২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

স্ম র ণ : সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ শামসুর রহমান

-

আজ ২ নভেম্বর প্রথিতযশা রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সিনিয়র নায়েবে আমির শামসুর রহমানের দ্বাদশ মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০৮ সালের আজকের এই দিনে ইন্তেকাল করেন তিনি। মরহুম শামসুর রহমান ছিলেন অত্যন্ত সাদাসিধে জীবন যাপনকারী, ইসলামী আন্দোলনের অকুতোভয় অগ্রসৈনিক ও অত্যন্ত স্পষ্টভাষী। ১৯১৫ সালের ৫ মে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার গদাইপুর ইউনিয়নের মঠবাটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। তার বাবা মরহুম কফিল উদ্দিন সরদার ছিলেন স্কুলশিক্ষক। মা মরহুমা শরিফাতুন্নেসা। তিনি কলকাতায় উচ্চশিক্ষা লাভ করেন। ওই সময়ে হাতেগোনা যে ¯œাতক ডিগ্রিধারী লোক পূর্ববঙ্গে মুসলিম সমাজে ছিলেন, তার মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।
মরহুম শামসুর রহমান ১৯৪৯ সাল থেকে সাংবাদিকতা শুরু করেন। গত শতকের পঞ্চাশের দশকে সাপ্তাহিক তাওহিদ পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৫২ সালে ওই সময়ে সরকারের বিরুদ্ধে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায়, তৎকালীন সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ মাঠে নামে। গোয়েন্দা বিভাগ জানতে পারে, ওই পত্রিকাটির সাথে শামসুর রহমান সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। তখন প্রশাসন তাকে নানা অজুহাতে হয়রানি করে। সরকারি নিপীড়ন থেকে রক্ষা পাননি তিনি। তারপরও বেশ কিছুদিন পত্রিকাটির প্রকাশনা অব্যাহত রাখেন তিনি। তার ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রেসটিও তৎকালীন সরকার বন্ধ করে দিয়েছিল। তখন বাধ্য হয়ে তিনি পাকিস্তান অবজারভার পত্রিকায় যোগ দেন। তখনই সুলেখক হিসেবে পরিচিতি পান। অবজারভার এবং অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস অব পাকিস্তানের (এপিপি) সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৫৯ সালে তার নেতৃত্বে খুলনা প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়। খুলনার সাংবাদিকতা ও প্রেস ক্লাব গঠনের ইতিহাসের সাথে তার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। তার সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে খুলনার প্রবীণ সাংবাদিক ও খুলনা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মনিরুল হুদা বলেন, ‘তিনি একটি রাজনৈতিক আদর্শের বিশ্বাসী হলেও তার গ্রহণযোগ্যতা ছিল সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের মাঝে। সাংবাদিকতা পেশা ছেড়ে পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ হয়েও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সাংবাদিকদের সাথে ছিল তার গভীর সম্পর্ক। যে কারণে খুলনার সাংবাদিক সমাজ তাকে গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
১৯৫৫ থেকে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত প্রায় ১৩ বছর জামায়াতের খুলনা জেলা শাখার আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬২ সালে তিনি পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ সদস্য (এমএনএ) নির্বাচিত হন। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত চার বছর খুলনা বিভাগের সেক্রেটারি এবং ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ছিলেন। এরপর ১৯৮৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২০ বছর জামায়াতের নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। জামায়াতের গঠনতন্ত্র প্রণয়নে যে কমিটি হয়েছিল; তার আহ্বায়কও ছিলেন তিনি। ইসলামী আন্দোলন করার কারণে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৩ এবং ১৯৮৫ সালের এপ্রিল থেকে ১৯৮৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত দ্বিতীয়বারের মতো তাকে সাত মাস কারাগারে অন্তরীণ থাকতে হয়।
তিনি ২২ বছর দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ছিলেন দারুল ইসলাম ট্রাস্টের সভাপতিও। তিনি মুসলিম এইড ইউকে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, দারুল ইসলাম ট্রাস্ট, আধুনিক প্রকাশনী ও সিরাতুল হুদা ট্রাস্টের চেয়ারম্যান হিসেবে দীর্ঘ দিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন।হ

 

 


আরো সংবাদ



premium cement