞ্জ, শিক্ষায় লিঙ্গসমতা আনার স্বীকৃতিস্বরূপ ইউনেস্কোর ‘শান্তিবৃক্ষ’ এবং গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০১৮সহ অসংখ্য আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন করেছে। এসব আমাদের দেশে নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অর্জন।

মূলত বর্তমান সরকারের সময়ে নারী অধিকারের অগ্রগতির বিষয়টি অস্বীকার করার সুযোগ নেই। যদিও এ ক্ষেত্রে বিচ্যুতিটাও নেহাত কম নয়। কারণ, বর্তমান সরকারের সময় নারীর প্রতি অহিংসতা আগের তুলনায় অনেকাংশেই বেড়েছে। এর পরও অর্জনগুলোকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আমাদের সংসদ নেত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী ও জাতীয় সংসদের স্পিকার নারী। এমনকি জাতীয় সংসদসহ সব নির্বাচনে সব পদেই যদি নারীরা নির্বাচিত হন সংবিধান বা আইন সে ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। এমনকি নারীদের ক্ষেত্রে সব কিছু অবারিত রাখার পরও তাদের জন্য সংরক্ষিত কোটা রয়েছে। চাকরির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। আর দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে শুধু নারী হওয়ার কারণে বৈষম্যের শিকার হয়েছেন তেমনটা নেই বললেই চলে। কালে-ভদ্রে ব্যতিক্রমী কোনো ঘটনা ঘটলেও পুরুষরা এসব প্রতিবন্ধকতা থেকে মুক্ত নন।

সরকারের দাবি অনুযায়ী, আমরা নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে মাইলফলক স্পর্শ করলেও তা এখনো সমস্যামুক্ত করা সম্ভব হয়নি। নারীর ক্ষমতায়ন, কর্মে ও পারিশ্রমিকে সমতা, পুরুষের সমান্তরালে রাজনৈতিক অধিকার, শিক্ষা ও চাকরিতে যোগদানের সমান অধিকার নিয়ে বিরোধপূর্ণ পক্ষগুলোর মধ্যে তেমন মতপার্থক্য নেই। মতপার্থক্যটা রয়ে গেছে নারীর পারিবারিক ও তার দাম্পত্য জীবনের অধিকার-অনধিকার বিষয়ে। আর এ বিষয়টি পরিকল্পিতভাবেই জিইয়ে রেখেছে তথাকথিত প্রগতিবাদীরা। তারা সব ক্ষেত্রে নারীকে পুরুষের সমকক্ষ করতে চান। যদিও তা বাস্তবসম্মত নয়।

মূলত নারী অধিকারের কিছু তথাকথিত ধারক-বাহক নারী ও পুরুষের সম্পর্ককে এমনভাবে উপস্থাপন করেন যে, মনে হয় নারী-পুরুষ ভিন্ন ভিন্ন গ্রহের বাসিন্দা; একে অপরের প্রতিপক্ষ। কিন্তু বাস্তবতা তা নয়। বস্তুত, পুরুষ-নারীতে যে প্রীতির সম্পর্ক পুরুষে-পুরুষে বা নারীতে-নারীতে তা কল্পনা করাও সম্ভব নয়। নারী-পুরুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা ও প্রীতিই সভ্যতা এবং সৃষ্টির ধারাবাহিকতার রক্ষাকবচ। তাই সমঅধিকারের কথা বলে পুরুষ ও নারীকে পরস্পরের মুখোমুখি দাঁড় করানো সমাজ-সভ্যতার জন্য মারাত্মক হুমকি।

এ কথাও অস্বীকার করা যাবে না যে, আমাদের এই ক্ষয়িষ্ণু সমাজে কোনো কোনো ক্ষেত্রে নারীরা নানাবিধ বৈষম্য ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হচ্ছেন। সামাজিক অন্যায়, উৎপীড়ন, লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত। পারিবারিক পরিমণ্ডলে তারা অবমাননা, নিপীড়ন-নির্যাতন ও নানা বৈষম্যের শিকার হন। কিন্তু এ ধরনের বৈষম্যের অভিযোগ তো পুরুষদের ক্ষেত্রেও রয়েছে। নারী-পুরুষের সমঅধিকার থিওরি দিয়ে এসব সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বরং এ জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টানো দরকার।

