১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌন্দর্যবাণিজ্য ও শব্দ ব্যবহার কিছু শব্দের ব্যবহার

-

হিন্দি সংস্কৃতি
একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত প্রথম পৃষ্ঠার একটি প্রতিবেদনে হিন্দি সংস্কৃতি, শত কোটি ডলারের সৌন্দর্যবাণিজ্য এবং অর্ধশতাধিক পর্নো সাইটের ফলে বিপন্ন মূল্যবোধ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত ৫০টি পর্নোসাইট ইন্টারনেটে পাওয়া যায় যেগুলো ভারত থেকে নিয়ন্ত্রিত। এসবের মূল বিষয় হচ্ছে নগ্ন ছবি ও অবাধ যৌনাচার।
প্রতিবেদনে বিলিয়ন ডলারের সৌন্দর্যবাণিজ্যের কথা বলা হয়েছে। স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের কারণে হিন্দি ও ইংরেজি ছবির নায়িকাদের মতো ফিগার করার জন্য তরুণীদের একটি অংশের মধ্যে উন্মাদনা সৃষ্টি হয়েছে। এটাকে কেন্দ্র করেই কসমেটিকস ব্যবসা, সিøম করার নানা প্রতিষ্ঠান এবং পার্লার বাণিজ্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। কারো কারো ভাষায়, নারীর স্বাভাবিক সৌন্দর্যকে ঘৃণা করতে শেখানো হচ্ছে এবং শরীরের ওপর কসমেটিকসের আবর্জনা লেপে দেয়া হচ্ছে। কসমেটিকস সার্জারি ভয়াবহভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
এ পরিস্থিতি থেকে বাঁচা কঠিন, যদি না সরকার এবং জনগণের একটি বড় অংশ সচেতন হয়। সরকারের উচিত পর্নো সাইটগুলোকে ব্লক করা ও ইন্টারনেট এবং মোবাইলের অপব্যবহার যতটা সম্ভব বন্ধ করা। অভিভাবক ও শিক্ষকদের দায়িত্ব অনেক। সন্তানদের অল্প বয়সেই নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে; যেমন মুসলিমদের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, খলিফাদের এবং খাদিজা, আয়েশার জীবনী। অশ্লীল বিজ্ঞাপন বন্ধ করা দরকার। সে জন্য বিজ্ঞাপন নীতিমালা হওয়া উচিত। এ ব্যাপারে সরকারের দায়িত্ব অনেক। পত্রপত্রিকায়ও ফ্যাশনের নামে সব ধরনের ছবি এবং লেখা দেয়া ঠিক নয়।

‘আচার্য’ কি চ্যান্সেলরের যথাযথ অনুবাদ?
কিছুদিন আগে আমি একটি বিশ^বিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যোগ দিই। এটি একটি উন্নতমানের বেসরকারি বিশ^বিদ্যালয়, যাদের এখন ঢাকার অভিজাত এলাকায় নিজস্ব বিশাল ক্যাম্পাস রয়েছে। মাননীয় চ্যান্সেলর সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষামন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন। অনেক বিশিষ্ট মেহমান ছিলেন। ওই অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন অভিভাবকরা এবং যারা ডিগ্রি পাচ্ছেন, সেসব ছাত্রছাত্রী। অনুষ্ঠান খুব সুন্দরভাবে সম্পন্ন হয়েছে। তবে দু’টি বিষয় আমার ভালো লাগেনি। প্রথম যে বিষয়টি আমাকে পীড়া দেয়, সেটি ছিল মাননীয় চ্যান্সেলরকে বারবার ‘আচার্য’ বলা। যতটুকু মনে পড়ে, কেবল শিক্ষামন্ত্রী ‘চ্যান্সেলর’ সম্বোধন করেছিলেন। ঘোষক বারবার ‘আচার্য’ বলতে থাকেন। অন্য অনেক বক্তাও তা-ই বলেন। আমার মনে প্রশ্ন জাগে, চ্যান্সেলর শব্দটির ব্যবহারে কী ক্রটি আছে? আমরা কি এ শব্দটি অন্যান্য অনেক ইংরেজি শব্দের মতো রেখে দিতে পারি না? ‘আচার্য’ চ্যান্সেলরের যথাযথ অনুবাদ কি না, এ নিয়েও আমার মনে প্রশ্ন জাগে। বিভিন্ন অভিধান খুলে আচার্য শব্দের অর্থ নিম্নরূপ পাই। বাংলা একাডেমি প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে তিনটি অর্থ দেয়া আছে : ক. যিনি কোনো শাস্ত্র পড়ান, খ. যিনি বেদ পড়ান, গ. গণক ব্রাহ্মণ। রাজশেখর বসুর চলন্তিকা বাংলা অভিধানে আচার্যের অর্থ দেয়া হয়েছে : ক. শাস্ত্র অধ্যাপক, খ. শিক্ষাগুরু, গ. বৈদজ্ঞ ব্রাহ্মণ, ঘ. গ্রহ বিপ্র। বাংলা ইংলিশ অভিধানে (বাংলা একাডেমি প্রকাশিত) আচার্যের অর্থ দেয়া আছে : ক. অধ্যাপক, খ. আধ্যাত্মিক পথপ্রদর্শক, গ. ব্রাহ্মণের উপাধি।
এর থেকে বোঝা যায়, আচার্য শব্দটি মূলত ব্রাহ্মণ ও বেদসংক্রান্ত। তাই একে চ্যান্সেলরের পরিবর্তে ব্যবহার করা সঙ্গত নয়। এ জন্য ‘চ্যান্সেলর’ শব্দটি রেখে দেয়ায় কোনো অসুবিধা দেখি না। যদি আমরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইংরেজি অনেক শব্দ, যেমন : প্রভোস্ট, প্রক্টর, ডিন, হল ইত্যাদি রেখে দিতে পারি তাহলে চ্যান্সেলরও রেখে দেয়া যায়। যদি অনুবাদ করতেই হয়, তাহলে আরো চিন্তা করতে হবে। তেমনিভাবে উপাচার্যের পরিবর্তে ভাইস চ্যান্সেলর শব্দও রেখে দেয়া ভালো। না হলে আমেরিকান বিশ^বিদ্যালয়ের মতো পদটিকে ‘সভাপতি’ (প্রেসিডেন্ট) করা যায়।
দ্বিতীয়টি ছিল শুধু ছাত্রীদের ভলান্টিয়ার বা স্বেচ্ছাসেবক বানানো। এটার কী যুক্তি, তা আমি জানি না। নারীদের বা তরুণীদের সাধারণত এসব কাজে বেশ ব্যবহার করা হয়। কোনো প্রতিষ্ঠানের উদ্বোধনের সময়ও এভাবে সাজগোজ করে তরুণীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। এর পেছনে রয়েছে নারীদের সম্মান নয়, বরং তাদের সৌন্দর্যকে পণ্যের মতো ব্যবহার। এ ব্যাপারে আরো উল্লেখ করা যায়, বিজ্ঞাপনে মেয়েদের অশালীন ব্যবহার অনেক বেড়ে গেছে। দু’টি মোবাইল কোম্পানির বিজ্ঞাপনে অন্তত চল্লিশজন মডেল নাচানাচি করছে। এতে নারীর সম্মান বৃদ্ধি পাচ্ছে, বলা যায় না। ওই ধরনের মডেল অন্যসব বিজ্ঞাপন মিলে প্রায় একশ’জন হবে। এরা শুধু অর্থের জন্য নারীর মর্যাদা নষ্ট করছে। তারা হয়তো মনে করছে, তাদের নাম বাড়ছে। কিন্তু এতে তাদের সম্মান বাড়ছে বলা যায় না।
আগেও আমাদের লেখায় বিজ্ঞাপন নিয়ন্ত্রণ করে একটি নীতিমালা করার জন্য সরকারকে অনুরোধ করেছিলাম। আশা করি, তারা এ কাজটি দ্রুত করবেন। নীতিমালায় অবশ্যই থাকা উচিত, বিজ্ঞাপনে পুরুষ-নারীরা শালীন পোশাক পরবেন; মেয়েরা অবশ্যই ওড়না ব্যবহার করবেন। কেউ হাফপ্যান্ট বা শর্টপ্যান্ট পরবেন না। রাস্তার বিলবোর্ড, টিভি বিজ্ঞাপন, পত্রপত্রিকার বিজ্ঞাপন-সর্বক্ষেত্রে এ নীতিমালা প্রযোজ্য হওয়া উচিত। হ
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার


আরো সংবাদ



premium cement