পাশ্চাত্যে নারী প্রগতির প্রধান ধারণা এসেছিল রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান ও চার্চের পক্ষ থেকে। রেনেসাঁ পরবর্তী ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদ, অষ্টাদশ শতাব্দীর যুক্তিবাদ এবং উদার নৈতিকতার পরিপ্রেক্ষিতে পাশ্চাত্য লোকাচারের প্রভাব ছিল কম। কিন্তু ভারতীয় উপমহাদেশে নারী প্রগতির প্রধান বাধা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে না এলেও এ ক্ষেত্রে রাজনৈতিক উদাসীনতাও কম দায়ী নয়। কেউ কেউ নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রধান অন্তরায় মনে করেন, বাস্তবতার সাথে যা মোটেই সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বরং ধর্মীয় জ্ঞানের অপ্রতুলতা, কূপমণ্ডূকতা, কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, ধর্মের অপব্যাখ্যা ও অপপ্রয়োগকেই এ জন্য প্রধানত দায়ী করা যেতে পারে।

মূলত মূল্যবোধের চরম অবক্ষয় ও বিচ্যুতির কারণেই আমাদের সমাজে নারীরা অধিকারবঞ্চিত, অবহেলিত ও উপেক্ষিত। নারী-পুরুষের সমঅধিকারের পক্ষে কথা বলা হলেও এ ক্ষেত্রে ন্যায্য অধিকারের ধারণাই অধিক যুক্তিযুক্ত। তাই এ কথা বললে অত্যুক্তি হওয়ার কথা নয় যে, নারী-পুরুষ কর্মে, দায়িত্বে ও অভিজ্ঞানে কেউই কারো সমকক্ষ নয় বরং তারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে একে অপরের চেয়ে শ্রেয়তর। নারী ও পুরুষের ক্ষেত্রে যে সৃষ্টিগত তফাৎ রয়েছে তা কোনোভাবেই সমান করা যাবে না।

কেউ কেউ নারী ও পুরুষকে পরস্পরের সমকক্ষ করতে উভলৈঙ্গিক পোশাকের দাবি তুলেছেন। এটি রীতিমতো হাস্যকর। আপেল-কমলা ফল হলেও ‘ফল’ শিরোনাম দিয়ে একই মোড়কে রাখলেও ফল দু’টির স্বাদ, গন্ধ ও খাদ্যপ্রাণ এক ও অভিন্ন হয়ে যায় না।

নারীরা তাদের অধিকার যথাযথভাবে ভোগ করতে পারছেন এমনটা বলার সুযোগ নেই সত্যি। তবে নারীর ক্ষমতায়ন, রাজনীতি, চাকরি-বাকরিতে নারীরা ব্যাপকভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে যেসব অভিযোগ রয়েছে তা পুরোপুরি সত্য নয় বরং বিভিন্ন ক্ষেত্রে কোটা সংরক্ষণ ও নানাবিধ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতার কারণে তারা ক্ষেত্রবিশেষে পুরুষের চেয়ে অধিক সুবিধাভোগী। কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে পারিবারিক জীবন নিয়ে। নারীরা পারিবারিকভাবে নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। দাম্পত্য সঙ্গীদের কাছে জবাবদিহিতা ও অধীনস্থতাকে মহলবিশেষে বৈষম্য বলে বিবেচনা করা হয়। এটিও কোনো যৌক্তিক কথা নয়। কারণ, মানুষ কখনোই জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে নয়। একজন নারী শুধু পারিবারিক পরিসরেই জবাবদিহিতা করেন। কিন্তু একজন পুরুষের জবাবদিহিতার ক্ষেত্র বহুমাত্রিক। আমাদের ঐতিহ্য অনুযায়ী পরিবারের অর্থনৈতিক দায়িত্ব থাকার কারণেই পুরুষ পরিবার প্রধান। তিনি হন তার সঙ্গিনীর চেয়ে জ্যেষ্ঠ, যোগ্যতর ও দায়িত্বপরায়ণ। তাই পারিবারিক শৃঙ্খলা ও শিষ্টাচারের জন্য একজন পুরুষ নারীর চেয়ে প্রাধান্য পাওয়ার যোগ্য। অবশ্য তাও শুধুই প্রতীকী। প্রভুভৃত্য পর্যায়ের নয়। তাই আসুন দৃষ্টিভঙ্গি বদলাই, বিশ্বই বদলে যাবে।

smmjoy@gmail.com


আরো সংবাদ



premium cement